» প্রথম পরিচ্ছেদ

মহিমের পরম বন্ধু ছিল সুরেশ। একসঙ্গে এফ. এ. পাস করার পর সুরেশ গিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হইল; কিন্তু মহিম তাহার পুরাতন সিটি কলেজেই টিকিয়া রহিল। সুরেশ অভিমান-ক্ষুণ্ণকণ্ঠে কহিল, মহিম, আমি বার বার বলছি, বি. এ.,Continue Reading

» দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

বছর-পাঁচেক পরে দুই বন্ধুতে এইরূপ কথাবার্তা হইতেছিল। তোমার উপর আমার যে কত শ্রদ্ধা ছিল মহিম, তা বলতে পারি না। বলবার জন্য তোমাকে পীড়াপীড়ি করচি না সুরেশ। সে শ্রদ্ধা বুঝি আর থাকে না। না থাকলে তোমাকেContinue Reading

» তৃতীয় পরিচ্ছেদ

সুরেশের একদিকে গায়ে জোর ছিল যেমন অসাধারণ, অন্যদিকে অন্তরটা ছিল তেমনি কোমল, তেমনি স্নেহশীল। পরিচিত—অপরিচিত কাহারও কোন দুঃখ-কষ্টের কথা শুনিলে তাহার কান্না আসিত। সে ছেলেবেলায় কখনো একটা মশামাছি পর্যন্ত মারিতে পারিত না। জৈন মারোয়াড়ীদের দেখাদেখিContinue Reading

» চতুর্থ পরিচ্ছেদ

চতুর্থ পরিচ্ছেদ সুরেশের একবার মনে হইল, তাহার নিষ্ঠুর সত্য অচলার বুকের ভিতর গিয়া যেন গভীর হইয়া বিঁধিল, কিন্তু পিতা সেদিকে দৃক্‌পাতও করিলেন না। বরঞ্চ কন্যাকেই ইঙ্গিত করিয়া বলিতে লাগিলেন, সুরেশবাবু, আপনি যে প্রকৃত বন্ধুর কর্তব্যContinue Reading

» পঞ্চম পরিচ্ছেদ

বাহিরে আসিয়া যেন নেশার মত তাহার সমস্ত দেহ-মন টলিতে লাগিল। আকাশের খর রৌদ্র তখন নিস্তেজ হইয়া পড়িতেছিল। সে গাড়ি ফিরাইয়া দিয়া একাকী পদব্রজে বাহির হইয়া পড়িল; ইচ্ছা, কলিকাতার জনাকীর্ণ কোলাহলময় রাজপথের মধ্যে আপনাকে সম্পূর্ণ মগ্নContinue Reading

» ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

সুরেশ মনে মনে অসংশয়ে অনুভব করিতেছিল যে, কথাটা মহিম যেমন করিয়াই উড়াইয়া দিক, সে তাহারই একান্ত অনুরোধ উপেক্ষা করিতে না পারিয়াই এতদিন অচলার সহিত দেখা করিতে পারে নাই। সে যত ভালই বাসুক, এখন পর্যন্ত সেContinue Reading

» সপ্তম পরিচ্ছেদ

আহারাদির পর কোনমতেই কেদারবাবু এই রৌদ্রের মধ্যে সুরেশকে ছাড়িয়া দিলেন না। বিশ্রামের নামে সমস্ত দুপুরটা একটা ঘরে কয়েদ করিয়া রাখিলেন। সে চোখ বুজিয়া কৌচের উপর পড়িয়া রহিল, কিন্তু কিছুতেই ঘুমাইতে পারিল না। ঘরের বাহিরে মধ্যাহ্ন-সূর্যContinue Reading

» অষ্টম পরিচ্ছেদ

ঘরে নীরবতা ভঙ্গ করিল সুরেশ, কহিল, হঠাৎ আচ্ছা একটা কাণ্ড করে বসলুম। অচলা কথা কহিল না। সুরেশ পুনরায় কহিল, আপনার নিশ্চয়ই আমাকে একটা রাক্ষস বলে মনে হচ্চে। একলা বসে থাকতে বোধ করি আপনার সাহস হচ্চেContinue Reading

» নবম পরিচ্ছেদ

দিন দশ-বারো কাটিয়া গিয়াছে। কেদারবাবুর ভাবগতিক দেখিয়া মনে হয়, এত স্ফূর্তি বুঝি তাঁহার যুবা বয়সেও ছিল না, আজ সন্ধ্যার প্রাক্কালে বায়স্কোপ দেখিয়া ফিরিবার পথে গোলদীঘির কাছাকাছি আসিয়া তিনি হঠাৎ গাড়ি হইতে নামিতে উদ্যত হইয়া বলিলেন,Continue Reading

» দশম পরিচ্ছেদ

কয়েকটা অত্যন্ত জরুরী ঔষধ কিনিতে মহিম কলিকাতায় আসিয়াছিল, সুতরাং রাত্রের গাড়িতেই বাড়ি ফিরিয়া গেল। সুরেশ সন্ধান লইয়া জানিল, মহিম তাহার বাসায় আসে নাই, দিন-চারেক পরে বিকালবেলায় কেদারবাবুর বসিবার ঘরে বসিয়া এই আলোচনাই বোধ করি চলিতেছিল।Continue Reading

» একাদশ পরিচ্ছেদ

সন্ধ্যার পর নত-মস্তকে ধীরে ধীরে মহিম যখন তাহার বাসার দিকে পথ চলিতেছিল, তখন তাহার মুখ দেখিয়া কাহারও বলিবার সাধ্য ছিল না যে, ঠিক সেই সময়ে তাহার সমস্ত প্রাণটা যন্ত্রণায় বাহিরে আসিবার জন্য তাহারই হৃদয়ের দেয়ালেContinue Reading

» দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

মাস-খানেক গত হইয়াছে। কেদারবাবু রাজি হইয়াছেন—মহিমের সহিত অচলার বিবাহ আগামী রবিবারে স্থির হইয়া গিয়াছে। সেদিন যে কাণ্ড করিয়া সুরেশ গিয়াছিল, তাহা সত্যই কেদারবাবুর বুকে বিঁধিয়াছিল। কিন্তু সেই অপমানের গুরুত্ব ওজন করিয়াই যে তিনি মহিমের প্রতিContinue Reading

» ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

সুরেশ যখন জানাইল, সে মহিমের পত্রে বিবাহের সংবাদ পাইয়াই তাড়াতাড়ি চলিয়া আসিয়াছে, তখন কেদারবাবু লজ্জায় চঞ্চল হইয়া উঠিলেন বটে, কিন্তু অচলার মুখের ভাবে কিছুই প্রকাশ পাইল না। সুরেশ বলিল, মহিমের বিবাহে আমি না এলেই তContinue Reading

» পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ

একজনের উচ্ছ্বসিত অকপট প্রশংসার মধ্যে যে আর একজনের কত বড় সুকঠোর আঘাত ও অপমান লুকাইয়া থাকিতে পারে, বক্তা ও শ্রোতা উভয়ের কেহই বোধ করি তাহা মুহূর্তকাল পূর্বেও জানিত না। সুরেশ হাতের বাটি হাতে লইয়া আড়ষ্টContinue Reading

» ষড়্‌‌বিংশ পরিচ্ছেদ

অচলার সমস্ত কাজকর্ম, সমস্ত ওঠা-বসার মধ্যেও নিভৃত হৃদয়তলে যে কথাটা অনুক্ষণ জ্বালা করিতেই লাগিল, তাহা এই যে সুরেশের মনের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড পরিবর্তন কাজ করিতেছে, যাহার সহিত তাহার নিজের কোন সম্বন্ধ নেই। যে উদ্দাম ভালবাসাContinue Reading

» সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ

হাওড়া স্টেশন হইতে পশ্চিমের গাড়ি ছাড়িতে মিনিট-দশেক মাত্র বিলম্ব আছে। বাহিরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, টিপি-টিপি বৃষ্টির আর বিরাম নাই। লোকের পায়ে পায়ে জলে-কাদায় সমস্ত প্লাটফর্ম ভরিয়া উঠিয়াছে,—যাত্রীরা পিছল বাঁচাইয়া ভিড় ঠেলিয়া কোনমতে মোটঘাট লইয়া জায়গা খুঁজিয়াContinue Reading

» অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ

সুরেশ পাশের গাড়িতে গিয়া উঠিল সত্য, কিন্তু তিনি? এই ত সে চোখ মেলিয়া নিরন্তর বাহিরের দিকে চাহিয়া আছে—তাঁহার চেহারা, তা সে যত অস্পষ্টই হোক, সে কি একবারও তাহার চোখে পড়িত না? আর এলাহাবাদের পরিবর্তে এইContinue Reading

» ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ

সেই ঘরের সম্মুখে ব্যাগের উপরে বসিয়া আশা ও আশ্বাসের স্বপ্ন দেখিয়া অচলার কোথায় দিয়া যে দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হইয়া গেল, তাহা সে জানিতে পারিল না। কিছুক্ষণ সূর্য উঠিয়াছে। শীতের দিনের ধূলি-ধূসরিত তরুশ্রেণী কল্যকার ঝড়-জলে স্নাতContinue Reading

» ত্রিংশ পরিচ্ছেদ

সেদিন স্টেশন হইতে পথে কিছু কিছু জলে ভিজিয়া কেদারবাবু সাত-আটদিন গাঁটের বাত ও সর্দিজ্বরে শয্যাগত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কন্যা-জামাতার কুশল-সংবাদের অভাবে অতিশয় চিন্তিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি জব্বলপুরের বন্ধুকে একখানা পোস্টকার্ড লেখা ভিন্ন বিশেষ কিছু করিয়া উঠিতেContinue Reading

» একত্রিংশ পরিচ্ছেদ

শীতের সূর্য অপরাহ্নবেলায় ঢলিয়া পড়িবার উপক্রম করিতেছিল, এবং তাহারই ঈষত্তপ্ত কিরণে শোন নদের পার্শ্ববর্তী সুদূর বিস্তীর্ণ বালু-মরু ধু-ধু করিতেছিল। এমনি সময়ে একটা বাঙলোবাটীর বারান্দায় রেলিং ধরিয়া অচলা সেইদিকে চাহিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। তাহার নিজেরContinue Reading