[ গ ]

বাদশাহ এসেছেন। সঙ্গে আছে সেনা-সামন্ত উজির-নাজির সব। জুম্মার নামাজ হচ্ছে। ‘এমাম (আচার্য) হয়েছেন কাজি সাহেব। একটু পরই কাজি সাহেবের বগলতলা হতে খসে পড়ল দুটি ধেনো মদের বোতল। আর এটা বলাই বাহুল্য যে, সে বোতল সশব্দে বিদীর্ণ হয়ে যে বিশ্রী গন্ধে মসজিদ ভরিয়ে তুলল তাতে সকলেই একবাক্যে সমর্থন করলে যে, কাজি সাহেবের মতো মাতাল আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে হয়নি, হবেও না। যে মদ খায় তার ক্ষমা আছে, কিন্তু যাকে মদে খায় তার ক্ষমাও নেই নিস্তারও নেই।

বৈঠক বসল, এ অসমসাহসিক মাতালের কী শাস্তি দেওয়া দরকার! উজির ছাড়া সভাস্থ সকলেই বললে, ‘এর আবার বিচার কী জাঁহাপনা? শূলে চড়ানো হোক!’ মন্ত্রী উঠে বললেন, ‘এ বান্দার গোস্তাখি মাফ করতে আজ্ঞা হয় হুজুর! আমার বিবেচনায় এর মতো পাপিষ্ঠ লোকের মৃত্যুদণ্ড উপযুক্ত শাস্তি নয়। সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হবে যদি তার পদ আর পদবি কেড়ে নেন, আর যা কিছু সম্পত্তি তা বাজেয়াপ্ত করে নেন। মৃত্যদণ্ড হলে তো সব ল্যাঠা চুকেই গেল। কিন্তু এই যে তার জীবনব্যাপী লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা, তা তাকে তিলে তিলে দগ্ধ করে মারবে!’ বাদশা সমেত সভাস্থ সকলেই হুংকার দিয়ে উঠলেন, ‘তাই ভাল!’

পাশ দিয়ে উড়ো খইয়ের মতো একটা পাগলা যা তা বকে যাচ্ছিল, ‘এই সব লাঞ্ছনা আর গঞ্জনাই তো চন্দন! আর ওতে কিছু দগ্ধ হয় না ভাই, স্নিগ্ধই হয়।’