☼ অজেয় রায় ☼
আমাজনের গহনে
ছয়
পাহাড়ি ইন্ডিয়ানদের সম্বন্ধে মার্কো যে রিপোর্ট আনল তা বেশ ভয়ের। ওরা দুর্দান্ত জাত। অন্য উপজাতির সঙ্গে মোটে মেলামেশা নেই। বিদেশি কেউ ওদের এলাকায় যাওয়া পছন্দ করে না। অনেকে ওই অঞ্চলে গিয়ে আর ফেরেনি। কদাচিৎ ওদের নদীপথে দেখা যায়। হিথ নদীর পশ্চিম পাশে কয়েকটা জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড় আছে, তারই একটায় ওদের বাস।
টম ও অন্য মাঝিরা অনিচ্ছা প্রকাশ করল ওই এলাকায় যেতে। ঠিক হল ওরা এইখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। শুধু আমরা চারজন যাব একটা নৌকো নিয়ে।
পরদিন সকালে আমরা যাত্রা করলাম। বিকেল নাগাদ ডান দিকের এক শাখানদীতে প্রবেশ করলাম। এই স্রোতধারাই আমাদের পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে যাবে।
ক্ষীণ জলধারা এঁকেবেঁকে চলেছে। জল কম, কিন্তু স্নোত প্রখর। দুধারে ঝুঁকে পড়েছে গাছপালা। যেন উদ্ভিদে তৈরি সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে চলেছি। ধারে কাছে জনমানবের চিহ্ন নেই। মানুষের কোলাহল, গাড়ির আওয়াজ, ইলেকট্রিক আলোর ঝলমলানি–এসব যেন স্বপ্নের বস্তু।
নিজেরা দাঁড বাইছি। বারবার জলপ্রপাতের বাধায় ভীষণ অসুবিধায় পড়তে লাগলাম। তখন আমরা জলে নেমে ধার দিয়ে ক্যানু ঠেলে নিয়ে চলতে লাগলাম।
প্রথম রাতে এক উপদ্রব ঘটল। ভোরবেলা হ্যামক থেকে নেমে ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখি ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে। মার্কো পরীক্ষা করে বলল, এ ভ্যাম্পায়ার ব্যাট-এর কীর্তি। তাড়াতাড়ি এলাকাটা পেরিয়ে গেলাম।
পরদিন দুপুরে সুনন্দ এক কাণ্ড করে বসল। নদীতীরে ঘাসের ওপর শুয়ে চোখ বুজে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি সবাই, হঠাৎ সুনন্দর চিৎকারে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। মার্কো মুহূর্তে রাইফেল তুলেছে। পরক্ষণেই সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। দেখি একটা ভাল্লুকের মতো জন্তু, কিন্তু মুখে ছোট্ট শুড়, বনের মধ্যে পালাল। সুনন্দ স্তম্ভিতভাবে প্রশ্ন করল–কী ওটা?
অ্যান্টইটার। জানাল মার্কো।
“ওঃ, আমার আঙুল সুড়সুড় করে উঠল। আমি ভাবলাম বুঝি–
বুঝেছি, ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। কিন্তু জেনে রাখো, রক্তপায়ী বাদুড় দিনে বেরোয় না। নিশ্চয় পিঁপড়ে উঠেছিল তোমার পায়ে, এ-বেচারা লম্বা জিভ দিয়ে সেগুলো খাচ্ছিল। উপকার করতে গিয়ে তোমার লাথি খেয়েছে।
তিন দিন, তিন রাত কাটল। উঃ, কী কষ্টকর যাত্রা! বারবার জলে নেমে নৌকো টানতে গিয়ে পাথরে পা কেটে ক্ষতবিক্ষত হল। মশা-মাছির আক্রমণে হাত-মুখ উঠল ফুলে। চতুর্থ দিনে দেখলাম নদী দুই ধারায় ভাগ হয়ে গেছে। সোজা পথটা নিলাম বেছে। মাইলখানেক এগোবার পর বিরাট এক জলাভূমির ভিতর গিয়ে পড়লাম। অগভীর জলা। ওপারে পাহাড়, ঘন বনে ঢাকা। এই জলা পেরিয়ে পাহাড়ে পৌঁছনো যায় কিনা আলোচনা করছি, মার্কো চেঁচিয়ে উঠল–সাবধান, সাপ!
আশেপাশে লক্ষ করে শিউরে উঠলাম। জলে অগুনতি সাপ। ভয়ানক বিষধর জারারাকা সাপের বিচরণক্ষেত্রে এসে পড়েছি। নৌকোর চারধারে হিস হিস গর্জন। প্রকাণ্ড লম্বা কয়েকটা সাপ নলখাগড়ার গা বেয়ে নৌকোয় লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। সপাং সপাং লাঠি চালালাম। সাপগুলো লাঠির ঘায়ে একটু দূরে সরে যেতে কোনোরকমে নদীতে পালিয়ে গেলাম। মাত্র আধঘণ্টা কেটেছিল ওই জলায়, কিন্তু সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি কখনও ভুলব না।
পরদিন নদীর দ্বিতীয় ধারাটা অনুসরণ করে আমরা এগোলাম।
আমাদের জন্য এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা অপেক্ষা করছিল।
পরদিন সকালে সুনন্দকে নদীতীরে রেখে আমি, মার্কো ও মামাবাবু বনের ভিতরে গিয়েছিলাম। সুনন্দর ডান হাঁটু পাথরে ঘা লেগে ফুলে উঠেছিল। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, তাই যায়নি আমাদের সঙ্গে। মার্কো খাবার জন্য কয়েকটা পাখি শিকার করল। মামাবাবু একরকম ছোট্ট বাঁদর মারমোসেট-এর ধরন-ধারণ লক্ষ করলেন অনেকক্ষণ ধরে। এইভাবে ঘণ্টা দুই কাটিয়ে নৌকোয় ফিরে আমরা চমকে উঠলাম। নদীতীরে আমাদের জিনিসপত্র সব লণ্ডভণ্ড অবস্থায় ছড়ানো। নৌকোটা উল্টিয়ে পড়ে আছে পাড়ে।
আর সুনন্দ নেই!
সুনন্দ! সুনন্দ! অনেক ডাকাডাকি করলাম। কোনো সাড়া মিলল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম, কিন্তু সুনন্দকে পাওয়া গেল না।
মার্কো জমি পরীক্ষা করে বলল, “ইন্ডিয়ানরা এসেছিল নৌকো করে। ওরা নিশ্চয় সুনন্দকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। ধস্তাধস্তির চিহ্ন দেখছি। কিছু জিনিসও চুরি করেছে লোকগুলো। তবে রক্তের দাগ দেখছি না। সম্ভবত সুনন্দ তেমন আহত হয়নি। বন্দী করে নিয়ে গেছে ওকে।
মামাবাবুর মুখ পাথরের মতো কঠিন হয়ে উঠল। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, চলো, এখুনি বেরোই। ইন্ডিয়ানদের ধরতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে ওদের আস্তানা। হয়তো তাড়াতাড়ি করলে সুনন্দর প্রাণ বাঁচাতে পারব।
তখুনি নৌকো নামালাম জলে। প্রাণপণে দাঁড় বাইতে লাগলাম। মার্কো একবার বাঁকা হেসে বলল, জানো অসিট, অনেকদিন শিকার প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। অকারণ প্রাণিহত্যা আর করি না। কিন্তু সুনন্দকে যদি ফিরে না পাই, ওই পাহাড়ি ইন্ডিয়ানগুলোকে আমি এমন শিক্ষা দেব! মার্কোর চোখ দুটো যেন দপ করে জ্বলে উঠল।
বুঝলাম, এই আমুদে রসিক লোকটির মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা দুর্দান্ত মানুষটা আবার জেগে উঠেছে।
তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ক্ষতি হল। হঠাৎ পাথরে ঠোক্কর লেগে নৌকোর তলা গেল ফেঁসে। এবার হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। মার্কো বলল, ফেরার সময় একটা ভেলা তৈরি করে নেব, অবশ্য যদি ফিরি।
নৌকো তীরে তুলে রাখলাম। ভারী জিনিস সব বাক্সবন্দী করে সেখানে রেখে দেওয়া হল। বাকি জিনিস পিঠে নিয়ে হাঁটা দিলাম। আমার মনে কেবল একটা চিন্তাই ঘুরছে–সুনন্দ নেই। কী হল সুনন্দর? আবার তার সঙ্গে দেখা হবে তো? সমস্ত ব্যাপারটা যেন ভারি অবাস্তব মনে হচ্ছে। ও কি সত্যি হারিয়ে গেল চিরকালের মতো? তাহলে। আমিই বা ফিরব কোন মুখে? সুনন্দর সঙ্গে বহু দিনের বন্ধুত্বের কত টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে।
মামাবাবু একটা টিনের কৌটো কুড়িয়ে পেলেন। বায়ুশূন্য মাংস রাখার টিন। অর্থাৎ কোনো শহুরে মানুষের পদার্পণ ঘটেছিল কিছুকাল আগে। কে সে? হয়তো বৈজ্ঞানিক সর্বজ্ঞ। এই পথে গিয়ে তিনি হারিয়ে গেছেন, বুনো পাহাড়ি ইন্ডিয়ানদের খোঁজে। সুনন্দও পড়েছে তাদের খপ্পরে।
আমাদের অদৃষ্টেও জানি না কী অপেক্ষা করে আছে ওই অজ্ঞাত বনভূমির নিষিদ্ধ এলাকায়!
আরও দুর্ভোগ লেখা ছিল কপালে।
আকাশে কালচে মেঘ জমছিল সকাল থেকে। বিকেল নাগাদ ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে নামল প্রবল বৃষ্টি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নদী ফুলে-ফেঁপে কূল ছাপিয়ে উঠল। বাধ্য হয়ে নদীতীর ছেড়ে বনের ভিতর সরে গেলাম।
বৃষ্টির ছাঁট আর সূর্যালোকে ভালো দৃষ্টি চলে না। প্রকৃতির এই তাণ্ডবে বনের সব। পশু-পাখি নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপন করেছে। শুধু বুঝি আমরা তিনটি মানুষ বাইরে বেরিয়েছি। ওয়াটারপ্রুফ মুড়ি দিয়ে সতর্কভাবে পা ফেলছি–ছপ ছপ ছপ। সামনে মার্কো, পিছনে মামাবাবু ও আমি। পায়ের নিচে কোনো চোরা গর্তে যে কোনো সময় তলিয়ে যেতে পারি। ফোঁস করে মাথা তুলতে পারে কোনো হিংস্র সরীসৃপ। লা-মন্টানার ট্রপিকাল অরণ্য যেন তার সমস্ত দুর্গমতা দিয়ে আমাদের বাধা দেবার চেষ্টা করছে। সুউচ্চ বৃক্ষকাণ্ডগুলিকে পাশ কাটিয়ে, ঝোঁপঝাড় সরিয়ে ধীরে ধীরে এগোই।
ক্রমে পাহাড়ের পাদদেশে এসে উপস্থিত হলাম।
সন্ধ্যা নেমেছে, দিনের সব আলোটুকু গেছে মুছে। টর্চের আলোর রেখার দুপাশ থেকে জমাট অন্ধকার যেন চেপে আসে। ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝিলিকে আকাশ যাচ্ছে চিরে, সঙ্গে কানে তালা-ধরানো মেঘ-গর্জন।
পাহাড়ের তলায় ঘন বাঁশঝাড়। বাঁশের তীক্ষ্ণ ডগাগুলিকে সাবধানে এড়িয়ে চলি। মার্কো বলল, একটা গুহা খুঁজি, নইলে সারা রাত ভিজতে হবে।
পাহাড়ের গায়ে পিছল পাথরের ওপর দিয়ে খানিকটা উঠে সৌভাগ্যক্রমে একটা গুহা পেলাম। ভিতরে আলো ফেলতেই দুজোড়া সবুজ চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। অপোসাম। খটাশ জাতীয় প্রাণী। জন্তু দুটো আমাদের দেখে দাঁত খিঁচিয়ে উঠল। দুর্যোগের রাতে তারা আশ্রয় ছাড়তে চাইছে না। যা হোক টর্চের তীব্র আলোয় ভয় পেয়ে তারা বাইরে পালাল।
চট করে স্টোভ জ্বেলে কফি বানিয়ে ফেললাম। গুহার মধ্যে কয়েকটা পোড়া কাঠ পড়েছিল। কেউ আগুন জ্বেলেছিল। সেগুলো ধরিয়ে রাখলাম গুহার মুখে। যাতে বুনো জন্তু
ঢোকে। সবাই নীরব, অবসন্ন। প্রিয়জনকে হারানোর দুঃসহ আশঙ্কা ক্রমে চেপে বসছে বুকে। শুধু মার্কো মাঝে মাঝে উৎসাহ দিচ্ছিল আমায়। বলছিল, “আরে ভয় পেও না, সুনন্দকে ঠিক ফিরিয়ে আনব, দেখ। যদিও জানি, সত্যি সত্যি এমন ভরসা সেও করতে পারছিল না।
একটু পরে গুহার দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আকাশ দিব্যি পরিষ্কার। কিন্তু সারাদিন ঘুরেও পাহাড়ি উপজাতির দর্শন পেলাম না। সন্ধে নাগাদ একটা ছোট সমতল জায়গায় বিশ্রাম নিচ্ছি, পায়ে ব্যথা, শরীর অবসন্ন। সহসা খেয়াল হল অনেকগুলি ছায়ামূর্তি আমাদের ঘিরে ধরেছে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে কাঠ হয়ে গেলাম। বুনো রেড-ইন্ডিয়ান! প্রত্যেকে ধনুকে তির লাগিয়ে কান অবধি ছিলা টেনে আমাদের দিকে তাক করে আছে। আস্তে আস্তে মাথার ওপর হাত তুললাম।
মার্কো দেশি ভাষায় চেঁচিয়ে বলতে লাগল, আমরা শত্রু নই বন্ধু। কিন্তু তাদের ভাবগতিকে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হল না। তাদের মুখ কঠোর, চোখে সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টি। একজন এসে আমাদের বন্দুক ও পিস্তলগুলি নিয়ে নিল। অর্থাৎ আগ্নেয়াস্ত্রের মহিমা এরা জানে। তারপর তারা আমাদের হাত-পা শক্ত করে বাঁধল দড়ি দিয়ে। নিরুপায় হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লাম।
কয়েকজন রেড-ইন্ডিয়ান আমাদের পকেট পরীক্ষা করতে লাগল। কিছু কিছু পছন্দসই জিনিস তারা বাজেয়াপ্ত করে এক জায়গায় জড়ো করে রাখল। বাকি জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিল। একজন মামাবাবুর ব্যাগ খুলেই এক চিৎকার। তার হাতে দেখি বৈজ্ঞানিক সর্বজ্ঞর ফোটোখানি।
এরপর তারা উত্তেজিতভাবে আলোচনা শুরু করল। হাতে হাতে ঘুরছে ফোটোটা। মামাবাবু বললেন, সর্বজ্ঞকে ওরা চিনতে পেরেছে। ইস, যদি কথা বলা যেত!
কিন্তু কোনো কথাবার্তা বলতে ওরা রাজি নয়।
একটু পরে একজন ভারিক্কি চেহারার লোক এসে উপস্থিত হল। তার গায়ে রঙচঙে সুতির আলখাল্লা, মাথায় পালকের মুকুট। হয়তো দলের সর্দার। সে ফোটোখানা হাতে নিয়ে দেখল। তারপর আমাদের তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে আবার ফিরে চলে গেল।
এইভাবে বন্দী হয়ে পড়ে রইলাম সারারাত। ইন্ডিয়ানরা আমাদের পাহারা দিতে লাগল। “কী গো বীরপুরুষেরা! লাগছে কেমন? মার্কোর চোখে হাসির ঝিলিক। তারপরই মার্কোর কণ্ঠে কেমন যেন আবেগ ফুটল,-ভাই অসিট, তোমাদের অনেক ঠাট্টা করেছি। কিন্তু সত্যি বলছি মনে মনে তোমাদের আমি বীরপুরুষ বলে স্বীকার করেছি। তোমরা সত্যি অসাধারণ। সাহস ও ধৈর্য দেখিয়েছ। ব্রেভ ইয়াংম্যান।
তারপর একটু থেমে মুচকি হেসে বলল, হয়তো আর অভিনন্দন জানাবার সুযোগ পাব না তাই বলে রাখছি। হাত ভোলা নেই, ফলে হ্যান্ডসেক করতে পারলাম না। সরি! আর বড় দুঃখ হচ্ছে, সুনন্দর সঙ্গে বুঝি আর দেখা হল না।
মার্কোর কথায় বুঝলাম আসন্ন বিপদের গুরুত্ব জিজ্ঞেস করলাম–এরা কী করতে চায় আমাদের নিয়ে?
ঠিক বঝছি না। মনে হয় মতলব ভালো নয়। জীবনে অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মরণের ফাঁদ কেটে বেরিয়েও গেছি। যদি বুঝি সত্যি এরা আমাদের হত্যা করতে চায়, তা হলে এবারও চেষ্টা করব।
কীভাবে?
হাতের বাঁধন আমি ঠিক খুলে ফেলব। তারপর পা। ওই দেখ ঢিপির ওপরে আমাদের বন্দুক আর পিস্তলগুলো। প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে যদি একবার ওই গুলিভরা বন্দুক বা পিস্তল হাতাতে পারি তাহলে একচোট লড়ব। অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচব কিনা বলা শক্ত। এদের তিরের ফলায় থাকে মারাত্মক কুরারি বিষ। একবার রক্তে মিশলে আর রক্ষে নেই।
মামাবাবু যেন নির্বিকার। শুধু একবার মার্কোকে বললেন, এই ইন্ডিয়ানদের চেহারা আর পোশাক দেখেছ? অন্য উপজাতির থেকে আলাদা। বেশ সুশৃঙ্খল জাত।
মার্কো বলল, “হ্যাঁ। আপশোস হচ্ছে এদের ছবি তুলতে পারলাম না।
ভোরের দিকে একটু ঝিমুনি এসেছিল। অপরিচিত কণ্ঠে পরিষ্কার বাংলা কথা শুনে চমকে তাকালাম।–আরে প্রোফেসার ঘোষ আপনি!
একি, ভূত দেখছি নাকি!
সেই শীর্ণ মুখ, বড় বড় উজ্জ্বল চোখ। সেই টিয়াপাখির মতো বাঁকানো নাক, চিবুকে একগুচ্ছ দাড়ি। ফোটোতে এ-মুখ বারবার দেখে মনে গেঁথে গেছে। তাই লোকটিকে চিনতে ভুল হল না। ইনি স্বয়ং বৈজ্ঞানিক সত্যনাথ সর্বজ্ঞ।