পৃ. ৩৪, পংক্তি ১৮, এই “তৃতীয়” পরিচ্ছেদটি প্রথম সংস্করণের “চতুর্থ” পরিচ্ছেদ। এই পরিচ্ছেদের পূর্ব্বে প্রথম সংস্করণে আর একটি পরিচ্ছেদ ছিল। তাহা এইরূপ :

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

দণ্ড চারি ছয় পরে, সীতারাম দ্বার খুলিয়া, জীবন ভাণ্ডারীকে ডাকিয়া বলিলেন, “মৃণ্ময়কে ডাকিয়া আন।”

মৃণ্ময় সীতারামের স্বজাতি ও কুটুম্ব, এবং অতিশয় অনুগত ও বশম্বদ। তবে তাঁহার আকার এবং অগাধ বল ও সাহস বড় বিখ্যাত ছিল। মৃণ্ময়, তলব মত সীতারামের নিকট উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি জন্য ডাকিয়াছেন?”

সীতারাম বলিলেন, “বড় জরুরি কাজ আছে। আমার পরিবারবর্গকে এখান হইতে লইয়া যাইতে হইবে।”

মৃণ্ময়। কবে?

সীতা। আজ রাত্রেই—এখনই।

মৃণ্ময়। কোথায় নিয়ে যাব?

সীতারাম সে সকল বিষয়ে মৃণ্ময়কে উচিত উপদেশ প্রদান করিয়া অন্তঃপুরে গেলেন।

অন্তঃপুরে প্রশস্ত চত্বরমধ্যে বিস্তৃত প্রাঙ্গণ। চারি দিকে রোয়াক। কোথাও বঁটী পাতিয়া বিপুল স্থূল ঘোর কৃষ্ণাঙ্গী পরিচারিকা মৎস্য জাতির প্রাণাবশিষ্ট সংহারে সমুদ্যত। কোথাও ঘটোরী গাভী কদলীপত্রাদি বিমিশ্র উদ্ভিদ প্রভৃতি কবলে গ্রহণপূর্ব্বক মীলিতলোচনে সুখে রোমস্থ করিতেছে;— পারিসনগরী কবলিত করিয়া চতুর্থ ফ্রেডেরিক্ উইলিয়মের সে সুখ হইয়াছিল কি না জানি না, কেন না, তিনি ত রোমস্থ করিতে পারেন নাই। কোথাও কৃষ্ণশ্বেতবর্ণবিমিশ্র মার্জ্জার মৎস্যাধারের কিঞ্চিদ্দূরে লাঙ্গুলাসনে অবস্থিত হইয়া মৎস্যকর্ত্তনকর্ত্রীর কিঞ্চিন্মাত্র অনবধানতার প্রতীক্ষা করিতেছে। কোথাও নিঃশব্দ কুক্কুর অতি ধূর্ত্তভাবে কোন্ ঘরের দ্বার অবারিত, তাহার অনুসন্ধানে নিযুক্ত। কোথাও বহু বালকগণ একমাত্র অন্নপাত্রকে বেষ্টন করিয়া বর্ষীয়সী কুটুম্বিনীর বহুবিধ প্ররোচনে উপশমিত ক্ষুধাতেও আহারে নিযুক্ত। কোথাও অন্য বালকবালিকাসম্প্রদায় কৃতাহার এবং কৃতকার্য্য হইয়া সাতুরে-পাটী পাতিয়া ঈষচ্চঞ্চলশীতলমন্দালিনস্নিগ্ধচন্দ্রালোকে শয়ন করিয়া অতি প্রাচীনার নিকট সহস্রবার শ্রুত উপন্যাস পুনঃশ্রবণ করিতেছে। কোথাও নবোঢ়া যুবতী এবং বালিকাগণ বাটনাবাটা কুটনাকোটা দুধজাল ইত্যাদি গৃহকার্য্য উপলক্ষ করিয়া পরস্পরের কাছে আপনাপন আশা ভরসা, সুখ সৌন্দর্য্য এবং সৌভাগ্যের কথা বলিতেছে। এমন সময়ে অকালোদিতজলদবৎ, উদ্যান-বিহারকালে বৃষ্টিবৎ, দুঃখের চিন্তার কালে অপ্রার্থিত বন্ধুবৎ, নিদ্রাকালে বৈদ্যবৎ, গুরু ভোজনের পর নিমন্ত্রণবৎ এবং অর্থ-শেষ-কালে ভিক্ষুকবৎ, সীতারাম আসিয়া সেখানে দর্শন দিলেন।

“এত কি গোল কচ্চিস্ গো তোরা?” সীতারাম এই কথা বলিবামাত্র কৃষ্ণকায়াশালিনী মৎস্য-বিধ্বংসিনীর মৎস্য কর্ত্তনশব্দ সহসা নির্ব্বাপিত হইল। তাহাকে অনাবৃত শিরোদেশে কিঞ্চিন্মাত্র অবগুণ্ঠন সংস্থানের উদ্যোগিনী দেখিয়া, ছিদ্রান্বেষিণী মার্জ্জারী মৎস্যমুণ্ড গ্রহণপূর্ব্বক যথেপ্সিত স্থানে প্রস্থান করিল। গৃহস্বামীর কণ্ঠস্বর শুনিবামাত্র অন্যা পরিচারিকা সেই সুখনিমীলিতনেত্রা কদলীপত্র-ভোজিনী গাভীর প্রতি ধাবমানা হইয়া তাহার প্রতি নানাবিধ উপদ্রব আরম্ভ করিল। এবং তস্যা স্বামিনীকে চক্ষুরাদি-ভোজিনী ইত্যাদি নবরসাত্মক বাক্যে অভিহিত করিতে আরম্ভ করিল। উপন্যাস-দত্তমনা পাত্রাবশিষ্টভোজী শিশুগণ অকস্মাৎ উপন্যাসের রসভঙ্গ দেখিয়া আহার্য্যের প্রতি নানাবিধ দোষারোপ পূর্ব্বক অধৌত বদনে দশদিকে প্রস্তান আরম্ভ করিল। যাহারা আহার সমাপনপূর্ব্বক চন্দ্রকিরণ শীতলশয্যায় শয়ন করিয়া উপন্যাস শ্রবণ করিতেছিল, তাহারা তাহার অকালে সমাপন দেখিয়া ঘোরতর অসুয়াসূচক সমালোচনার অবতারণা করিল। উদ্ভিদ্-কর্ত্তন-পরায়ণা সুন্দরীগণ অস্পষ্টালোকে স্ব স্ব কাৰ্য্য নির্ব্বাহ করিতেছিলেন, তথাপি অবগুণ্ঠন দীর্ঘীকৃত করিলেন। যে মেয়েরা বাটনা বাটিতেছিল, তাহারা বড় গোলে পড়িল। এত ঠক্ ঠক্ করিয়া শব্দই বা করি কি করে? আর কাজ বন্ধ করিলেই বা কি মনে করিবেন? আর যাহারা দুগ্ধকটাহের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিল তাহারা আরও গোলে পড়িল। তাহারা হঠাৎ একটু অন্যমনস্ক হওয়ায় সব দুধটুকু উছলিয়া পড়িয়া গেল।

সীতারাম বলিলেন, “তোমরা কেউ গঙ্গাস্নানে যাবে গা?” অমনি “বাবা আমি যাব,” “দাদা আমি যাব,” “জ্যাঠা আমি যাব,” “মামা আমি যাব,” ইত্যাদি শব্দ নানা দিক্‌ হইতে উত্থিত হইতে লাগিল। বৃদ্ধা, অৰ্দ্ধবয়স্কা, প্রৌঢ়া, যুবতী, কিশোরী, বালিকা, পোগণ্ড এবং অপোগণ্ড শিশু, সকলেই এক স্বরে বলিল, “আমি যাব।” অকর্ত্তিত মৎস্য অরক্ষিত হইয়া কুক্কুর এবং বিড়ালের মনোহরণ করিতে লাগিল। যত্ন-প্রস্তুত এবং কর্ত্তিত অলাবু এবং বার্ত্তাকুরাশি রোমস্থশালিনী গাভী জিহ্বা প্রসারণপূর্ব্বক উদরসাৎ করিতে লাগিল, কেহ দেখিল না। কাহারও দুধ আঁকিয়া গেল, কেহ শিল নোড়া বাধিয়া পড়িয়া গেল। কাহারও ছেলে কাঁদিয়া বড় গণ্ডগোল বাধাইল, কিন্তু কিছুতেই কাহারও দৃক্‌পাত নাই।

সীতারাম বলিলেন, “তবে সকলেই চল। কিন্তু আর সময় নাই, আজ রাত্রে দিন ভাল, খাওয়া দাওয়ায় পর সকলকেই যাত্রা করিতে হইবে। অতএব এই বেলা উদ্যোগ কর।”

তৎপরে সীতারাম যথাকালে গৃহিণীর নিকট দেখা দিলেন। গৃহিণী বলিলে একটু দোষ পড়ে। কেন না, গৃহিণী শব্দ একবচন। এদিকে গৃহিণী, দুইটি। তবে বাঙ্গালায় দ্বিবচন নাই; আর একবারেও দুই গৃহিণীর সাক্ষাৎ হইতে পারে না। এই জন্য বৈয়াকরণদিগের নিকট করযোড়ে মার্জ্জনা প্রার্থনা করিয়া আমরা গৃহিণী শব্দই প্রয়োগ করিলাম।

গৃহিণী দুইটি বলিয়া লোকে নাম রাখিয়াছিল, সভ্যভামা আর রুক্মিণী। সভ্যভামা এবং রুক্মিণীর চরিত্রের সঙ্গে তাহাদের চরিত্রের যে কোন সাদৃশ্য ছিল, এমন আমরা অবগত নহি। তাহাদিগের প্রকৃত নাম নন্দা ও রমা। যাহার কাছে এখন সীতারাম আসিলেন, তিনি নন্দা। লোকে বলিত সভ্যভামা। নন্দা অন্তরাল হইতে সব শুনিয়াছিল। সীতারামকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হঠাৎ গঙ্গাস্নানের এত ঘটা কেন?”

সীতারাম বলিলেন, “গঙ্গে গঙ্গেতি যো ব্রুয়াৎ—”

নন্দা। তা জানি, তিনি মাথায় থাকুন। হঠাৎ তাঁর উপর এ ভক্তি কেন?

সীতা। দেখ, তোমাদের ঐহিক সুখের জন্য আমার যেমন জবাবদিহি, তোমাদের পরকালের সুখের জন্যও আমার তেমনি জবাবদিহি। সামনে একটি যোগ আছে, তোমাদের গঙ্গাস্নানে পাঠাব না?

নন্দা। তুমি যখন কাছে আছ, তখন আবার আমাদের গঙ্গাস্নান কি? তুমিই আমাদের সকল তীর্থ। তোমার পাদোদক খাইলেই আমার এক শ গঙ্গাস্নানের ফল হইবে। আমি যাব না।

সীতা। (সভ্যভামার নিকট হার মানিয়া) তা তুমি না যাও না যাবে, যারা যেতে চায়, তারা যাক।

নন্দা। তা যাক্, সবাই যাক্, আমি একা থাকিব, একটু ভূতের ভয় করিবে, তা কি করিব? কিন্তু আসল কথা কি, বল দেখি?

সীতা। আসল আর নকল কিছু আছে না কি?

নন্দা। তুমি ত ভাজ পটল, বল উচ্ছে।

সীতা। তবু ভাল, উচ্ছে ভেজে ত পটল বলি না?

নন্দা। তা বল না, কিন্তু আমাদের কাছে দুই সমান; লুকোচুরিতেই প্রাণ যায়। ভিতরের কথা কি বলিবে?

সীতা। বলিবার হইত ত বলিতাম।

অমনি নন্দার মুখখানা মেঘঢাকা মেঘঢাকা আকাশের মত, জলভরা জলভরা ফোটা পদ্মটার মত, হাই দিলে আরসি যেমন হয়, সেই মত এক রকম কি হইয়া গেল। একটু ধরা ধরা ভরা ভরা আওয়াজে নন্দা বলিল, “তা নাই বলিলে, তা সন্ধ্যার পর তোমার কাছে কে এসেছিল, সেইটা বল?”

সীতা। তা ঢের লোক ত আমার কাছে আসে। সন্ধ্যার পর অনেক লোক এয়েছিল।

নন্দা। মেয়েমানুষ কে এয়েছিল?

সীতা। তাও ত ঢের আসে। খাজনা মেটাতে, ভিক্ষা মাঙ্গ্‌তে, দায়ে অদায়ে পড়িয়া ঢের মাগী ত আমার কাছে আসে। স্ত্রীলোক প্রায় সন্ধ্যার পরই আসে।

নন্দা। আজ সন্ধ্যার পর কজন স্ত্রীলোক এয়েছিল?

সীতা। মোটে এক জন।

নন্দা। সে কে?

সীতা। তার ভাই বাচে না।

নন্দা। তা নয়—সে কে? নাম কি?

সীতা। আর এক দিন বলিব।

এইবার মেঘ বর্ষিল, দর্পণস্থ বাষ্পরাশি জলবিন্দুতে পরিণত হইল,—সত্যভামা কাঁদিল।

তখন সীতারাম নন্দার চিবুক গ্রহণপূর্ব্বক বড় মধুর আদর করিয়া সেখান হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন।

যেখানে রমা ঠাকুরাণী দর্পণ লইয়া সরু সরু কালো কুচ কুচে চুলের দড়িগুলি গুচাইতেছিলেন, সেইখানে গিয়া সীতারাম দর্শন দিলেন। রমা কনিষ্ঠা, নন্দার অপেক্ষা একে বয়সে ছোট, আবার আকারেও ছোট, সুতরাং নন্দার অপেক্ষা অনেক ছোট দেখাইত। নন্দার যৌবন এবং রূপ উভয়ই পরিপূর্ণ, শ্রাবণের গঙ্গা,—রমার দুইই অপরিপূর্ণ, বসন্তনিকুঞ্জপ্রহ্লাদিনী ক্ষুদ্রা কল্লোলিনী। নন্দা তপ্তকাঞ্চনবৎ শ্যামাঙ্গ—রমা হিমানী প্রতিফলিত কৌমুদীবৎ গৌরাঙ্গী। সেইখানে গিয়া সীতারাম দর্শন দিলেন। বলিলেন, “রুক্মিণি! গঙ্গাস্নানের কথা শুনেছ?”

রমা। ছি ছি, ও কি কথা!

সীতা। কোন্‌টা ছি ছি? গঙ্গাস্নান ছি ছি? না রুক্মিণী ছি ছি?

রমা। তাঁরা হোলেন দেবতা, লক্ষ্মী, আর সেই একটা কি নাম মনে আসে না—

সীতা। শিশুপালের গল্পটা বটে? তা সে কথা রহিল। গঙ্গাস্নানের কথাটা কি? শুনেছ?

রমা। শুনেছি বৈ কি।

সীতা। যাবে?

রমা। তাই ত চুলের দড়ি গোছাচ্চি।

সীতা। কেন যাবে? এই ত আমি তোমার সৰ্ব্বতীর্থ কাছে আছি।

রমা। যেতে না বল, যাব না।

সীতা। তবে যাইবার উদ্যোগ করিতেছিলে কেন?

রমা। যাইতে বলিতেছিলে বলিয়া।

সীতা। আমি ত যাইতে বলি নাই—আমি কেবল সবাইকে জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম যে, কেহ যাবে? তা তুমি যাবে কি?

রমা। তুমি যাবে কি?

সীতা। যাব।

রমা। তবে আমিও যাব।

সীতা। কিন্তু আজ আমি তোমাদের সঙ্গে যাব না। কাল পথে মিলিব।

রমা। আজ আমাদের নিয়ে যাবে কে?

সীতা। মৃণ্ময় নিয়ে যাবে।

রমা। তা হোক্। একটা কথা বলিবে?

সীতা। কি?

রমা। তোমার কি কাজ?

সীতা। সব কথা কি বলা যায়?

রমা। (সীতারামকে উভয় বাহুদ্বারা বেষ্টন করিয়া ) বলিতে হইবে। তোমার বড় সাহস, আমার বড় ভয় করে, তুমি কোন দুঃসাহসের কাজ করিবে,—তাই আমাদের সরাইয়া দিতেছ।

সীতারাম ক্রুদ্ধ হইয়া রমার খোঁপা ধরিয়া টানিল, মারিবার জন্য এক চড় উঠাইল, শেষে রমার নাক ধরিয়া নাড়িয়া দিল। বলিল, “আমি বড় দুঃসাহসের কাজ করিব সত্য, কিন্তু কোন ভয় নাই।”

রমা। তোমার ভয় নাই—আমার আছে। তোমার ভয় আমার ভয় কি স্বতন্ত্র? শোন, আজ সবার গঙ্গাস্নান যাওয়া বন্ধ। তুমি আজ আমার এই ঘরের ভিতর কয়েদী।

বলিতে বলিতে রমা দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া দ্বারে পিঠ দিয়া বসিল। বলিল, “যাইতে হয়, আমার গলায় পা দিয়া যাও। এখন বল দেখি, আজ তোমার কাছে কে আসিয়াছিল?”

সীতা। তোমাদের কি অষ্ট প্রহর চর ফেরে নাকি?

রমা। ভাণ্ডারী মহাশয় কিছু তরকারির প্রত্যাশায় বঞ্চিত হয়েছেন, তাই আমরা ও কথাটাও শুনিয়াছি। সে কে?

সীতা। শ্রী।

রমা। সে কি? শ্রী? কেন আসিয়াছিল?

সীতা। তার একটি ভিক্ষা ছিল।

রমা। ভিক্ষা পাইয়াছে কি?

সীতা। তুমি কি ভিক্ষুককে ফিরাইয়া থাক?

রমা। তবে ভিক্ষা সে পাইয়াছে। কি দিলে?

সীতা। কিছু দিই নাই, দিব স্বীকার করিয়াছি।

রমা। কি দিবে শুনিতে পাই না

সীতা। এখন না; দ্বার ছাড়।

রমা। সকল কথা ভাঙ্গিয়া না বলিলে, আমি দ্বার ছাড়িব না।

সীতা। তবে শুন, কাজি সাহেব শ্রীর ভাইকে জীয়ন্ত পুঁতিয়া ফেলিবার হুকুম দিয়াছেন। শ্রীর ভিক্ষা, আমি তাহার ভাইকে রক্ষা করি। আমি তাহা স্বীকার করিয়াছি।

রমা। তাই, আমরা আজ গঙ্গাস্নানে যাইব! তুমি আমাদের পাঠাইয়া দিয়া, নিবিঘ্নে ফৌজদারের ফৌজের সঙ্গে লাঠালাঠি দাঙ্গা করিবে।

সীতা। সে সকল কথায়, মেয়ে মানুষের কাজ কি?

রমা। কাজ কি? কিছুই কাজ নাই। তবে কি না, আমি গঙ্গাস্নানে যাইব না।

এই বলিয়া রমা, ভাল করিয়া দ্বার চাপিয়া বসিল। সীতারাম অনেক মিনতি করিতে লাগিল। রমা বলিল, “তবে আমারও কাছে একটা সত্য কর, দ্বার ছাড়িয়া দিতেছি।”

সীতা। কি বল?

রমা। তুমি বিনা বিবাদ বিসম্বাদে—দাঙ্গা লড়াই না করিয়া শ্রীর ভ্রাতার জন্য যাহা পার, কেবল তাহাই করিবে, ইহা স্বীকার কর।

সীতা। তাতে আমি খুব সম্মত। দাঙ্গা লড়াই, আমার কাজও নয়, ইচ্ছাও নয়। কিন্তু যত্ন সফল হইবে কি না, সন্দেহ।

রমা। হৌক না হৌক – বিনা অস্ত্রে যা হয়, কেবল তাই করিবে, স্বীকার কর।

কিছুক্ষণ ভাবিয়া সীতারাম বলিলেন, “স্বীকার করিলাম।”

রমা প্রসন্নমনে, দ্বার ছাড়িয়া দিল। বলিল, “তবে আমরা গঙ্গাস্নানে যাইব না।”

সীতারাম ভাবিলেন। বলিলেন, “যখন কথা মুখে আনা হইয়াছে, তখন যাওয়াই ভাল।”

রমা বিষণ্ন হইল, কিন্তু আর কিছু বলিল না। সীতারাম আর কাহাকে কিছু না বলিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আর ফিরিলেন না।