বন্দীদের নিয়ে আলী বিন সুফিয়ান যখন কায়রো পৌঁছেন, তখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে। সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী রাতের অঘটনের খবর পেয়ে গেছেন আগেই। আলী বিন সুফিয়ান হাসপাতালে যান। ডাক্তারগণ আহত বন্দী মেয়েটির ব্যাণ্ডেজ-চিকিৎসায় ব্যস্ত। তারা মেয়েটির জ্ঞান ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করছেন। এই একটু আগে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে মেয়েটি।
আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রী ও আজরের জ্ঞান ফিরে এসেছে। কিন্তু অবস্থা তাদের আশাব্যঞ্জক নয়। সুলতান সালাহুদ্দীনও হাসপাতালে উপস্থিত। তিনি আলী বিন সুফিয়ানকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন— ‘আমি অনেকক্ষণ যাবত এখানে আছি। আল-বার্ককে ডেকে আনবার জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে সে আমাকে এক অদ্ভুত কথা শোনালো। বলল, আল-বার্ক অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। কক্ষে তার মদের পেয়ালা-পিপা। লোকটা মদপান করতে শুরু করল? স্ত্রীটা যে তার ঘরের বাইরে আহত হয়ে পড়ে আছে, সে খবরটা পর্যন্ত তার নেই। তার স্ত্রীর সঙ্গে আমি এখনও কথা বলিনি— ডাক্তার নিষেধ করে দিয়েছে।’
‘একজন নয়— আল-বার্কের দু’ স্ত্রীই আহত। এই যে মেয়েটিকে আমরা মরুভূমি থেকে ধরে এনেছি, ও আল-বার্কের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমরা একটি মূল্যবান শিকার ধরে এনেছি।’ বললেন আলী বিন সুফিয়ান।
সূর্যোদয়ের পর ঘুম ভাঙ্গে আল-বার্কের। চাকরের মুখে সংবাদ পেয়ে সে হাসপাতালে ছুটে আসে। দু স্ত্রীই তার রক্তাক্ত পড়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। চারজন গুপ্তচর দেখানো হয় তাকে। চারজনের মধ্যে বৃদ্ধকে দেখে অবাক হয়ে যায় আল-বার্ক। তার জানা মতে লোকটা তার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী।
কেইসটা নিজের হাতে তুলে নেন সুলতান সালাহুদ্দীন। অত্যন্ত মারাত্মক কেইস, যার সঙ্গে জড়িত প্রশাসন ও সামরিক বিভাগের এমন একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, সুলতান সালাহুদ্দীনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, গোপন রহস্য সবই যার জানা।
জ্ঞান ফিরে আসে জখমীদের। জবানবন্দী নেওয়া হয় আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রীর। আলী বিন সুফিয়ানের সঙ্গে কথা বলে ক্ষুব্ধ মনে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি জানান, ঘরে ফিরে গিয়ে আমি আসেফার গতিবিধির উপর গভীর নজর রাখতে শুরু করি। রাতে না ঘুমিয়ে পাহারা দিতে থাকি। এক সুযোগে আসেফার শয়নকক্ষের দরজায় একটুখানি ছিদ্র করি প্রথম দু রাতে শুধু এতটুকুই দেখলাম যে, মেয়েটি আল-বার্কে মদপান করাচ্ছে এবং বেহায়াপনা-উলঙ্গপনার চুড়ান্ত ঘটাচ্ছে। সুলতান সালাহুদ্দীন সম্পর্কে মেয়েটি এমন ধারায় কথা বলছে, যেন তিনি তার পীর, মুরশিদ। খৃষ্টানদের নিন্দাবাদ করছে। কথা বলছে সুলতান সালাহুদ্দীনের সামরিক পরিকল্পনা বিষয়ে। সুলতান সালাহুদ্দীন কী করবেন এবং কী ভাবছেন, অবলীলায় মেয়েটিকে বলে যাচ্ছে আল-বার্ক।
দুটি রাত আমি এ পর্যন্ত দেখলাম ও শুনলাম। তৃতীয় রাতে মঞ্চস্থ হল সেই নাটকটি, অধীর চিত্তে আমি যার অপেক্ষায় ছিলাম। আসেফা আল-বার্ককে মদপান করায় এবং সম্পূর্ণরূপে পশুতে পরিণত করে তোলে। দুটি শূন্য পেয়ালা হাতে নিয়ে আসেফা এই বলে অন্য কক্ষে চলে যায় যে, অপেক্ষা করুন, আরও আনছি। ফিরে আসে সুরাভর্তি আরও দুটি পেয়ালা নিয়ে। একটি তুলে দেয় আল-বার্কের হাতে আর অপরটি লাগায় নিজের মুখে। তৃতীয় পেয়ালাটি গলাধঃকরণ করে আল-বার্ক মুদিত-নয়নে শুয়ে পড়ে, যেন হঠাৎ রাজ্যের ঘুম এসে তাকে চেপে ধরেছে।
আসেফা পোশাক পরিধান করে। আলতো পরশে গায়ে হাত বুলিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে ডাকে আল-বার্ককে। কিন্তু লোকটার কোন সাড়া-শব্দ নেই। আসেফা হাতে ধরে নাড়া দেয় তাকে। কিন্তু না, তার বিন্দুমাত্র হুঁশ নেই। মেয়েটি মদের সঙ্গে নিদ্রাজনক পাউডার খাইয়ে আল-বার্ককে সম্পূর্ণ অচেতন করে ফেলেছে।
আসেফা গায়ে একটা কালো চাদর জড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে নেয়। তখন মধ্যরাত। আসেফা কক্ষের বাতি নিভিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। দাউ দাউ করে যেন আমার সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলে ওঠে। নিজের কক্ষে প্রবেশ করে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নেই। হাতে খঞ্জর তুলে নেই। বের হতে গিয়ে দেখি আরেফা ফিস ফিস করে কথা বলছে এক চাকরানীর ঝাথে। বুঝলাম, এই চাকরানীটা তার সহযোগী।
আসেফা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। চাকরানী চলে যায় নিজ কক্ষে। বেরিয়ে পড়ি আমিও। দ্রুত হেঁটে পিছু নিলাম আসেফার। বাইরে ঘোর অন্ধকার। পরিষ্কার কিছু দেখা যায় না। আমি আসেফার পায়ের শব্দ অনুসরণ করে চলছি। মেয়েটি কোথায় যায়, তা দেখা আমার উদ্দেশ্য। এক পর্যায়ে বোধ হয় আসেফা পদশব্দ শুনতে পায়। সে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু অন্ধকারে আমি তাকে ভালভাবে দেখতে পাইনি। এসে পড়ি আসেফার একেবারে সন্নিকটে। হঠাৎ কী করব বুঝে উঠতে পারলাম না। অলক্ষ্যে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে— ‘যাচ্ছ কোথায় আসেফা?’
মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য চুপিসারে এগিয়ে চলছিল এক ব্যক্তি। তা আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রীর জানা ছিল না। আসেফা হাততালি দেয় এবং মুখে হাসি টেনে এনে আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রীকে বলে, ‘তা আপনি কি আমার পিছু পিছু আসলেন, নাকি কোথাও যাচ্ছেন?’ এরই মধ্যে পিছন থেকে ছুটে এসে মহিলার বাহু চেপে ধরে একজন। বন্ধন শক্ত হওয়ার আগেই মহিলা ঝাঁপটা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় লোকটার কবল থেকে। লোকটি মহিলার আঘাত প্রতিহত করে পাল্টা আঘাত করে তার উপর। খঞ্জর বিদ্ধ হয় মহিলার পাঁজরে। অমনি সরে যায় পিছনে। আহত মহিলা আক্রমণ করে আসেফার উপর। খঞ্জর বিদ্ধ হয় মেয়েটির ঘাড় ও কাঁধের মাঝখানটিতে। চীৎকার করে উঠে আসেফা।
আসেফা মাটিতে পড়ে যায়। বসে পড়ে আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রীও। দুজনই আহত, রক্তাক্ত। কাতরাচ্ছে তারা। ক্ষণিক পর লোকটি এগিয়ে এসে আসেফাকে তুলে নিয়ে চলে যায়।
আলী বিন সুফিয়ানের দু গুপ্তচর ওমর ও আজর ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিল চুপি চুপি। অপর মহিলাটি কে, তা তাদের জানা ছিল না। যে লোকটি আসেফাকে তুলে নিয়ে গেল, ওমর পিছু নেয় তার— দেখবে লোকটি যায় কোথায়। আসেফা বরাবর যে ভবনটিতে যাওয়া-আসা-করত সেখানেই নিয়ে যাওয়া হল তাকে। তৎক্ষণাৎ আলী বিন সুফিয়ানকে সংবাদ দেওয়ার জন্য ছুটে যায় ওমর। আজর বসে থাকে সেখানেই। আল-বার্কের আহত প্রথমা স্ত্রী পড়ে আছেন ঘটনাস্থলে। অন্য কেউ নেই সেখানে। আজর পা টিপে টিপে মহিলার নিকট গিয়ে এসে বসে পড়ে একস্থানে। কিন্তু হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন খঞ্জরের আঘাত হানে তার উপর। একে একে তিনটি আঘাত হেনে পালিয়ে যায় লোকটি। আজর চৈতন্য হারিয়ে পড়ে থাকে সেখানে।
সন্ধ্যা নাগাদ অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে আল-বার্কের প্রথমা স্ত্রী ও আজরের। প্রাণপণ চেষ্টা করলেন ডাক্তার-কবিরাজগণ। কিন্তু বাঁচিয়ে রাখা গেল না একজনকেও। আল-বার্কের স্ত্রী আলী বিন সুফিয়ানকে বলেছিলেন— ‘আমি আমার স্বামীকে কোরবান করতে পারি, কিন্তু জাতি ও দেশের ইজ্জত কোরবান হতে দিতে পারি না।’
অবশেষে দেশ ও জাতির জন্য নিজের জীবনটা কোরবান করে তিনি জান্নাতে চলে গেলেন।
সুলতান সালাহুদ্দীনের কারাগারে বন্দী করে রাখা হল খাদেমুদ্দীন আল-বার্ককে। আল-বার্ক শতভাবে বুঝাবার চেষ্টা করে, এ অপরাধ সে জেনে-শুনে করেনি। সে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বোকা বনে গিয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে সে মদ ও সুন্দরী নারীর নেশায় পড়ে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর অনেক তথ্য-পরিকল্পনা দুশমনের হাতে তুলে দিয়েছে। সুলতান সালাহুদ্দীন হত্যার শাস্তি ক্ষমা করতে পারেন; কিন্তু মদপান, বিলাসিতা এবং দুশমনকে গোপন তথ্য দেওয়ার অপরাধ তিনি মার্জনা করতে পারেন না।
সেদিন আসেফার নিকট থেকে কোন জবানবন্দী নেওয়া হল না। জখম অপেক্ষা পরিণাম-চিন্তায়ই সে বেশী শঙ্কিত। মেয়েটি সৈনিক নয়— গুপ্তচর। সে শাহজাদীর রূপ ধারণ করে শাহজাদাদের তথ্য নেওয়ার প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এমন একটি পরিণতি তাকে বরণ করতে হবে, তা ভাবেনি কখনও। মেয়েটির সবচেয়ে বড় ভয়, সে মুসলমানের কয়েদী; আর তার জানামতে মুসলমানেই হিংস্র, জংলী, বর্বর। এখন যে তার সব শেষ হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত।
একটি আশঙ্কা তার এ-ও ছিল যে, মুসলমানরা তার জখমের চিকিৎসা করাবে না। কক্ষে বসে বসে ভয়-পাওয়া শিশুটির ন্যায় অঝোরে কাঁদছে মেয়েটি। আলী বিন সুফিয়ান তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তোমার সঙ্গে আমরা সেই আচরণই করব, যা আমরা একজন আহত মুসলমান নারীর সঙ্গে করে থাকি। কিন্তু তবু তার ভয় কাটছে না। সে বার বার সুলতান সালাহুদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে। বিষয়টি অবহিত করা হয় সুলতান সালাহুদ্দীনকে।
সুলতান সালাহুদ্দীন মেয়েটির কাছে যান। তার মাথায় হাত রেখে বললেন— ‘এ মুহূর্তে আমি তোমাকে নিজের কন্যা মনে করি।’
‘আমি শুনেছি, সুলতান সালাহুদ্দীন তরবারীর নয়— হৃদয়ের রাজা। আপনি এতই শক্তিধর বাদশাহ যে, আপনাকে পরাজিত করার জন্য খৃষ্টানদের সব রাজা একজোট হয়েছে। সেই খৃষ্টানদের হয়ে আজ আমি আপনার হাতে বন্দী। দুশমনকে কেউ কখনও ক্ষমা করে না। আপনিও আমাকে ক্ষমা করবেন না জানি। তবে আমি ধুকে ধুকে মরতে চাই না। আপনার লোকদের বলুন, এক্ষুনি যেন তারা আমাকে একটু বিষ এনে দেন; আপনি আমাকে শান্তিতে মরতে দিন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল আসেফা।
‘তুমি বললে সারাক্ষণ আমি তোমার কাছে বসে থাকব। আমি তোমার সঙ্গে কোন প্রতারণা করব না। তুমি আরও সুস্থ হও। ডাক্তার বলেছে, তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। আমার যদি তোমাকে নির্যাতন করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে সে অবস্থায়ই তোমাকে বন্দীশালার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ফেলে রাখতাম; তোমার কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা দিতাম। চীৎকার করে করে তুমি সব অপরাধের কথা স্বীকার করতে, একজন একজন করে সঙ্গীদের নাম-ঠিকানা বলে দিতে। কিন্তু কোন নারীর সঙ্গে আমরা এমন আচরণ করি না। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’ বললেন সুলতান সালাহুদ্দীন।
‘সুস্থ হয়ে গেলে আমার সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন?’ জিজ্ঞেস করে আসেফা।
‘তুমি যেসবের আশঙ্কা করছে, তার কিছুই ঘটবে না। তুমি একটি যুবতী-রূপসী— এখানকার কেউ এ দৃষ্টিতে তোমার প্রতি তাকাবে না। এমন অমূলক আশঙ্কা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। মুসলমান নারীর অসম্মান করতে জানে না। তোমার সঙ্গে আমরা সেই আচরণই করব, যা ইসলামী বিধানে লেখা আছে।’ বললেন সুলতান সালাহুদ্দীন।
আসেফা যে ভবনে যাওয়া-আসা করত, আহত হওয়ার পর যে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে ঘরে তল্লাশী নেওয়া হল। ভবনটির কোন মালিক নেই। গুপ্তচরদের আখড়া এটি। ভিতরেই ঘোড়ার আস্তাবল। অনুসন্ধান করে ভেতরে পাঁচজন লোক পাওয়া গেল। তাদের গ্রেফতার করা হল। এই পাঁচজন এবং ধাওয়া করে যে চারজনকে ধরে আনা হয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করা হল তাদেরকেও। কিন্তু তারা অপরাধের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে তাদেরকে এমন একটি পাতাল কক্ষে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে গেলে পাথরেরও জবান খুলে যায়। বৃদ্ধ স্বীকার করল, মেয়েটিকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে সে আল-বার্ককে ঘায়েল করেছিল। নাটকটি আনুপূর্বিক বিবৃত করল বুড়ো। অন্যরাও ফাস করে দেয় অনেক তথ্য। সেই ভবনটির রহস্যও উন্মোচিত হয়ে যায়, যাকে শহরের মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখত। অনেকগুলো সুন্দরী মেয়েও রাখা ছিল সে ঘরে, যাদেরকে তারা দুটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করত। এক. গুপ্তচরবৃত্তির জন্য, দুই. শাসক শ্রেণীর উচ্চ পরিবারের মুসলিম যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করার জন্য। গুপ্তচর ও সন্ত্রাসীদের আখড়া সে ভবনটি।
গ্রেফতারকৃত খৃষ্টান গুপ্তচরেরা আরও জানায়, সুলতান সালাহুদ্দীনের বাহিনীর মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরও ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা সৈন্যদের মধ্যে জুয়াবাজীর অভ্যাস ছড়িয়ে দিয়েছে। এই জুয়া খেলার জন্য এখন একে অপরের অর্থ-সম্পদ চুরি করা শুরু করেছে সালাহুদ্দীনের সৈন্যরা। শহরে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে পাঁচ শ’রও অধিক বেশ্যা নারী। তারা ফাঁদে ফেলে ফেলে মুসলিম যুব সমাজকে বিলাসিতা ও বিণথগামীতার অন্ধকার পথে নিয়ে যাচ্ছে। চালু করা হয়েছে গোপন জুয়ার আসর।
গুপ্তচররা আরও জানায়, তারাই অপসারিত সুদানীদেরকে সুলতান সালাহুদ্দীনের বিরুদ্ধে উস্কানী দিয়ে চলেছে। তাদের দেওয়া সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, সুলতান সালাহুদ্দীন সরকারের উচ্চপদস্থ ছয়জন অফিসার তলে তলে সালাহুদ্দীনের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
আসেফা খৃষ্টান মেয়ে। প্রাপ্ত তথ্যমতে তার নাম ফেলিমঙ্গো। বাড়ি গ্রীস। তের বছর বয়স থেকে তাকে এ কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাকে মিসরের ভাষাও শেখানো হয়েছে। মুসলমানদের ঈমান-আমান, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও চরিত্র ধ্বংস করার জন্য খৃষ্টানরা তার মত এমন আরও কয়েক হাজার রূপসী মেয়েকে ট্রেনিং দিয়েছে। এখন তারা সুলতান সালাহুদ্দীনের মিসরে কর্তব্য পালন করছে।
মেয়েটিও কোন কথা গোপন রাখেনি। পনের দিনের মাথায় তার জখম শুকিয়ে গেছে। তাকে যখন বলা হল, তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, তখন সে বলল— ‘আমি আনন্দের সাথে এই শাস্তি বরণ করে নিচ্ছি। আমি ক্রুশের মিশন সম্পন্ন করেছি।’
এক সময়ে জল্লাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মেয়েটিকে।
ফেলিমঙ্গোর সঙ্গীদের প্রয়োজন রয়ে গেছে এখনও। তাদের চিহ্নিত করে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হল। তাদের মধ্যে মুসলমানও ছিল কয়েকজন। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল তাদের প্রত্যেককে। একশত বেত্রাঘাতের দণ্ড দেওয়া হল আল-বার্ককে। কিন্তু এ শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মরে গেল সেও। তার সন্তানদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়ে এলেন সুলতান সালাহুদ্দীন। সরকারী খরচে চাকরানী ও গৃহশিক্ষক নিয়োগ করে দেওয়া হল পিতৃ-মাতৃহারা এই ছেলে-মেয়েগুলো জন্য। আমরা তাদেরকে ঈমান বিক্রেতা আল-বার্কের সন্তান বলব না— বলব, এরা এক বীরাঙ্গনা, শহীদ জননীর সন্তান।