পথিক

শুনছ হে কোতোয়াল—

নগরে শুনছি যেন গোলমাল?

উদয়, ইন্দ্র, ও সত্য (একসঙ্গে)

ছাড়, ছাড়, ছাড় ওকে—ছেড়ে দাও।

কোতোয়াল

ওরে রে ছেলের দল, চোপরাও!

সংকলিতা

কখনো কি তোমরা ন্যায়ের ধারটি ধারো?

বন্দী যদি করো আমায় করতে পারো,

করি নি তো দেশের আঁধার ঘুচিয়ে আলো

কারাগারে যাওয়াই আমার পক্ষে ভালো।

পথিক

ওগো নগরপাল!

রাজপুরীতে এদিকে যে জমলো প্রজার পাল

পথিকের প্রস্থান

ইন্দ্রসেন

অত্যাচারী কোতোয়ালের আজকে একি অত্যাচার?

এমনিতর খেয়ালখুশি করব না বরদাস্ত আর।

কোতোয়াল

(তরবারি উঁচিয়ে)

হারে রে দুধের ছেলে, এতটুকু নেই ডর?

মাথার বিয়োগব্যথা এখুনি বুঝবে ধড়।

রাজদূতের প্রবেশ

রাজদূত

(চিৎকার ক’রে)

রাখো অস্ত্রের চাকচিক্য

এদেশে লেগেছে দুর্ভিক্ষ

প্রজাদল হয়েছে অশান্ত

মহারাজ তাই বিভ্রান্ত।

কোতোয়াল

একি শুনি আজ তোমার ভাষ্য?

মনে হয় যেন অবিশ্বাস্য,

মহামন্বন্তরের হাস্য,

এখানেও শেষে হল প্রকাশ্য?

উদয়ন

আমরা তো পূর্বেই জানি,

লাঞ্ছিতা হলে কল্যাণী

এদেশেও ঘটবে অমঙ্গল

উঠবেই মৃত্যুর কল্লোল।

কোতোয়াল

বুঝলাম, সামান্যা নয় এই মেয়ে,

নৃপতিকে সংবাদ দাও দূত যেয়ে।

রাজদূতের প্রস্থান

(সংকলিতার প্রতি)

আজকে তোমার প্রতি করেছি যে অন্যায়

তাইতো ডুবেছে দেশ মৃত্যুর বন্যায় ;

বলো তবে দয়া করে কিসে পাব উদ্ধার

ঘুচবে কিসের ফলে মৃত্যুর হাহাকার?

সংকলিতা

নই আমি অদ্ভুত, নই অসামান্যা,

ধ্বনিত আমার মাঝে মানুষের কান্না—

যেখানে মানুষ আর যেখানে তিতিক্ষা

আমার দেশের তরে সেথা চাই ভিক্ষা।

আমার দেশের সেই মহামন্বন্তর

ঘিরেছে তোমার দেশও ধীরে অভ্যন্তর।

মহারাজ ও পিছনে কুবের শেঠের প্রবেশ

মহারাজ

কে তুমি এসেছো মেয়ে আমার দেশে,

এসেছ কিসের তরে, কার উদ্দেশে?

সংকলিতা

আমার দেশেতে আজ মরে লোক অনাহারে,

এসেছি তাদের তরে মহামানবের দ্বারে—

লাখে লাখে তারা আজ পথের দুধার থেকে

মৃত্যুদলিত শবে পথকে ফেলেছে ঢেকে।

চাষী ভুলে গেছে চাষ, মা তার ভুলেছে স্নেহ,

কুটিরে কুটিরে জমে গলিত মৃতের দেহ ;

উজাড় নগর গ্রাম, কোথাও জ্বলে না বাতি,

হাজার শিশুরা মরে, দেশের আগামী জাতি।

রোগের প্রাসাদ ওঠে সেখানে প্রতিটি ঘরে,

মানুষ ক্ষুধিত আর শেয়ালের উদর ভরে;

এখনো রয়েছে কোটি মরণের পথ চেয়ে

তাইতো ভিক্ষা মাগি এদেশে এ-গান গেয়ে—