অনুচ্ছেদ ১১

এ অংশটি একদল সাহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে:

প্রথম: আনাস ইবনু মালিক;

দ্বিতীয়: ‘আয়িশাহ, তার হাদীস গত হয়েছে;

তৃতীয়: নাবী (সা.)-এর কতিপয় সাহাবী হতে বর্ণিত হাদীস;

চতুর্থ: ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর বর্ণিত হাদীস;

পঞ্চম: হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে;

ষষ্ঠ: জুবাইর পুত্র নুফাইর বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে;

সপ্তম: আবূ বাকরাহ আস-সাক়াফী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

( الدجال أعور عين الشمال بين عينيه مكتوب: كافر يقرؤه الأمي والكاتب )

“দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। উভয় চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে: কাফির। মূর্খ শিক্ষিত সবাই তা পাঠ করবে।”

আহমাদ (৫/৩৭)।

আমি বলি: এর সানাদ সহীহ। আল্লামা হায়সামী বলেন (৭/৩৩৭): এর রিজাল সিক়াত।

অষ্টম: সাফীনাহ বর্ণিত হাদীস, যা সামনে আসবে।

নবম: জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীস, যা সামনে আসবে।

দশম: আসমা বিনতু ইয়াযীদ আল-আনসারিয়্যাহ বর্ণিত হাদীস, যা সামনে আসবে।

অনুচ্ছেদ ১২

এ অংশটিও নাবী (সা.) সূত্রে মুতাওয়াতিরভাবে এসেছে। এর হাদীসসমূহ বর্ণনাকারীর অধিকাংশই সাহাবী, তাদের হাদীসের দিকে এইমাত্র ইঙ্গিত করেছি।

অনুচ্ছেদ ১৩

এ অংশটি একদল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে:

প্রথম: হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

( الدجال أعور العين اليسرى جفال الشعر معه جنة ونار فناره جنة وجنته نار ) . زاد في رواية: ( فمن دخل نهره حط أجره ووجب وزره ومن دخل ناره وجب أجره وحط وزره)

“দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। ঘন কোকড়ানো চুল বিশিষ্ট হবে। তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম (সদৃশ বস্তু) থাকবে। তার জাহান্নাম হলো জান্নাত এবং জান্নাত হলো জাহান্নাম।” এবং তিনি তার বর্ণনায় বৃদ্ধি করেছেন: “যে ব্যক্তি তার নহরে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে তার সওয়াব বিনষ্ট হবে এবং পাপ সাব্যস্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তার জাহান্নামে প্রবেশ করবে তার জন্য সওয়াব সাব্যস্ত হবে এবং পাপ মোচন হবে।”

মুসলিম (৮/১৯৫), ইবনু মাজাহ (২/৫০৬), আহমাদ (৫/৩৯৭)। এবং তার আরেক বর্ণনা (৫৪০৩)-এর সানাদ হাসান। হাকিম ও যাহাবী একে সহীহ বলেছেন। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাউদ (৪২৪৪), এটি রয়েছে মিশকাত (৫৩৯৬)।

দ্বিতীয়: নাবী (সা.)-এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি:

( أنذرتكم فتنة الدجال فليس من نبي إلا أنذره قومه أو أمته: وإنه آدم جعد أعور عينه اليسرى وإنه يمطر ولا ينبت الشجرة وإنه يسلط على نفس فيقتلها ثم يحييها ولا يسلط على غيرها وإنه معه جنة ونار ونهر وماء وجبل خبز وإن جنته نار وناره جنة وإنه يلبث فيكم أربعين صباحا يرد فيها كل منهل إلا أربع مساجد: مسجد الحرام ومسجد المدينة والطور ومسجد الأقصى وإن شكل عليكم أو شبه فإن الله عز و جل ليس بأعور )

“আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করছি। এমন কোন নাবী নেই যিনি স্বীয় কওম বা উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় না দেখিয়েছেন। সে হবে কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। তার বাম চোখ হবে কানা। সে বৃষ্টি বর্ষাবে কিন্তু গাছ উৎপন্ন করতে পারবে না। সে এক ব্যক্তির উপর ক্ষমা প্রয়োগ করে হত্যা করার পর তাকে পুনরায় জীবিত করবে। কিন্তু এ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো উপর সে কর্তৃত্ব করতে পারবে না। তার সাথে থাকবে জান্নাত, জাহান্নাম, নহর, পানি এবং রুটির পাহাড়। তার জান্নাত হবে জাহান্নাম আর জাহান্নাম হবে জান্নাত। সে তোমাদের মাঝে চল্লিশ সকাল অবস্থান করবে। এ সময়ের মধ্যে সে প্রত্যেক ঘাটে পৌঁছবে। কিন্তু চারটি মাসজিদ ব্যতীত: মাসজিদুল হারাম, মাদীনাহ্ মাসজিদ, তূর এবং মাসজিদুল আকসা। যদি তাকে চিনতে তোমাদের অসুবিধা হয় বা তোমরা সন্দিহান হও (তবে জেনে রাখ) মহিয়ান আল্লাহ কানা নন!”

আমি বলি: এর সানাদ সহীহ। ইবনু মানদাহ এর প্রথমাংশ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বৃদ্ধি করেছেন:

( فاعلموا أن الله عز وجل ليس بأعور ليس الله بأعور ليس الله بأعور )

“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহিয়ান আল্লাহ কানা নন, আল্লাহ কানা নন, আল্লাহ কানা নন।”

এবং তিনি বলেন, এর সানাদ মাক়বূল।

তৃতীয়: জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

(يخرج الدجال في خفة من الدين وإدبار من العلم فله أربعون ليلة يسيحها في الأرض اليوم منها كالسنة واليوم منها كالشهر واليوم منها كالجمعة ثم سائر أيامه كأيامكم هذه وله حمار يركبه عرض ما بين أذنيه أربعون ذراعا فيقول للناس: أنا ربكم . وهو أعور وإن ربكم ليس بأعور مكتوب بين عينيه: كافر – ك ف ر مهجاة – يقرؤه كل مؤمن كاتب أو غير كاتب يرد كل ماء ومنهل إلا المدينة ومكة حرمها الله عليه وقامت الملائكة بأبوابها ومعه جبال من خبز والناس في جهد إلا من تبعه ومعه نهران – أنا أعلم بهما منه – نهر يقول: الجنة ونهر يقول: النار فمن أدخل الذي يسميه الجنة فهو النار ومن أدخل الذي يسميه النار فهو الجنة (قال): ويبعث الله معه شياطين تكلم الناس ومعه فتنة عظيمة يأمر السماء فتمطر فيما يرى الناس ويقتل نفسا ثم يحييها فيما يرى الناس لا يسلط على غيرها من الناس ويقول: أيها الناس هل يفعل مثل هذا إلا الرب عز و جل؟ قال: فيفر المسلمون إلى جبل الدخان بالشام فيأتيهم فيحاصرهم فيشتد حصارهم ويجهدهم جهدا شديدا ثم ينزل عيسى ابن مريم فينادي من السحر فيقول: يا أيها الناس ما يمنعكم أن تخرجوا إلى الكذاب الخبيث؟ فيقولون: هذا رجل جني . فينطلقون فإذا هم بعيسى ابن مريم صلى الله عليه وسلم فتقام الصلاة فيقال له: تقدم يا روح الله فيقول: ليتقدم إمامكم فليصل بكم . فإذا صلى صلاة الصبح خرجوا إليه قال: فحين يرى الكذاب ينمات كما ينمات الملح في الماء فيمشي إليه فيقتله حتى إن الشجرة والحجر ينادي: يا روح الله هذا يهودي . فلا يترك من كان يتبعه أحدا إلا قتله)

“দাজ্জাল এমন সময়ে বের হবে যখন মানুষ ধর্মকে কিছুই মনে করবে না, ইল্‌ম থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। সে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে চল্লিশ রাত। তার একটি দিন হবে এক বছরের সমান, আরেক দিন হবে এক মাসের সমান, এবং আরেক দিন হবে এক জুমু‘আর সমান। অতঃপর অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের এই দিনের মতই হবে। তার একটি গাধা থাকবে, সে তার উপর আরোহণ করবে, সেটির দুই কানের মধ্যকার প্রশস্ত হবে চল্লিশ গজ। সে লোকদেরকে বলবে: আমি তোমাদের রব্ব। সে হবে কানা আর তোমাদের রব্ব কানা নন। তার দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে — কাফির। তিনি (সা.) এক একটি অক্ষর উচ্চারণ করে বলেন— কাফ- ফা- রা! তা অক্ষর নিরক্ষর প্রতিটি মু‘মিন পড়তে পারবে। সে জলাধারে এবং ঘাটে যাবে কিন্তু মাদীনাহ্ ও মাক্কাতে প্রবেশ করতে পারবে না। উভয়ের প্রবেশদ্বারে ফিরিশতাগণ নিযুক্ত থাকবেন। দাজ্জালের সাথে থাকবে রুটির পাহাড়। তখন লোকেরা খুবই কষ্টে থাকবে। তবে তারা ব্যতীত যারা তার অনুসরণ করবে। তার সাথে থাকবে দুটি নদী। আমি সেই নদীদ্বয় সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। সে একটি নদীকে বলবে জান্নাত আর অপরটিকে বলবে জাহান্নাম। যাকে সে তার জান্নাত নামক স্থানে প্রবেশ করাবে আসলে তা জাহান্নাম আর যাকে সে তার জাহান্নাম নামক স্থানে প্রবেশ করাবে আসলে তা জান্নাত। তার সাথে আল্লাহ শয়তানদের পাঠাবেন। যারা মানুষের সাথে কথা বলবে। তার একটি বড় ফিতনা এই যে, সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণের হুকুম করবে ফলে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং লোকেরা তা প্রত্যক্ষ করবে। সে একজনকে হত্যা করার পর জীবিত করবে, যা লোকেরা প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু ঐ লোকটি ছাড়া অন্য কাউকে অনুরূপ করার ক্ষমতা (আল্লাহ) তাকে দিবেন না। সে বলবে: হে লোক সকল! মহিয়ান রব্ব ব্যতীত কেউ কি এরূপ করতে পারে? (তিনি বলেন), অতঃপর লোকেরা শামের জাবালে দুখানের দিকে পালাবে। সে সেখানে এসে তাদেরকে খুব কঠোরভাবে ঘিরে রাখবে তাদেরকে খুবই কঠিন কষ্টে ফেলবে। অতঃপর ভোর বেলায় ঈসা (আ.) অবতরণ করে এই বলে আহবান করবেন— হে লোক সকল! তোমাদেরকে কিসে বাধা দিলো মিথ্যাবাদী খবীসের দিকে বের হতে? তারা বলবে: এই লোকটি তো জীন। অতঃপর তারা চলে যাবে। তারা ঈসা (আ.)-এর সাথে থাকাবস্থায় সলাতের ইক়ামাত দেয়া হবে। তখন বলা হবে: অগ্রসর হোন হে রুহুল্লাহ! তিনি বলবেন: তোমাদের ইমামকে এগিয়ে দাও যেন তিনি তোমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করেন। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় শেষে তারা দাজ্জালের দিকে রওয়ানা হবেন। তিনি বলেন: দাজ্জাল তাঁকে দেখামাত্র বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে বিগলিত হয়। অতঃপর তিনি তার দিকে অগ্রসর হয়ে তাকে হত্যা করবেন। এমনকি গাছ ও পাথর এই বলে আহবান করবে: হে রুহুল্লাহ! এইতো ইয়াহুদী। তিনি দাজ্জালের কোন অনুসারীকেই হত্যা না করে ছাড়বেন না।”

আহমাদ (৩/৩৬৭-৩৬৮) হাদীস বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক: ইবরাহীম ইবনু ত়াহমান, আবুয যুবাইর হতে জাবির সূত্রে। এবং ইবনু খুযাইমাহ ‘আতা-তাওহীদ’ (পৃ. ৩১-৩২), হাকিম (৪/৫৩০) দুটি ভিন্ন সানাদে ইবরাহীম হতে সংক্ষেপে।

আমি বলি: এই সানাদের রিজাল সিক়াত। সহীহ রিজাল। তবে আবুয যুবাইর মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। এ সত্ত্বেও হাকিম বলেছেন: সানাদ সহীহ এবং যাহাবী একমত পোষণ করেছেন!

চতুর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আযাদকৃত গোলাম সাফীনাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে খুত়বাহ দিলেন এবং বললেন:

(إلا إنه لم يكن نبي قبلي إلا قد حذر الدجال أمنه: هو أعور عينه اليسرى بعينه اليمنى ظفرة غليظة مكتوب بين عينيه: كافر يخرج معه واديان: أحدهما جنة . ثم يسير حتى يأتي الشام فيهلكه الله عز و جل والآخر نار فناره جنة وجنته نار عند عقبة أفيق)

“আমার পূর্বে এমন কোন নাবী বাদ যাননি যিনি স্বীয় উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক না করেছেন। তার বাম চোখ হবে কানা। আর ডান চোখ (এমনভাবে মিশানো থাকবে যে, তার উপর) মোটা চামড়ায় ঢাকা হবে। তার দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে: কাফির। তার সাথে দুটি উপত্যকা (বা নদী) থাকবে একটি জান্নাত এবং অপরটি জাহান্নাম। তার জাহান্নাম হবে জান্নাত আর জান্নাত হবে জাহান্নাম, …অতঃপর সে ভ্রমণ করবে এমনকি সিরিয়ায় এসে উপস্থিত হবে। অতঃপর মহান আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন ‘আক়াবায়ে আফীক়ের নিকটে।”

আহমাদ (৫/২২১-২২২), হাম্বাল ‘ফিতান’ (৪৯/১), ইবনু আসাকির ((১/৬১৭)।

আমি বলি: এর সানাদ হাসান, শাওয়াহিদ দ্বারা। ইবনু কাসীর বলেন: এর সানাদে কোন সমস্যা নেই— (নিহায়া ১/১২৪)।

পঞ্চম: আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীস, এর শব্দাবলী পূর্বে গত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ১৪

এ অংশটি দুটি হাদীসে এসেছে ইস্তিগাসা বাদে।

প্রথম: নাওয়াস ইবনু সাম‘আন বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।

দ্বিতীয়: জুবাইর পুত্র নুফাইর বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ১৫ :

এ অংশের সাক্ষ্য হাদীস আমি পাইনি। তা প্রমাণিত হলে তাতে এটা স্পষ্ট হতো যে, দাজ্জালের জাহান্নাম বা আগুন প্রকৃত আগুন, এটা তার কোন ধোঁকা নয়। তার উপর আল্লাহর লা‘নাত।

হ্যাঁ, আদ-দানী ‘ফিতান’ গ্রন্থে (১৩৪/২) আসবাগ ইবনু নাবাতাহ হতে ‘আলীর মাওকুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন:

(فمن ابتلي بناره فليقرأ آخر سورة (الكهف) تصير عليه النار بردا وسلاما … وأشياعه يومئذ أصحاب الربا – العشرة باثني عشرة – وأولاد الزنا)

“যে ব্যক্তি তার আগুনের দ্বারা পরিক্ষিত হবে সে যেন সূরাহ কাহাফের শেষের দিক পাঠ করে। এতে তার উপর আগুন ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে! … সেদিন তার সহযোগী হবে সুদখোর ও জারজ সন্তানেরা।”

কিন্তু এখানে আসবাগ মাতরূক। তার দুর্বলতা কঠিন। সুতরাং তার দ্বারা সাক্ষ্য গ্রহণ সঠিক হবে না।

অনুচ্ছেদ ১৬ :

আসমা বিনতু ইয়াযীদ আনসারিয়্যাহ বর্ণিত হাদীস। যা তার সূত্রে শাহর ইবনু হাওশাব বর্ণনা করেছেন। তিনি (আসমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছে আসলেন। তার একদল সাহাবীদের মাঝে দাজ্জালের কথা আলোচনা হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

(إن قبل خروجه ثلاث سنين تمسك السماء السنة الأولى ثلث قطرها والأرض ثلث نباتها والسنة الثانية تمسك السماء ثلثي قطرها والأرض ثلثي نباتها والسنة الثالثة تمسك السماء ما فيها والأرض ما فيها حتى يهلك كل ذي ضرس وظلف وإن أشد فتنة أن يقول للأعرابي: أرأيت إن أحببت لك إبلك عظيمة ضروعها من طويلة أسنمتها تجتر تعلم أني ربك؟ قال: فيقول: نعم . قال: فيتمثل له الشياطين [على صورة إيله فيتبعه] قال: ويقول للرجل: أرأيت إن أحييت لك أباك وأخاك وأمك أتعلم أني ربك؟ قال: فيقول: نعم . قال: فيتمثل له الشياطين [على صورهم فيتبعه] قال: ثم خرج رسول الله صلى الله عليه و سلم لحاجته فوضعت له وضوءا فانتحب القوم حتى ارتفعت أصواتهم فأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بلحمتي (وفي رواية: عضادتي) الباب فقال: مهيم؟) . [ وكانت كلمة من رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا سأل عن أمر يقول: (مهيم) قالت أسماء: ] فقلت: يا رسول الله خلعت قلوبهم بالدجال . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ([ ليس عليكم بأس] إن يخرج وأنا فيكم فأنا حجيجه وإن مت فالله خليفتي على كل مؤمن) [قالت: قلت: أمعنا يومئذ قلوبنا هذه يا رسول الله؟ قال: (نعم أو خير إنه توفى إليه ثمرات الأرضين وأطعمتها) قالت: والله إن أهلي ليختمرون خميرتهم فما يدرك حتى أخشى أن أفتن من الجوع] وما يجزي المؤمنين يومئذ؟ قال: (يجزيهم ما يجزي أهل السماء) [قالت: يا نبي الله ولقد علمنا أن لا تأكل الملائكة ولا تشرب قال: (ولكنهم يسبحون ويقدسون وهو طعام المؤمنين يومئذ وشرابهم] التسبيح والتقديس [فمن حضر مجلسي وسمع قولي فليبلغ الشاهد الغائب واعلموا أن الله صحيح ليس بأعور وأن الدجال أعور ممسوح العين بين عينيه مكتوب: كافر فيقرؤه كل مؤمن كاتب أو غير كاتب])

“দাজ্জাল বের হওয়ার তিন বছর পূর্বে আকাশ (বৃষ্টি) আটকে রাখবে। প্রথম বছরে এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বন্ধ রাখবে এবং যমীন এক তৃতীংশ ফসল উৎপন্ন বন্ধ রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ রাখবে এবং যমীন দুই তৃতীংশ ফসল উৎপন্ন বন্ধ রাখবে। তৃতীয় বছরে আকাশ সম্পূর্ণ বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ রাখবে এবং যমীন কোন ফসল উৎপন্ন করবে না। এমনকি প্রত্যেক দাঁত ও খুর বিশিষ্ট প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। তার বড় ফিতনার একটি হলো, সে এক বেদুইনকে বলবে: তোমার কি অভিমত, আমি যদি তোমার (মৃত) উটকে বড় স্তন ও লম্বা কুঁজ বিশিষ্ট করে যা দুলতে থাকবে তোমার জন্য জীবিত করে দেই তাহলে কি তুমি আমাকে রব্ব বলে জানবে? তখন লোকটি বলবে: হ্যাঁ। অতঃপর শয়তান তার জন্য ঐ উটের আকৃতি ধারণ করবে, ফলে সে তার অনুসারী হবে। তিনি বলেন: এবং দাজ্জাল অপর ব্যক্তিকে বলবে: তোমার কি ধারণা, আমি যদি তোমার জন্য তোমার (মৃত) পিতা, ভাই ও মাতাকে জীবিত করে দেই তাহলে তুমি কি আমাকে রব্ব বলে জানবে? লোকটি বলবে, হ্যাঁ। তিনি বলেন: অতঃপর শয়তান তার জন্য তাদের রূপ ধারণ করবে, ফলে লোকটি তার অনুসারী হবে। বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার প্রয়োজনে বের হলেন। তাঁর জন্য উযুর পানি রাখা হলো। এমন সময় কওমের লোকেরা কাঁদতে লাগলো এমনকি তাদের কান্নার আওয়াজ উঁচু হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) দরজার চৌকাঠ ধরে বললেন: ‘মাহইয়াম’ (কি ব্যাপার)? রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন বিষয় জানতে চাইলে তখন এই ‘মাহইয়াম’ শব্দটি বলতেন। আসমা বলেন: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! দাজ্জালের চিন্তায় তাদের অন্তর বিভোর। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। আমি তোমাদের মাঝে বর্তমান থাকাবস্থায় যদি সে বের হয় তাহলে আমি তাকে দোষারোপ করবো। আর যদি আমি মৃত্যুবরণ করি তাহলে আল্লাহ প্রত্যেক মু‘মিনের উপর আমার খলীফাহ স্বরূপ হবেন (অর্থাৎ তিনি তাদেরকে দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন)। আসমা বলেন: আমি বললাম, আমাদের মনের অবস্থায় সেদিন কি এরূপ থাকবে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: হ্যাঁ, অথবা ভাল থাকবে। তার নিকট পৃথিবীর সকল ধরনের ফল ও খাদ্য প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাবে। আসমা বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার পরিবারবর্গ তাদের খামীর বানাতে থাকবে কিন্তু উপযুক্ত হবার আগেই আমরা ক্ষুধার ফিতনায় পড়ার আশংকা করছি। সেদিন মু‘মিনরা কি (খাদ্য) দ্বারা প্রয়োজনযুক্ত করবে? তিনি বললেন: তারা প্রয়োজনমুক্ত করবে (ক্ষুধা নিবারণ করবে) যেভাবে আকাশের বাসিন্দারা নিবারণ করে থাকেন। আসমা বলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জানি যে, ফিরিশতারা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেন না। তিনি বললেন: বরং তারা তাসবীহ ও তাক়দীস পাঠ করতে থাকেন। আর এটাই (তাসবীহ ও তাক়সীদ) হবে সেদিন মু‘মিনদের খাদ্য-পানীয়। সুতরাং যারা আমার মাজলিসে উপস্থিত হয়েছে এবং আমার কথা শুনেছে, প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (কথাগুলো) পৌঁছে দেয়। জেনে রাখ, আল্লাহ দোষমুক্ত, তিনি কানা নন। আর দাজ্জাল হবে কানা। তার চোখ থাকবে মিশানো। দুই চোখের মাঝে লেখা থাকবে: কাফির। প্রত্যেক অক্ষর ও নিরক্ষর মু‘মিন তা পাঠ করবে।”

‘আবদুর রাযযাক় স্বীয় ‘মুসান্নাফ’ (১১/৩৯১/২০৮২১), তায়ালিসি (২/২১৭/২৭৭৫), আহমাদ (৬/৪৫৩, ৪৫৪, ৪৫৫), হাম্বাল ইবনু ইসহাক় আশ-শাইবানী ‘ফিতান’ (ক়াফ ৪৫/১-২, ৪৬/১), ইবনু আসাকির ‘তারীখ’ (১/৬১৬-৬১৭), ‘আবদুল্লাহ ‘সুন্নাহ’ (১৪১), অনুরূপ আবূ ‘আমর আদ-দানী ‘ফিতান’ (১২৬/১) শেষের অংশটুকু একাধিক সানাদে শাহ্‌র সূত্রে।

ইবনু কাসীর বলেন (১-১৩৫): এই সানাদে কোন সমস্যা নেই।

এছাড়া আহমাদ (৬/৪৫৪), হাম্বাল (৫৪/১-২), ‘আবদুর রাযযাক় (২০৮২২) ইবনু খুসাইম হতে শাহ্ থেকে মারফুভাবে এই শব্দে:

(يمكث الدجال في الأرض أربعين سنة السنة كالشهر والشهر كالجمعة والجمعة كاليوم واليوم كاضطرام السعفة في النار)

“দাজ্জাল পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবে। যার এক বছর হবে এক মাসের সমান, এক মাস হবে এক সপ্তাহের সমান এবং এক সপ্তাহ হবে এক দিনের সমান, আর একদিনের পরিমাণ হবে আগুনের তাপে ফোসকা পড়ার মত সময়।”

আল্লামা হায়সামী (৭/৩৪৭) বলেন: এটি বর্ণনা করেছেন ত়াবারানী। এর সানাদে হাওশাব রয়েছে। সহীহ হাদীসসমূহের ক্ষেত্রে তার বৈপরিত্য গ্রহণযোগ্য নয়। সহীহ হাদীসে রয়েছে: দাজ্জাল পৃথিবীতে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। অথচ এই হাদীসে রয়েছে চল্লিশ বছর। এছাড়া অবশিষ্ট রিজাল সিক়াত।

দ্বিতীয়: জাবির বর্ণিত হাদীস, যা পূর্বে গত হয়েছে। তাতে রয়েছে:

(ويبعث الله معه شياطين تكلم الناس)

“আল্লাহ তার সাথে শয়তানদের পাঠাবেন যারা মানুষের সাথে কথা বলবে।”