☼ অজেয় রায় ☼
ফেরোমন
সাত
টেলর সেদিন এলেন না। পরদিন সকাল আটটা নাগাদ দেখা করতে এলেন। বললেন। কয়েকজন পোটার জোগাড় হয়েছে, কিন্তু মুশকিল হল, তারাও পাহাড়ের কাছে পাথর কাটতে রাজি হচ্ছে না। আপাতত না হয় এদের নিয়ে রকপেন্টিং-এর খোঁজে বেরিয়ে পড়ুন! ফসিল উদ্ধার পরে করবেন।
মামাবাবু চিন্তা করতে থাকেন।
এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে আন্তোনিও হাজির হল। কোন কাকভোরে সে ক্যামেরা ঘাড়ে বেরিয়েছিল। এসেই বলল, চা খাব। ওঃ, আজ দুটো জব্বর সাবজেক্ট পেয়েছি।
কী সাবজেক্ট? এক নম্বর, একপাল বুনো কুকুর। কী গ্রেসফুল! একটা প্রকাণ্ড জেব্রার পিছনে তাড়া করে ছুটছিল। অনেক ছবি নিয়েছি।
বিল তাড়াতাড়ি বললেন, আন্তোনিও, এমন কর্ম কক্ষনো করবেন না। বুনো কুকুর আফ্রিকার সবচেয়ে হিংস্র জীব। অকারণে শিকার করে। বাগে পেলে মানুষকেও ছাড়ে না।
তাঁর কথায় কান না দিয়ে আন্তোনিও বলল, দু-নম্বর হল পিঁপড়ে। লক্ষ লক্ষ পিঁপড়ে একটা গাছে বাসা বেঁধেছে। গাছের অর্ধেকটা পর্যন্ত থিকথিক করছে, পিঁপড়েতে গুঁড়ি ও ডালগুলো ঢেকে গেছে। মাইলখানেক দূরে ওই বনের মধ্যে। হ্যাঁ, একটা ওয়াটার-হোল আবিষ্কার করেছি। বিল, যাবেন নাকি? দুজনে পাশে লুকিয়ে থাকব। জন্তুদের জল খাবার ছবি তুলব। রাতেও থাকব, দেখব। উঁহু, আর কেউ নয়। ভিড় হলে জন্তুরা আসবে না। বিল, যাবেন?
যাব। বিল সম্মতি জানাল।
আন্তোনিও হুড়হুড় করে কথা বলে যাচ্ছিল, হঠাৎ থেমে টেলরের দিকে চাইল, মশাইকে তো আগে দেখিনি!
তাকে টেলরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
ও, আপনাকে চিনি। মানে নাম শুনেছি, দারুণ বৈজ্ঞানিক। আপনিই তো আমাদের পোর্টার জোগাড় করে দেবেন?
টেলর বলল, চেষ্টা করছি। আপনার পেতে অসুবিধা হবে না। প্রোফেসরের জন্যই ভাবনা। হ্যাঁ, প্রোফেসর, ভেবে দেখলাম আপনার ওই জায়গাটা অনুসন্ধান না করে চলে যাওয়া উচিত হবে না। আমি অন্য গ্রামে চেষ্টা করি। কটা দিন ধৈর্য ধরুন। কোথাও যাবেন না। এখানেই থাকবেন। আচ্ছা বিদায়।
দুপুর একটা নাগাদ টেলর গোরোকে নিয়ে আবার হাজির হলেন। সঙ্গে তাঁবু ও কিছু জিনিস। বললেন, এক জায়গায় রকপেন্টিং-এর সন্ধান পেয়েছি। লাঞ্চ হয়ে গেছে তো? তবে যান, দেখে আসুন। গোয়রা আপনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। মাত্র দু-মাইল পথ। সন্ধের আগে ফিরে আসতে পারবেন।
বেশ যাচ্ছি। কিন্তু তবু নিয়ে বেরিয়েছেন যে?
আজ ঝর্নার কাছে কাটাব। ল্যাবরেটরিতে ফিরছি না। কার্লোর মেজাজ অত্যধিক খারাপ। আমার সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে। কী করব, মাঝে মাঝে ধৈর্যচ্যুতি হয়। যাহোক, এখন ওর সামনে না যাওয়াই ভালো। কাল সকালে ওর মেজাজ ঠাণ্ডা হলে ফিরব। বনের মধ্যে একটা মস্ত মৌচাক আছে। বসে বসে মৌমাছি দেখি। আপনারা ফিরে এলে গল্প হবে।
দুই নয়, অন্তত চারমাইল হাঁটতে হল। চৌকো বড় একটা পাথরের গায়ে লাল-কালো রেখায় কয়েকটা জিরাফ ও হরিণ আঁকা। একটা কাগতাড়ুয়া গোছের মানুষের ছবি। দেখলে মনে হয় ছোট ছেলে এঁকেছে।
মামাবাবু একটু পরীক্ষা করেই গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন, বাজে খাটলাম। চলো ফিরি।
একটু জিরিয়ে ফিরতি পথে হন্টন দিলাম।
টেলর আমাদের তাঁবুর কাছে অপেক্ষা করছিলেন।
বললেন, কেমন দেখলেন?
ঠকেছি, এগুলো তেমন প্রাচীন নয়। মামাবাবু জানালেন।
ইস, লোকটা দেখছি বাজে খবর দিল। টেলর কাঁচুমাচুভাবে বললেন। টেলর তার তাঁবুতে আমাদের কফি খেয়ে যেতে ডাকলেন। কিন্তু মামাবাবু আর গেলেন না। বড্ড ক্লান্ত।
আন্তোনিও একটা বাঁদরছানা ধরেছিল। তাঁবুর খুঁটিতে সেটা বাঁধা থাকত। আবিষ্কার করলাম সেটা ইতিমধ্যে পালিয়েছে।