» » অরুণাচল বসুকে লেখা পত্র

বর্ণাকার

S. B.
C/o Haradas Bhattacherjee
279 Agastya Kundu
Benares City
২০.১১.৪৪

অরুণ,

তোর চিঠি অনেকদিন হল পেয়েছি, পেয়ে তোকে হতাশই করলুম। অর্থাৎ উত্তর দিতে দেরিও করলুম অথচ কাশীর বর্ণনামূলক ব্যক্তিগতভাবে চিঠিটা লিখলুম না। লিখলুম না এইজন্যে যে, কাশীর একটানা নিন্দে করতে আর ইচ্ছে করছে না; ওটা মুখোমুখিই করব, তাই আপাতত স্থগিত রাখলুম।

শুনে বোধহয় দুঃখিত হবি যে, আমি আবার অসুখে পড়েছি; তবে এবারে বোধহয় অল্পের ওপর দিয়ে যাবে। তা ছাড়া যদি ভাল হয়ে উঠতে পারি, তা হলে আশা করা যায়, আগামী ২৯ তারিখে তোর সঙ্গে কলকাতায় আমার সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু বেলেঘাটায় ফিরে যেতে আশঙ্কা হচ্ছে। কেননা বেলেঘাটাই এখন ম্যালেরিয়া-সাম্রাজ্যের রাজধানী। আর আমি ম্যালেরিয়ার রোগী হয়ে কি সেখানে প্রবেশ করতে পারি? বিশেষত আমি যখন ম্যালেরিয়া-সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করতে আর রাজী নই। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, তুই চিরকেলে ম্যালেরিয়া রোগী, তুই কি করে এখনো টিকে আছিস? (অবিশ্যি এখনো কিনা—ঠিক বলতে পারছি না)।

কেবল মঙ্গলেরিয়ার কথাই বলে চলেছি, এখন কাশীর কথা কিছু বলি।

কাশীর আমি প্রায় সব দ্রষ্টব্যই দেখেছি। ভাল লেগেছে কেবল ইতিহাসখ্যাত চৈত সিংহের যুদ্ধঘটনাজড়িত প্রাসাদের প্রত্যক্ষ বাস্তবতা, আর রাজা মানসিংহ স্থাপিত Observatory মানমন্দির। অবিশ্যি বিখ্যাত বেণীমাধবের ধ্বজ থেকে কাশী শহর খুব সুন্দর দেখায়, কিন্তু সেটা বেণীমাধব বা কাশীর গুণ নয়, দূরত্বের গুণ। কাশীর গঙ্গা এবং উপাসনার মতো স্তব্ধ তার শ্যামল পরপার, এ দুটোই উপভোগ্য। কাশী শহর হিসেবে খুব বড় সন্দেহ নেই; বিশেষত আজকের দিনে আলো-ঝলমল শহর হিসেবে। অর্থাৎ এখানে ‘ব্লাক-আউট’ নেই। আর পথে পথে এখানে দেখা যায় লোকের ভিড় কলকাতার মতোই।

কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় দেখলাম, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ছাত্র-নিবাস-মূলক’ বিশ্ববিদ্যালয়। আর দেখলাম গান্ধীজী পরিকল্পিত ভারতমাতার মন্দির। দুটোতেই ভাল লাগার অনেক কিছু থাকা সত্ত্বেও ধর্মের লেবেল আঁটা বলে বিশেষ ভাল লাগল না। আর সবচেয়ে ভাল লাগল সারনাথ। তার ঐতিহাসিকতায়, তার নির্জনতায়, তার স্থাপত্যে আর ভাস্কর্যে, তার ইটপাথরে খোদিত কর্মগাথায় সে মহিমময়।

—সুকান্ত ভট্টাচার্য

এখন জ্বর আবার আসছে!