রূপনগরের পিশাচিনী
বসন্তকালের এক বিকেলে একটি ট্যাক্সি এসে থামল রূপমঞ্জরীর মূল গেটের সামনে। ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে এল এক অপূর্ব সুন্দরী তরুণী। দীর্ঘাঙ্গী এবং তন্বী। ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে লম্বা শ্বাস নিল সে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের বিকেলের হাওয়ায় আমের বোলের গন্ধ মেশানো থাকে। মেয়েটি বেশ কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস টানল। এই গন্ধ তাকে বরাবর পাগল করে দেয়। তার পরনে ডেনিম ব্লু জিন্স আর রেড কুর্তি। পিঠে কিটব্যাগ, হাতে ট্রলির হাতল। রূপমঞ্জরীর বিশাল উঁচু পাঁচিল আর মস্ত গেটের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল সে। তারপর আবার একটি শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেল ওই গেটের সিকিউরিটি গার্ডের দিকে।
কলকাতা শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে গড়ে উঠেছে আরেকটি শহর। নাম রূপনগর। রূপে, আভিজাত্যে সে প্রতিদিন গুনে গুনে দশ-বিশ গোল দেয় কলকাতাকে। যেমনই ঝকঝকে তার চেহারা তেমনই সুযোগ-সুবিধা। বছর কুড়ি আগে এই জায়গাটা ছিল জলাভূমি, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, জনহীন। কয়েকঘর চাষি আর কিছু চাষের ক্ষেত, প্রচুর শেয়াল, ভাম, সাপ, বেজি ইত্যাদি মিলে চলে যাচ্ছিল বছরের পর বছর। তারপর মানুষ কলকাতামুখী হতে হতে একদিন দেখা গেল তিলোত্তমায় আর তিল ধারণের জায়গাটুকুও নেই। সরকার ভাবল এবার বিকল্প খুঁজতে হবে। বিকল্প নগরের জন্য জায়গা ঠিক হল এই জলাভূমি। শুরু হয়ে গেল কাজ। জলের ওপর মাটি পড়তে থাকল, আর তার তলায় চাপা পড়তে থাকল সাপ, বেজি, ভাম, আলু, ফুলকপি, পুরোনো কিছু ইতিহাস। পালাতে থাকল ওখানে থাকা মানুষেরা, শেয়ালেরা। হুড়মুড় করে গড়ে উঠতে থাকল আকাশ-ছোঁয়া সব বিল্ডিং, বহুজাতিক সংস্থার ঝাঁঝালো অফিস, কালো অজগরের মতো পিচ রাস্তা, নিখুঁত সাজানো উদ্যান, উড়ালপুল, মেট্রোরেল, মল, হসপিটাল ইত্যাদি আরও যা যা সভ্য জগতের মানুষের প্রয়োজন হয় সবকিছুই তৈরি হয়ে গেল এখানে। এই শহরের প্রবেশপথে বিশাল এক গেট সেখানে লেখা ‘রূপনগরে আপনাকে স্বাগত’। প্রতিদিন দুইবেলা মানুষ আসতে শুরু করল, থাকতে শুরু করল, বাঁচতে শুরু করল রূপনগরে। দেখতে দেখতে রূপনগর পার করে ফেলল তিরিশটি ঋতুচক্র। দিন যায়, কলকাতার বয়স বাড়তে থাকে আর ততই মোহময়ী হয়ে উঠতে থাকে গোটা দেশের বিস্ময় এই স্বপ্ননগরী।
মেয়েটি এগিয়ে গেল সিকিউরিটি গার্ডের দিকে। দশাসই চারজন গার্ড। গার্ড না বলে প্রহরী বললেই ভালো। কারণ প্রত্যেকেই সেই প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজা- রাজড়াদের দ্বারীদের সাজে। রূপমঞ্জরীর মূল আকর্ষণই এটা। প্রহরীরা রোবটের মতো স্থির। মেয়েটি একজন গার্ডকে বলল, মিস রেহানার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল।
ম্যাম, আপনি ওইদিকে চলে যান। বাংলাতেই উত্তর দিল গার্ড।
গার্ডের ইশারা অনুসরণ করে মেয়েটি গেল ওই ফটকের এক কোণে সিকিউরিটি অফিসের জানলার সামনে। গিয়ে আবারও বলল, আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল মিস রেহানার সঙ্গে।
সিকিউরিটি অফিসার ইংরেজিতে বললেন, ম্যাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাম্বারটা বলবেন, প্লিজ?
নিশ্চয়ই। বলে মেয়েটি তার মোবাইল থেকে একটি আট ডিজিটের কোড বলার পর সিকিউরিটি অফিসার ভেরিফাই করার জন্য তার নাম জিজ্ঞাসা করলেন।
রূপসা দাশ।
থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম। আপনার একটা আইডি দেখাবেন?
মেয়েটি তার পার্স থেকে বার করল ভোটার কার্ড।
সিকিউরিটি অফিসার কার্ডটা একবার দেখে, মেশিনে স্ক্যান করে একটা কপি রেখে দিলেন তাঁর কম্পিউটারে। তারপর পেশাদারী হাসি দিয়ে বললেন, ম্যাম, রূপমঞ্জরী আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। অনুগ্রহ করে ভেতরে আসুন।
ধন্যবাদ। বলে রূপসা কার্ডটা পার্সে ভরল। সিকিউরিটি অফিসের ঠিক গায়ে লাগানো ছোট আরেকটি গেট। সেই অটোমেটিক দরজা খুলে যাওয়ার পর রূপসা সবে ঢুকতে যাবে হঠাৎই কোথা থেকে ছুটে এল এক মহিলা। চিৎকার করে উঠল, যাস নে, যাস নে। মরবি, মরবি বলে দিচ্ছি…
চমকে উঠে তার দিকে তাকাল রূপসা। বীভৎস তার রূপ। গোটা শরীরে দগদগে ঘা, শতচ্ছিন্ন, ময়লা একটা শাড়ি কোনও-মতে শরীরে জড়ানো। সেই শাড়ির ফাঁক দিয়েও উঁকি দিচ্ছে তার অঙ্গের গলিত কুৎসিত ক্ষত। ওহ! কী দুর্গন্ধ! গা ঘুলিয়ে উঠল রূপসার। পচে মরবি হারামজাদি। পালা পালা…বলে রূপসাকে ধরতে গেল সেই বিস্ফারিত রক্তচক্ষু, রুক্ষ, শণের মতো চুল, লোলচর্ম বৃদ্ধা।
রূপসা সরে আসার আগেই সেই উন্মাদিনীকে ঘিরে ফেলল কয়েকজন গার্ড। তারপর লাঠি তুলে ভয় দেখিয়ে, খুঁচিয়ে, দুই-তিন ঘা দিয়ে দূর করল তাকে।
খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল রূপসা এমন অতর্কিত হানায়। বুক ঢিপঢিপ করছিল।
চিৎকার করতে করতে আবার তেমনই রূপনগরের রাস্তায় দৌড়তে দৌড়তে মিলিয়ে গেল সে।
সরি ম্যাম, প্লিজ আসুন। সিকিউরিটি চেকিং-এর ঘরে ডাক পড়ল রূপসার। লেডি সিকিউরিটি গার্ড রূপসার গোটা শরীরে মেটাল ডিটেকটর ঠেকিয়ে যখন রূপসা নিরাপদ কি না বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওর তখন আচমকাই মনে পড়ছিল দীপুদার কথা। দীপুদা যখন ওর পুরুষযন্ত্রটি রূপসার গোটা শরীরে এইভাবে ছোঁয়াত, রূপসার মনে হত দীপুদা ওইভাবে বুলিয়ে যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। হাসি পেল ওর।
থ্যাঙ্ক ইউ, ম্যাম। আপনার লাগেজ এখানে রেখে যান। আমরা পৌঁছে দেব। আর অনুগ্রহ করে আপনার সঙ্গে থাকা সবরকম ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং গয়না ও টাকাপয়সা জমা করে দেবেন। আশা করি, আপনাকে এই ব্যাপারে আগেই জানানো হয়েছে।
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। বলে সবকিছু একে একে বার করে সামনে ডেস্কে রাখল রূপসা।
গার্ড বললেন, ম্যাডাম আপনার হাতঘড়িটিও…
ও নিশ্চয়ই। রিস্টওয়াচটাও খুলে রাখল রূপসা। আই ফোন আর র্যাডোর ঘড়িটা রাখতে মন হু হু করে উঠছিল। দুটোই বড্ড প্রিয়, ফোনটা কিনেছিল নিজের টাকায় আর ঘড়িটা পেয়েছিল সুরজিত সিং নামের এক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে।
জিনিসগুলোর ছবি তুলল গার্ড, তারপর রূপসাকে দাঁড় করিয়ে ওই জিনিসগুলো সমেত আবার ছবি তুলল। কম্পিউটারে এন্ট্রি করে নিয়ে বলল, ধন্যবাদ ম্যাডাম।
আচ্ছা। রেহানা ম্যামের কাছে কীভাবে যাব?
আপনাকে হেঁটে যেতে হবে না। ওই গাড়িতে বসে যান, আপনাকে পৌঁছে দেবে।
রূপসা দেখল একটি ঘোড়ার গাড়ি ওর জন্য অপেক্ষা করছে। গাড়ি বলা ভুল হবে। বলা ভালো রথ। এবং গাড়ির চালক, ঘোড়া এবং সেই রথটি টিভিতে দেখা রামায়ণ- মহাভারতের স্টাইলে সাজানো। আবার হাসি পেল রূপসার। সেই রথে উঠে বসল। চলতে শুরু করল সেই ঘোড়ার গাড়ি। সারথির পোশাকেও বলা বাহুল্য সেই প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। রঙিন ধুতি, উত্তরীয়, মাথায় বাহারি রঙের পাগড়ি, কানে মাকড়ি, দুই হাতে বালা। ছমছম শব্দ করতে করতে লাল মোরামের রাস্তা দিয়ে মৃদু লয়ে ছুটছিল ঘোড়ার গাড়ি। রূপসা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল চারিদিক। একশো বিঘা জমির মধ্যে এ যেন একটুকরো অন্য ভারতবর্ষ। প্রাচীন ভারতকে ফিরিয়ে আনা। লাল রাস্তার দুই ধারে অপরূপ ফুলের বাগান, ময়ূর ঘুরছে, হরিণের পাল চরছে নির্ভয়ে। মস্ত দিঘিতে ফুটে রয়েছে পদ্ম, রাজহাঁস ঘুরছে। সার সার নৌকো বাঁধা রয়েছে ঘাটে। সেই নৌকোও কারুকাজমণ্ডিত। ঢালু মাঠগুলি কচি সবুজ ঘাসে ঢাকা। কোথাও আমবাগান, কোথাও গ্ল্যাডিওলাসের ঝাঁক। রূপসা মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। রূপমঞ্জরী যে এমন সুন্দর জায়গা হতে পারে তা ওর কল্পনাতীত ছিল। গাড়ি চলছিল। পথে বেশ কয়েকটি বিদেশি ট্যুরিস্টের দলকেও দেখল। ইতস্তত তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি এবং পাগড়ি পরা গাইড ইংরেজিতে স্থান মাহাত্ম্য বোঝাচ্ছে। বাগান, দিঘি ইত্যাদি পেরোনোর পর শুরু হল খড়ে ছাওয়া ছোট ছোট মাটির বাড়ি। প্রতিটি বাড়ির সামনে নিকনো ছোট উঠোন, ফুলের বাগান।
এই জায়গাটা কত বড়? সারথিকে জিজ্ঞাসা করল রূপসা।
একশো বিঘা। সংক্ষেপে ইংরেজিতে উত্তর দিল সারথি।
বাপ রে! রূপনগরের এই রূপমঞ্জরীর বিশাল এলাকা। তবে এখানে ইচ্ছে হলেই এসে ঘুরে বেড়ানো যায় না। অনেক ব্যাপার-স্যাপার রয়েছে। কেন কে জানে…ওর আবার মনে পড়ল সেই পাগলিটার কথা। কোথা থেকে ছুটে এল আর এমন ভয়ঙ্কর কথা কেন বলছিল? যাসনে, যাসনে, মরবি, পচে মরবি…কে ও? রূপসার মনে পড়ল গার্ডগুলো যখন ওকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ভাগানোর চেষ্টা করছিল তাদের মধ্যে একজন বলে উঠেছিল, আবার এসেছিস? দাঁড়া, এবার তোর পারমানেন্ট ব্যবস্থা করতে হবে।
আবার এসেছিস মানে আগেও এসেছে এই পাগলি। গার্ডরা চেনে। কে জানে কে? অবশ্য পচে মরার জন্য রূপমঞ্জরীতে পা দেয়নি রূপসা। বরং সেখান থেকে বাঁচার জন্যই এখানে আসা।
ঘোড়ার গাড়ি অনেক দূর চলার পর যেখানে থামল সেখানে আরেকটি ফটক। এবং এলাকাটি উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। অদ্ভুত ব্যাপার। গেটের ভেতর আবার গেট! রথ থামতে সেই দরজা খুলে দিল দুই প্রহরী। একেবারেই বাহুবলী সিনেমার সৈনিকের সাজ। প্রহরীদ্বয়কে সম্ভবত আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া ছিল, সে কারণে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই গাড়ি ঢুকে গেল গড়গড়িয়ে। এবারে আবারও বিস্ময়ের পালা। হাঁ হয়ে গেল রূপসা। মনে হল, কোনও সিনেমার সেটের ভেতর ঢুকে গিয়েছে যেখানে প্রাচীন ভারতবর্ষের এক শহরের সেট তৈরি। কী নিখুঁতভাবে গড়া এই নগরী। প্রতিটি বাড়ি যেন পাথর কুঁদে গড়া। অসামান্য সব ভাস্কর্য বাড়িগুলির গায়ে, পথের দুইপাশে। সব ভাস্কর্যই নারী ও পুরুষের মিলনভঙ্গি। খাজুরাহোর কথা মনে পড়ল রূপসার। না, কোনওদিন নিজে চোখে দেখেনি, তবে ছবিতে, বইতে জেনেছে। তবে এখানে মানুষ নজরে পড়ছে না। কেমন যেন মৃত নগরী। সারথিকে জিজ্ঞাসা করে জানার উপায় নেই। কারণ উত্তর মিলবে না।অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
অবশেষে গাড়ি থামল একটি বাড়ির সামনে। বাড়িটি একতলাই কিন্তু উচ্চতায় দোতলা কিংবা তারও বেশি। সামনে বড় বড় ধাপের পাথুরে সিঁড়ি, শেষে চওড়া বারান্দা, বিশাল লম্বা-চওড়া কয়েকটি খিলান, সেখানেও ভাস্কর্য খোদাই। রূপসা ভাবছিল এমন একটি জায়গা নিজে চোখে না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা কঠিন। কত কোটি টাকা খরচ করে এই নগর নির্মাণ হয়েছে কে জানে! যা হোক এবার যে উদ্দেশ্যে আসা সেটা হলেই ভালো। কে জানে…।
চালক রূপসাকে বলল, ম্যাডাম আপনি সোজা গিয়ে ডানদিকের প্রথম ঘরে ঢুকে যাবেন। ওখানেই রেহানা ম্যাডাম বসেন। বাইরের ঘরে ওঁর সেক্রেটারি বসেন। ওঁকে গিয়ে বলুন।
আচ্ছা। বলে নামল রূপসা। তারপর ওই চওড়া সিঁড়িগুলো পার হয়ে পৌঁছল নির্দিষ্ট ঘরটিতে।
যেমনটি আশা করা গিয়েছিল তেমনই প্রাচীন সাজে সজ্জিত ঘরখানি। তবে প্রাচীনত্বের আড়ালে যে আধুনিকতা লুকিয়ে রয়েছে সেটা টের পাওয়া গেল এয়ারকন্ডিশনের ঠান্ডা হাওয়ায়। এসি মেশিনটা দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তার শীতলতা দিব্যি ঘরময় বিরাজমান। ঘরে একজন সুবেশা মহিলা বসেছিলেন সিংহাসন ধরনের একটি চেয়ারে। বলা বাহুল্য তাঁর সাজও প্রাচীন ভারতীয় রমণীর।
মহিলা মিষ্টি হেসে রূপসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন, আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
মহিলার ইংরেজি অ্যাকসেন্ট তুখোড়। এখানে কথাবার্তা ইংলিশেই চালাতে হবে, রূপসা বুঝে গিয়ে বলল, মিস রেহানার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল।
অনুগ্রহ করে আপনার কোড নাম্বারটা বলবেন?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। রূপমঞ্জরী থেকে পাঠানো এস এম এস থেকে কোড নাম্বারটা বলল রূপসা।
দয়া করে অপেক্ষা করুন, আমি এখনই খবর দিচ্ছি। বলে মহিলা তাঁর টেবিলের আড়ালে রাখা ফোন তুলে ওই কোড নাম্বার উল্লেখ করে কারও সঙ্গে কথা বললেন। তারপর ফোন নামিয়ে রেখে রূপসাকে বললেন, আপনি একটু বসুন, ম্যাডাম আপনাকে ডেকে নেবেন।
আচ্ছা। বলে ঘরের একপাশে রাখা চেয়ারে বসল রূপসা। মিনিট দুয়েকও গেল না। সেতারের সুর বেজে উঠল ওই রিসেপশনিস্টের টেবিলে। ফোন তুলল সেই সেক্রেটারি। আচ্ছা ম্যাডাম। বলেই ফোন রেখে দিল। তারপর রূপসার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি আসুন, ম্যাডাম ডেকেছেন।
উঠে দাঁড়াল রূপসা।
এদিকে আসুন, বলে সেক্রেটারি ঘরের ডানদিকের দেওয়ালের একটি স্থানে ঠেলা দিতেই একটা দরজার মাপে ফাঁক হয়ে গেল দেওয়ালের নির্দিষ্ট অংশ। রূপসা ভাবতেও পারেনি যে এই দেওয়ালের মধ্যেই মিশে রয়েছে দরজা। কোনও হাতলও নেই। শুধুই চমক।
ভেতরে যান। ম্যাম রয়েছেন।
ভেতরে ঢোকামাত্র চমকে উঠল রূপসা। এ যেন কোনও রাজা-বাদশাহর সভাকক্ষ। কী অসামান্য কারুকাজ! দেওয়ালে, ছাদে! পুরোটাই শ্বেতপাথরের ওপর কল্কা। রূপসার এক মুহূর্তে মনে পড়ল অনেককাল আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে আগ্রা ফোর্ট দেখতে যাওয়ার স্মৃতি। সেখানেও একটি অংশ ছিল এমনই শ্বেতপাথরের।
আসুন, বসুন। রিনরিনে কণ্ঠে আপ্যায়ন করলেন যিনি তাঁর দিকে তাকিয়ে চোখেও ধাঁধা লেগে গেল। কী অপরূপ সুন্দরী! ইনিই রেহানা! এ যে ঊর্বশী, মেনকাকেও হার মানায়! একবার তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না এমন রূপের ছটা। ঘরের ভেতর আলোর পরিমাণ কম। প্রদীপের শিখার মতো হলদেটে আলো। মৃদু লয়ে সেতার বাজছে। গোলাপের গন্ধ। একটিও আধুনিক আসবাব নজরে আসছে না। তবে তিনি যে বিশাল টেবিলটির ওপারে বসে রয়েছেন সেই টেবিলের আড়ালে একটি কম্পিউটার রয়েছে বোঝা যাচ্ছে, কারণ তার আলো এসে পড়ছে রেহানার চোখে-মুখে। মহিলা অতীব ফর্সা এবং তেমনই সুন্দরী। সেজে রয়েছেন রাজরানির মতো। মনে হচ্ছে দক্ষিণী ছবির নায়িকা।
রূপমঞ্জরীতে আপনাকে স্বাগত, রূপসা। কেমন রূপে রূপে মিলে গিয়েছে দেখুন, বলে খিলখিল করে হেসে উঠলেন রেহানা।
রূপসা দেখল রেহানার দাঁত ঠিক যেন টগর ফুলের কুঁড়ির সারি। একে অসামান্য ফর্সা, তার ওপর এমন মাখনের মতো ত্বক যে হলুদ আলো গায়ে পড়ে পিছলে যাচ্ছে। কাঁধ, গলা, দুই বাহুতে চিকচিক করছে আলোর কণা।
নাকে হিরের নথটি সামান্য ঠিক করে নিয়ে রেহানা বললেন, আচ্ছা রূপসা, আপনার সঙ্গে তো শেষ সাক্ষাৎকারে এখানকার সব শর্তের কথা হয়েই গিয়েছিল। আশা করি আপনি সেগুলিতে রাজি হয়েই এসেছেন।
হ্যাঁ ম্যাম, আমি রাজি।
বেশ।
কথার মাঝেই ঘরে প্রবেশ করল একটি যুবতী মেয়ে। সুন্দরী নয়, তবে লাস্যময়ী অবশ্যই। মেয়েটির হাতে একটি রুপোর ট্রে। সেখানে একটি রুপোর লম্বা গ্লাস বসানো। মেয়েটি এসে ট্রে-সমেত সামান্য ঝুঁকল। রূপসা একটা গ্লাস তুলে নিল। হ্যাঁ, এটাও রুপোর গ্লাস। বেশ ঠান্ডা। ভেতরে সাদা তরল। ওপরে ঘন সাদা কিছুর ক্কাথ। দুটি গোলাপ ফুলের পাপড়ি ভাসছে। মেয়েটি চলে গেল। গ্লাসে চুমুক দিল রূপসা। আহ কী স্বাদ! কেশর বাদাম সরবত। ওপরে মালাই ভাসছে। পুরো গ্লাসটা ঢকঢক করে খেয়ে নিল রূপসা। গ্লাস রেখে দিল ট্রে-তে।
রেহানা বলল, বেশ, তাহলে আপনি এখন আপনার ঘরে যান। চন্দ্রাবলী আপনাকে ঘর দেখিয়ে দেবে। আজ এইবেলা আপনি বিশ্রাম নিন। ইচ্ছে হলে রূপমঞ্জরী ঘুরেও দেখতে পারেন।
রূপসা বুঝল চন্দ্রাবলী আসলে এই শরবত নিয়ে আসা মেয়েটির নাম।
রূপসা উঠল। দুই হাত জড়ো করে নমস্কার জানাল রেহানাকে। তারপর চন্দ্রাবলীর সঙ্গে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল।
প্রধান অফিস বিল্ডিঙের পিছনে একটি দরজা। সেই দরজা ঠেলে ঢুকতেই চোখে যেন ধাঁধা লেগে গেল। এ কী! এ যে অবিশ্বাস্য! দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি খণ্ডকে কোনও দানব তুলে নিয়ে এসে এখানে বসিয়ে দিয়েছে। বেশ অনেকগুলি খড়ে ছাওয়া মাটির ঘর। ভারী সুন্দর করে সাজানো। প্রতিটি ঘরের সামনের দেওয়ালে দেবনাগরী অক্ষরে নাম খোদাই করে লেখা। কোনওটি কলাবতী, মোহিনী, রত্নাবলী, পদ্মিনী। প্রতিটি ঘরের মধ্যে দূরত্বও যথেষ্টই। তকতকে মাটির উঠোন, উঠোনের মাঝে নানা রঙের ফুলের বাগান। ঘরগুলির মাটির দেওয়ালেই বিচিত্র সব ছবি। সবই প্রাচীন স্টাইলে আঁকা মিথুন। মজা লাগল রূপসার। চন্দ্রাবলীকে জিজ্ঞাসা করল, এই ঘরগুলোতে কারা থাকে?
আপনার মতো অনেকে থাকেন। আসুন, আপনার ঘরটি দেখিয়ে দিই।
গ্রামের মাটির বাড়িগুলি যেমন হয়, অবিকল তেমনই এই ঘরগুলি। ঘরের সামনে একধাপ সিঁড়ি, তারপর তকতকে দালান। যে ঘরটির সামনে এসে দাঁড়াল চন্দ্রাবলী সেই ঘরের দেওয়ালে লেখা রূপসা। আরে বাহ! মানে আগেই ঘর অ্যালট হয়ে গিয়েছে!
মোটা কাঠের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল চন্দ্রাবলী। এই কিছুক্ষণের অভিজ্ঞতায় ঘরের ভেতরটাও যেমন হতে পারে আন্দাজ করে নিয়েছিল, তার থেকেও বেশি। ঘরের ভেতরে ঠান্ডা হাওয়ার আভাস। বোঝাই যাচ্ছে এসি চলছে কিন্তু সেটা লুকোনো। মস্ত চওড়া একটি কাঠের পালঙ্ক। মখমলি চাদর পাতা। দুইটি বালিশ। কাঠের কেয়ার করা বেডসাইড টেবিলে হাঁসের গলার মতো প্যাঁচানো লম্বা নলওলা পিতলের জগ। দুটি স্ফটিকের পানপাত্র এবং গেলাস। ঘরের একপাশে একটি সুদৃশ্য ফুলদানিতে রজনীগন্ধার স্টিক আর মেঝেতে জলভরা বেশ বড় মাপের একটি পিতলের গামলায় পদ্ম, জুঁই ইত্যাদি ফুল ভাসছে। ঘর সুবাসিত হয়ে রয়েছে এই নানা ফুলের সমারোহে। বিছানাটা এত সুন্দর যে দেখেই শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করল রূপসার। খাটের পাশে ওর পেল্লায় ট্রলিব্যাগটা রাখা রয়েছে। আগেই পৌঁছে গিয়েছে ব্যাগ। ঘরের ভেতর খুব নরম হলদেটে আলো জ্বলছে। প্রদীপের আলো যেমন হয়। সেই আলোতে চন্দ্রাবলীকে আরও মোহময়ী দেখতে লাগছে। রূপসা আন্দাজ করল তার মানে ওকেও নিশ্চয়ই আরও সুন্দর লাগছে এখন।
এইটি মিলন কক্ষ। বলে চন্দ্রাবলী বলল, অনুগ্রহ করে এইদিকে আসুন।
এদের প্রত্যেকের ইংরেজি উচ্চারণ এত স্পষ্ট যে প্রতিটি শব্দ আলাদা করে কানে পৌঁছয় কিন্তু বলার ভঙ্গি ভারী সুমধুর। রূপসা গেল পাশের ঘরটিতে। সেই ঘরে দেওয়াল জোড়া একটি আয়না। আয়নার চওড়া ফ্রেমেও কাঠের কারুকাজ। আয়নার সামনে একটি টেবিল। টেবিলের ওপর নানা রকমের প্রসাধনী রাখা। এবং একটি চেয়ার। আয়নার মুখোমুখি এই চেয়ারে বসেই রূপচর্চার ব্যবস্থা।
এই দেওয়ালে আপনার পোশাক রাখা রয়েছে।
দেওয়ালের একটি ছোট হাতল ধরে সামনে টানতেই রূপসা দেখল দেওয়ালের একটি অংশ চৌকো মাপে খুলে গেল। ভেতরে থরে থরে পোশাক সাজিয়ে রাখা।
আর এইটা আপনার স্নানাগার।
অবিকল আরেকটি হাতল সামনে টানতেই ভেতরে টয়লেট দেখতে পেল রূপসা।
স্নানাগারে ইন্টারকম রয়েছে। আপনার যা প্রয়োজন দুই ডায়াল করে বলবেন। পেয়ে যাবেন। আমি তাহলে এখন আসি? মৃদু হেসে বলল চন্দ্রাবলী।
হ্যাঁ, আসুন। অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা, আমার বেশ ক্ষিদে পেয়েছে কিন্তু।
আপনার যা প্রয়োজন দুই ডায়াল করবেন। আপনার খাবার দিয়ে যাবে।
আচ্ছা, অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাইরে থেকে দরজা ভেজিয়ে চলে গেল চন্দ্রাবলী। রূপসা আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই মখমলি তুলতুলে নরম বিছানায়। আহহ! কী আরাম! শরীরের অর্ধেক ডুবে গেল সেই কোমল বিছানায়। এয়ার-কন্ডিশনের মিহি ঠান্ডা হাওয়া, পুরোনো ভয়াবহ জীবন থেকে মুক্তির আনন্দ রূপসাকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তন্দ্রাচ্ছন্ন করে তুলল। ঘুম ভাঙল বেশ কিছুক্ষণ পর। ধড়মড় করে উঠে বসল রূপসা। ঘরটা চিনতে দুই সেকেন্ড সময় লাগল, মনে হল অপরিচিত কোথাও চলে এসেছে। তারপরেই মনে পড়ল ওর অবস্থান।
উফ! বেজায় ক্ষিদে পেয়েছে। এবার স্নান করে কিছু খেয়ে নিতে হবে। বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের ব্যাগটা খুলল রূপসা। সেখান থেকে ভালো দেখতে একটা সালোয়ার কামিজের সেট বার করল। এটা গতবছর ওকে গিফট করেছিল অর্জুন। অর্জুন গুহ…পাক্কা শুয়োরের বাচ্চা একটা। মনে মনে একবার গালাগাল দিয়ে সালোয়ার এবং একসেট অন্তর্বাস নিয়ে টয়লেটে গেল ও। ভালো করে স্নান করতে হবে। তার আগে খাবারের অর্ডারটা দিয়ে ফেলা দরকার। টয়লেটও এমনই সাজানো। দুটো দেওয়াল আপাদমস্তক আয়না। এক দেওয়ালে গা ঘেঁষে বেশ বড় একটি বাথটাব। অন্য দেওয়ালে বেসিন, পাশের র্যাকে থরে থরে সাজানো নানা রঙের রূপের শিশি। তবে কোনও শিশির গায়েই কোম্পানির স্টিকার নেই। রূপসা কৌতূহলবশত দুই-একটা শিশি হাতে নিয়ে গন্ধ নিল। কোনওটা চন্দন, কোনওটা গোলাপ অথবা জুঁই ফুলের গন্ধ। কস্তুরীর গন্ধওলা শিশিটা জাস্ট পাগল করে দেওয়া! এরা কি এই সুগন্ধিগুলো নিজেরাই বানায়? হতে পারে।
পনেরো দিন আগেও রূপসা স্বপ্নে কল্পনা করতে পারেনি ওর জন্য এমন এক অলীক জীবন, এমন এক স্বপ্নের জীবন অপেক্ষা করছে। বেসিনের পাশে রাখা টেলিফোন সেটটা অবিকল কাঠের তৈরি একটি মাছ। রিসিভার তুলে বুঝল কাঠ নয় ফাইবারের।
দুই ডায়াল করল। ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল, হ্যাঁ, বলুন।
রূপসা ইতস্তত করে বলল, ইয়ে আমি রূপসা বলছি।
হ্যাঁ জানি, বলুন কী সেবা চান?
রূপসা বুঝল, ওর আগমন সম্পর্কিত যেখানে যা যা তথ্য পৌঁছোনোর, তা সবই পৌঁছে গিয়েছে। জায়গাটা যে ভেতরে ভেতরে চূড়ান্ত প্রফেশনাল তা বলার অবকাশ থাকে না।
খাবার চাই। খুব খিদে পেয়েছে।
নিশ্চয়ই, অনুগ্রহ করে বলুন কী খাবেন?
খাব বলতে…এই ভাত-ডাল-মাছ এইসব…পাওয়া যাবে?
নিশ্চয়ই। আপনার কক্ষে পাঠিয়ে দেব?
হুঁ, তাই দিন। বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল রূপসা। এবার স্নান করতে হবে।
প্রথমেই ইচ্ছে হল বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে স্নান করতে। জীবনে বহুবার বাথটাবে স্নানের সুযোগ ঘটেছে কিন্তু বাথটাবে স্নান করতে নামলেই ওই সেই পাঞ্জাবি ছেলেটার কথা মনে পড়ে। ওর সঙ্গে হোটেলে গিয়ে…কী যেন নাম ছেলেটার…খেয়াল নেই। কিন্তু ওর করা অত্যাচারগুলো মনে রয়েছে। উফফফ…! মনে পড়তেই আবার অজান্তে শিউরে উঠল রূপসা। জানা নেই এরপরের ভবিষ্যত কী। তবে এখন আর কোনও কিছুতেই ভয় লাগে না। সত্যিই… মনে হয় যা হবে হোক। মৃত্যুর অধিক তো কিছু নেই।
শরীর থেকে ওর সালোয়ার, কামিজ, ব্রা, প্যান্টি সব একে একে ছেড়ে ফেলে টানটান হয়ে দাঁড়াল রূপসা। এই স্নানাগারের আয়তন যথেষ্টই বড়। এবং তিন দেওয়ালে আয়না থাকার ফলে সব ভঙ্গিতেই নিজেকে দেখা সম্ভব। নিজের লম্বা চুল খুলে দিয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে থাকল রূপসা। ও কোনওকালেই ফর্সা নয়, বরং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা। কিন্তু এমন মসৃণ আর উজ্জ্বল ত্বক যে একটা পিঁপড়ে উঠতে গেলেও পিছলে পড়ে যায়। রূপসার ঘন কালো ঢেউ খেলানো চুল নিতম্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। ছোট কপাল। ধনুকের মতো ভ্রূ-যুগল। আর দীঘল গভীর দুটি চোখ। রূপসা নিজেও জানে ওর চোখের মধ্যে এমন এক আবেদন, এমন এক আকর্ষণ এবং মায়া রয়েছে যে একবার তাকাবে তার পক্ষে পরমুহূর্তে চোখ সরিয়ে নেওয়া কঠিন। তীক্ষ্ণ নাসা আর ঈষৎ পুরু ঠোঁট। ঠোঁটদুটিও যে কোনও পুরুষের কাছে একান্ত কাম্য। রূপসার গলায় তিনটি স্পষ্ট ভাঁজ। মাটির প্রতিমার যেমন থাকে। কাঁধ সামান্য ঢালু। স্তনদুটি যেন সৃষ্টিকর্তা কামনাজর্জর অবস্থায় রচনা করেছিলেন। দৃঢ়, সুডৌল, বর্তুলাকার এবং বৃন্তদুটি জাগ্রত ও তার চারিপাশ মসৃণ খয়েরি বলয়। খাজুরাহো মন্দিরের গায়ে প্রস্তরনির্মিত নারীমূর্তির স্তনের মতোই নিটোল এবং উন্নত। রূপসার নাভি গভীর, এতটাই গভীর যে কোনও পুরুষের নাক অর্ধেকের বেশি ডুবে যায় ওই গভীরতায়। কোমরের দুইপাশে সামান্য মেদের আভাস। অতিরিক্ত নয়, আবার একেবারে আধুনিকা তন্বী বা সাইজ জিরো বলতে যেমনটা বোঝায় তাও নয়। পিঠ থেকে কোমর পর্যন্ত ইংরেজি ভি-এর মতো আকৃতি তারপর আবার তরমুজের মতো স্ফিত নিতম্ব থেকে নিটোল পা দু’খানি নিম্নমুখী বল্লমের ফলার আকৃতি নিয়ে মাটিতে ছুঁয়েছে। রূপসার হাত দুটি দীর্ঘ এবং এতটাই নিটোল যে অস্থির অস্তিত্ব বোঝা যায় না। মণিবন্ধে তিনটি করে ভাঁজ, করতল সর্বদা ঈষদুষ্ণ, আঙুলগুলি বাস্তবিকই চাঁপার কলির মতো এবং ততোধিক কোমল। হাত এবং পায়ের প্রতিটি নখ নিয়মিত পরিচর্যায় উজ্জ্বল ও মসৃণ। বাহুমূল থেকে শুরু করে গোটা শরীর নির্লোম। শুধুমাত্র যৌনকেশটুকু নিপুণ ও আকর্ষণীয়ভাবে কামানো।
এককথায় রূপসার শরীরটি ভারতীয় দেবীর মতো। নিজেকে বেশ কিছুক্ষণ আয়নায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখল। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই রূপসা নার্সিসাস সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়। দেখতে শুরু করলে সময়জ্ঞান থাকে না। এই অভ্যাস ওর আজকের নয়। সেই আট-নয় বছর বয়স থেকেই।
নিজেকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে আবারও নিজের শরীরের প্রতি মুগ্ধ হয়ে রূপসা স্নান করার জন্য দেওয়ালের কল ঘোরাল। সঙ্গে সঙ্গে ছাদ ফুঁড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! অবাক হল ও! শাওয়ারটা এমনভাবে তৈরি যে কল খোলার সঙ্গে সঙ্গে সিলিং-এর অসংখ্য ছিদ্র থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টির মতো জলধারা পড়বে। গোটা স্নানঘর জুড়ে। ঠিক যেন আসল বৃষ্টির অনুভব। দুই হাত ছড়িয়ে দিল রূপসা। আহহহ! দুই হাত ছড়িয়ে ঘুরতে থাকল। হঠাৎই মনে পড়ল বহুযুগ আগের এই বৃষ্টিতে ভেজার কথা।