☼ অজেয় রায় ☼
বাস্তেন দ্বীপে অভিযান
দুই
মাসখানেক পরের কথা।
সিঙ্গাপুর। মালয় রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তে এক গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বন্দর। ভারতবষ, ব্রহ্মদেশ মানে অধুনা মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশ থেকে দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়া, চিন দেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে পাড়ি দেওয়ার মুখে প্রধান বন্দর বলা যায় সিঙ্গাপুরকে।
মামাবাবু, সুনন্দ, আমি সিঙ্গাপুর এসেছি তিনদিন হল। মামাবাবু ও সুনন্দ তাদের। প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে কনফারেন্স নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকে। আমি এই সুযোগে সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখি। মামাবাবু মোহনভাই প্যাটেল নামে তাঁর পূর্বপরিচিত এক যুবককে লাগিয়ে দিয়েছেন। আমার গাইড হিসেবে। মোহন আমায় ঘুরিয়ে দেখায়।
সিঙ্গাপুর আসলে একটা দ্বীপ। মেনল্যান্ড থেকে খুব কাছে। চাওড়া বাঁধ দিয়ে যুক্ত। বাঁধের ওপর দিয়ে গেছে রাস্তা ও রেল লাইন।
অটো ট্যাক্সি বা পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং, ফোর্ট ক্যানিং ইত্যাদি দ্রষ্টব্য বাড়িগুলি। শহরের এক অংশে রাস্তাঘাট, বেশ চওড়া, পাকা। সেখানের বাড়িঘর আধুনিক প্যাটার্নের। বহুতল বাড়ি প্রচুর। আবার শহরের পুরনো অংশগুলি ঘিঞ্জি। সরু অপরিচ্ছন্ন রাস্তা। বন্দরটা বহু বছর ইংরেজদের অধিকারে ছিল।
কত জাতের মানুষ যে দেখা যায় সিঙ্গাপুরে। নানা দেশের নাবিক মাঝি—মাল্লারা তো রয়েছেই, এছাড়াও এই শহরের স্থায়ী বাসিন্দা মালয়ি, আরবি, ইউরোপিয়ান ইত্যাদি। ভারতীয়রাও সংখ্যায় কম নয়। গুজরাতি, শিখ, বাঙালি, পারশি—এমনি অনেক ভারতীয় নাকি এখানে ব্যবসাবাণিজ্য বা চাকরি সূত্রে দীর্ঘকাল আছে। রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলির নানা জাতি এবং চিনারা। চিনারাই সংখ্যায় শহরে সবচেয়ে বেশি। গিসগিস করছে মানুষ সদা ব্যস্ত শহরটায়।
শহরের পুব দিকে এক—নাতিউচ্চ পাহাড়। বন্দরে ছোট বড় জাহাজ লঞ্চ নৌকা সাম্পান অজস্র। রাতেও কিছু এলাকায় দোকান বাজার খোলা থাকে।
কনফারেন্সের শেষ দিন রাতে মামাবাবু ঘোষণা করলেন, আমরা কাল মিকির সঙ্গে দেখা করতে রওনা দেব। মিকিকে কবর পাঠিয়েছিলাম। উত্তর এসেছে আজ।
পরদিন সকালে আমরা ফিঙ্গার পায়ার নামে জেটি থেকে একটা মাঝারি আকারের লঞ্চ চেপে বাটাম আইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হলাম। পেরোচ্ছি মালাক্কা প্রণালী। বিকট শব্দ করে প্রচণ্ড গতিতে লঞ্চ ছুটল। তিনতলা লঞ্চ। উপরের দুই তলায় বসার সিটে গদি আছে। তবে নিচের তলাটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ও সোফা পাতা। যাত্রীর ভিড় নেই মোটে। সিট নম্বর নেই। যে যেখানে খুশি বসতে পারে। আমি ও সুনন্দ উঠলাম দোতলায়। মামাবাবু নীচের তলায় বসলেন। সমুদ্রে উদ্দাম ঢেউ। একটু ভয়ই করছিল, লঞ্চ বেসামাল না হয়। তবে স্থানীয় যাত্রীরা দেখলাম নির্বিকার। কেউ খবরের কাগজ পড়ছে, কেউ বা দিব্যি ঘুম মারছে। ঘণ্টা দুই বাদে লঞ্চ বাটাম দ্বীপে ভিড়ল। এটি ছোট্ট দ্বীপ। সিঙ্গাপুরের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়ায় পা দেবার জন্য নিকটতম মাটি।
পর্যটকদের কাছে বোধহয় জায়গাটা তেমন আকর্ষণীয় নয়। সেখানে অল্প কয়েকটি দোকান, হোটেল, অফিস, বাড়ি। দোকানপাট খুব কম। নিরালা জায়গা। ট্যাক্সি ড্রাইভার ও হোটেল রেস্টুরেন্টের দালালরা আমাদের নিয়ে রীতিমতো টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকে। ছোট একটা বিমানবন্দর আছে ওখানে।
মামাবাবু কিছু ডলার ভাঙালেন। ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রার নাম রুপিয়া। আমরাও টাকাকে হিন্দিতে বলি রুপিয়া। তবে ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ার দাম ভারতীয় টাকার চেয়ে ঢের কম।
বেজায় গরম। বিষুবরেখা এই দ্বীপের ওপর দিয়ে গেছে। তাই এখানে সারা বছরই গ্রীষ্মকাল, আর বৃষ্টি পড়ে বছরভোর। একটা মোটামুটি হোটেলে উঠলাম।
পরদিন সকালে বাটাম থেকে বিমানে চড়ে রওনা দিলাম সুমাত্রার দক্ষিণ—পূর্ব অঞ্চলে পালেমবাং। বেশ নিচু দিয়ে যাচ্ছিল বিমান। ফলে আগাগোড়াই জানলার কাঁচ দিয়ে আকাশ থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম সুমাত্রার গভীর জঙ্গল। শতশত মাইল জুড়ে যেন সবুজ কার্পেট বিছানো। কখনো কখনো দেখলাম জঙ্গলময় পাহাড়। দারুণ লাগছিল দেখতে। তবে মাঝে মাঝেই বৃষ্টির ছাঁটে জানালার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যাওয়ায় বাইরে নজর যাচ্ছিল না।
মামাবাবু যেতে যেতে বললেন, ইন্দোনেশিয়ায় তেরো হাজারের বেশি দ্বীপ আছে। বড় পাঁচটা দ্বীপ, মানে সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও, সিলিবিস, নিউগিনির মধ্যে তিনটে দ্বীপই জঙ্গল আর পাহাড়ে ভরা। আন্দালাস মানে সুমাত্রার চেয়েও জঙ্গল পাহাড় বেশি কালিমাস্তান অর্থাৎ বোর্নিওতে আর ইরিয়ান—জায়া মানে নিউগিনিতে।
হঠাৎ মামাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় ভাষার নাম কী জানো?
নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। আমি আমতা আমতা করি। সুনন্দ তো চুপ।
মামাবাবু বলেন, আমাদের এই দোষ। ইউরোপ—আমেরিকার কত খুঁটিনাটি খবর আমাদের মুখস্থ কিন্তু এত কাছের দেশ ইন্দোনেশিয়া, যাদের সঙ্গে আমাদের রীতিমতো আত্মীয়তা আছে বলা যায়, তাদের খবর তেমন রাখি না। এদের জাতীয় ভাষার নাম বাহাসা। বর্ণলিপি— রোমান। বাহাসা আসলে ভারতীয় শব্দ ভাষা থেকে এসেছে। বদলানো রূপ। তবে এখানে অনেক লোকাল ভাষা আছে। ভারতবর্ষেও তো একই ব্যাপার। বড় দেশ হলে, অনেক জাতি ধর্মের বাস হলে যা হয়। তবে ভারতবর্ষ মোটামুটি একটাই ভূখণ্ড আর ইন্দোনেশিয়া ছাড়া ছাড়া অজস্র দ্বীপ। তাই এক দেশের বা দ্বীপের ভাষা দূর জায়গার লোক অনেক সময় বুঝতেই পারে না। একই জিনিসের এক এক ভাষায় আলাদা আলাদা নাম। উদাহরণ দিচ্ছি—এই যেমন পর্বতকে বাহাসায় বলে গুনুং। সুমাত্রায় বলে বকিত। ফ্লোরিস দ্বীপে বলে কেলি। বাজো উপভাযায় বলে ডোরো।
সুমাত্রায় জঙ্গলকে বলে হুতান। কিন্তু বোর্নিওতে হুতান বললে স্থানীয় লোক বুঝবে না। ওখানে জঙ্গলকে বলে সুয়াকা। জাকার্তা বলি এমনি জায়গা যেখানে প্রচুর টুরিস্ট যায়, সেসব জায়গা ছাড়া ইংরেজির চল নেই মোটে। বোঝে না লোকে। তা অবশ্য ভারতেও ইনটেরিওর গ্রামে গিয়ে ইংরিজিতে কথা বললে বুঝবে কজন? কয়েকটা শব্দ বুঝবে বড়জোর।
বুঝলাম যে মামাবাবু ইন্দোনেশিয়া সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হয়ে এসেছেন। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও নিশ্চয় ভ্রমণকারীদের বিবরণ পড়েছেন। নইলে উনি তো আগে আসেননি ইন্দোনেশিয়ায়। আর আমি ইতিহাসে এম. এ. করেও কতটুকু জানি এই দেশের ভিতরের খবর?
পালেমবাং বিমানবন্দরে নামলাম। মিকি আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। এয়ারপোর্টে। মোটামুটি একটা ভালো হোটেলে নিয়ে গিয়ে তুলল আমাদের।
বেশ বড় শহর পালেমবাং। অনেক পর্যটক আসে শহরে। হোটেল ম্যানেজার বলোছল যে এখান থেকে বাসা বা গাড়িতে চেপে এক রাতের জার্নি করে যাওয়া যায় বুকলিংগাড নামে এক ছোট্ট শহরে। সেখান থেকে জিপে চড়ে ঢুকতে হয় সুমাত্রার বিখ্যাত অরণ্য অঞ্চলে। এক ধারে কেরেন্সি, আর এক পাশে সেলাট পর্বতমালা। মাঝখানে উপত্যকাগুলিতে আদিম ঘন অরণ্য। সেই অরণ্যে আছে বিরল দুই শিংওলা গণ্ডার, আছে এক জাতের কোলাব্যাং, যাদের ওজন পনেরো—কুড়ি কেজি অবধি হয়। আছে বিশাল এক জাতের সারস পাখি।
খুব লোভ হচ্ছিল শুনে। কিন্তু মামাবাবু আগ্রহ দেখাননি জঙ্গলে ঘোরায়। বরং তার মন চিন্তিত অন্য কারণে।
দেখা হতে মিকি বলেছিল যে তার পরিচিত রহিম, যার নৌকার সে ভরসা করেছিল, সেই নৌকাগুলি মাল নিয়ে ভাড়া খাটতে চলে গেছে দূরে। মামাবাবুর টেলিগ্রাম পেয়ে সে খোঁজ করে রহিমের কাছে। দিন পনেরোর আগে ফিরবে না নৌকা। কিন্তু অতদিন অপেক্ষা করা যে মামাবাবুর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মিকি চলে গেছে জাকার্তায় নৌকার খোঁজে। বাস্তেন দ্বীপও জাকার্তা থেকে অনেক কাছে হয়।
মিকি একটা দুঃসংবাদ দিয়েছিল যে নৌকা ভাড়া পেতে একটু মুশকিল হতে পারে।
—কেন? আমরা জানতে চাই।
—কারণ ভূতের ভয়। বাস্তেনের অপঘাত মৃত্যু হয় ওই দ্বীপে। এখানে অনেক মাঝির বিশ্বাস বাস্তেন সাহেবের প্রেতাত্মা ওই দ্বীপ ছাড়তে পারেনি। অন্য লোকের থাকা সে পছন্দ করবে না। তাই ওই দ্বীপে পরে কেউ বাস করতে সাহস পায়নি। ফলটলের লোভে সাহসী কেউ কেউ ওই দ্বীপে যায় বটে। তবে দিনের বেলায়। রাতে থাকে না। ভয় পায়। মিকির পরিচিত রহিমই তাকে এসব খবর দিয়েছে। রহিম বলেছে যে বাস্তেন দ্বীপে যেতে হবে শুনলে বেশির ভাগ নৌকোই রাজি হবে না যেতে। কারণ ওটা ভুতুড়ে দ্বীপ বলে কুখ্যাত। যদি বা রাজি হয় টাকার লোভে, রাতে থাকতে চাইবে না কিছুতেই। সেই বুঝে যাও—
হুম। মামাবাবু খানিক গুম মেরে থেকে বলেছিলেন নিকিাকে, তোমারও কি ভতের ভয় আছে?
—না। দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়েছিল মিকি।
——ঠিক আছে। তাহলেই হল।
মামাবাবু মিকিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমাদের আসল লক্ষ্য যে বাস্তেন আইল্যাণ্ড সেটা জাকার্তায় মাঝিদের কাছে ভেঙো না। বলবে, ওই জায়গার দ্বীপগুলো ঘুরে ঘুরে গাছপালা জীবজন্তুর নমুনা দেখাই আমার উদ্দেশ্য। স্রেফ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। ঘুরতে ঘুরতে বাস্তেন দ্বীপে হাজির হলে তখন একটা মতলব ভাজা যাবে।
বিকেলে আমরা তিনজন পালেমবাং শহর দেখতে বেরোলাম। একটা চেমািথায় দাঁড়িয়ে মামাবাবু চারপাশে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, বহু শতাব্দী আগে ভারত থেকে এসে কিছু ভারতীয় এখানে এক হিন্দু রাজত্ব স্থাপন করেছিল। কী নাম ছিল সে রাজত্বের জানো?
—শ্রীবিজয়। গর্বিত কণ্ঠে আমি জবাব দিয়ে আড়চোখে দেখি হেরে যাওয়া সুন্দর থমথমে মুখ।
—করেক্ট। মামাবাবু খুশি। বললেন, তখন এই পালেমবাং ছিল শ্রীবিজয় রাজত্বের রাজধানী। পালেমবাংকেই বলত শ্রীবিজয়। পরে শ্রীবিজয় রাজ্যের রাজারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। রাজ্যের ক্ষমতা এবং সীমা অনেক বাড়ে। চতুর্থ খ্রিস্টাব্দ থেকে আট—নশো বছর শ্রীবিজয় রাজবংশ সুমাত্রায় প্রভুত্ব করে। প্রথমে হিন্দু পরে বৌদ্ধ সংস্কৃতি এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। নজর করে দেখ এখানকার বাড়িঘরে হিন্দু আর বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ। এখানকার নাচ—গান নাটক লোকজনের নামেও এই দুই সংস্কৃতি আর ধর্মের ছাপ পাবে। তবে সুমাত্রার চেয়ে জাভায় বৌদ্ধ প্রভাব বেশি। জাভাতেও দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দ থেকে তেরো খ্রিস্টাব্দ অবধি ভারতীয়রা এসে রাজত্ব করে। ওই দেশের রাজারা প্রথমে ছিল হিন্দু, পরে হয় বৌদ্ধ। এরপর অবশ্য ইন্দোনেশিয়ায় মুসলমান ধর্ম বেশি ছড়ায়। তবে হিন্দু আর বৌদ্ধ প্রভাব থেকে গেছে যথেষ্ট।
—এই যেমন ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের নাম গারুদা। ওটা আসলে রামায়ণের গরুর পক্ষীর বিকৃত রূপ। রামায়ণের নানা ঘটনা নিয়ে এখানে নাটক হয়। তবে সীতাকে বলে সিন্তা। আর ব্রহ্মাকে বলে ব্রোমো। নাটকে পাত্রপাত্রীদের পোশাকে হিন্দু বৌদ্ধ চিনা সবধর্মের ছাপ পাবে। পাঁচমেশালি ব্যাপার।
সত্যি ভাবতে গর্ব হচ্ছিল যে এদেশে এককালে ভারতীয়রা এসেছিল এবং রাজত্ব। করেছে দাপটে।
সুনন্দ এতক্ষণ কথা বলার সুযোগ পায়নি। এবার দুম করে প্রশ্ন করে, আচ্ছা সমাত্রা জাভার লোক ভারতীয় ভাষা কিছু বোঝে? ভারতীয়রা রাজত্ব করেছিল যখন?
—না। মামাবাবু ঘাড় নাড়েন। কিছু সংস্কৃত বা অন্য ভারতীয় ভাষার শব্দ এদের ভাষায় ভেঙেচুরে ঢুকে পড়েছে বটে, কিন্তু হিন্দি, বাংলা বা খাঁটি সংস্কৃত চালালে, এখানে কেউ বুঝবে না। তবে ভারতীয় যারা দু—এক পুরুষ আগে এসেছে তারা বুঝবে। তারপর সান্ত্বনার সরে বলেন, দুঃখের কিছু নেই, সুমাত্রা জাভায় ডাচরা দেড়শো বছর ধরে বাণিজ্য করছে। রবার বাগান করেছে। কিন্তু এখানে ডাচ্ ভাষা বোঝে খুব কম লোক।
—দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্রিটিশ আর আমেরিকানরা এখানে ব্যবসা বাড়িয়েছে ডাচ্দের হাটিয়ে দিয়ে কিন্তু ইংরিজিরও তেমন চল হয়নি। ওই দু—চারটে ইংরেজি শব্দ বোঝে মাত্র। তবে চিনা ভাষা জানলে সুবিধে হবে। চিনারা ভারতীয়দের ঢের আগে থেকে ইন্দোনেশিয়ায় আসছে। শহরে, গ্রামে—গঞ্জে বাসা বেঁধেছে। তবে অসুবিধার কিছু নেই। মিকি হবে আমাদের ইন্টারপ্রেটর। ওর মাধ্যমেই কথাবার্তা কাজকর্ম চালিয়ে যাব। নাবিকদের অনেক ভাষা শিখতে হয় মোটামুটি।
পালেমবাংয়ের রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি হচ্ছে দেখে আমরা চমৎকৃত। এক ঠোঙা করে। কিনে খেলামও আমি আর সুনন্দ। কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্কের ধারে ঝালমুড়ি খাওয়ার স্মৃতিতে মন উতলা হয়। তবে দেশের মতন স্বাদ ভালো নয়। কী না কী মিশিয়েছে কে জানে?
মিকি জাকার্তা থেকে ফিরল পরদিন। খবর ভালো। নৌকা ভাড়া পাওয়া গেছে। আমাদের ভ্রমণের আসল উদ্দেশ্য সে ফাস করেনি। মামাবাবুর শেখানো মতো বলেছে যে কতগুলো দ্বীপে ঘুরে গাছপালা মাটি পাথর ইত্যাদির নমুনা সংগ্রহই আমাদের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। আমরা জাকার্তা পৌঁছলেই সমুদ্রযাত্রা করা যাবে।