» » মুঙ্গু

বর্ণাকার

অজেয় রায়

মুঙ্গু

এগার

কটা দিন রীতিমতো উত্তেজনার মধ্যে কেটেছে।

আমার ও সুনন্দর আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আবিষ্কার।

আমরা আরও দুদিন মুম্বুর সামনে যাগযজ্ঞ করেছি। ফসিল সম্বন্ধে মামাবাবুর ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। সুনন্দও উৎসাহের মাথায় আমাকে আরও একদফা লেকচার দিয়েছে। পাখির উৎপত্তি, বিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে, মামাবাবুর ইচ্ছে ফসিলের ফোটো তোলেন। কিন্তু অন্ধকার ঘরে ফ্ল্যাস ছাড়া ছবি উঠবে না। আর আমাদের একটি বাল্বও আস্ত নেই।

দ্বীপের লোকের চোখে আমরা প্রায় অবতার বনে গেছি। মুঙ্গুকে স্বচক্ষে দেখেও যে তারা এবং আমরা উভয় পক্ষই বহাল তবিয়তে টিকে আছি এমন অভাবনীয় কাণ্ড তারা কল্পনাও করতে পারেনি।

আর কামাউ? অনুভব করছি সর্বদা সে আমাদের মস্তকে যাবতীয় অভিশাপ বর্ষণ করে। চলেছে। বয়ে গেছে, আমরা থোড়াই কেয়ার করি। তবে শুধু যে শাপমন্নি করে কামাউ হাত গুটিয়ে বসে ছিল না, অচিরেই টের পেলাম হাড়ে হাড়ে।

ইতিমধ্যে আমরা এক নতুন তথ্য জেনেছি।

মুঙ্গু দর্শনের পরের দিন। মামাবাবু আমাদের বলেছিলেন, টোটো এলে আমায় ডেকো। ওর সঙ্গে কথা আছে। সন্ধ্যায় টোটো আসতেই মামাবাবুকে ডাকলাম।

মামাবাবুকে কাছে আসতে দেখেই টোটো কঁচুমাচু হয়ে গেল। রাশভারি মামাবাবুকে সে এড়িয়ে চলত। হাসিমুখে বললেন, টোটো, খবর কী? সর্দারের ছেলে কেমন আছে?

একদম ভালো হয়ে গেছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বেশ বেশ। সুসংবাদ। আচ্ছা এই মুহূকে তোমরা কদ্দিন পুজো করছ? অনেকদিন?

আমরা পুজো করব কেন? ও তো কামাউয়ের দেবতা! আমরা কোনো মূর্তিপুজো করি না।

সেকি! আমরা তিনজনেই অবাক।

কামাউয়ের দেবতা, কিন্তু তোমাদের নয়? আশ্চর্য। কামাউ কি তোমাদের জাতের লোক নয়? মামাবাবু জিজ্ঞাসা করলেন।

নয়ই তো, ও ভিন্ন জাতের লোক। সাদা মানুষেরা ওকে ধরে নিয়ে যায়। দাস করে রেখে, খুব খাঁটিয়েছিল। অত্যাচার করেছিল। তারপর একদিন সে পালায়। আমাদের গায়ে এসে আশ্রয় চায়। তখন থেকে আমাদের সঙ্গে আছে।

তা বাইরের জাতের লোক কামাউ তোমাদের মাহুঙ্গা হল কী করে?–মামাবাবু গভীর আগ্রহে প্রশ্ন করেন।

ও কিনা অনেক ওষুধ-টষুধ জানে। আর ম্যাজিক দেখাত। তাই আমাদের জাতে ওর খুব খাতির হল। তারপর আমাদের পুরনো মাহুঙ্গা মরে গেলে ও হল নতুন মাহুঙ্গা।

মাহুঙ্গা কী? আমি বলি।

উইচ-ডক্টর! ওঝা। মামাবাবু উত্তর দিলেন।

অ্যাঁ! ওঝা হয়ে গেল, কেউ আপত্তি করল না? আমি বললাম।

ও বাব্বা, কার অত সাহস! কামাউ ভীষণ লোক। সবাই ওকে ভয় করে। তাছাড়া অসুখ-বিসুখ হলে, সাপে কাটলে, জানোয়ারে কামড়ালে বা দুষ্ট অপদেবতা ভর করলে ও ছাড়া আমাদের গতি নেই।

তুমি এত কথা জানলে কী করে? মামাবাবু বলেন।

ঠাকুমার মুখে শুনেছি। ইস, কী ভালো যে গল্প বলত ঠাকুমা, যদি শুনতে, কত রকম কথাই জানত। কিন্তু কী করে শুনবে, ঠাকুমা আমার মরে গেছে চার বছর হল।

টোটো তার ঠাকুমার আরও কিছু প্রশস্তি গাইতে যাচ্ছিল, মামাবাবু থামিয়ে দিলেন—

আচ্ছা এই মূর্তি কামাউ কোত্থেকে পেয়েছে? সঙ্গে নিয়ে এসেছিল?

মোটেই না। আমাদের গ্রামে আসার কিছুদিন পরে কামাউ হঠাৎ মুহূকে পায়। গ্রামের কাছে ছিল একটা পাথুরে খাদ। কামাউ খাদের পাশে একদিন বসে আছে, এমন সময় চড়চড় করে পাথর ফেটে গেল, ভিতর থেকে আবির্ভূত হলেন মুঙ্গু। কামাউ তখুনি পাথর কেটে তাকে নিয়ে এল।

বাঃ চমৎকার, মিলে যাচ্ছে। মামাবাবু আমাদের উদ্দেশ করে বললেন। ডেয়ারিং বিলও দেখেছিল গ্রামের কাছে এক উপত্যকা, সেখানে কালো রঙের পাথরের স্তর।

এ কদ্দিন আগের ঘটনা? মামাবাবু টোটোকে জিজ্ঞেস করলেন।  কদ্দিন হবে? টোটো গালে হাত দিয়ে ভাবল। ঠাকুমা বলেছিল এখানে আসার বেশ কিছু বছর আগে।

কিন্তু কামাউয়ের দেবতার সামনে তোমরা নাচগান করো কেন? সুনন্দ কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত হয়ে বলল।

আজ করছি, প্রথমে করতাম না। ঠাকুমা বলেছে, প্রথম প্রথম কামাউ নাকি একা একা কুটিরের ভিতর মুঙ্গুর পুজো করত। করে সে নাকি দৈবশক্তি পায়। আমাদের জাতের কেউ কাছে যেত না, আমল দিত না। পরে যখন ওর দাপট বাড়ল, গ্রামে কোনো বড় উৎসব হলে ও মুলুকে নিয়ে আসত নাচ-গানের আসরে। প্রথম দিকে কেউ কেউ বলেছিল, ওর দেবতার সামনে আমরা নাচব কেন? কিন্তু বেশির ভাগ ওর দলে। কামাউকে তাদের দারুণ বিশ্বাস। তাছাড়া লোকটা ভয়ঙ্কর। ঠাকুমা বলত, ও নাকি বাণ মারতে জানে। তোমার ওপর কোনো কারণে চটে গেছে, রাত্তিরে তুমি ঘুমোত গেলে, কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। ওমা, সকালে সবাই দেখবে মরা কাঠ হয়ে আছ।

হুম্। তোমার ঠাকুমা দেখছি অনেক গল্প বলেছে।

মামাবাবুর মন্তব্যে উৎসাহিত হয়ে টোটো বলল, ঠাকুমা যে কত গল্প জানত! সব মনে ছিল।

বেশ শুনব আর একদিন। মামাবাবু চিন্তান্বিতভাবে তাঁবুতে ঢুকে যান।

রাত্রে মামাবাবু বললেন, এতক্ষণে বুঝলাম কামাউয়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও কেন সর্দার আমার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। ফন্দিটা এঁটেছিলাম বটে, কিন্তু রীতিমতো সন্দেহ ছিল। কতটা খাটবে। নিজেদের দেবতা হলে খুব সম্ভব ছেলের প্রাণ গেলেও সর্দার ধর্মের আইনকানুন ভাঙত না। আমাদের মূর্তি দেখতে দিত না। কিন্তু ও তো কামাউয়ের দেবতা। কাজেই ছেলের প্রাণ বাঁচাতে নিয়ম বদলানো যেতে পারে।

ঐ জন্যে কামাউয়ের সঙ্গে সর্দারের অত তর্ক হচ্ছিল। সুনন্দ বলল, উঃ! কী ক্ষেপেছিল ওঝাটা, কিছুতেই দেখতে দেবে না। শেষে সর্দার জোর করে অর্ডার দিল তবে–

প্রথমবার মুঙ্গুদর্শনের পর চতুর্থ দিন।

আমি ও সুনন্দ বনপথে আসছি হঠাৎ সর্দারের সঙ্গে মুখোমুখি। দুজন সঙ্গী নিয়ে সে আসছিল। সর্দারকে দেখে সুনন্দ হেঁকে বলল, এই যে সর্দার, কোত্থেকে? তারপর তোমাদের নৌকো আবার ওপারে যাচ্ছে কবে?

দিন পনের-ষোল পরে।

বেশ বেশ। যাবার দিন দুই আগে আমাদের খবর দিও কিন্তু। একেবারে শেষ সময়ে বললে হু করে বেরনো মুশকিল। গোছগাছ করতে হবে, সংসার পেতে বসেছি।

সুনন্দের উচ্ছ্বাসে সর্দারের কিন্তু বিন্দুমাত্র ভাবান্তর দেখা গেল না। বলল, তোমরা এখন যাবে না।

অ্যাঁ! সে কি! কথাটা যেন বিশ্বাস হয় না। বোধহয় শুনতে ভুল করেছি।

তোমাদের এখন যাওয়া হবে না। সর্দার পুনরুক্তি করে।

তবে কবে যাব? আমাদের ওষুধ তো শেষ হয়ে যাবে দিন পনেরোর মধ্যে। তারপর এখানে থাকব কী করতে?

নতুন ওষুধ বানাও। এদেশ থেকে যখন এই ভীষণ রোগ একদম চলে যাবে, আর একটা লোকও হোমার অপদেবতার কবলে পড়বে না, তখন তোমাদের ছুটি। আমাদের অভিশাপ মুক্ত করে দাও, তোমাদের সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে দিয়ে আসব।

কিন্তু সর্দার ওষুধ বানাব কী করে? সেসব মালমশলা এদেশে পাব কোথায়? দেশে যাই, অনেক ওষুধ তোমাদের বানিয়ে দেব। আমরা নিজেরা ওষুধ নিয়ে এসে রোগ একেবারে তাড়িয়ে দেব দ্বীপ থেকে।

না, এখন যাওয়া চলবে না। আগে কাঁপুনিরোগ সারুক। সর্দার দৃঢ় স্বরে বলে।

কী মুশকিল, ওষুধ পাব কোথায়? বানাও।

বারবার ঐ এক কথা। সুনন্দ অধীর হয়ে ওঠে। এখানে বসে ওষুধ বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়–

হ্যাঁ সম্ভব, আমি জানি। সর্দারের গলায় উম্মা ফুটে ওঠে।

কী করে জানলে? সুনন্দ আশ্চর্য হয়ে বলে, কে বলল?

কামাউ বলেছে। ও তোমাদের কাছে ওষুধ শিখতে গিয়েছিল। তোমরা বলেছ–ওষুধ বানাতে পারি, কিন্তু আমরা ছাড়া অন্য লোকের হাতে সে-ওষুধ কাজ করবে না।

মিথ্যে কথা। ডাহা মিথ্যুক। আমাদের কাছে ও ওষুধ শিখতে গিয়েছিল ঠিক। আমরা এও বলেছি ওষুধ যার-তার হাতে কাজ করে না। কিন্তু এখানে ওষুধ বানাতে পারব, একথা কক্ষনো বলিনি। আসলে ও আমাদের বিপদে ফেলতে চায়। আমাদের হিংসেয় একথা বলেছে।

হিংসে কেন?

ও অ্যাদ্দিন ওঝাগিরি করছে, কিন্তু ওর দাওয়াইয়ের চেয়ে আমাদের ওষুধের জোর বেশি। রোগ সারছে। লোকে আমাদের খাতির-যত্ন করছে। এটা ও সহ্য করতে পারছে না।

সর্দার ঘাড় নাড়তে থাকে। আমাদের যুক্তি তার কাছে খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। উঁহু, তোমরা এত ম্যাজিক মন্ত্র-তন্ত্র জানো, আর ওষুধ বানাতে জানো না। তা কি হয়?

বিশ্বাস করো সর্দার, সত্যি পারি না। সুনন্দের কণ্ঠে অনুনয়, আমাদের মিছিমিছি। আটকে রেখে কোনো লাভ নেই।

সর্দারের ভ্রমরকৃষ্ণ মুখমণ্ডল রাগে বেগুনি হয়ে গেল। কণ্ঠস্বর গম্ভীর, কর্কশ।

পারবে। পারতেই হবে। তোমরা আমাকে ধোঁকা দিচ্ছ। এ তোমাদের পালাবার মতলব। সব বুঝি। আমি অত বোকা নই। একবার দেশে ফিরলে আর তোমাদের পাত্তা পাব ভেবেছ? দেখ, আমাদের মরণের মুখে ফেলে রেখে তোমরা দিব্যি সটকান দেবে, তা হচ্ছে না। মতলব করে ওষুধ যদি না বানাও, আমরা যদি মরি, জেনে রেখো তোমরাও প্রাণে বাঁচবে না। চল–

সর্দার তার সঙ্গীদের প্রতি আদেশ দিয়ে সোজা হাঁটা দিল।

আমরা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

সুনন্দ হঠাৎ তার লম্বা পা ফেলে গ্রামের দিকে এগোতে থাকে।

কোথায় চললি?

কামাউয়ের খোঁজে।

কেন?

কিঞ্চিৎ শিক্ষা দেব শয়তানটাকে।

দাঁড়া। আমি দৌড়ে গিয়ে তার হাত চেপে ধরি।

বলি, কোনো লাভ নেই। কামাউকে ঠ্যাঙ্গালেই সর্দার আমাদের কথা বিশ্বাস করবে ভেবেছিস? বরং কেস আরও খারাপ হবে। এখন টেস্টে চল।

মামাবাবু সব শুনে বললেন, হুম? প্রতিশোধ! খুব স্বাভাবিক। আমরা ওর ভাত মারার জোগাড় করেছি, ও কি ছেড়ে কথা কইবে? আমি আঁচ করেছিলাম ও কিছু মতলব ভাজছে। যাকগে ভালোই হল।

সে কী! আমরা হতবাক।

মামাবাবু! সুনন্দ কাতরে ওঠে, ভবিষ্যৎটা ভেবে দেখেছেন? দুদিন পরে ম্যালেরিয়ার ট্যাবলেট শেষ। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও খতম, এদের হাতে বেগুনপোড়া হতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।

আমারও নেই। অসিত, তোমার?

মোটেও না। মরি মরব, বীরের মতো মরব। খুঁটির আগায় রোস্ট হচ্ছি না।

ঠিক ঠিক!

তবে যে বলছেন ভালোই হল? আমি প্রশ্ন করলাম।

কারণ আমি একটা দোটানায় পড়েছিলাম। তার সমাধান হয়ে গেল।

কীরকম?

সমস্যাটা হল, যদি এদের নৌকো চেপে ফিরে যাই একজনের কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না।

কার?

মুঙ্গুর। এই মহামূল্যবান বৈজ্ঞানিক সম্পদটি ছেড়ে রেখে যাই কী করে? কেন ফিরে এসে নিয়ে যাব। সুনন্দ বলল। মামাবাবু হাসেন। কী ভেবেছ? এরা তোমায় তাদের দেবতাকে দান করবে?

তবে জোর করে নেব। তাহলে এদের তুমি চেন না। একটি প্রাণ বেঁচে থাকতে ওরা দেবতা ছাড়বে না। সুনন্দ বলল, কিন্তু দেবতা তো কামাউয়ের, অন্যদের অত মাথাব্যথা কীসের?

তাহলেও দেবে না। কারণ আমরা বিদেশি। মাঝ থেকে জোরজার করতে গিয়ে হয়তো চিরকালের মতো ফসিলটা হারাব এবং অনর্থক কিছু প্রাণ নষ্ট হবে।

তাহলে উপায়?

উপায় পালানো। নৌকো চুরি করে আমরা লুকিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেব। মুহূকেও সঙ্গে নেব চুরি করে। নিরাপদে ফিরে যাব, নাকি জেনে শুনে এত বড় রিস্কটা নেব? তাই ভাবছিলাম। আমি একা থাকলে দ্বিতীয় পন্থাটাই ধরতাম, কিন্তু তোমরা রয়েছ, মাঝিরা আছে। ভালোয় ভালোয় উপকূলে পৌঁছুতে পারব কি না কে জানে! যাক, আপাতত একটি পথই এখন খোলা।

কামাউয়ের মুঙ্গুকে চুরি করবেন? সুনন্দের মুখ হাসি-হাসি।

কামাউয়ের দেবতা বলেই তো চুরি করব। নইলে যদি জানতাম, এই উপজাতির কাছে এ-মূর্তি অতি পবিত্র, মূর্তি হারালে তারা বিষম ব্যথা পাবে মনে, বিজ্ঞানের খাতিরেও আমি এ-কাজ করতে পারতাম না। কিন্তু সেদিন টোটোর কথায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে দ্বীপের লোকেরা কামাউয়ের মুহূকে ভক্তি করে না, ভয় করে।

আমি বললাম, কামাউ নিজেই কত মুঞ্জুকে ভক্তিশ্রদ্ধা করে সন্দেহ আছে। ধূর্ত লোক, নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে একটা অদ্ভুত দেখতে মূর্তি খাড়া করেছে। এটা তার পুরুষানুক্রমের দেবতাও নয়।

মুঙ্গু উধাও হলে কামাউ দারুণ প্রেস্টিজ খোয়াবে। লোকে ভাববে দেবতা নেই, অতএব তার দৈবশক্তিও বুঝি গেল এবার। সুনন্দ খুশিমুখে মন্তব্য করে।

আশা করছি তোমাদের মনস্কামনা পূর্ণ হবে। মামাবাবু হাসতে হাসতে বললেন, তোমরা ওর ওপর খুব চটে আছ দেখছি। যাক। বলো নৌকো চালানো কতটা রপ্ত করলে? মনে রেখো ছিপনৌকো নাও পাওয়া যেতে পারে। ওগুলো থাকে ডাঙায়, অনেক দূরে। যেতে হবে ডিঙি বা মাঝারি নৌকো চড়ে।

সনন্দ চিন্তিত স্বরে বলল, সেটা এক হিসেবে ভালোই। কারণ ডিঙি আমরা বেশি চড়ি। চিপ বাইতে শিখিনি। কিছুটা আমি রপ্ত করেছি। অসিতও মোটামুটি পারবে। তবে ঢেউ বেশি উঠলে সামলাতে পারব কি?

আকাশ পরিষ্কার দেখে বেরোতে হবে। সমুদ্র যেদিন শান্ত, দিন নয়, বলা উচিত রাতে। কারণ রাতের অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে পালাতে হবে। তবে যতটা শক্ত ভাবছ তত কঠিন নাও হতে পারে। দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মোজাম্বিক স্রোত। এই তে গিয়ে ঠেকেছে তটভূমির গায়ে। নৌকো কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে চালিয়ে নিয়ে মোজাম্বিক স্রোতের টানে পড়তে পারলেই আর ভাবনা নেই। ঠিক হাজির হয়ে যাব মহাদেশের কূলে। শুধু নৌকো ভাসিয়ে রাখতে পারলেই হল। বন্দী মাঝি দুজনকেও সঙ্গে নেব। তারাও সাহায্য করতে পারবে।

আমি বললাম, মাঝিদের মুক্ত করতে গিয়ে আবার নতুন হাঙ্গামা বাধবে না তো? যদি ধরা পড়ে যাই!

কিন্তু ওদের ফেলে রেখেও তো যাওয়া যায় না। আমরা পালালে ওদের পরিণতি কী দাঁড়াবে ভেবে দেখেছ? স্রেফ থোড় কুচো করে ফেলবে রাগে। অবশ্য সবচেয়ে কঠিন কর্ম কী করে মুত্যুকে চুরি করা যায়। যাহোক, এসব প্ল্যান আমি ভেবে-চিন্তে ঠিক করছি। তোমাদের কর্তব্য, যতটা পারো নৌকো চালানো প্রাকটিস করা। তবে সাবধান, ওরা যেন ঘুণাক্ষরেও আমাদের মতলব টের না পায়। তাহলে সর্বনাশ ঘটবে।