(ক)
৮ই, ডেকার্স লেন: ‘স্বাধীনতা’
২৪.৫.৪৬
প্রিয় বয়স্য,
তোর আবেগের কারণটা ঠিক বুঝলাম না, কেমন যেন হেঁয়ালী। এই হেঁয়ালীকে ব্যঙ্গ করব, না সহানুভূতি জানাব তাও বুঝছি না। আমি খুলনা যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি এক মুহূর্তের লজ্জায়। কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী1 নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন, আমি হঠাৎ ‘না’ বলে ফেলেছিলাম। যাই হোক, তুই তাড়াতাড়ি ফিরিস। তোর চিঠির থলি এখুনি ঘাড়ে করে বেরুব। ‘কার্টুন’ ভাল হলে পাঠাস। ভূপেনের লেখা মন্দ হয় নি। ‘কবিতা’ পত্রিকায় এবারও তোর আর আমার লেখা প্রকাশিত হয় নি। যেতে পারলুম না বলে দুঃখ করিস নি।
—সুকান্ত
(খ)
স্বামী অরুণাচল মহারাজ সমীপেষু,
বাবাজী!
আপনি গাঁজার ঘোরে ভুল দেখিয়াছেন। আপনার ‘নাম-চিহ্ন’ নকল করা হয় নাই। ছবিটি বিখ্যাত শিল্পী অহিনকুল মুখোপাধ্যায়ের2 আঁকা। নামচিহ্ন অনেকটা আপনার ন্যায় হইলেও স্বাতন্ত্র্য আছে। সুতরাং ডায়ালেক্টিকাল আদালতের3 কী ভয় দেখাইতেছেন! ব্যাপারটি মেটাফিজিক্স4 তাই বুঝিতে পারেন নাই5।
দুর্বিনীত: সুকান্ত শর্মা
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- বর্তমান ত্রিপুরার সাম্যবাদী নেতা শ্রীনৃপেন চক্রবর্তী।
- অরুণাচল স্বাধীনতা-র কিশোর সভা-য় নামের আদ্যক্ষর (অ) স্বাক্ষর করে কাটুন আঁকতেন। তার অনুপস্থিতিতে তাকে বিব্রত করবার জন্যেই সেই সই-সহ কিশোর সভা-র পাতায় একটি ছবি ছাপান সুকান্ত। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে চিঠি লিখলে, অরুণাচলকে সুকান্ত এই উত্তর দেন। এই অহিনকুল মুখোপাধ্যায় বলতে শিল্পী শ্রীদেবব্রত মুখোপাধ্যায়কে বুঝতে হবে। কেননা ছবিটি তিনিই এঁকে দিয়েছিলেন।
- ডায়ালেকটিকাল আদালত বলতে সুকান্ত যাকে ভালবাসতেন তার কাছে নালিশের ভয় দেখিয়েছিলেন অরুণাচল। কারণ সুকান্তর সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক ছিল ‘দ্বন্দ্ব-মধুর’।
- তখন অরুণাচল ও সুকান্তর ভাব আদান-প্রদানে ব্যবহৃত কয়েকটি বিশেষ শব্দের অন্যতম এই ‘মেটাফিসিকস’ শব্দটি। বেলেঘাটার শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই বিভূতি বসু অরুণাচল-সুকান্তর সঙ্গে দেখা হলেই তার তাত্ত্বিক আলোচনায় এই কথাটি খুব ব্যবহার করতেন। অতীত জীবনে বিপ্লবী, অকৃতদার ও বেশ কিছুটা আত্মভোলা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এই মাস্টারমশাই।
- বর্তমান চিঠিটি ও ‘প্রিয় বয়স্য’ সম্বোধনমুক্ত চিঠিখানি একই পোস্ট কার্ডের উভয় পিঠে লেখা।