☼ অজেয় রায় ☼
ফেরোমন
নয়
কার্লো একটা চেয়ারে বসে চিন্তামগ্ন ছিলেন। আমাদের দেখে চমকে উঠলেন।–একি, রিপোর্টার! তোমরা এখানে কেন? না, ফেরোমন রিসার্চ সম্বন্ধে আমি এখন একটি কথাও বলব না। কাজ শেষ না হলে কাউকে কিছু জানাব না। কার্লো প্রায় মারতে আসেন আর কি!
মামাবাবু শান্ত গলায় বললেন, “আমরা রিপোর্টার, কে বলেছে?
কেন, টেলর।
টেলর আপনাকে ভুল বুঝিয়েছে। আমি একজন প্রাণিবিজ্ঞানী। আপনার প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করি। আমি জানতে এসেছি, ফেরোমন নিয়ে কে গবেষণা করছে? আপনি, না টেলর? না, দুজনে একসঙ্গে?
ফুঃ! টেলর ফেরোমন-এর কী বোঝে? কোনো মৌলিক গবেষণা করার মতো ওর মাথাই নেই।
কিন্তু জুওলজি পত্রিকায় টেলর নিজের নামে ফেরোমন-এর ওপর দুটি প্রবন্ধ লিখেছে। আমি নিজে পড়েছি। একেবারে মৌলিক গবেষণা। প্রথমটা পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধিতে ফেরোমন-এর প্রভাব। দ্বিতীয়টি কৃত্রিম ফেরোমন তৈরি সম্বন্ধে।
কার্লোর দৃষ্টি বিস্ফারিত। সর্বনাশ! তার মানে সে আমার লেখা চুরি করেছে। গবেষণা সংক্রান্ত আরও অনেক মূল্যবান পেপারস্ একসঙ্গে ছিল। ওর কাজ ছিল আমার লেখা টাইপ করে এখানে গুছিয়ে রাখা। উঃ কী বিশ্বাসঘাতক, কী শয়তান! কোথায় সে
কার্লোর চেহারা ক্ষিপ্ত ব্যাঘ্রের মতো।
আচ্ছা, টেলরের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় কীভাবে? মামাবাবু প্রশ্ন করলেন।
কার্লো কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলেন। তারপর বললেন–প্রথম পরিচয় এক উপজাতি গ্রামে। তারপর অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে হাসপাতালে থাকার সময় ও আমায় দেখতে আসে। সেবাযত্ন করে। হাসপাতাল থেকে বেরোবার পর টেলরই আমাকে এই নির্জনে ল্যাবরেটরি বানিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়। দুর্ঘটনায় আমার মুখ বিকৃত হয়ে গেছিল। লোকে হাঁ করে মুখের দিকে চেয়ে থাকত। ফলে লোকজনের ভিড় আমার কাছে তখন অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তার প্রস্তাব তাই সানন্দে গ্রহণ করি। ও আমাকে নিজের পয়সা খরচ করে ল্যাবরেটরি বানিয়ে দিয়েছিল। দরকারমতো নানা জায়গায় সঙ্গে করে নিয়ে যেত।
টেলর আফ্রিকায় কী করছিল? বিল জিজ্ঞেস করল। ঠিক জানি না। বলেছিল, ও একজন প্রাণিবিজ্ঞানী। বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়ের তালিকা তৈরি করছে। খুব ভদ্র ছিল। কৃতজ্ঞতাবশে ভেবেছিলাম আমার আবিষ্কারে ওর নামটাও জুড়ে দেব। ভাবতে পারিনি আমায় ঠকাবে। আমার এতদিনের সাধনা চুরি করবে! ওঃ!
মনকে শক্ত করুন ডক্টর কার্লো। আপনার কাগজপত্র আশা করছি উদ্ধার করতে পারব। মনে হয় ও অপেক্ষায় ছিল আপনার গবেষণা শেষ হলে, আপনাকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে সমস্ত গবেষণা নিজের নামে প্রকাশ করে বিখ্যাত হবে। কেউ টের পেত
তার জোচ্চুরি। দৈবাৎ আমি আপনাকে চিনে ফেলাতে তার প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হল। তখন আমাদের খতম করার পরিকল্পনা করল।
সে কি! হ্যাঁ, আপনারই তৈরি কৃত্রিম ফেরোমন-এর সাহায্যে! আচ্ছা ডক্টর কার্লো, কয়েকদিন আগে টেলর একটা ছোট পাহাড়ের কাছে তাঁবু ফেলেছিল। সেখানে কি আপনিও ছিলেন? আপনার জুতোর ছাপ যেন আমি লক্ষ করেছি। বিল কার্লোর জুতোর দিকে চেয়ে বললেন।
হ্যাঁ, ছিলাম। আমি আগে চলে আসি। টেলর পরে এল। ওখানে কী করছিলেন? মামাবাবু প্রশ্ন করলেন। আমি ওই পাহাড়ের গুহায় কিছু আদিম মানবের পাথরের অস্ত্র-শস্ত্র দেখতে পাই। টেলরকেও দেখিয়েছিলাম। জিনিসগুলো পরীক্ষা করছিলাম হঠাৎ টেলর বলল, বৃষ্টি নামবে। আপনি এখুনি ফিরে যান, আমি কয়েকদিন পরে যাচ্ছি।
হুম্। ঠিক আছে। আপনি বিশ্রাম করুন, উত্তেজিত হবেন না। আমরা চললাম।
আমার পেপার্স? কার্লো আর্তনাদ করে উঠলেন।
দেখি, কী করতে পারি।
বাইরে এসে মামাবাবু বললেন, টেলরের ওপর আমার প্রথম সন্দেহ জাগে কখন, জানো? আন্তোনিওর কথা শুনে।
কী কথা?
সেই যে আন্তোনিও বলল, লিবিয়ায় এক মরূদ্যানে সে কার্লোকে দেখেছিল। একা। অথচ টেলরের প্রবন্ধে ছিল সে ঠিক ওই সময়ে এবং ওই জায়গায় পঙ্গপাল নিয়ে রিসার্চ করে। ফলে আমার ধোঁকা লাগল–কে গবেষণা করছিল? টেলর না কার্লো? টেলর কি তবে কার্লোর কাজ চুরি করেছেন? আমার অনুমান দেখলাম সঠিক।
বন্দী গোলোর ঘরের শিকল খুলে মামাবাব ভিতরে ঢুকলেন। গোরো মাটিতে বলে চিল। ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াল। মামাবাব ধমক দিয়ে বললেন, “আমাদের পোটারদের দেবতার গল্প বলে ভয় দেখাতে কে তোমায় নির্দেশ দিয়েছিল? সত্যি কথা বলবে, নইলে–
টেলর সাহেব, বানা।
মামাবাবু আর কথা না বলে শিকল তুলে দিয়ে বেরিয়ে এলেন।টেলর কেন এখানে আমাদের কাজ বন্ধ করতে চেয়েছিল বুঝতে পারছ?
হ্যাঁ, পাছে আমরা ওই গুহার সন্ধান পাই।
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। মামাবাবু মন্তব্য করলেন।