সংকলিতা
চিরদিনই তরুণেরা অন্যায়ের করে নিবারণ,
এদের এ সাহসের আমি তাই নয়কো কারণ।
কোতোয়াল
আমি রামদাস কোতোয়াল—
চটাস্নি ভুলে, কাটিস্নি কুমিরের খাল।
সংকলিতা
ছি! ছি! ছি! ওগো কোতোয়ালজী,
আমি কি তোমাকে পারি চটাতে?
শত্রুও পারে না তা রটাতে।
কোতোয়াল
জানে বাতাস, জানে অন্তরীক্ষ,
জানে নদী, জানে বনের বৃক্ষ,
তুই এনেছিস এদেশে দুর্ভিক্ষ।
সংকলিতা
ক্ষমা করো! আমি সর্বনেশে!
পরের উপকারের তরে এসে—
মন্বন্তর ছড়িয়ে গেলাম তোমাদের এই দেশে।
উদয়ন
অমন ক’রে বলছ কেন ভগ্নী!
জ্বালছ মনে কেন ক্ষোভের অগ্নি?
রাঘব বোয়াল এই কোতোয়াল
হানা দেয় এ রাজ্যে
একে তুমি এনোই না গেরাহ্যে।
কোতোয়াল
আমার শাসন-ছায়ায় হয়ে পুষ্ট
রাঘব বোয়াল বলিস আমায় দুষ্ট?
ইন্দ্রসেন
বলা উচিত সহস্রবার যেমন তুমি নির্দয়।
নির্দোষকে পীড়ন করায় যেমন তোমার নেই ভয়।
কোতোয়াল
বার বার করেছি তো সাবধান,
এইবার যাবে তোর গর্দান।
সংকলিতা
চুপ করে থাক ভাই, কথায় নেইকো ফল,
আমার জন্যে কেন ডাকছ অমঙ্গল?
রাজা ধনাগার যদি দেন প্রজাদের হাতে
ওর যে সমূহ ক্ষতি, ভেবে ও ক্ষুব্ধ তাতে।
কোতোয়াল
ওরে ওরে রাক্ষুসী, ওরে ওরে ডাইনী,
তোর কথা আমি যেন শুনতেই পাই নি,
তোর যে ঘনাল দিন, সাহস ভয়ংকর,
দুঃসাহসের কথা বলতে নেইকো ডর?
সত্যকাম
তোমার মতো দুর্জনকে করতে হলে ভয়
পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মোটেই উচিত নয়।
কোতোয়াল
তোদের মুখে শুনছি যেন ভাগবতের টীকা,
নিজের হাতে জ্বালছিস আজ নিজের চিতার শিখা।
ইন্দ্রসেন
একটি তোমার তলোয়ারের জোরে
ভাবছ বুঝি চিরকালটাই যাবে শাসন করে?
সেদিন তো আজ অনেক কালই গত,
তোমার মুখের ফাঁকা আওয়াজ শুনছি অবিরত।
কোতোয়াল
(ইন্দ্রসেনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে)
বুঝলে এঁচোড়পাকা,
আওয়াজ আমার নয়কো মোটেই ফাঁকা।
সংকলিতা
(আর্তনাদ ক’রে)
দরিদ্রের রক্ত ক’রে শোষণ
বিরাট অহংকারকে করো পোষণ,
তুমি পশু, পাষণ্ড, বর্বর
অত্যাচারী, তোমার ও হাত কাঁপে না থরথর!
কোতোয়াল
(হুংকার দিয়ে)
আমাকে বলিস পশু, বর্বর?
ওরে দুর্মতি তুই তবে মর।
(তলোয়ারের আঘাতে আর্তনাদ ক’রে সংকলিতার মৃত্যু)