প্রথম খণ্ড
- প্রথম খণ্ড : উপক্রমণিকা
- প্রথম পরিচ্ছেদ—গ্রন্থের উদ্দেশ্য
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণের চরিত্র কিরূপ ছিল, তাহা জানিবার উপায় কি?
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ—মহাভারতের ঐতিহাসিকতা
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ—মহাভারতের ঐতিহাসিকতা
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ—কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কবে হইয়াছিল
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ—পাণ্ডবদিগের ঐতিহাসিকতা
- সপ্তম পরিচ্ছেদ—পাণ্ডবদিগের ঐতিহাসিকতা
- অষ্টম পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা
- নবম পরিচ্ছেদ—মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত
- দশম পরিচ্ছেদ—প্রক্ষিপ্তনির্বাচনপ্রণালী
- একাদশ পরিচ্ছেদ—নির্বাচনের ফল
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ—অনৈসর্গিক বা অতিপ্রকৃত
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ—ঈশ্বর পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া কি সম্ভব?
- চতুর্দশ পরিচ্ছেদ—পুরাণ
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ—পুরাণ
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ—হরিবংশ
- সপ্তদশ পরিচ্ছেদ—ইতিহাসাদির পৌর্বাপর্য
দ্বিতীয় খণ্ড
- দ্বিতীয় খণ্ড
- প্রথম পরিচ্ছেদ—যদুবংশ
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণের জন্ম
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ—শৈশব
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ—কৈশোর লীলা
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ—ব্রজগোপী-বিষ্ণুপুরাণ
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ—ব্রজগোপী-হরিবংশ
- সপ্তম পরিচ্ছেদ—ব্রজ গোপী-ভাগবত-বস্ত্রহরণ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ—ব্রজগোপী-ভাগবত
- নবম পরিচ্ছেদ—ব্রজগোপী-ভাগবত
- দশম পরিচ্ছেদ—শ্রীরাধা
- একাদশ পরিচ্ছেদ—বৃন্দাবনলীলার পরিসমাপ্তি
চতুর্থ খণ্ড
- চতুর্থ খণ্ড
- প্রথম পরিচ্ছেদ—দ্রৌপদীস্বয়ংবর
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণ-যুধিষ্ঠির-সংবাদ
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ—সুভদ্রাহরণ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ—খাণ্ডবদাহ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণের মানবিকতা
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ—জরাসন্ধবধের পরামর্শ
- সপ্তম পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণ-জরাসন্ধ-সংবাদ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ—ভীম-জরাসন্ধের যুদ্ধ
- নবম পরিচ্ছেদ—অর্ঘাভিহরণ
- দশম পরিচ্ছেদ—শিশুপালবধ
- একাদশ পরিচ্ছেদ—পাণ্ডবের বনবাস
ষষ্ঠ খণ্ড
- ষষ্ঠ খণ্ড
- প্রথম পরিচ্ছেদ—ভীষ্মের যুদ্ধ
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ—জয়দ্রথবধ
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ—দ্বিতীয় স্তরের কবি
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ—ঘটোৎকচবধ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ—দ্রোণবধ
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণকথিত ধর্মতত্ত্ব
- সপ্তম পরিচ্ছেদ—কর্ণবধ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ—দুর্যোধনবধ
- নবম পরিচ্ছেদ—যুদ্ধশেষ
- দশম পরিচ্ছেদ—বিধি সংস্থাপন
- একাদশ পরিচ্ছেদ—কামগীতা
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ—কৃষ্ণপ্রয়াণ
প্রথম খণ্ডে আমরা পুরুবার পুত্র আয়ুর কথা বলিয়াছি। আয়ু যজুর্বেদে যজ্ঞের ঘৃত মাত্র। কিন্তু ঋগ্বেদসংহিতার ১০ম মণ্ডলে তিনি ঐতিহাসিক রাজা। ১০ম মণ্ডলের ৪৯ সূক্তের ঋষি বৈকুণ্ঠ ইন্দ্র। ইন্দ্র বলিতেছেন, “আমি বেশকে আয়ুর বশীভূত করিয়া দিয়াছি।”
আয়ুর পুত্র নহুষ। নহুষের পুত্র যযাতি। এই নহুষ ও যযাতির নামও ঋগ্বেদসংহিতায় আছে। যযাতির পাঁচ পুত্র ইতিহাস পুরাণে কথিত হইয়াছে। জ্যেষ্ঠ যদু, কনিষ্ঠ পুরু। আর তিন জনের নাম তুর্বসু দ্রুহ্য, অণু। ইহার মধ্যে পুরু, যদু, এবং তুর্বসুর নাম ঋগ্বেদসংহিতায় আছে (১০ম, ৪৮।৪৯ সূক্ত)। কিন্তু ইঁহারা যে যযাতির পুত্র বা পরস্পরের ভাই, এমন কথা ঋগ্বেদসংহিতায় নাই।
কথিত আছে, যযাতির জ্যেষ্ঠ চারি পুত্র তাঁহার আজ্ঞাপালন না করায় তিনি ঐ চারি পুত্রকে অভিশপ্ত করিয়া, কনিষ্ঠ পুরুকে রাজ্যাভিষিক্ত করেন। এই পুরুর বংশে দুষ্মন্ত, ভরত, কুরু এবং অজমীঢ় ইত্যাদি ভূপতিরা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরাদি কৌরবেরা এই পুরুর বংশ। এবং কৃষ্ণ প্রভৃতি যাদবেরা যদুর বংশ। অন্ততঃ পুরাণে ইতিহাসে সচরাচর ইহাই পাওয়া যায় যে, যযাতিপুত্র যদু হইতে মথুরাবাসী যাদবদিগের উৎপত্তি।
কিন্তু হরিবংশে আর এক কথা পাওয়া যায়। হরিবংশের হরিবংশপর্বে যে যদুবংশকথন আছে, তাহাতে যযাতিপুত্র যদুরই বংশকথন। কিন্তু বিষ্ণুপর্বে ভিন্ন প্রকার আছে। তথায় আছে যে, হর্যশ্ব নামে একজন ইক্ষ্বাকুবংশীয়, অযোধ্যায় রাজা ছিলেন। তিনি মধুবনাধিপতি মধুর কন্যা মধুমতীকে বিবাহ করেন। এই মধুবনই মথুরা। হর্যশ্ব অযোধ্যা হইতে কোন কারণে বিদূরিত হইলে শ্বশুরবাড়ী আসিয়া বাস করেন। ইঁহারই পুত্র যদু। হর্যশ্বের লোকান্তরে ইনি রাজা হয়েন। যদুর পুত্র মাধব, মাধবের পুত্র সত্ত্বত, সত্ত্বতের পুত্র ভীম। মধুর পুত্র লবণকে রামের ভ্রাতা শত্রুঘ্ন বিজিত করিয়া তাঁহার রাজ্য হস্তগত করিয়া মথুরানগর নির্মাণ করেন। হরিবংশে বলে, রাঘবেরা মথুরা ত্যাগ করিয়া গেলে, ভীম তাহা পুনর্বার অধিকার করেন, এবং এই যদুসম্ভূত বংশই মথুরাবাসী যাদবগণ।
ঋগ্বেদসংহিতার দশম মণ্ডলের ৬২ সূক্তে যদু ও তুর্বা (তুর্বসু) এই দুই জনের নাম আছে (১০ ঋক্), কিন্তু তথায় ইঁহাদিগকে দাসজাতীয় রাজা বলা হইয়াছে।
কিন্তু ঐ মণ্ডলের ৪৯ সূক্তে ইন্দ্র বলিতেছেন, “তুর্বসু ও যদু এই দুই ব্যক্তিকে আমি বলবান্ বলিয়া খ্যাতাপন্ন করিয়াছি (৮ ঋক্)”। ঐ সূক্তের ৩ ঋকে আছে, “আমি দস্যুজাতিকে ‘আর্য’ এই নাম হইতে বঞ্চিত রাখিয়াছি।”* তবে দাসজাতীয় রাজাকে যে তিনি খ্যাতাপন্ন করিয়াছিলেন, ইহাতে কি বুঝিতে পারা যায়? এই যদু আর্য, না অনার্য? ইহা ঠিক বুঝা গেল না।
পুনশ্চ, প্রথম ৩৬ সূক্তে ১৮ ঋকের অর্থ এইরূপ—“অগ্নির দ্বারা তুর্বসু, যদু ও উগ্রদেবকে দূর হইতে আমরা আহ্বান করি।” অনার্য রাজ সম্বন্ধে আর্য ঋষির এরূপ উক্তি সম্ভব কি?
যাহা হউক তিন জন যদুর কথা পাই।
(১) যযাতিপুত্র
(২) ইক্ষ্বাকুবংশীয়।
(৩) অনার্য রাজা।
কৃষ্ণ, কোন্ যদুর বংশে উৎপন্ন হইয়াছিলেন, তাহা মীমাংসা করা দুর্ঘট। যখন তাঁহাদের মথুরায় ভিন্ন পাই না, এবং ঐ মথুরা ইক্ষ্বাকুবংশীয়দিগের নির্মিত, তখন এই যাদবেরা ইক্ষ্বাকুবংশীয় নহে, ইহা জোর করিয়া বলা যায় না।
যে যদুবংশেই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করুন, তদ্বংশে মধু সত্ত্বত বৃষ্ণি, অন্ধক, কুকুর ও ভোজ প্রভৃতি রাজগণ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এই বৃষ্ণি অন্ধক কুকুর ও ভোজবংশীয়েরা, একত্রে মথুরায় বাস করিতেন। কৃষ্ণ বৃষ্ণিবংশীয়, কংস ও দেবকী ভোজবংশীয়। কংস ও দেবকীর এক পিতামহ।
—————————-
* এই কয়টি ঋকের অনুবাদ রমেশ বাবুর অনুবাদ হইতে উদ্ধৃত করা গেল।
—————————-