পরেশ
পাঁচ
আবার ঢাক ঢোল ও কাঁসি সহযোগে ৺শুভচণ্ডীর সমারোহে পূজার আয়োজন হইতেছিল, পরেশ বাধা দিয়া কহিল, বাবা, এ-সব থাক।
কেন?
পরেশ কহিল, এ আমি সইতে পারবো না।
তাহার বাবা বলিলেন, বেশ ত, সইতে না পার, আজকের দিনটা কলকাতায় বেড়িয়ে এসো গে। জগন্মাতার পূজো—ধর্ম-কর্মে বাধা দিয়ো না।
বলা বাহুল্য, ধর্ম-কর্মে বাধা পড়িল না।
দিন-দশেক পরে একদিন সকালে গুরুচরণের ঘরের দিকে অকস্মাৎ একটা হাঁকাহাঁকি চেঁচামেচির শব্দ উঠিল, খানিক পরে গয়লা-মেয়ে কাঁদিতে কাঁদিতে আসিয়া উপস্থিত হইল, তাহার নাক দিয়া রক্ত পড়িতেছে। হরিচরণ ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, রক্ত কিসের মোক্ষদা, ব্যাপার কি?
কান্নার শব্দে বাটীর সকলে আসিয়াই পৌঁছিলেন। মোক্ষদা বলিল, দুধে জল দিয়েছি বলে বড়বাবু লাথি মেরে আমায় গর্তে ফেলে দিয়েছেন।
হরিচরণ কহিল, কে কে? দাদা? যাঃ—
পরেশ বলিল, জ্যাঠামশাই? মিথ্যে কথা।
ছোটগিন্নী বলিলেন, বঠ্ঠাকুর দিয়েছেন মেয়েমানুষের গায়ে হাত? তুই কি স্বপ্ন দেখচিস গয়লা-মেয়ে?
সে গায়ের কাদা-মাটি দেখাইয়া ঠাকুর-দেবতার দিব্য করিয়া বলিল, ঘটনা সত্য। ইনজংশনের কৃপায় প্রাচীর তোলা বন্ধ হইয়াছিল বটে, কিন্তু উঠানের গর্তগুলা তেমনিই ছিল,—বুজান হয় নাই। গুরুচরণ লাথি মারায় ইহারই মধ্যে মোক্ষদা পড়িয়া গিয়া আহত হইয়াছে।
হরিচরণ কহিল, চল্ আমার সঙ্গে, নালিশ করে দিবি।
গৃহিণী কহিলেন, কি যে অসম্ভব বল তুমি! বঠ্ঠাকুর মেয়েমানুষের গায়ে হাত দেবেন কি! মিছে কথা।
পরেশ স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, একটা কথাও বলিল না।
হরিচরণ কহিল, মিছে হয় ফেঁসে যাবে। কিন্তু দাদার মুখ দিয়ে ত আর মিথ্যে বার হবে না। মেরে থাকেন শাস্তি হবে।
যুক্তি শুনিয়া গৃহিণীর সুবুদ্ধি আসিল, কহিলেন, সে ঠিক। নিয়ে গিয়ে নালিশ করিয়েই দাও। ঠিক সাজা হয়ে যাবে। হইলও তাই। দাদার মুখ দিয়া মিথ্যা বাহির হইল না। আদালতের বিচারে তাঁহার দশ টাকা জরিমানা হইয়া গেল।
এবার ৺শুভচণ্ডীর পূজা হইল না বটে, কিন্তু পরদিন দেখা গেল কতকগুলা ছেলে দল পাকাইয়া গুরুচরণের পিছনে পিছনে হৈ হৈ করিয়া চলিয়াছে। গয়লানী মারার গানও একটা ইতিমধ্যে তৈরি হইয়া গিয়াছে।