- প্রথম পরিচ্ছেদ
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
- সপ্তম পরিচ্ছেদ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ
- নবম পরিচ্ছেদ
- দশম পরিচ্ছেদ
- একাদশ পরিচ্ছেদ
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
- চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ
- সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
- ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
- বিংশ পরিচ্ছেদ
- একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- চতুর্ব্বিশতিতম পরিচ্ছেদ
- পরিশিষ্ট
দশম পরিচ্ছেদ
শ্রী। মহারাজ! তুমি ত সর্ব্বদাই চিত্তবিশ্রামে। রাজ্য করে কে?
সীতা। তুমিই আমার রাজ্য। তোমাতে যত সুখ, রাজ্যে কি তত সুখ!
শ্রী। ছি! ছি! মহারাজ! এইজন্য কি হিন্দুসাম্রাজ্য স্থাপিত করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলে? আমার কাছে হিন্দুসাম্রাজ্য খাটো হইয়া গেল, ধর্ম্ম গেল, আমিই সব হইলাম! এই কি রাজা সীতারাম রায়?
সীতা। রাজ্য ত সংস্থাপিত হইয়াছে।
শ্রী। টিকিবে কি?
সীতা। ভাঙ্গে কার সাধ্য?
শ্রী। তুমিই ভাঙ্গিতেছ। রাজার রাজ্য, আর বিধবার ব্রহ্মচর্য্য সমান। যত্নে রক্ষা না করিলে থাকে না।
সীতা। কৈ, অরক্ষাও ত হইতেছে না।
শ্রী। তুমি কি রাজ্য রক্ষা কর? তোমাকে ত আমার কাছেই দেখি।
সীতা। আমি রাজকর্ম্মে না দেখি, তা নয়। প্রায় প্রত্যহই রাজপুরীতে গিয়া থাকি। আমি এক দণ্ড দেখিলে যা হইবে, অন্যের সমস্ত দিনে তত হইবে না। তা ছাড়া, তর্কালঙ্কার ঠাকুর আছেন, মৃণ্ময় আছে, তাঁহারা সকলে কর্ম্মে পটু। তাঁহারা থাকিতে কিছু না দেখিলেও চলে।
শ্রী। একবার ত তাঁহারা থাকিতে রাজ্য যাইতেছিল। দৈবাৎ তুমি সে রাত্রে না পৌঁছিলে, রাজ্য থাকিত না। আবার কেন তাঁহাদের উপর নির্ভর করিতেছ?
সীতা। আমি ত আছি। কোথাও যাই নাই। আবার বিপদ্ পড়ে, রক্ষা করিব।
শ্রী। যতক্ষণ এই বিশ্বাস থাকিবে, ততক্ষণ তুমি কোন যত্নই করিবে না। যত্ন ভিন্ন কোন কাজই সফল হয় না।
সী। যত্নের ত্রুটি কি দেখিলে?
শ্রী। আমি স্ত্রীজাতি, সন্ন্যাসী, আমি রাজকার্য্য কি বুঝি যে, সে কথার উত্তর দিতে পারি! তবে একটা বিষয়ে মনে বড় শঙ্কা হয়। মুরশিদাবাদের সংবাদ পাইতেছেন কি? তোরাব্ খাঁ গেল, ভূষণা গেল, বারো ভুঁইঞা গেল, নবাব কি চুপ করিয়া আছে?
সী। সে ভাবনা করিও না। মুরশিদ কুলি যতক্ষণ মাল খাজনা ঠিক কিস্তি কিস্তি পাইবে, ততক্ষণ কিছু বলিবে না।
শ্রী। পাইতেছে কি?
সী। হাঁ, পাঠাইবার বন্দোবস্ত আছে বটে— তবে এবার দেওয়া যায় নাই, অনেক খরচপত্র হইয়াছে।
শ্রী। তবে সে চুপ করিয়া আছে কি?
সীতারাম মাথা হেঁট করিয়া কিছুক্ষণ নীরব হইয়া রহিলেন। পরে বলিলেন, “সে কি করিবে, কি করিতেছে, তাহার কিছু সংবাদ পাই নাই।”
শ্রী। মহারাজ! চিত্তবিশ্রামে থাক বলিয়া সংবাদ লইতে ভুলিয়া গিয়াছ?
সীতারাম চিন্তামগ্ন হইয়া বলিলেন, “বোধ হয় তাই। শ্রী! তোমার মুখ দেখিলে আমি সব ভুলিয়া যাই।”
শ্রী। তবে আমার এক ভিক্ষা আছে। এ পোড়ার মুখ আবার লুকাইতে হইবে। নহিলে সীতারাম রায়ের নামে কলঙ্ক হইবে; ধর্ম্মরাজ্য ছারেখারে যাইবে। আমায় হুকুম দাও, আমি বনে যাই।
সীতা। যা হয় হোক, আমি ভাবিয়া দেখিয়াছি। হয় তোমায় ছাড়িতে হইবে, নয় রাজ্য ছাড়িতে হইবে। আমি রাজ্য ছাড়িব, তোমায় ছাড়িব না।
শ্রী। তবে তাহাই করুন। রাজ্য কোন উপযুক্ত লোকের হাতে দিন। তার পর সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া আমার সঙ্গে বনে চলুন।
সীতারাম চিন্তামগ্ন হইয়া রহিলেন। রাজার তখন ভোগলালসা অত্যন্ত প্রবলা। আগে হইলে সীতারাম রাজ্য ত্যাগ করিতে পারিতেন। এখন সে সীতারাম নাই; রাজ্যভোগে সীতারামের চিত্ত সমল হইয়াছে। সীতারাম রাজ্য ত্যাগ করিতে পারিলেন না।