অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» রণভেরী

[গ্রিসের বিরুদ্ধে আঙ্গোরা-তুর্ক-গভর্নমেন্ট যে যুদ্ধ চালাইতেছিলেন, সেই যুদ্ধে কামাল পাশার সাহায্যের জন্য ভারতবর্ষ হইতে দশ হাজার স্বেচ্ছাসৈনিক প্রেরণের প্রস্তাব শুনিয়া লিখিত।] ওরে আয়! ঐ মহাসিন্ধুর পার হতে ঘন রণভেরি শোনা যায় – ওরে আয়! ঐContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» আনোয়ার

স্থান – প্রহরী-বেষ্টিত অন্ধকার কারাগৃহ, কনস্ট্যান্টিনোপল। কাল – অমাবস্যার নিশীথ রাত্রি। চারিদিক নিস্তব্ধ নির্বাক। সেই মৌনা নিশীথিনীকে ব্যথা দিতেছিল শুধু কাফ্রি-সান্ত্রির পায়চারির বিশ্রী খটখট শব্দ। ওই জিন্দানখানায় মহাবাহু আনোয়ারের জাতীয় সৈন্যদলের সহকারী এক তরুণ সেনানীContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» কামাল পাশা

[তখন শরৎ-সন্ধ্যা। আশমানের আঙিনা তখন কারবালা ময়দানের মতো খুনখারাবির রঙে রঙিন। সেদিনকার মহা-আহবে গ্রিক-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হইয়া গিয়াছে। তাহাদের অধিকাংশ সৈন্যই রণস্থলে হত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। বাকি সব প্রাণপণে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিতেছে। তুরস্কের জাতীয় সৈন্যদলের কাণ্ডারীContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» ধূমকেতু

আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!    সাত সাত শো নরক-জ্বালা জ্বলে মম ললাটে, মম ধূম-কুণ্ডলী করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘন ঘোলাটে! আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ, আমি স্রষ্টার বুকেContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» আগমনী

এ কী রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন – ঝন রনরনরন ঝনঝন! সে কী দমকি দমকি ধমকি ধমকি দামা দ্রিমি দ্রিমি গমকি গমকি    ওঠে চোটে, চোটে, ছোটে লোটে ফোটে!    বহ্নি ফিনিক চমকি চমকি    ঢাল-তলোয়ারেContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» রক্তাম্বরধারিণী-মা

রক্তাম্বর পরো মা এবার জ্বলে পুড়ে যাক শ্বেত বসন দেখি ওই করে সাজে মা কেমন বাজে তরবারি ঝনন ঝন। সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলো মা গো, জ্বালো সেথা জ্বালো কাল-চিতা তোমার খড়্গ-রক্ত হউক স্রষ্টার বুকে লালContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» বিদ্রোহী

বলবীর – বলউন্নত মম শির! শিরনেহারি আমার নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বলবীর – বলমহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি, ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চিরবিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাতৃর! মমললাটে রুদ্রContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» প্রলয়োল্লাস

তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর! ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখীর ঝড়! তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর! আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল, সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল! মৃত্যু-গহন অন্ধকূপেContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» মুখবন্ধ

অগ্নি-বীণা-র প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনাটি চিত্রকর-সম্রাট শ্রীযুত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, এবং এঁকেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী শ্রীবীরেশ্বর সেন। এজন্য প্রথমেই তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করছি। ‘ধূমকেতু’র পুচ্ছে জড়িয়ে পড়ার দরুন যেমনটি চেয়েছিলাম তেমনটি করে অগ্নি-বীণা বের করতে পারলাম না।Continue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» উৎসর্গ

বাঙলার অগ্নি-যুগের আদি পুরোহিত, সাগ্নিক বীর শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু অগ্নি-ঋষি! অগ্নিবীণা তোমায় শুধু সাজে। তাই তো তোমার বহ্নিরাগেও বেদনবেহাগ বাজে। দহনবনের গহনচারী — হায় ঋষি — কোন্ বংশীধারী নিঙড়ে আগুন আনলে বারি অগ্নিমরুর মাঝে। সর্বনাশাContinue Reading

অগ্নিবীণা-কাজী নজরুল ইসলাম

» অগ্নিবীণা

গ্রন্থপরিচয় ‘অগ্নিবীণা’ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৯২২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মুতাবিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশক : গ্রন্থাকার, ৭ প্রতাপ চাটুজ্যে লেন, কলিকাতা;Continue Reading

» রাজবন্দীর চিঠি

প্রেসিডেন্সি জেল, কলিকাতা মুক্তি-বার, বেলা-শেষ প্রিয়তমা মানসী আমার। আজ আমার বিদায় নেবার দিন। একে একে সকলেরই কাছে বিদায় নিয়েছি। তুমিই বাকি। ইচ্ছা ছিল, যাবার দিনে তোমায় আর ব্যথা দিয়ে যাব না, কিন্তু আমার যে এখনওContinue Reading

» অতৃপ্ত কামনা

সাঁঝের আঁধারে পথ চলতে চলতে আমার মনে হল, এই দিনশেষে যে হতভাগার ঘরে একটি প্রিয় তরুণ মুখ তার ‘কালো চোখের করুণ কামনা’ নিয়ে সন্ধ্যাদীপটি জ্বেলে পথের পানে চেয়ে থাকে না, তার মতো অভিশপ্ত বিড়ম্বিত জীবনContinue Reading

» ঘুমের ঘোরে

আজহারের কথা সাহারা মরূদ্যান-সন্নিহিত ক্যাম্প আফ্রিকা ঘুম ভাঙল। ঘুমের ঘোর তবু ভাঙল না। … নিশি আমার ভোর হলে, সে স্বপ্নও ভাঙল, আর তার সঙ্গে ভাঙল আমার বুক! কিন্তু এই যে তার শাশ্বত চিরন্তন স্মৃতি, তারContinue Reading

» বাদল বরিষণে

[এক নিমেষের চেনা] বৃষ্টির ঝম-ঝমানি শুনতে শুনতে সহসা আমার মনে হল, আমার বেদনা এই বর্ষার সুরে বাঁধা!… সামনে আমার গভীর বন। সেই বনে ময়ূরে পেখম ধরেছে, মাথার উপর বলাকা উড়ে যাচ্ছে, ফোটা কদম ফুলে কারContinue Reading

» হেনা

ভার্দুন ট্রেঞ্চ, ফ্রান্স ওঃ! কী আগুন-বৃষ্টি! আর কী তার ভয়ানক শব্দ! – গুড়ুম – দ্রুম – দ্রুম! – আকাশের একটুও নীল দেখা যাচ্ছে না, যেন সমস্ত আশমান জুড়ে আগুন লেগে গেছে! গোলা আর বোমা ফেটেContinue Reading

» ব্যথার দান (গল্প)

দারার কথা গোলেস্তান গোলেস্তান! অনেক দিন পরে তোমার বুকে ফিরে এসেছি। আঃ মাটির মা আমার, কত ঠান্ডা তোমার কোল! আজ শূন্য আঙিনায় দাঁড়িয়ে প্রথমেই আমার মনে পড়ছে জননীর সেই স্নেহবিজড়িত চুম্বন আর অফুরন্ত অমূলক আশঙ্কা,Continue Reading

» ব্যথার দান

‘ব্যথার দান’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গল্পগ্রন্থ; এটি নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘ব্যথার দান’ ১৯২২ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মুতাবিক ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক : এম. আফজাল-উল-হক, মোসলেম পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্কোয়ার,Continue Reading

» দ্বাদশ অধ্যায়

বাঙ্গালা-ইতিহাস, দুর্গাচরণের পরিচয়, ফোর্র্ট উইলিয়ম্ কলেজে পুনঃ প্রবেশ, ইংরেজি লিপি-পটুতা, শুভঙ্করী, জুনিয়র সিনিয়র পরীক্ষা, গুণবানের পুরস্কার, পুত্রের জন্ম ও ভ্রাতৃবিয়োগ। ১২৫৬ সালে বা ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে বিদ্যাসাগর মহাশয় মার্শমান্ সাহেব কৃত হিষ্টরি অব্ বেঙ্গল (History ofContinue Reading

» একাদশ অধ্যায়

বেতাল-পঞ্চবিংশতি, সংস্কৃত-যন্ত্র ও কবি-প্রীতি। ১৮৪৭ খৃষ্টাব্দে বা ১২৫৪ সালে বিদ্যাসাগর মহাশয় মার্সেল্‌ সাহেবের অনুরোধে হিন্দী “বৈতাল পঁচ্চিসী” নামক গ্রন্থের বাঙ্গালা অনুবাদ করেন। “বেতাল-পঞ্চবিংশকা” নামক একখানি সংস্কৃত গ্রন্থও আছে। বিদ্যাসাগর মহাশয়, স্বয়ং সুগভীর সংস্কৃতজ্ঞ হইয়াও, মূলContinue Reading