অনুচ্ছেদ ৩৩ :

এর কয়েকটি শাহিদ হাদীস রয়েছে:

প্রথম: আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

(يتبع الدجال من يهود أصبهان سبعون ألفا عليهم الطيالسة)

“আসবাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। যাদের গায়ে থাকবে তোয়ালে।”

মুসলিম (৮/২০৮), ইবনু হিব্বান ( ৬৭৬০), আহমাদ (৩/২২৪)। দেখুন, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/৩০৮০)।

দ্বিতীয়: জাবির হতে বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে। তাতে রয়েছে:

(يكون معه سبعون ألفا من اليهود على كل رجل منهم ساج وسيف محلى)

“তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী। তাদের প্রত্যেকের সাথে চাঁদরে আবৃত কারুকার্য খচিত তলোয়ার থাকবে।”

তৃতীয়: ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তলোয়ার উল্লেখ বাদে। যা গত হয়েছে।

চতুর্থ: আবূ সাঈদ আল-খুদরী হতে বর্ণিত হাদীস। অনুরূপ তলোয়ার শব্দ উল্লেখ বাদে। যা বর্ণনা করেছেন ‘আবদুর রাযযাক় (২০৮২৫) আবূ হারূন হতে আবূ সাঈদ সূত্রে। কিন্তু আবূ হারূন মাতরূক।

পঞ্চম: আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত মারফু হাদীস এ শব্দে:

(لينزلن الدجال (خوز) و (كرمان) في سبعين ألفا وجوههم كالمجان المطرقة

“অবশ্যই দাজ্জাল এমন সত্তর হাজার লোক সহ ‘খাওয়’ ও ‘কিরমানে’ অবতরণ করবে যাদের চেহারা হবে চেপ্টা ঢালের মত (ভাঁজযুক্ত)।”

আহমাদ (২/৩৩৭)। এর রিজাল সিক়াত, যদি না ইবনু ইসহাক় আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করতেন।

অনুচ্ছেদ ৩৪ :

একদল সাহাবী সূত্রে এ অংশের সাক্ষ্য হাদীসসমূহ গত হয়েছে। যেমন:

প্রথম: জাবির বর্ণিত হাদীস।

দ্বিতীয়: মুহাম্মাদ (সা.)-এর কতিপয় সাহাবী বৰ্ণিত হাদীস।

তৃতীয়: ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস বর্ণিত হাদীস।

চতুর্থ: আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীস।

পঞ্চম: হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান বর্ণিত হাদীস।

অনুচ্ছেদ ৩৫ :

এ অংশের সমর্থনে কোন (শাহিদ) হাদীস পেলাম।

অনুচ্ছেদ ৩৬ :

এর কয়েকটি হাদীস রয়েছে:

প্রথম: মাজমা‘ ইবনু জারিয়্যাহ আল-আনসারী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি:

(يقتل ابن مريم الدجال بباب لد)

“ইবনু মারইয়াম দাজ্জালকে বাবে লুদে হত্যা করবেন।”

তিরমিযী (২২৪৫), ইবনু হিব্বান (১৯০১), তায়ালিসি (২/২১৯), ‘আবদুর রাযযাক় (২০৮৩৫), আহমাদ (৩/৪২০), আদ-দানী (১৪৩/১, ২)। ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।

আমি বলি: হয়তো এর পরবর্তীতে আগত শাওয়াহিদ দ্বারা। অন্যথায় এর সানাদে ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা‘লাবাহ আল-আনসারী রয়েছেন। তিনি মাজহুল (অজ্ঞাত), তাকে চেনা যায়নি। এছাড়া তার নাম নিয়ে মতভেদ আছে।

দ্বিতীয়: নাওয়াস ইবনু সাম‘আন হতে বর্ণিত অনুরূপ মারফু হাদীস, যা গত হয়েছে।

তৃতীয়: ‘আয়িশাহ হতে অনুরূপ মারফুভাবে বর্ণিত, যা গত হয়েছে। এছাড়া ‘আবদুর রাযযাক় (২০৮৩৬) সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন:

(أن عمر سأل رجلا من اليهود عن شيء؟ فحدثه فصدقه عمر فقال له عمر: قد بلوت صدقك فأخبرني عن الدجال. قال: وإله اليهود ليقتلنه ابن مريم بفناء)

“একদা উমার (রা.) এক ইয়াহুদীকে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে তাঁর উত্তর দিলো। ‘উমার (রা.) তার কথা বিশ্বাস করলেন এবং তাকে বললেন: তোমার সততা আমি পরীক্ষা করেছি। এবার তুমি আমাকে দাজ্জাল সম্পর্কে কিছু বলো। জবাবে সে বললো, সে ইয়াহুদীদের ইলাহ্। লুদ্দ নামক স্থানের আঙ্গিনায় ইবনু মারইয়াম অবশ্যই তাকে হত্যা করবেন।”

অনুচ্ছেদ ৩৭ :

এর সমর্থনে কয়েকটি হাদীস রয়েছে:

প্রথম: ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।

দ্বিতীয়: জাবির বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।

তৃতীয়: হুযাইফাহ ইবনু উসাইদ বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।

চতুর্থ: ইবনু ‘উমার বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে। কিন্তু এর আরেকটি সানাদ রয়েছে যা পূর্বেরটির চেয়ে অধিক সহীহ। এ শব্দে:

(تقاتلكم اليهود فتسلطون عليهم حتى يقول الحجر: يا مسلم هذا يهودي ورائي فاقتله)

“তোমাদের সাথে ইয়াহুদীদের যুদ্ধ হবে। তোমরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করবে, এমনকি পাথর বলবে: হে মুসলিম! এই তো আমার পিছনে ইয়াহুদী, তাকে হত্যা করো।”

‘আবদুর রাযযাক় (২০৮৩৭), তার থেকে আহমাদ (২/১৪৯), তিরমিযী (২২৩৭) এবং তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ। অতঃপর আহমাদ (২/১২২, ১৩১), বুখারী (৬/৭৮, ৪৭৮), মুসলিম (৮/১৮৮) “আবদুর রাযযাক এর চেয়ে ভিন্ন সানাদে, এবং আদ-দানী (৬৫/১)।

পঞ্চম: আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

(لا تقوم الساعة حتى يقاتل المسلمون اليهود فيقتلهم المسلمون حتى يختبئ اليهودي من رواء الحجر والشجر فيقول الحجر أو الشجر: يا مسلم يا عبد الله هذا يهودي خلفي فتعال فاقتله. إلا الغرقد فإنه من شجر اليهود)

“কিয়ামাত ক়ায়িম হবে না যতক্ষণ না মুসলিমরা ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলিমরা তাদেরকে হত্যা করবে, এমনকি ইয়াহুদীরা পাথর ও গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকবে। ফলে পাথর অথবা গাছ বলবে: হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এইতো আমার পিছনে ইয়াহুদী। তুমি এসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারক়াদ গাছ ব্যতীত, তা ইয়াহুদীদের গাছ।

বুখারী, মুসলিম, আহমাদ (২/৩৯৮, ৪১৭, ৫৩০), খতীব (৭/২০৭), আদ-দানী (৬৪/২-৬৫/৩)।

অনুচ্ছেদ ৩৮ :

এ বিষয়ের উপর সমস্ত হাদীসাবলীর ঐক্যমত্য এসেছে যে, দাজ্জাল পৃথিবীতে চল্লিশ দিন ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু এ দিনগুলোকে নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। তা কি চল্লিশ বছর— যেমন এ বর্ণনায় রয়েছে, নাকি চল্লিশ দিন ও রাত— যা অন্য বর্ণনায় রয়েছে?

সহীহ ও বিশুদ্ধ কথা হলো, চল্লিশ দিন ও রাত। কেননা এটাই অধিক সহীহ, এবং এর পক্ষে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যাও অধিক। যেমন সামনে এর বর্ণনা আসছে। আর চল্লিশ বছরের বর্ণনাটি সানাদ যঈফ হওয়ার পাশাপাশি আমি এর পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন শাহিদ বর্ণনাও পেলাম না। যদ্বারা একে মজবুত করা সম্ভব। তবে শাহ্‌র ইবনু হাওশাব বর্ণিত হাদীস ছাড়া, যা আসমা বিনতু ইয়াযীদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এ শব্দে: .

(يمكث الدجال في الأرض أربعين سنة السنة كالشهر والشهر كالجمعة والجمعة كاليوم واليوم كاضطرام السعفة في النار)

“দাজ্জাল পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবে। তখন এক বছর হবে এক মাসের সমান, এক মাস হবে এক সপ্তাহের সমান এবং এক সপ্তাহ হবে এক দিনের সমান, আর এক দিনের পরিমাণ হবে আগুনের তাপে ফোসকা পড়ার মত সময়।”

কিন্তু হাদীসটি মুনকার। সানাদে শাহ্‌র ইবনু হাওশাব দুর্বল এবং তিনি এটি একা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এটি শাহিদ হওয়ার যোগ্য নয়।

বর্ণনাটিকে মজবুত করবে না যা বর্ণনা করেছেন সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ তার পিতা হতে আবূ হুরাইরাহ সূত্রে মারফু ভাবে:

(لا تقوم الساعة حتى يتقارب الزمان فتكون السنة كالشهر ويكون الشهر كالجمعة وتكون الجمعة كاليوم ويكون اليوم كالساعة وتكون الساعة كاحتراق السعفة أو الخوصة)

“কিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না সময় (অতি) কাছাকাছি হয়ে যায়। তখন এক বছর হবে এক মাসের সমান, এক মাস হবে এক সপ্তাহের সমান, এক সপ্তাহ হবে এক দিনের সমান এবং এক দিন হবে এক ঘণ্টার সমান, এবং এক ঘণ্টা হবে খেজুর পাতা পোড়ানো বা ফোসকা পড়ার সময়ের পরিমাণ।”

আহমাদ (২/৫৩৭-৫৩৮), আবূ ইয়ালা (৩০২/১), ইবনু হিব্বান (১৮৮৮)।

আমি বলি: এর সানাদ মুসলিমের শর্তে সহীহ। যেমন ইবনু কাসীর বলেছেন।

এর শাহিদ বর্ণনা রয়েছে আনাস ইবনু মালিক হতে মারফু ভাবে। যা বর্ণনা করেছেন তিরমিযী (২৩৩৩) এবং তিনি একে গরীব বলেছেন। এবং আরেকটি মুরসাল ভাবে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হতে। যা বর্ণনা করেছেন আদ-দানী (১৪/১)।

আমি বলি: এটা শাহ্‌র বর্ণিত হাদীসকে শক্তিশালী করবে না। কেননা এতে দাজ্জালের কথা উল্লেখ নেই। যা সুষ্পষ্ট। আর এটি ব্যাপক অর্থবোধক (মুতলাক়) হাদীস। যাকে নির্দ্দিষ্ট (মুক়ায়্যিদ) করা জায়িয হবে না। অর্থাৎ শাহ্‌র বর্ণিত হাদীসকে— বিশেষত যঈফ হওয়ার কারণে। আর একে নির্দ্দিষ্ট করার পর যা অর্জন হবে তা হলো, এটি অন্যান্য (সহীহ) হাদীসসমূহের বিরোধীতা করবে। আর এরূপ তো জায়িয নয়, যেমন তা গোপন নয়।

আর ইঙ্গিতকৃত ঐ সমস্ত সুষ্পষ্ট বর্ণনাবলী, যাতে দাজ্জালের চল্লিশ বলতে চল্লিশ দিন বলা হয়েছে, চল্লিশ বছর নয়, তা সাহাবীগণের এক জামা‘আত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এর সবগুলো ইতোপূর্বে গত হয়ে গেছে।

কাজেই আমি এখানে তাদের বর্ণনাসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করাই যথেষ্ট মনে করছি:

প্রথম: নাওয়াস ইবনু সাম‘আন বর্ণিত হাদীস।

দ্বিতীয়: জুবাইর পুত্র নুফাইর বর্ণিত হাদীস।

তৃতীয়: নাবী (সা.)-এর জনৈক সাহাবী বর্ণিত হাদীস।

চতুর্থ: জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীস।

পঞ্চম: আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীস।

আমি বলি: এই সমস্ত সহীহ হাদীসমূহ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর বর্ণিত হাদীসের বিরোধীতা করছে না। তা হলো, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

(يخرج الدجال في أمتي فيلبث فيهم أربعين يوما أو أربعين ليلة أو أربعين شهرا فيبعث الله عز و جل عيسى ابن مريم ـ كأنه عروة بن مسعود الثقفي – فيظهر فيهلكه ثم يلبث الناس بعده سنين سبعا ليس بين اثنين عداوة ثم يرسل الله ريحا باردة من قبل الشام فلا يبقى أحد في قلبه مثقال ذرة من إيمان إلا قبضته…)

“দাজ্জাল আমার উম্মাতের মধ্যে বের হবে। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করবে চল্লিশ দিন অথবা চল্লিশ রাত অথবা চল্লিশ মাস (আমি ভাল করে অবহিত নই যে, নাবী [সা.] কোনটি বলেছেন)। তখন মহান আল্লাহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তিনি যেন ‘উরওয়াহ ইবনু মাসউদ আস-সাক়াফীর আকৃতি বিশিষ্ট। (তিনি যমীনে অবতরণ করে দাজ্জালকে অনুসন্ধান করবেন), অতঃপর তিনি বিজয়ী হবেন এবং দাজ্জালকে ধ্বংস করবেন। এর পরে মানুষ দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ এমন শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করবে যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন দুশমনি থাকবে না। অতঃপর আল্লাহ সিরিয়ার দিক থেকে একটা শীতল বাতাস ছেড়ে দিবেন। শীতল বাতাসের স্পর্শ লেগে যমীনের বুকে এমন একটি লোকও জীবিত থাকবে না যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান আছে, বরং সবাই প্রাণ ত্যাগ করবে।”

আহমাদ (২/১৬৬), মুসলিম (৮/২০১), মুস্তাদরাক হাকিম (৪/৫৪৩-৫৪৪, ৫৫০, ৫৫১) তিনি এতে সংশয়ে পড়েছেন, ইবনু হিব্বান (৭৩০৯), এবং ইবনু মানদাহ (৯৮/২)।

আমি বলবো: এ হাদীস পূর্বের হাদীসসমূহের বিরোধীতা করছে না হাদীসটিতে দ্বিধা-সংশয় থাকলেও। বর্ণনাকারীর না জানা থাকার কারণেই বর্ণনাটিতে দ্বিধা-সংশয় হয়েছে (চল্লিশ দিন, নাকি রাত, নাকি মাস?)। আর ঐ সমস্ত বর্ণনাকারীগণ চল্লিশ দিনকেই দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছেন। যিনি দলীল জানেন তিনি দলীল না জানা ব্যক্তির উপর প্রাধান্যযোগ্য। আবার এটাও সম্ভাবনা রাখে যে, উক্ত সংশয় স্বয়ং নাবী (সা.) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আর এমনটি হয়েছে তাঁর নিকট উক্ত চল্লিশ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ বিষয়ে ওয়াহী নাযিল হওয়ার পূর্বে। অতঃপর পরবর্তীতে তাঁর নিকট (চল্লিশ দিন নির্দ্দিষ্ট করে) ওয়াহী নাযিল হয়। এ দিকটি দৃঢ় করছে আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীস:

(في أربعين يوما الله أعلم ما مقدارها) زاد ابن حبان: (الله أعلم ما مقدارها (مرتين)

“চল্লিশ দিন, আল্লাহই এর পরিমাণ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।” আর ইবনু হিব্বান বৃদ্ধি করেছেন: “আল্লাহই এর পরিমাণ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত (দুইবার)।”