» » দণ্ডকারণ্যে যাবো

বর্ণাকার

মলয় রায় চৌধুরী

ঔরস

দণ্ডকারণ্যে যাবো : পনের

দিল্লির ওপন টিকিট কাটাই ছিল অপুর। ফোমচামড়ার ব্যাগে তারিণী মণ্ডলের তিজোরি থেকে করকরে নোটের বাণ্ডিল আর কয়েকটা জামাপ্যান্ট নিয়ে, পাটনা গিয়ে সোজা দিল্লি, দিল্লি বিমানবন্দর থেকে রায়পুরে একরাত হোটেলে। পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে আতংকওয়াদি বা মাওওয়াদি আপ্রাধি ঘোষকে। সিকিউরিটি চেকে অশ্বমেধ ঘোষের অসুবিধা হল না। ভাগলপুর স্টেশানের টেলিফোন বুথ থেকে নিকিতাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে ওর ম্যালেরিয়া হয়েছে, ফিরতে মাসখানেক লেগে যাবে। নিকিতা জানতে চাইছিল কী করে ভাগলপুরে অপুর বাড়ি যাবে। অপু বোঝালো, অনেকের ম্যালেরিয়া হয়েছে, শেষে নিকিতা আসলে ওর-ও হতে পারে। নিকিতা বলল, হরওয়খৎ ধোখা দেনে কে চক্কর মেঁ রহতে হো, মুঝে গিনতি মত পঢ়াও, ম্যায় জরুর পহুঁচ জাউঙ্গি, তুমহারে মাতা-পিতা সে মিলনা হ্যায়।

অপু মোবাইলের সিম কার্ড বের করে ট্রেনলাইনে ফেলে দিল।

রায়পুরে, বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে, বাসস্ট্যাণ্ডের সামনে, ফালতু হোটেল, ওর কাছে পরিচয়পত্র চাইল না, চাইলে ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র দেখাবে বলে তৈরি ছিল, রেজিস্টারে লেখালিখিও করতে বলল না। রেজিস্টার চাইতে বেঁটে-মোটা-টেকো হোটেল মালিক বললে, আরে এখন ছাড়ুন ওসব; এখন নদীর নিলাম হবে বলে লোক আসছে আর যাচ্ছে, আসছে আর যাচ্ছে। আপনার ভাগ্য ভালো যে ঘরটা আজ সকালেই খালি হয়েছে।

—নদীর নিলাম? অনেক মাছ হয় নাকি? না নৌকো যাতায়াত করে?

—জলের জন্য নিলাম।

—জলের জন্য?

—শোনেননি আপনি? রায়গড়ে কুরকেত নদী, দাঁতেওয়াডাতে সাবরি নদী, রায়পুর জেলায় খারুন নদী, কোরবাতে হাদেও নদী, ঝাঙ্গির-চম্পায় মাঁড নদী নিলাম হয়ে গেছে। সাবরি বা কোলাভ নদীর ধারে চিন্তালনাডের জঙ্গলে মাওওয়াদীরা ছিয়াত্তর জওয়ানকে মটিয়ামেট করে দিয়েছিল, কাগজে পড়েননি? সাবরি নদীই তো উড়িষা আর ছত্তিসগড়কে আলাদা করেছে। উড়িষ্যার কোরাপুট থেকে চালু হয়েছে।

—নদী যে নিলাম হয়, এই প্রথম শুনলুম। কোথায় গিয়ে মিশেছে নদীটা?

—সাবরি নদী নারায়ণপুর-দাঁতেওয়াডায় প্রথমে পশ্চিম থেকে পুবে, তারপর উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে ভদ্রাচলমের কাছে গোদাবরীতে গিয়ে মিশেছে।

—নৌকো চলে?

—হ্যাঁ, কিন্তু বন্যার সময়ে নদীর চেহারা পালটে যায়। কখনও-কখনও আঠাশ ফিট পর্যন্ত জল ওঠে। আসেপাশে সব ডুবে যায়। যাতায়াত, এখন যেটুকু দেখছেন, তাও বন্ধ হয়ে যায়।

…অপু আরেকটু হলে অবুঝমাড় শব্দটা উচ্চরণ করে ফেলত। গিলে ফেলল মগজ থেকে জিভে এসে নামা কথাটা।

—নদীর পাড়ে জংলিরাই থাকে। দণ্ডকারণ্যে কে যে আসলি জংলি আর কে যে মাওওয়াদী জংলি তা আপনি বুঝতে পারবেন না। পুরো দণ্ডকারণ্য জঙ্গলে হয় মাওওয়াদী নয়তো সিপাহিদের জামাত। আর ছিটপুট রিফিউজি, সোয়াধিনতার টাইমে ওরা বাংগালি ছিল।

—নদী কিনে করবে কি লোকে?

—ফ্যাকটিরি বসছে। আপনি কিনতে পারবেন না, অনেক টাকা খাওয়াতে হয় এসব ব্যাপারে। করোড় করোড়। করোড়-করোড় ক্যাশ। নিলাম একটাকায়, পিছুয়াড়িতে করোড়-করোড়, পেটি ভর-ভরকে, খুল্লমখুল্লা।

—সব জল কি ফ্যাকট্রিই নিয়ে নেবে? এতগুলো নদীর?

—ওই তো কুরকেতি নদীর ধারে গারিয়া জাতের জংলিরা তরমুজ, শশা তারপর রবির মরশুমে রবি চাষ করত, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত, কিন্তু রাবো গ্রামের কাছে ড্যাম তৈরি হল, ব্যাস, জাঁপলি, কিকরিচোলি, দেহজান গ্রামের খেতি বন্ধ হয়ে গেল। এক হাজার মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট বসেছে তামনারে, সব জল খেয়ে নিচ্ছে ফ্যাকটিরি। জংলিদের খাবার জল নিয়ে চলছে হল্লাগুল্লা।

—জংলি?

—গারিয়া, গোঁড়, মাড়িয়া, মুরিয়া লোকেরা থাকে, গায়ে এক চিলতে জামা-কাপড় নেই, শর্মনাক, শর্মনাক, পুরুষগুলো দিনেরবেলাতেও সালফি মদ খেয়ে টপ্পাগুল বেহুঁশ।

—আচ্ছা নারায়ণপুর যাবার সহজ উপায় বলুন তো।

—বাসে করে চলে যান। তবে বাসগুলো সবকটা সিটে প্যাসেঞ্জার না পেলে যেতে চায় না। নৌকরওয়ালা বাসেও যেতে পারেন, ওটা রেগুলার, সরকারি নৌকরি করে যারা, নারায়ণপুর জেলা হেডকোয়ার্টার হবার পর পোস্টিং হয়েছে, বউ-বাচ্চা রায়পুরে, তাদের বাসে যেতে পারেন।

—মোটর সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় না?

—ভাড়া তো পাওয়া যায় না, তবে আপনার মতন একজন বাংগালি আদমি আছে, নারায়ণপুরে বাড়ি, সে নিয়ে যেতে পারে। ও অনেক ফোটোগ্রাফার আর সাংবাদিককে নিয়ে গেছে, ওই দিকের অলিগলি চেনে।

—লোকটাকে খবর দিন না; আজকেই বেরিয়ে পড়ব তাহলে।

—আগে ও মালকানগিরির যে গ্রামে থাকত তার নাম একানওয়ে।

—একানওয়ে? নাইনটিওয়ান? এরকম নাম কেন?

—বাংগালি রিফিউজিরা এসেছিল, সানতালিস, একাওয়ান, পঁয়ষট আর একহত্তর সালে, পরেও এসেছে ছিটপুট। জঙ্গল কেটে বানানো তাদের ঝোপড়পট্টিগুলোর তো নাম ছিল না। এক দুই তিন চার করে হবে বোধহয়, একানওয়ে বানওয়া এমনি করে একশো দুশো, কে জানে, সে অনেকদিন আগের কথা। যুগ কেটে গেছে কিন্তু বাংগালি লোকগুলো রিফিউজির মতনই গরিব থেকে গেছে। মাওওয়াদীরাও ওদের কাছ থেকে…

—রংদারি ট্যাক্স নেয়?

—রংদারি ট্যাক্স। ভালো বলেছেন।

—নাম কি ছেলেটার?

—কাতিক, কার্তিক ছিল বোধহয়, লেখাপড়া শেখেনি তো, কার্তিককে কাতিক করে ফেলেছে। দেয়োই-দেওতাদেরও সম্মান করে না আনপড় বাংগালিগুলো।

—ওর বাবার নাম কি গণেশচন্দ্র সরকার?

—জি হাঁ। আংরেজি পড়ান। লেকিন কাতিক অপনে বাপ কো আব্বা পুকারতা হ্যায়, অওর মা কো অম্মি। অজব বাংগালি।

—একটু ফোন করে দেখুন না। গণেশচন্দ্র সরকারের বাড়িতেই যাবো।

—এসে যাবে, এসে যাবে, কজনই বা প্যাসেঞ্জার হয়, মোটর সাইকেল সওয়ারি করতে অনেক প্যাসেঞ্জারের সাহস হয় না।

—আচ্ছা। তাহলে অপেক্ষা করি।

—আপনি কী করেন?

—আমি ফিউজিটিভ?

—ফিউজিটিভ মতলব?

—ভগোড়া।

—হেঁঃ হেঁঃ, আচ্ছা-খাসা মজাক কর লেতে হ্যাঁয় আপ।

ঘণ্টাখানেক পরে মোটর সাইকেলে গেরুয়া মাটির ধুলো উড়িয়ে কাটাঢ়েঁড়া জিন্সের প্যান্ট আর হাতকাটা লাল গেঞ্জিতে, পাঁচ ফিটের, বছর চল্লিশের একজন দোহারা লোক হোটেলের সামনে পৌঁছে হর্ন দিতে, হোটেল মালিক বলল, নিন, এসে গেছে কাতিক। লোকটাকে দেখে, বাবা একটা শব্দ শেখাতে কয়েকটা চড় মেরেছিলেন, সেই শব্দটা অপুর মগজে ভেসে উঠল, অকুতোভয়।

কয়েকটা ধাপ নেমে অপু বলল, হিন্দিতে, আমি নারায়ণপুরের ইংলিশ টিচার গণেশচন্দ্র সরকারের বাড়ি যেতে চাই। উকোখুস্কো চুল লোকটা জিগ্যেস করল, গণেশচন্দ্র সরকার? তার সঙ্গে কী কাজ? আজ পর্যন্ত কাউকে দেখিনি তাঁর খোঁজে আসতে। অপু জবাবে বলল, সনাতন সরকার একটা চিঠি দিয়েছেন তাঁকে দেবার জন্য। ছেলেটার চোখ কটা, লক্ষ করল অপু।

—সনাতনভাই? তাঁর সঙ্গে কী করে পরিচয় হল, জানতে চাইল কার্তিক।

অপু বলল, ওনার সঙ্গে পড়ি।

—আপনি এখন কী করেন? ভ্রু কোঁচকায় কার্তিক, নিশ্চিন্ত যে ওর মোটর সাইকেলের একজন সওয়ারি পাওয়া গেল। মোটর সাইকলের ধুলো পুঁছতে-পুঁছতে বলল, হাজার টাকা নিই।

—ঠিক আছে, নো প্রবলেম, বলে অপু যোগ করল, কিছুই করি না। আমি ফিউজিটিভ।

—ফিউজিটিভ ইয়ানে কি?

—ভগোড়া। আমি আইনের চোখে ধুলো দিয়ে পালাচ্ছি। ওনার সাহায্য নিয়ে অবুঝমাড় জঙ্গলে গিয়ে লুকোবো। জঙ্গলটা নাকি দুর্ভেদ্য, পুলিশও যায় না সেখানে।

কোমরে হাত দিয়ে গেরুয়া ধুলোর পাশাপাশি অট্টহাসি ওড়ালো কার্তিক। বলল, আরে ইয়ার, মাওওয়াদি, বনবিভাগ, রেভেন্যু ডিপাট আর আধামিলিট্রি মিলে জবরদস্ত কাহানি ছড়িয়েছে, হাউয়া খাড়া করে দিয়েছে। ভারতীয় জওয়ানরা কার্ল গুস্তাভ রাইফেল, আনডারব্যারেল গ্রেনেড হাতে ভেতরে ঢুকে বুড়বক বেনে গেছে। গিয়ে দ্যাখে হাড্ডিসার ঝোপড়পট্টি, গাছের পাতা আর সরু বাঁশে তৈরি ভুখমরিতে বেচয়েন অনজান আদমিদের গ্রাম, আর তংগ দড়িদঙ্কা আদিবাসী। অবুঝমাড়ে এখন যার ইচ্ছে সে ঢুকে যেতে পারে। শুধু মাওওয়াদিদের আর আধামিলিট্রির তিকড়মবাজিতে পড়ে চকনাচুর হয়ে যাবার মওকা থাকে, এই যা, বাদবাকি সব মনোহর কাহানিয়াঁ। চলুন, বসুন, ফিউজিটিভ মহাশয়জি।

প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা জামা-ট্রাউজারে, ফোমচামড়ার ব্যাগে, চুলে, ভুরুতে ধুলোর চাদরে ঢাকা পড়ার পর অপু পৌঁছোল রায়গড় থেকে নারায়ণপুর।

কার্তিকের বাবাকে সনাতন সরকারের চিঠিটা দিয়ে, গংগোতা প্রথা অনুযায়ী গণেশচন্দ্র সরকার আর তাঁর স্ত্রীর হাঁটু ছুঁয়ে প্রণাম করে অপু ওনাদের জানালো যে চিঠিতে ওর যে বান্ধবীর উল্লেখ রয়েছে, তাকে সঙ্গে আনতে পারেনি।

গণেশচন্দ্র সরকার সনাতনের চিঠি পড়ে অপুকে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন, দ্যাখো, কতদূর থেকে তুমি এলে, সনাতনের বন্ধু বলে, জায়গাটা দেখার ইচ্ছা হয়েছে তোমার; কেউ আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয় না, কে-ই বা নেবে, কেউ তো নেই। সনাতন নিশ্চয়ই ওর গালাগালের স্টক তোমার মাথায় উপুড় করে দিয়েছে? ভীষণ রগচটা। যত বেশি পড়াশোনা করছে তত ওর হিন্দি গালাগালের স্টক বাড়ছে। তুমি খাও-দাও, যতদিন ইচ্ছা থাকো, আমাদের ভালো লাগবে, তার আগে স্নান করে নাও, লাল চালের ভাত খাও, মাছ-টাছ পাবে না।

অপু ওনাকে বলল, আপনি বসুন, প্রথমে শুনুন, আমার জীবনে কী ঘটেছে, আমি কেন এসেছি, কেন আমার বান্ধবীকে সঙ্গে আনিনি, আর এখন আমি কেন অবুঝমাড় জঙ্গলে যেতে চাইছি। শুনে, গণেশচন্দ্র সরকার, কোলে হাত রেখে, কিছুক্ষণ বসে রইলেন, পাশে দাঁড়িয়ে ওনার স্ত্রী। অপুর মনে হল, রোগা, ময়লা, টাকমাথা গণেশচন্দ্র সরকারের বয়স ওনার স্ত্রীর চেয়ে বেশ কম। ওনার স্ত্রী বললেন, তোমাকে কে বুঝিয়েছে যে অবুঝমাড় দুর্ভেদ্য? আমার ছেলে ওই জঙ্গলে তিন বছর ছিল; মাওওয়াদিরা ওর গোঁড়-মাড়িয়া বউকে গুলি করে মারার পর ও পালিয়ে এসেছে। বাড়িতে প্রায় থাকেই না কার্তিক। রাতে ফেরে, খায়, ঘুমিয়ে পড়ে, আবার ভোর না হতেই বেরিয়ে পড়ে; যদি রায়পুরে থেকে যায় তাহলে সে-রাতে ফেরেই না।

অপু স্তম্ভিত।

কার্তিক সরকার অপুকে পৌঁছে দিয়ে নতুন যাত্রীর খোঁজে মোটর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।

কার্তিকের বাবা-মা ওর জীবনের ঘটনা, থেমে-থেমে, কন্ঠস্বরে শ্লেষ্মা মিশিয়ে, অপুকে বলতে আরম্ভ করলেন। কার্তিক এক মাড়িয়া-গোঁড় মেয়ের প্রেমে পড়েছিল; মেয়েটি মাঝে-মাঝে কোকোমেত্তায় ডিম, মুর্গি, শুয়োর বাচ্চা, বিয়ার বাহুতি পোকা, মহুয়ার ফুল, সালফি মদ বিক্রি করতে আসত। কার্তিক ওর ডিম কিনত, মুর্গি কিনত, সালফি খেতো আর যত দাম তার চেয়ে বেশি টাকা দিত। একদিন মেয়েটা কার্তিককে জানালো মাওওয়াদিরা ফতোয়া জারি করেছে যে জঙ্গলের বাইরে আর যাওয়া চলবে না। যারা যাবে তাদের পুলিশের চর বলে সন্দেহ করা হবে; ফিরে আসলে জন আদালতে তাদের বিচার হবে। মেয়েটার নাম ছিল কুমিয়া খোসা।

—ছিল মানে?

—কইছি, কইছি, কার্তিক কুমিয়াকে মোটর সাইকেলে বসিয়ে, আমাদের কাছে এনে জানালো যে ও চলে যাচ্ছে মেয়েটার সঙ্গে ঘর করতে, কুমিয়ার হিকোনার গ্রামে। আমরা কার্তিককে কোনো কাজে বাধা দিই না, ওর জন্মের কথা আরেকদিন শুনো। মনে হয়েছিল, যাচ্ছে যাক, কোথাও তো সংসার পাতবে, নারায়ণপুরে একা-একা অস্থির হয়ে, মাথা খারাপ করে, দুঃখে-দুঃখে, নিজেকে কষ্ট দিয়ে, ঘুরে বেড়াবার চেয়ে ঢের ভালো।

হিকোনারে যাবার পর ওদের বিয়ে দেয়া হয়েছিল গোঁড়-মাড়িয়া রীতি অনুযায়ী, দুজনকে রঙিন কাপড়ে আগাপাশতলা মুড়ে ওদের ওপর দুধ ঢেলে বিয়ে হল; আমরা দুধ, গায়ে জড়াবার শাড়ি, গোটা পাঁঠার মাংস কিনে নিয়ে গিয়াছিলাম। গোঁড়-মাড়িয়া সমাজে বিয়ে না করলেও চলে, অনেক ছেলে-মেয়ে বিয়ে করে না, তাদের কয়েকটা বাচ্চা হয়ে যাবার পরও বিয়ে করতে পারে না, দুধের টাকা, নতুন কাপড়ের টাকা, মাংস খাওয়াবার টাকা, সালফি খাওয়াবার টাকা, কোথা থেকে পাবে, বলো। পঁচিশ তিরিশটা চালাঘর নিয়ে এক-একটা গ্রাম, যদিও সেগুলো পাশাপাশি নয়, ছড়ানো-ছেটানো। তুমি ভেবো না যে অবুঝমাড় অ্যামাজনের মতন ঘন জঙ্গল, মোটেই নয়, সুন্দরবনের মতনও নয়, খোলামেলা ধরণের জঙ্গল, দূর থেকে গাছের ফাঁকে দেখতে পাবে, কে আসছে, ভাল্লুক, শেয়াল, বনবিড়াল আসছে কি না।

আমরা ওর সংসার শুরু করার কয়েক মাসের খরচ দিয়ে ফিরে এসেছিলাম। ওরা তেল-মশলা দিয়ে আমাদের মতো রান্না করে না, বেশির ভাগ মাংস পুড়িয়ে খায়। একদিক থেকে ভাল, খরচের বোঝা কম। ভালই ছিল দুজনে, ওদের চালাঘরে, মুর্গি, খরগোশ আর শুয়োর পুষেছিল। কুমিয়া তীর-ধনুক দিয়ে খরগোশ, বেঁজি, কাঠবেরালি, সাপ, পাখি শিকার করে আনলে দুজনে মিলে খেতো। পেণ্ডা খেতি, মানে শিফটিং কালটিভেশান বা জুম চাষের সময়ে পাহাড়ের ঝোপঝাড় পোড়ানোয়, ফসল পোঁতা আর কাটায়, অংশ নিত। শিকারের ফাঁদ পাতায়, জংলি পাখি শিকারে, মহুয়ার ফুল কুড়োনোয়, অংশ নিত।

সকলের দেখাদেখি কার্তিকও পাঁচ টাকা দিয়ে মাওওয়াদি জনতম সরকারের নাগরিক হয়ে গেল। জন আদালতের সদস্য করা হল ওকে। কার্তিক ভেবেছিল সদস্য হয়ে গেলে জঙ্গলের কোনো অংশের পাট্টা পাবার সুবিধা হবে। পাট্টার জন্য জনতম সরকারের অধ্যক্ষকে বলতে গিয়ে বিপদে পড়ল। পাট্টা দেয় ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট। জনতম সরকারের নেতারা ভাবল যে কার্তিক যেহেতু গোঁড়-মাড়িয়া নয়, তাই গোঁড়-মাড়িয়া মেয়ের সঙ্গে বসবাস করে, বাচ্চা পয়দা করে, বন বিভাগ-রাজস্ব বিভাগে যোগাযোগের নামে ফিরে যাবার তাল করছে, ফিরে গিয়ে হয়ত পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে জনতম সরকারকে বিপদে ফেলে দেবে।

তার আগে সেরকম ঘটনা অনেক ঘটেছে, কোনো-কোনো গ্রামবাসী জনতম সরকারের হুকুম পছন্দ হয়নি বলে পালিয়েছে জঙ্গলের বাইরে, নারায়ণপুরে, বা আরও দূরে অন্ধ্র কিংবা মহারাষ্ট্রতে। পুলিশ তাদের সাহায্য নিয়ে জঙ্গলে ঢোকার চেষ্টা করেছে, ঢুকেছে, খুনোখুনি হয়েছে, গুলিগোলা চলেছে। এই তো সেদিন সতেরো বছরের একটা মেয়ে ধরা পড়ল, সে আইইডি বানাতো; সে জানিয়েছে যে তার চেয়ে কম বয়সী মেয়েরা আইইডি বানায়।

গোঁড়-মাড়িয়ারা নির্লোভ, সরল প্রকৃতির, বুঝলে, খায়, নেশা করে, জংলি জানোয়ার বা পাখি শিকার করে, পেণ্ডা খেতি করে সবাই মিলে, ফসল তোলে, এই ভাবেই জীবন চলে যায়। সহযোগীতার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের কোঅপারেটিভের চেয়ে ভালো। ওরা পড়ে গেছে মাওওয়াদি আর সরকারের জাঁতাকলে। আদিবাসীরা প্রথমে ভেবেছিল যে মাওওয়াদিরা ওদের সরকারি অত্যাচার-অবিচার থেকে বাঁচাবে। তার বদলে সেই একই শাসনপ্রথা নতুন ভুত হয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে।

ওখানে সরকারি স্কুল আছে, আঙনওয়াডিও আছে, সোলার পাওয়ার আছে, পাহাড়ে ওঠার আগে পর্যন্ত হ্যাণ্ড পাম্প আছে। স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করার কাজ পেয়েছিল ওর বউ। রান্না করার দরকার হতো না। শুনে তুমি অবাক হবে যে স্কুলের প্রার্থনা হয় গায়ত্রী মন্ত্র গেয়ে, কারণ স্কুলটা সরকারি, আমি দেখে এসেছি। স্কুল থেকে বরাদ্দ র‌্যাশন মাওওয়াদিরা নিয়ে চলে যেত, তাদের বন্দুকধারি ক্যাডারদের জন্য, তাতে কারোরই আপত্তি ছিল না। ওরা জানতে পারেনি যে ওদের ওপর জনতম সরকারের জন মিলিশিয়া নজর রেখেছে; কার্তিক তো রিফিউজির ছেলে। মালকানগিরিতেও লক্ষ করতুম যে মাওওয়াদিরা বাঙালি রিফিউজিদের পছন্দ করে না। জন মিলিশিয়ারা বন্দুকধারী গণমুক্তি গেরিলা বাহিনীর ক্যাডারদের থেকে আলাদা। জন আদালতে কাউকে মেরে ফেলার হুকুম হলে জন মিলিশিয়ার লোক তা পালন করে। জন মিলিশিয়ার ছোকরাদের কাছে ট্রানজিসটার আর ল্যাপটপ দেখেছি। ল্যাপটপে ওরা সিনেমাও দ্যাখে, হলিউডের হিন্দিতে ডাব করা সব ফিল্ম, হিরোগিরির ফিল্ম, যদিও বেশির ভাগ গোঁড়-মাড়িয়া হিন্দি ভালো জানে না। কুমিয়া, কার্তিকের বউও, তেমন হিন্দি জানত না। কার্তিক অবশ্য ছোটোবেলা থেকে ওদের সঙ্গে মিশেছে বলে গোঁড়-মাড়িয়ায় কথা বলতে পারে, আমরা দুজনেও তত ভালো পারি না।

বাচ্চা হবার পর কুমিয়াকে নিয়ে তিন-চার মাসে একবার আসত আমাদের কাছে। গোঁড়-মাড়িয়া মেয়েদের গয়নার খুব শখ। কুমিয়ারও গয়না পরার শখ ছিল। সোনার চেয়ে রুপোর জল-দেয়া ব্রোঞ্জের গয়না ওদের বেশি পছন্দ। আমরা ভাবলাম ব্রোঞ্জের কেন দেবো, ছেলের বউকে দিচ্ছি যখন তখন রুপোর গয়নাই দিই। ওদের ওপর যে জন মিলিশিয়ার জাসুসরা নজর রাখত তা ওরা টের পায়নি। গয়না পরে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল কুমিয়াকে। কার্তিক ভাবল যে বার-বার কষ্ট করে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে প্রায় আট-দশ কিলোমিটার হেঁটে আসা আর আবার আট-দশ কিলোমিটার হেঁটে ফেরত যাওয়ার চেয়ে মোটর সাইকেলটাই গ্রামে নিয়ে গিয়ে রাখবে, ছাগল-চরানো রাস্তাতেও কার্তিক মোটর সাইকেল চালাতে পারে। ওর বউ আগে চলে গেল বাচ্চা নিয়ে যাতে জনতম সরকারের কোপে না পড়ে। কার্তিকের যেতে দু’দিন দেরি হয়ে গিয়েছিল, মোটর সাইকেলের সারভিসিং করাতে গিয়ে।

গ্রামে পৌঁছে কার্তিক জানতে পারল যে জন আদালতের বিচারে কুমিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। গুলি করে মারা হয়েছিল কুমিয়াকে। কার্তিক যাবার আগেই ওরা কুমিয়াকে কবরও দিয়ে দিয়েছিল। বাচ্চা ছেলেটা কার কাছে আছে জানতে চাইলে কেউ কার্তিকের সঙ্গে কথা বলেনি। ওকে বলা হয়েছিল তক্ষুনি নারায়ণপুরে ফিরে যেতে নয়তো ওরও কুমিয়ার দশা হবে। কুমিয়ার কবরের কাছে গাছের ডালে নিজের শার্ট খুলে বেঁধে খালি গায়ে চলে এসেছিল।

সেই যে ও জঙ্গল থেকে মোটর সাইকেলে চেপে পালিয়ে এসেছে, আর ও-মুখো হয়নি। আমাদের মনে হয় পালিয়ে এসে বেঁচে গেছে। এই কিছুদিন আগে অপারেশান হাক্কা করেছিল সরকার, টোকে নামের পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল। হেলিকপ্টারের ডানার বাতাসে অনেকের চালাঘরের ছাদ উড়ে গেছে। আসলে অবুঝমাড় নিয়ে সবাই এতকাল এমন গল্প ফেঁদেছিল যে প্রচার হয়ে গিয়েছিল জায়গাটা দুর্ভেদ্য। সরকার তো ড্রোন উড়িয়ে ফোটো তুলেছিল আর ভেবেছিল যে কালো-কালো দেখতে জায়গাগুলো বুঝি ট্রেঞ্চ আর মাওওয়াদিদের ক্যাম্প। কোবরা-ফোবরা, সিআরপিএফ, পুলিশের লোকজন অপারেশান হাক্কা চালিয়ে ভেতরে ঢুকে বুঝতে পেরেছে যে সবই ফক্কিকারি, মাওওয়াদি, টিম্বার মাফিয়া আর সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থান্বেষী প্রচার।

—কিন্তু আমি তো এরকমই শুনে এখানে এসেছি। এটাই সেফেস্ট জায়গা মনে হয়েছিল।

গণেশচন্দ্র সরকার বললেন, আশির দশকের শুরুতে বিদেশি টিভি চ্যানেল অবুঝমাড়ে ঢুকে ওদের ঘোটুল নিয়ে একটা তথ্যচিত্র তৈরি করে প্রচার করেছিল। এখন গোঁড়-মাড়িয়া মেয়েরা সকলেই পোশাক পরে, শাড়ি-ব্লাউজ-শায়া, ভেতরের জামা। এখনও ঘোটুল আছে, সেখানে পোশাক পরে ঢোকে ছেলে-মেয়েরা; সেক্সের ব্যাপারে ওদের সমাজ ইউরোপ আমেরিকার চেয়েও প্রগ্রেসিভ আর পারমিসিভ। যখন তথ্যচিত্র তোলা হয়েছিল তখন ওদের ঘোটুলে ওরা পোশাক পরে যেত না। ভারত সরকার ভাবল যে এটা ভারতবিরোধী প্রচারের ষড়যন্ত্র, ভারতের ইমেজ বিদেশে নষ্ট হচ্ছে। ব্যাস, হাঁটু-কাঁপা প্রতিক্রিয়ায় অবুঝমাড়কে প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করে দেয়া হল। এতকাল নো একট্রি জোনই ছিল, এই কিছুদিন হল নিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। নিষেধের ফায়দা লুটত মাওওয়াদি, টিমবার মাফিয়া, বন বিভাগ, তেন্দু পাতার ব্যাপারি, রেভেনিউ ডিপার্টমেন্ট। নিষেধের দরুণ একদিকে তো নানা গল্প ছড়িয়েছে, অন্যদিকে দেশের অন্য আদিবাসীরা যে সুযোগ-সুবিধা পায় তা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত থেকেছে অবুঝমাড়ের আদিবাসীরা।

আমার প্রতিবারই এলেকশান ডিউটি পড়ে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কোকোমেত্তায় ভোট দেবার জন্য কুরসুনার, জিলাপুর, সোনাপুর, কুদলা, কাছাপাল, ঝারাবাহি, মাঙ্গুর, বোলাবেড়া, মাস্তুর, সাহাকাগোড়া থেকে গোঁড়-মাড়িয়া আর মুরিয়ারা হেঁটে ভোট দিতে এসেছিল, বাচ্চা কোলে মেয়েরা, বুড়ো-বুড়িরাও। ভোটের জন্য ঢেড়া পেটানো হয়েছিল গ্রামে-গ্রামে, যাকে ওরা বলে মুনাড়ি। অনেকে আগের দিন রাতের বেলাই পৌঁছে গিয়েছিল বলে তাঁবু খাটিয়ে শোবার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।

এবারের সংসদ নির্বাচনেও গোঁড় মাড়িয়া মুরিয়ারা দলে-দলে ভোট দিতে এসেছিল। তা ভোট শেষে ফেরার সময়ে পোলিং পার্টির আটজন আর আধামিলিট্রির পাঁচজনকে কেতুলনার গ্রামের কাছে ল্যাণ্ডমাইন পেতে উড়িয়ে দিল আশি-নব্বই জনের মাওওয়াদি জামাত। ঈশ্বরের কৃপায় আমার এলেকশান ডিউটি এখানেই পড়েছিল। তুমি বলো, ওভাবে কি বিপ্লব হবে? গোঁড়-মাড়িয়াদের জীবনের উন্নতি হবে? আমি তো কিছুই বুঝি না বাবা।

—বিপ্লব? বিপ্লবের আমি তেমন কিছু বুঝি না। যুক্তাক্ষর শব্দগুলো সব বেকার।

হ্যাঁ, একটা কাজ ওরা করছে, তা হল সেগুনগাছ, শিশুগাছ, শালগাছগুলো টিম্বার মাফিয়াদের করাত থেকে বেঁচেছে; তখন যদি ওরা থাকত তাহলে মালিক মকবুজার মতন জঘন্য ঘটনা ঘটত না। আরেকটা হল, সব আদিবাসী এলাকার মতন অবুঝমাড়েও তো মাটির তলায় খনিজে ভরা। যতদিন ওরা পাহারা দিতে পারবে ততদিন কর্নাটকের আকরিক লোহার মতন লুকিয়ে-লুকিয়ে জাহাজ ভরে-ভরে মাও-এর দেশ চিনে চোরাচালান করা হবে না। দেখা যাক কারা শেষ পর্যন্ত জেতে।

কার্তিকের সঙ্গে কথা বললেই টের পাবে যে জঙ্গলের ভেতরে কে যে আদিবাসী, কে মাওওয়াদি জন মিলিশিয়া, কে জন আদালতের সদস্য, কে মাওওয়াদি তাত্ত্বিক, কে কেন্দুপাতার ফড়ে, আর কে বনদপতর বা রাজস্ব বিভাগের কর্মী তা তুমি পার্থক্য করতে পারবে না। শুধু পিএলজিএ, মানে গণমুক্তি গেরিলা বাহিনীর ক্যাডারদের, চিনতে পারবে, ওরা জওয়ানদের মতন জলপাইরঙের পোশাক পরে। আমার-তোমার মতন সাধারণ মানুষের সামনে ওরা বেরোয় না বড়ো একটা। আদিবাসীরা দুপক্ষের শাসনের-হুমকির আতঙ্কে জীবন কাটাচ্ছে।

তুমি ফিউজিটিভ হয়ে এখানেই থাকো। বিহারে সবই কালক্রমে ধামাচাপা পড়ে যায়, তিন হাজার কোটি টাকার চারাঘোটালাই চাপা পড়ে গেল। এবারের এলেকশানে রাবড়ি দেবী এফিডেভিট দিয়ে জানিয়েছেন যে ওনার সম্পত্তি হল পঁয়ষট্টি কোটি টাকা, ওনার মেয়ে মিশার চার কোটি টাকা। তবেই বোঝো। সম্প্রতি প্রাক্তন কয়লা সচিব পি সি পারিখের স্মৃতিকথা সময় পেলে পোড়ো। উনি লিখেছেন যে কয়লা মন্ত্রী শিবু সোরেন আর ওনার উপমন্ত্রী দাসারি নারায়ণ রাও কোল ইনডিয়া লিমিটেডের পদে পোস্টিঙের জন্য শশী কুমার-এর কাছ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা একলপ্তে আর প্রতিমাসে দশ লাখ টাকা করে চেয়েছিল। এই তো দেশ, যার স্বাধীনতার জন্য আজও আমরা লাৎ খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি। আমাদের কোনো আইডেনটিটি নেই। সনাতন যে গালাগাল দেয়, তা ইমপোটেন্ট রেজ। ও গালমন্দ করে শরীর সুস্থ রাখে। ইমপোটেন্ট রেজে ভুগে-ভুগে আমার কন্সটিপেশানের ব্যারাম হয়ে গেছে; রাতে ল্যাক্সেটিভ খাই আর সকালে চোখ বুজে বসে থাকি, যারা আমাদের দুরবস্থার জন্য দায়ি তাদের মাথার ওপর।

—আমার রেজ ইমপোটেন্ট নয় বলে আমি ফিউজিটিভ, গংগোতা মায়ের গরম রক্ত আর বাঙালি বাবার ঠাণ্ডা রক্তের গুণ। বলল অপু। —কার্তিক তোমায় ওর মোটর সাইকেলে বসিয়ে একদিন অবুঝমাড় ঘুরিয়ে আনবে। কুমিয়া মারা যাবার বাৎসরিকে গাছে নতুন কাপড় বাঁধতে যাবার জন্য গোঁ ধরেছিল, আমরা যেতে দিইনি। তুমি সঙ্গে থাকলে সুবিধা হবে, চারিদিকে নজর রাখতে পারবে।