দেবদাস

দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি প্রণয়ধর্মী বাংলা উপন্যাস। দেবদাস শরৎচন্দ্রের প্রথমদিককার উপন্যাস। রচনার সমাপ্তিকাল সেপ্টেম্বর ১৯০০, কিন্তু প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৬ই আষাঢ়, ১৩২৪ বঙ্গাব্দ (৩০শে জুন, ১৯১৭ খৃষ্টাব্দ)। উপন্যাসটি নিয়ে শরৎচন্দ্রের দ্বিধা ছিল বলেContinue Reading

প্রথম পরিচ্ছেদ

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্লেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা ছড়াইয়া, হাই তুলিয়া, অবশেষে হঠাৎContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল—সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্বতীর ঘরের জানালার নিকট দাঁড়াইল—ডাকিল,Continue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

দিনের পর দিন যায়-এ দুটি বালক-বালিকার আমোদের সীমা নাই-সমস্ত দিন ধরিয়া রোদে রোদে ঘুরিয়া বেড়ায়, সন্ধ্যার সময় ফিরিয়া আসিয়া মারধর খায়, আবার সকালবেলায় ছুটিয়া পলাইয়া যায়-আবার তিরস্কার-প্রহার ভোগ করে। রাত্রে নিশ্চিন্ত-নিরুদ্বেগে নিদ্রা যায়; আবার সকালContinue Reading

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

এমনি করিয়া এক বৎসর কাটিল বটে, কিন্তু আর কাটিতে চাহে না। দেবদাসের জননী বড় গোলযোগ করিতে লাগিলেন। স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, দেবা যে মুখ্যু চাষা হয়ে গেল,-একটা যা হয় উপায় কর। তিনি ভাবিয়া বলিলেন, দেবা কলকাতায়Continue Reading

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

পার্বতী এই তের বছরে পা দিয়াছে-ঠাকুরমাতা এই কথা বলেন। এই বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য অকস্মাৎ যেন কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া কিশোরীর সর্বাঙ্গ ছাইয়া ফেলে। আত্মীয়স্বজন হঠাৎ একদিন চমকিত হইয়া দেখিতে পান যে, তাঁহাদের ছোট মেয়েটি বড়Continue Reading

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে। তখনও ম্লান জ্যোৎস্না আকাশের গায়ে লাগিয়া আছে। পার্বতী বিছানার চাদরে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া ধীরপদবিক্ষেপে সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া আসিল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল,—কেহ জাগিয়া নাই। তাহার পর দ্বার খুলিয়া নিঃশব্দেContinue Reading

সপ্তম পরিচ্ছেদ

পরদিন পিতার সহিত দেবদাসের অল্পক্ষণের জন্য কথাবার্তা হইল। পিতা কহিলেন, তুমি চিরদিন আমাকে জ্বালাতন করিয়াছ, যতদিন বাঁচিব, ততদিনই জ্বালাতন হইতে হইবে। তোমার মুখে এ কথায় আশ্চর্য হইবার কিছু নাই। দেবদাস নিঃশব্দে অধোবদনে বসিয়া রহিল। পিতাContinue Reading

অষ্টম পরিচ্ছেদ

সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ স’ন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না—সবটুকুর বিচার না করিয়া, সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথা কহে না। কিন্তুContinue Reading

নবম পরিচ্ছেদ

আর দেবদাস? সে রাত্রিটা সে কলিকাতা ইডেন গার্ডেনের একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া কাটাইয়া দিল। তাহার খুব যে কেশ হইতেছিল, যাতনায় মর্মভেদ হইতেছিল, তাহা নয়। কেমন একটা শিথিল ঔদাস্য ধীরে ধীরে বুকের মধ্যে জমা হইয়া উঠিতেছিল।Continue Reading

দশম পরিচ্ছেদ

পার্বতী আসিয়া দেখিল, তাহার স্বামীর মস্ত বাড়ি। নূতন সাহেবী ফ্যাশনের নহে, পুরাতন সেকেলে ধরনের। সদর মহল, অন্দর মহল, পূজার দালান, নাটমন্দির, অতিথিশালা, কাছারি-বাড়ি, তোশাখানা, কত দাসদাসী—পার্বতী অবাক হইয়া গেল। সে শুনিয়াছিল, তাহার স্বামী বড়লোক, জমিদার।Continue Reading

একাদশ পরিচ্ছেদ

তাহার পর দুই-তিনদিন দেবদাস মিছিমিছি পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইল—অনেকটা পাগলের মত। ধর্মদাস কি কহিতে গিয়াছিল, তাহাকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া ধমকাইয়া উঠিল। গতিক দেখিয়া চুনিলালও কথা কহিতে সাহস করিল না। ধর্মদাস কাঁদিয়া বলিল, চুনিবাবু, কেন এমন হল?Continue Reading