» » উপকূলে সংঘর্ষ

বর্ণাকার
🕮

পুরুষ মানুষকে আঙ্গুলের ওপর নাচাতে পারে এমন ট্রেনিং দিয়েই পাঠানো হয়েছিল তাদের। মেয়েটি একাকী হেঁটে দূরে চলে যাচ্ছে দেখে পাহারাদার প্রথমে একটু ইতস্তত করলো, তারপর তার কোন বিপদ হতে পারে ভেবে তার পিছু নিল। হাঁটতে হাঁটতে তাঁবু থেকে বেশ দূরে চলে এলো তারা। মেয়েটি পেছন ফিরে পাহারাদারকে বললো, ‘আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন?’

‘না, মানে, আপনার কোন বিপদ হয় কিনা ভেবে আপনার পিছু নিয়েছি।’

‘বিপদের কথা বলছো! বিপদ তো আমাদের তাঁবুর ভেতর। আমাদের সঙ্গী পুরুষগুলো একেকটা বদের হাড্ডি। ওদের খাই খাই আর মেটে না। ওদের জ্বালা সইতে না পেরেই তো তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসেছি।’

‘এ কথা আগে বলোনি কেন? চলো, এখন থেকে আমরা দৃষ্টি রাখবো যেন ওরা তোমাদের আর জ্বালাতন করতে না পারে।’

মেয়েটি তার সাথে ফিরে চললো। হাঁটতে হাঁটতে বললো, ‘আজ বুঝি রাত জাগার ডিউটি পড়েছে তোমার?’

‘হ্যাঁ।’ বললো পাহারাদার।

‘এক কাজ করো, আমার তাঁবুতে চলে এসো তুমি। তাহলে ঐ শয়তানরাও আসার সাহস পাবে না, আবার তোমারও ঘুমিয়ে পড়ার ভয় থাকবে না। গল্প করে বেশ সময় কাটিয়ে দেয়া যাবে।’

পাহারাদার এ কথার কোন জবাব দিল না।

চুপচাপ আরো কিছু পথ এগিয়ে এলো ওরা। মেয়েটি পাহারাদারের একদম পাশ ঘেঁষে চলতে চলতে বললো, ‘কি ব্যাপার, আমার কথায় মন খারাপ করলে? জবাব দিলে না যে।’

মেয়েটি এমন অভিনয় শুরু করলো, লোকটি শেষ পর্যন্ত তার অভিনয়ে গলে গেল। তাঁবুর কাছে এসে মেয়েটি আবার বললো, ‘এসো, ভেতরে এসো।’

মেয়েটির পীড়াপীড়িতে অনেকটা ভদ্রতার খাতিরে সে মেয়েটির তাঁবুতে প্রবেশ করলো।

তাঁবুতে ছোট একটি প্রদীপ জ্বলছিল। সেই আলোতে ওরা পরস্পরকে ভাল করে দেখলো। মেয়েটি আবেগমাখা কন্ঠে আকর্ষনীয় হাসি হেসে বললো, ‘বাহ! তুমি তো বেশ সুপুরুষ হে! আমাকে তুমি শয়তানের হাত থেকে আগলে রাখতে পারবে বলেই মনে হয়। কি বলো, পারবে না?’

মেয়েটির অনিন্দ্য রূপের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো পাহারাদার। মেয়েটি শরাবের ছোট একটি পাত্র উঠিয়ে বললো, সামান্য একটু পান করবে?’

‘না!’

‘কেন?’

‘আমি মুসলমান!’

‘যদি এত জোরের মুসলমান হও তবে খৃস্টানদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছো কেন?’

লোকটি চমকে উঠলো। সতর্ক হয়ে বললো, ‘তার মূল্য আমরা পেয়ে থাকি।’

মেয়েটি যেমন সুন্দরী তেমনি চতুর। তার মদির কটাক্ষ আর চটুল বাক্যবাণে লোকটি ক্রমেই বশিভূত হতে লাগলো। মেয়েটি তাকে বললো, ‘আচ্ছা, শরাব পান না করো, শরবত তো পান করবে?’

সে পাশের তাঁবু থেকে এক গ্লাস শরবত নিয়ে এলো। লোকটি গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে লাগালো, কিন্তু চুমুক না দিয়েই গ্লাসটি আবার নিচে নামিয়ে হেসে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এতে কি পরিমাণ হাশিশ মিশিয়েছো?’

মেয়েটিও চমকে উঠলো এবার। তবে কি ও বুঝে ফেলেছে তার চালাকি? দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সংযত কন্ঠে বললো, ‘বেশি না, সামান্যই।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে তার দিকে কটাক্ষ হেনে চটুল কন্ঠে বললো, ‘যতটুকু দিলে তুমি কিছুক্ষণ আত্মহারা হয়ে থাকবে।’

‘কেন?’

‘কারণ আমি তোমাকে পেতে চাই। তুমি কি বুঝো না কতটা উতলা হলে কোন যুবতী তাঁবু ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে?’

‘তবে যে বললে তোমার সঙ্গীরা তোমাকে বিরক্ত করছে?’

‘ও কথা না বললে তুমি কি আসতে আমার তাঁবুতে? প্লিজ, হয় আমাকে গ্রহন করো, নইলে তোমার খঞ্জর আমার বুকে আমূল বসিয়ে দাও।’ মেয়েটি আবেগভরা কন্ঠে বলতে লাগলো, ‘আমি দিনের বেলাতেই তোমাকে দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, কি করে তোমাকে পাওয়া যায়। রাতে তোমার ডিউটি পড়ায় আমার মনে হলো, আল্লাহ আমার গোপন ইচ্ছা সফল করার জন্যই এ ব্যবস্থা করেছে। আমি তোয়াকে ডিউটিতে দেখেই তাঁবু থেকে বের হয়ে তোমার চোখের সামনে দিয়ে ঘোরাফিরা করতে লাগলাম। তুমি যখন আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে তখন গভীর দৃষ্টিতে আমি দেখছিলাম তোমাকে। মনে হচ্ছিল, যুগ যুগ ধরে আমরা পরিচিত। আমরা দু’জন বহু কাল ধরে একে অপরের ঘনিষ্ট হয়ে বেঁচে আছি। তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি প্রাণ। তুমি তো দেখেছো, আমি তোমাকে শরাব সাধলেও নিজের জন্য নেইনি। কারণ শরাব আমি পান করি না, আমি যে মুসলমান।’

পাহারাদার অবাক হয়ে বললো, ‘তুমি এই কাফেরদের খপ্পরে কেমন করে পড়লে?’

‘বারো বছর ধরে আমি এদের সাথে আছি।’ মেয়েটি উত্তর দিল। ‘আমি জেরুসালেমের বাসিন্দা! সে সময় আমার বয়স বারো বছর। বাবা আমাকে এদের কাছে বেঁচে দিলেন। আমার জানা ছিল না আমার ক্রেতা খৃস্টান। তারাই আমাকে এ পথে নামিয়েছে। কোন উপায় নেই বলেই আমি এদের সাথে এখানে এসেছি।

দামেস্ক ও বাগদাদ আমার স্বপ্নের শহর। জীবনে বহু বার নাম শুনেছি এসব শহরের, শুনেছি এর শানশওকতের কথা। মুসলিম রাজত্বের প্রাণকেন্দ্র এ শহর! কত আশা ছিল তা দেখার! এখানে আসার পর মনে হচ্ছে আমি বারবার আমার ভাই-বোন আত্মীয়দের মাঝে ফিরে এসেছি। এ মাটিতে পা দিতেই এর আকাশ, বাতাস, মাটি আমার মনে জাগিয়ে দিল ধর্মের সেই পুণ্য স্মৃতি, আমি এক মুসললমান। মুসলমান হয়ে মুসলমানের ধ্বংশের জন্য আমি কি করে কাজ করি বলতো!’

আবেগে কেঁদে ফেললো মেয়েটি। গাঢ় স্বরে বললো, ‘আমার মন কাঁদছে! প্রাণ কাঁদছে!’

হঠাত সে যুবকের হাত চেপে ধরে বললো, ‘তুমি না মুসলমান! এ কাজ করতে তোমার বিবেকে বাঁধে না?’ তারপর গলার স্বর নামিয়ে বললো, ‘চলো আমরা দু’জন পালিয়ে যাই। তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাও, আমি সেখানেই যাবো। যদি মরুভূমিতেও নিয়ে বেড়াও, আমি খুশি মনেই তোমার সাথে থাকবো। নিজের জাতিকে এভাবে ধোঁকা দেয়ার পাপ থেকে তুমিও বাঁচো, আমাকেও বাঁচাও। আমার কাছে সোনার অনেক মোহর আছে, সে মোহর ভেঙে খেলেও আমাদের চলে যাবে বহুদিন।’

আলী বিন সুফিয়ানের এই কমান্ডো খুবই হুশিয়ার ছিল। সে হুশিয়ার ছিল বলেই হাশিশ মেশানো শরবত পান করেনী, হাশিশের গন্ধ সে ভালমতই চিনতে পেরেছিল। কিন্তু তারপরও সে মেয়েটির ছলাকলার প্রভাব এড়াতে পারলো না।

সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমরা এখানে কি করতে এসেছো?’

এ প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি যখন কথা বলা শুরু করলো, তখন দেখা গেলো আলীর লোকটির চেহারা বার বার পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির কথার বিষ মেশানো যাদু ততক্ষণে ঘায়েল করে ফেলেছে যুবককে। কিন্তু অনড় বিশ্বাস ও প্রবল দায়িত্ববোধ থাকায় সে বললো, ‘আমি তোমাকে আশ্বাস দিচ্ছি, তোমরা এখানে মুসলমানদের ধোঁকা দিতে পারবে না। আর যদি তুমি মনেপ্রাণে সততা নিয়ে এই অপকর্ম থেকে বিরত হও, তবে তুমি সৌভাগ্যবতী। আমি কথা দিচ্ছি, সত্য ও সুন্দরের পথে ফিরে এলে তুমি আমার সাথেই থাকবে।’

মেয়েটি আবেগ ও আনন্দের আতিশয্যে তাকে জড়িয়ে ধরলো। লোকটি বললো, ‘আমি আমার কমান্ডারকে বলবো, তোমাকে যেন অন্য মেয়েদের থেকে পৃথক রাখেন আর কোন আমীরের হাতে তুলে না দেন।’

মেয়েটি আনন্দে অধীর হয়ে তার হাতে চুমো খেলো। এ আনন্দ যেমন তার অভিনয় ছিল, তেমনি আলী বিন সুফিয়ানের এত সতর্ক গোয়েন্দাকে এমন চমৎকারভাবে ধোঁকা দিতে পারার সাফল্যের জন্যও তার আনন্দ হচ্ছিল।

‘একটু থামো।’ মেয়েটি তাকে বললো, ‘আমি দেখে আসি আমার সঙ্গীরা শুয়ে পড়লো কিনা!’

সে তাঁবু থেকে বের হয়ে গেল।

❀ ❀ ❀

আলী বিন সুফিয়ান সেনাপতি তাওফীক জাওয়াদের কামরায় বসে নূরুদ্দিন জঙ্গীর বিধবা স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ইসলামের মহান মুজাহিদের বিধবা স্ত্রী দূত মারফত তার মনের কথা সমস্তই সুলতান আইয়ুবীর কাছে লিখে জানিয়েছিলেন। তবুও তাঁর সঙ্গে দেখা করে চিঠিতে লেখা যায়না এমন কোন উপদেশ ও তথ্য থাকলে তা জেনে নেয়া প্রয়োজন।

একটু পরেই সেই সম্মানিতা মহিলা সেখানে এলেন। কিন্তু ছদ্মবেশের কারণে আলী বিন সুফিয়ানকে চিনতে পারলেন না। তাওফীক জাওয়াদ পরিচয় করিয়ে দিতেই অশ্রুতে দু’চোখে ভাসিয়ে তিনি বললেন, ‘হায়! এও আমার ভাগ্যে লিখা ছিল, আপন লোকেরা আজ গোপনে ও ছদ্মবেশে দেখা করতে আসে! তুমি তো এখানে আসতে বীরের বেশে, মাথা উঁচু করে। অথচ আজ এমন অবস্থায় এলে, কেউ যেন তোমাকে চিনতে না পারে! আর আমাকেও ঘর থেকে এমন সাবধানে বের হতে হলো, কেউ যেন দেখে না ফেলে, আমি কোথায় যাচ্ছি।’

আলী বিন সুফিয়ানের চোখও অশ্রুতে ভারী হয়ে এলো। আবেগের আতিশয্যে অনেকক্ষণ তিনি কোন কথাই বলতে পারেননি। জঙ্গীর বিধবা স্ত্রীর বৈধব্য বেশের দিকে তাকিয়ে রইলেন শুধু।

বেগম জঙ্গী বললেন, ‘আলী! আমি এই বেশ ধারণ করেছি শুধু স্বামীর শোকে নয়, আমি শোকাহত আজ জাতির দুর্যোগে, দুর্ভোগে। স্বার্থপর ছোট ছোট আমীররা আমার সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জাতির সম্মান ও ইজ্জত খৃস্টানদের পদতলে সোপর্দ করে দিয়েছে। তোমরা এখনো জানো না, এরই মধ্যে আমরা কি হারিয়েছি, কতটা দেউলিয়া হয়েছি!

জঙ্গী যে সমস্ত খৃস্টান কয়েদী ও যুদ্ধবন্দীকে কারারুদ্ধ করেছিল তারা এখন কোথায় তুমি জানো? সম্রাট রিজনেল্ট, যাকে মাত্র কয়েক মাস আগে জঙ্গী তার দলবলসহ বন্দী করেছিল এবং ক্রাক থেকে এখানে নিয়ে এসেছিল, সে এখন আর বন্দী নেই। জঙ্গী সম্রাট রিজনেল্টকে বন্দী করতে পেরে খুবই খুশী ছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমি খৃস্টানদের সাথে এমন দরকষাকষি করে এ সকল বন্দী বিনিময় করবো, যাতে খৃস্টানদের কোমর ভেঙ্গে যায়।’

জঙ্গীর বিধবা স্ত্রী বললেন, ‘একজন সম্রাট ও যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি গ্রেফতার হওয়া কোন সাধারণ ঘটনা নয়। আমরা তাঁর বিনিময়ে খৃস্টানদের কাছ থেকে অনেক চড়া শর্ত আদায় করে নিতে পারতাম। কিন্তু গতকাল আমার ছেলে আমার কাছে এসে বললো, মা! আমি খৃস্টান সম্রাট ও তার সঙ্গীদের সকলকে বিনা শর্তে মুক্ত করে দিয়েছি।’

এ খবর শুনে আমি মনে এমন প্রচণ্ড আঘাত পেলাম যে, অনেকক্ষণ আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। শেষে যখন হুশ হলো ছেলেকে শুধু বললাম, ‘এই যুদ্ধ বন্দীদের বিনিময়ে তুমি কি তোমার সকল যুদ্ধ বন্দী মুক্ত করে নিয়েছো?’

ছেলে কচি খোকার মত উত্তর দিল, ‘আমি আমার যুদ্ধ বন্দী নিয়ে কি করবো? আমি তো আর কোনদিন কারো সাথে যুদ্ধ করবোনা। আর এদের শুধু শুধু খাইয়ে খরচ বাড়িয়ে কি লাভ?’

আমি ছেলেকে বললাম, ‘দেখো, তুমি আর কোনদিন তোমার বাবার কবর জিয়ারত করতে যাবে না। তুমি যখন মরবে তখন তোমার লাশ ঐ কবরের পাশে দাফন হবে না, যেখানে তোমার বাবা শুয়ে আছেন। এই কবরস্থানে এমন সব শহীদগণ শুয়ে আছেন, যারা খৃস্টানদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন। তোমাকে সেখানে দাফন করা হলে তাঁদের আত্মা কষ্ট পাবে ও তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।’ কিন্তু আমার ছেলে তো শিশু, সে কিছুই বুঝে না। আমি সেই আমীরদের সাথেও মিশেছি, আমার ছেলে যাদের হাতের পুতুল। তারা আমাকে সম্মান দেখায় কিন্তু আমার কথার কোন মূল্য দেয় না।

খৃস্টানরা তাদের সম্রাট ও যুদ্ধ বন্দীদের মুক্ত করে নিয়ে মুসলমানদের মুখের ওপর চপেটাঘাত করেছে। কিন্তু আমি ভেবে কূল পাইনা, সালাহউদ্দিন কায়রোতে বসে কি করছেন? তিনি কি আসছেন না কেন? আলী বিন সুফিয়ান! বলো, সুলতান আইয়ুবী কি চিন্তা-ভাবনা করছেন? তাঁকে গিয়ে বলবে আপনার এক বোন আপনার জাতির অসম্মান দেখে শোক প্রকাশ করছে। তাঁকে আরও বলবে, আপনার বোন শোকের কালো পোশাক সেই দিন ফেলবে, যেদিন আপনি দামেস্কে উপস্থিত হয়ে মুসলিম বিশ্বের সম্মান বিলাস প্রিয় ও ঈমান বিক্রেতা আমীরদের থেকে ছিনিয়ে নিবেন ও তাঁকে উদ্ধার করবেন! নতুবা তিনি এই পোষাকেই মৃত্যুবরণ করবেন আর অসিয়ত করে যাবেন, তাঁকে যেন এ পোষাকেই দাফন করা হয়। কোন কাফন যেন তাকে পরানো না হয়। এ অবস্থায় আমি কিয়ামতের দিন আমার স্বামী ও আল্লাহর সামনে সাদা কাফনে যেতে চাই না।’

সুলতান নূরুদ্দিন জঙ্গীর বিধবা স্ত্রীর চোখ থেকে তখনো অশ্রু ঝরছিল। আলী বিন সুফিয়ান তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘মোহতারেমা, আমি এ আবেগের মূল্য খুব ভাল করেই বুঝি! দয়া করে আমার কথাগুলো একটু শুনুন। সুলতান আইয়ুবীও আপনার মত অধীর ও অশান্তভাবেই প্রহর কাটাচ্ছেন। আপনি জানেন, যুদ্ধ কেবল আবেগ ও উত্তেজনার বশে হয় না। এখানকার সঠিক অবস্থা না জেনে অন্ধকারে ঝাঁপ দেয়া প্রকৃত মুজাহিদের কর্ম নয়। এমন কাজ আইয়ুবী করতে পারেন না।

আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আইয়ুবী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে দেশে গৃহযুদ্ধ না বাঁধে। গৃহযুদ্ধ বাঁধলে তাতে মিল্লাতে ইসলামিয়ারই ক্ষতি হবে। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, ইসলামের স্বার্থে আমরা এগিয়ে এলে জাতি আমাদের সাথেই থাকবে। সৈন্যদের ব্যাপারেও তাওফীক জাওয়াদ আমাকে এই আশ্বাস দিয়েছেন, এখানকার সৈন্যরা আমাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াবে না। তবে রক্ষীবাহিনী মোকাবেলায় নামতে পারে।’

‘আমিও আপনাকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি, জাতি আপনাদের সাথেই থাকবে।’ জঙ্গীর স্ত্রী বললেন, ‘আমি নারী, যুদ্ধের ময়দানে হয়তো যেতে পারবো না। কিন্তু আমার লড়াই অব্যাহত আছে। আমি আমার সেক্টরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আমি নারী সমাজের মাঝে জাতীয় চেতনাবোধ এমন তীব্রভাবে সৃষ্টি করে রেখেছি যে, তাদের স্বামী, সন্তান ও ভাইবেরাদার যদি আপনাদের সহযোগীতায় এগিয়ে না যায়, তবে তারা নিজেদের ঘরে কিছুতেই শান্তিতে বসে থাকতে পারবে না।

যদি দরকার হয়, সামর্থবান নারীরা যাতে ময়দানে আপনাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করতে পারে তারও প্রস্তুতি চলছে। আমার তত্বাবধানে যেসব মেয়েরা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা এরই মধ্যে তলোয়ার চালনা, তীর নিক্ষেপ প্রভৃতি কাজে নৈপুণ্য অর্জন করেছে। দামেস্কের ঘরে ঘরে এখনো সেইসব মহিলারই আধিপত্য, যারা ঈমানদার, বিশ্বস্ত ও অনুগত। যদি গৃহযুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি হয়, তবে দামেস্কের প্রতিটি ঘরে মেয়েরা এই অর্বাচীন খলিফার বিরুদ্ধে সামরিক দূর্গ গড়ে তুলবে।

এখনো যদি সুলতান আইয়ুবী সৈন্য নিয়ে এখানে চলে আসে, তবে আমার নাবালেগ সন্তান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা নিজেদের অসহায় ও নিঃসঙ্গ দেখতে পাবে।’

আবেগদীপ্ত কন্ঠে তিনি বললেন, ‘তুমি জলদি চলে যাও আলী ভাই! দ্রুত ফিরে এসো সৈন্য নিয়ে। এখানকার দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দাও। জাতি তোমাদের পথ আগলে দাঁড়াবে না। যদি বর্তমান খলিফার খুন তোমাদের প্রয়োজন হয়, হত্যা করো তাকে। সে নূরুদ্দিন জঙ্গী ও আমার সন্তান বলে দয়া দেখাতে গিয়ে জাতির সর্বনাশ করো না। আমার ছেলের দেহ খণ্ড খণ্ড হয়ে যাক কিন্তু মুসলিম মিল্লাতকে আমি খণ্ড খণ্ড হতে দিতে পারি না।’

খলিফার মায়ের কন্ঠ থেকে এ ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার পর তাওফীক জাওয়াদ ও আলী বিন সুফিয়ানের আর কিছুই বলার ছিল না। তারা যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে বসলো। সিদ্ধান্ত হলো, সুলতান আইয়ুবী অতি গোপনে আসবেন, খলিফা ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা যেন জানতে না পারে।

❀ ❀ ❀

আলী বিন সুফিয়ানের কমান্ডোর কাছ থেকে গোপন তথ্য জেনে নিয়ে খৃস্টান মেয়েটা তাকে বসিয়ে রেখে তার সাথীদের কাছে গেলো। বললো, ‘আমরা ধোঁকা খেয়েছি। এরা সবাই মিশরের লড়াকু গোয়েন্দা। তাদের কমান্ডার গোয়েন্দা জগতের কিংবদন্তি পুরুষ আলী বিন সুফিয়ান।’

এ সংবাদ শোনার সাথে সাথে তাদের মনে ভয়ানক আতংক সৃষ্টি হলো। এখন কি করবে এই চিন্তায় তারা অধীর হয়ে উঠলো। এখানে থাকা এখন বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ, আবার বেরিয়ে যাওয়াও কঠিন। মেয়েটি বললো, ‘কি করবে জলদি চিন্তা করে বের করো, আমি নাগর সামলাই।’

মেয়েটি ফিরে এলো সেই পাহারাদারের কাছে। নানা ছলাকলায় ভুলিয়ে ভালিয়ে আটকে রাখলো তাকে তাঁবুতে। খৃস্টানদের তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো এক লোক। সে আলী বিন সুফিয়ানকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পেল না।

আলী বিন সুফিয়ানকে না পেয়ে খৃস্টানটি আরো ঘাবড়ে গেল। ভাবলো, তবে কি তিনি আমাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে গেছেন?

ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে ফিরে এলো তার লোকদের কাছে। বললো, ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে! আলী বিন সুফিয়ান তার তাঁবুতে নেই। সম্ভবত আমাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে গেছে। আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা ঠিক হবে না। জলদি পালাও সবাই।’

তখন রাত দ্বি-প্রহর। এ শহরে এরা নতুন। এখানকার পথঘাট, পরিবেশ কিছুই তাদের জানা নেই। দিনের বেলা হলে পথ একটা খুঁজে নেয়া তেমন কঠিন ছিল না। তাছাড়া জনারণ্যে মিশে হারিয়ে যাওয়া যেত সহজেই। কিন্তু এই গভীর রাতে মেয়েদের নিয়ে পথে বের হওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। ভেতরে ভেতরে ঘামতে লাগলো সবাই।

একজন পরামর্শ দিল, ‘কোন হোটেলে গিয়ে উঠা যাক। বলবো, আমরা কায়রোর বণিক। বাইরে উন্মুক্ত ময়দানে এভাবে শুয়ে থেকে ধরা দেয়ার কোন মানে হয় না।’

অন্যরাও তার প্রস্তাবে রাজি হলো, ‘সেই ভালো। কোন সরাইখানাইয় গিয়ে রাত কাটাতে পারলে সকালে উঠে গা ঢাকা দেয়া যাবে।’

তারা এক লোককে গোপনে সেই উদ্দেশ্যে বাইরে পাঠিয়ে দিলো। তাঁবু থেকে বেরিয়ে লোকটি চুপিসারে পাহারাদারের দৃষ্টি এড়িয়ে মাঠ থেকে রাজপথে উঠে গেলো। সরাইখানার খোঁজে সে শহরের গলিপথে হাঁটতে লাগলো।

সে হাঁটছে আর ভাবছে, সরাইখানা পেলে কষ্ট হলেও হয়তো আমরা সেখানে উঠে যেতে পারবো, কিন্তু আসবাবপত্র সরানো বড় সমস্যা হয়ে যাবে! প্রকাশ্যে বণিক হিসাবে আমাদের কাছে থাকার কথা ব্যবসায়ীক পণ্য, কিন্তু মুসলমান আমীর ও সেনাপতিদের জন্য যে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা, হীরা, জহরত ও বিভিন্ন প্রকারের উপঢৌকন আছে তা সরানো সহজ নয়। এগুলো সরাতে গেলেই ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়! তখন আর বণিকের ছদ্মবেশ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। এমন কোন আমীরের সাথেও এখনো পরিচয় হয়নি যার কাছে সাহায্যের জন্য যাওয়া যায়।

লোকটি জনশূন্য রাস্তা ধরে হাঁটছে। রাস্তার দু’পাশে দোকানপাটের ঝাপ বন্ধ। ডানে-বায়ে, সামনে-পেছনে কোথাও কোন লোককে দেখতে পেল না সে। কোন সরাইখানারও সন্ধান পেল না সে। অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরির পর মনে হলো সামনের দিক থেকে একজন লোক এদিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটাকে অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা না গেলেও ক্রমেই একটা মানুষের কাঠামো পরিস্কার ভেসে উঠলো তার সামনে। আরেকটু কাছাকাছি হলে দেখা গেল লোকটার মাথা ও মুখের অর্ধেকটা চাদর দিয়ে ঢাকা। সাহস সঞ্চার করে সে ডাকলো, ‘এই যে ভাই, শুনুন। এদিকে কোন সরাইখানা পাওয়া যাবে?’

‘শহরের এদিকটায় তো ভাই কোন সরাইখানা নেই! আর থাকলেও এত রাতে কোন সরাইখানার মালিক গেট খুলবে না। এত রাতে সরাইখানা খুঁজতে বেড়িয়েছো কেন?’

‘আজই এক বানিজ্য কাফেলা নিয়ে আমরা এখানে পৌঁছেছি। আমাদের সাথে চারটি মেয়ে আছে, তাদেরকে তাঁবুতে রাখা ঠিক না, এজন্যই সরাইখানা খুঁজছি।’

অচেনা লোকটি চিন্তিত কন্ঠে বললো, ‘হ্যাঁ।, এটাও একটা প্রশ্ন!’ একটু ভেবে নিয়ে বললো, ‘কিন্তু তোমাকে সন্ধ্যার আগেই সে ব্যবস্থা করতে হতো।’

‘জ্বি, তা ঠিকই বলেছেন। কিন্তু তা তো করা হয়নি! এখন যে কি করি! এত রাতে……’

‘এসো আমার সঙ্গে, দেখি তোমার কোন উপকার করা যায় কনা! তুমি এক বিদেশী, এখান থেকে গিয়ে আমাদের বদনাম করে বেড়াবে, বলবে, দামেস্কে আমাদের পর্দানশীল মহিলারা খোলা মাঠে পড়েছিল জানার পরও ওখানকার কোন দ্বীনদার ভাই এগিয়ে আসেনি, তা হয় না। আজ রাতের মত ব্যবস্থা না হয় আমিই করে দেবো।’

‘কোথায় যেতে হবে?’

‘আমি সরাইখানাতেই তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দেবো। চলো আমার সঙ্গে, তারপর গিয়ে মেয়েদের নিয়ে আসবে।’

‘কিন্তু আমি এ শহরে একেবারেই নতুন। পথঘাট কিছুই চিনিনা। পথ হারানোর ভয়েই মেয়েদের রেখে বেশী দূর যাইনি। চলুন না, মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে একবারেই যাই।’

‘কোন মাঠে বসিয়ে রেখেছো ওদের?’

‘বেশি দূরে নয়। আসুন না, কাছেই।’

অচিন লোকটি তার সাথে চলতে লাগলো। উভয়েই তাঁবুর কাছে পৌছলে খৃস্টানটি তাঁকে তাঁবু দেখিয়ে বললো, ‘অই যে আমাদের তাঁবু। আপনি এখানে একটু দাঁড়ান, আমি ওদের নিয়ে আসি।’

অচিন লোকটিকে দাঁড় করিয়ে রেখে সে তাঁবুগুলোর দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। কয়েকটি তাঁবুর পরই ছিল খৃস্টানদের তাঁবু। সে তার সঙ্গীদের কাছে গিয়ে বললো, ‘চলো। যাক বাবা, কপালগুনে লোকটির দেখা পেয়েছিলাম। নইলে সারা রাত পথে পথেই ঘুরতে হতো।’

সবাই উৎসুক হয়ে তাকাল তার দিকে। চোখে মুখে জিজ্ঞাসা। সে সব কথা ওদের খুলে বলে তাড়া দিল তাদের, ‘জলদি করো, লোকটি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। কতক্ষণ তিনি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন? দয়া করে তিনি কোন সরাইখানায় আমাদের থাকার জায়গা করে দিতে রাজি হয়েছেন, এই ত ঢ়ের।’

কিন্তু সঙ্গীদেরকে তার মতো উৎসাহী মনে হলো না। তার কথা শুনে তাদের মনে কেন যেন অজানা ভয় ঢুকে গেল। বললো, ‘কিন্তু এ লোক যদি ধোঁকা দেয়?’

‘কিন্তু আমরা এমন বিপদে পড়েছি, যার থেকে মুক্তির জন্য কোন না কোন বিপদের ঝুঁকি আমাদের নিতেই হবে।’ বললো সে।

অন্য একটি মেয়ে বললো, ‘আলী বিন সুফিয়ান ছদ্মবেশে জঙ্গী গোয়েন্দা দল নিয়ে কেন এখানে এসেছে আমরা তা জেনে গেছি। খলিফা ও আমীররা খৃস্টানদের বন্ধুত্ব গ্রহন করার কারনেই তাকে এ অভিযানে আসতে হয়েছে। যদি আমরা আলীর এ অভিযানের খবর খলিফা বা অন্তত কোন আমীরের কানেও দিতে পারতাম, তবে আমরা এখন যে বিপদে আছি তারচেয়ে বেশী বিপদে পড়তো আলী।’

‘তা ঠিক। এ সংবাদ আমাদের পুতুল সরকারের খলিফাকে রাতেই পৌঁছে দিতে পারলে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের বখশিশ পাওয়া যেতো।’

‘বখশিশের কথা পরে চিন্তা করো। আগে এ সংবাদ খৃস্টান শাসকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করো, যাতে তারা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর রাস্তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে পারে।’

অন্য একজন বললো, ‘এসব আলাপ পরে আরো করা যাবে, এখন দ্রুত সব গুছিয়ে নিয়ে চলো বেরিয়ে পড়ি।’

বেরিয়ে পড়ার জন্য ওরা গোছগাছ শুরু করলো। মেয়েটির তাঁবুতে খবর দিতে গিয়ে দেখা গেল পাহারাদার গভীর ঘুমে অচেতন। সবাই মেয়েটির কাজের উচ্চ প্রশংসা করলো।

আলী বিন সুফিয়ানের সঙ্গীরা তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন। পাহারাদার ঘুমিয়ে আছে মেয়েটির তাঁবুতে। এই অবসরে সকলেই একত্রেই বেরিয়ে এলো তাঁবু থেকে। আসবাবপত্র, মালামাল ও পশুগুলো পড়ে রইলো ওখানেই।

মালামাল নিয়ে তাদের এখন আর ভাবনা নেই। আগামীকাল যখন ছদ্মবেশী আলী ও তার গোয়েন্দা বাহিনীকে ধরিয়ে দেবে তখন তাদের মালসামান তারা এমনি পেয়ে যাবে।

তারা তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলো। ধীরে পায়ে লোকটিকে যেখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল সেখানে গেল। কিন্তু ওখানে পৌঁছে লোকটিকে দেখতে পেলো না ওরা। এদিক-ওদিক তাকালো, আশেপাশে কোন জনমানুষের চিহ্নও নেই।

অজানা ভয় ও আতঙ্ক আবার ঘিরে ধরলো ওদের। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। ওরা যখন চরমভাবে বিভ্রান্ত ও দিশেহারা তখন হটাৎ অন্ধকার থেকে একদল লোক উঠে দাঁড়ালো এবং ঘিরে ফেললো।

তাদেরকে ঘেরাও করে তাঁবুর ওখানে নিয়ে এলো কমান্ডোরা। মশাল জ্বালিয়ে মশালের সামনে তাদের বসিয়ে রেখে খবর দিল আলী বিন সুফিয়ানকে।

খবর পেয়ে তাঁবু থেকে ধীরেসুস্থে বেরিয়ে এলেন আলী বিন সুফিয়ান। তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছিলে?’ তারা মিথ্যা উত্তর দিলে আলী বিন সুফিয়ান বললেন, ‘কিন্তু আমি তো জানি তোমরা সরাইখানা তালাশ করছিলে! আমাকে কি বলবে, কে সরাইখানার সন্ধানে ঘুরে মরছিলে?’

একজন অপরাধীর মত স্বীকার করে বললো, ‘জ্বী, আমি!’

‘আর যাকে তুমি সরাইখানার ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিলে, সে ব্যক্তি আমি!’ আলী বিন সুফিয়ান বললেন।

সবাই বিস্মিত হয়ে তাকাল তাঁর দিকে। মুজাহিদরা ভাবছিলো, একেই বলে আল্লাহর গায়েবী মদদ! নইলে তাওফীক জাওয়াদের ঘর থেকে তাঁবুতে ফেরার সময় এই লোক তার সামনে পড়বে কেন? আর আলী বিন সুফিয়ানের কাছে সে সরাইখানার রাস্তাই বা খুঁজতে যাবে কেন?

অন্ধকারেও খৃস্টান গোয়েন্দার প্রথম কথাতেই আলী বিন সুফিয়ান বুঝে ফেলেছিলেন, সে কে এবং কি করছে। তিনি জানতেন, এসব খৃস্টান গোয়েন্দার আশ্রয়স্থল হচ্ছে কোন আমীরের মহল। কিন্তু তিনি সে পর্যন্ত তাকে পৌঁছার সুযোগ দিলেন না। লোকটিকে সঙ্গে নিয়েই তিনি তাঁবু পর্যন্ত চলে এলেন। খৃস্টান গোয়েন্দা যখন তাঁকে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে তবুর ওখানে গেল তখন তিনি মনে মনে খুশিই হলেন।

খৃস্টানটি তাঁবুর ভেতর ঢুকে যেতেই আলী বিন সুফিয়ান দ্রুত ক্যাম্পে গিয়ে কয়েকজন জানবাজকে চুপিসারে ডেকে তোললেন। চটজলদি তাদের বুঝিয়ে বললেন, এখন কি করতে হবে।

প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া শেষ করেই তিনি তাদের তাঁবু থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন খৃস্টানদের তাঁবুর ওখানে। ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালেন তাঁবুর আড়ালে। চুপ করে শুনতে লাগলেন তাদের কথা। তাদের আলোচনা থেকে তিনি বুঝতে পারলেন, খৃস্টান গোয়েন্দারা তাঁর মিশন সম্পর্কে সব খবরই জেনে ফেলেছে। কিন্তু এসব গোপন তথ্য কেমন করে ফাঁস হলো ভেবে পেলেন না তিনি।