অনুচ্ছেদ ৭
এ অংশের সমর্থনে হাদীসসমূহ:
প্রথম: আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
(ألا أحدثكم حديثا عن الدجال ما حدث به نبي قومه؟ إنه أعور وإنه يجيء معه بمثال الجنة والنار فالتي يقول: إنها الجنة . هي النار وإني أنذركم كما أنذر به نوح قومه)
“আমি কি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন হাদীস বর্ণনা করব যা (অন্যান্য) নাবী স্বীয় কওমের কাছে বর্ণনা করেননি? সে হবে কানা। সে নিজের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নাম সদৃশ্য (বস্তু) নিয়ে আসবে। যেটাকে জান্নাত বলবে আসলে সেটা জাহান্নাম। আর আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি যেরূপ নূহ (আ.) তার কওমকে সতর্ক করেছেন।”
বুখারী (৬/২৮৬), মুসলিম (৮/১৯৬), আদ-দানী ‘আল-ফিতান’ (ক়াফ ১/১২৭) ও হাম্বাল (৪৯/১)। এবং ভিন্ন সানাদে তায়ালিসী (২/২১৮/২৭৭৯)।
দ্বিতীয়: ‘আয়িশাহ্ হতে মারফূভাবে বর্ণিত। এ শব্দে:
(أما فتنة الدجال فإنه لم يكن نبي إلا قد حذر أمته وسأحذركموه تحذيرا لم يحذره نبي أمنه: إنه أعور والله عز وجل ليس بأعور مكتوب بين عينيه: كافر يقرؤه كل مؤمن)
“এমন কোন নাবী নেই যিনি স্বীয় উম্মাতকে দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে সাবধান না করেছেন। আমি শীঘ্রই তোমাদেরকে তার ব্যাপারে এমন সতর্ক করব যেরূপ কোন নাবী তার উম্মাতকে সতর্ক করেননি। সে হবে কানা। আর মহান আল্লাহ তো কানা নন। তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে: কাফির। যা শিক্ষিত ও অশিক্ষিত প্রতিটি মু’মিন পাঠ করবে।”
আহমাদ (৬/১৩৯-১৪০), ইবনু মানদাহ (৯৭/২, ১৮০/১)।
আমি বলি: এর সানাদ সহীহ।
তৃতীয়: ইবনু ‘উমার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
(إنه لم يكن نبي قبلي إلا وصفه لأمته ولأصفنه صفة لم يصفها من كان قبلي: إنه أعور والله تبارك وتعالى ليس بأعور عينه اليمنى كأنها عنبة طافية)
“আমার পূর্বের সকল নাবীগণই স্বীয় উম্মাতের কাছে দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। আর আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে তার এমন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করব যা আমার পূর্বে কোন নাবী বর্ণনা করেননি। সে হবে কানা। আর বরকতময় আল্লাহ কানা নন। তার ডান চোখ জ্যোতিহীন, যেন আঙ্গুর সদৃশ, যা উপরের দিকে উঠানো ”
আহমাদ (২/২৭), এবং তার পুত্র ‘আস-সুন্নাহ’ (১৪০), ইবনু ইসহাক হতে নাফি’র মাধ্যমে তার সূত্রে। তার মুতাবা‘আত করেছেন জুওয়াইরিয়াহ, নাফি‘ হতে অনুরূপ এবং তিনি বৃদ্ধি করেছেন, এবং শাইখাইন ও অন্যরা তার থেকে ভিন্ন সানাদে। যা ইতোপূর্বে গত হয়েছে।
চতুর্থ: সাঈদ ইবনু আবূ ওয়াক়স হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
(الأصفن الدجال صفة لم يصفها من كان قبلي: إنه أعور والله عز و جل ليس بأعور)
“আমি অবশ্যই দাজ্জালের এমন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করব যা আমার পূর্বে কেউ বর্ণনা করেননি। সে হবে কানা। আর মহীয়ান আল্লাহ তো কানা নন।”
আহমাদ (১/১৭৬, ১৮২), তার পুত্র ‘আস-সুন্নাহ’ (১৩৭), আদ-দানী (১৩০/২) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক় হতে দাউদ ইবনু ‘আমির ইবনু সা’দ ইবনু মালিক তার পিতা থেকে দাদার মাধ্যমে। এর রিজাল সিক়াত, যদি না মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক় মুদাল্লিস হতেন। তার সানাদে বর্ণনা করেছেন আবূ ইয়ালা, অনুরূপ বাযযার, যেমন রয়েছে মাজমাউয যাওয়ায়িদ (৭/৩৩৭)।
পঞ্চম: আবূ সাঈদ আল-খুদরী হতে বর্ণিত। তিনি নাবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন:
(ألا كل نبي قد أنذر أمته الدجال وإنه يومه هذا قد أكل الطعام وإني عاهد عهدا لم يعهده نبي لأمته قبلي: ألا إن عينه اليمنى ممسوحة الحدقة جاحظة فلا تخفى كأنها نخاعة في جنب حائط وعينه اليسرى كأنها كوكب دري معه مثل الجنة ومثل النار فالنار روضة خضراء والجنة غبراء ذات دخان …)
“জেনে রাখ, প্রত্যেক নাবী স্বীয় উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সাবধান করেছেন। সে আজকের এই দিনে খাবার খেয়েছে। আমি এমন এক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে প্রতিজ্ঞা আমার পূর্বের কোন নাবী তার উম্মাতকে দেননি। সাবধান! তার ডান চোখ হবে মিশানো, যা ফুলে উঠে থাকবে। বিষয়টি কারো কাছে গোপন থাকবে না। তা যেন দেয়ালের পার্শ্বে নিক্ষিপ্ত শ্লেষ্মা। তার বাম চোখ হবে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম সদৃশ বস্তু থাকবে। তার জাহান্নাম হবে প্রকৃত পক্ষে সবুজ বাগান। আর জান্নাত হবে ধুম্রময় নিকৃষ্ট স্থান।”
আমি বলি: কিন্তু তার মুতাবা‘আত করেছেন মুজালিদ, আবুল ওয়াদাক হতে। তিনি বলেন, আমাকে আবূ সাঈদ বললেন: খারিজীরা কি দাজ্জাল বের হওয়াকে স্বীকৃতি দেয়? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
(إني خاتم ألف نبي وأكثر ما بعث نبي يتبع إلا قد حذر أمته الدجال وإني قد بين لي من أمره ما لم يبين لأحد وإنه أعور وإن ربكم ليس بأعور وعينه اليمنى عوراء جاحظة … ) الحديث إلى قوله: (ذات دخان)
“আমি এক হাজার বা তার চেয়েও অধিক নাবীর মধ্যকার সর্বশেষ। অনুসরণের জন্য আল্লাহ যত নাবী পাঠিয়েছেন তারা স্বীয় উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আর আমাকে দাজ্জালের কার্যকলাপ সম্পর্কে এমন কিছু বর্ণনা করা হয়েছে যা অন্য কাউকে করা হয়নি। সে হবে কানা। আর তোমাদের রব কানা নন। তার ডান চোখ হবে কানা ও ফোলা। অতঃপর তার উক্তি: “ধুম্রময়” পর্যন্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।”
আহমাদ (৩/৭৯)।
আমি বলি: মুজালিদ শক্তিশালী নন। আর আবুল ওয়াদাক তার চেয়ে ভাল। সুতরাং দুই সূত্রের সার্বিক বিবেচনায় হাদীসটি হাসান। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
হাদীসটি আবুল ওয়াদাক হতে মুজালিদ ছাড়া অন্য বর্ণনাকারী ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। যা সামনে আসছে।
ষষ্ঠ: জাবির হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা.) বলেছেন:
(ما من نبي إلا قد حذر أمته الدجال ولأخبرنكم منه بشيء ما أخبر به أحد كان قبلي) ثم وضع يده على عينيه فقال: (أشهد أن الله عز و جل ليس بأعور)
“প্রত্যেক নাবীই স্বীয় উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতিপ্রদর্শন করেছেন। আমি অবশ্যই তার ব্যাপারে এমন কিছু সংবাদ দিব যে সংবাদ আমার পূর্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা দেননি।” অতঃপর তিনি তাঁর হাত চোখের উপর রেখে বলেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ কানা নন।”
হাকিম (১/২৪), ইবনু মানদাহ ‘আত-তাওহীদ (৮২/২), এবং তিনি বলেন: এ সানাদের বর্ণনাকারীগণ প্রসিদ্ধ।
আমি বলি: এর সানাদ জাইয়্যিদ এবং রিজাল সিক়াত। ইবনু মানদাহ এর সাথে ইবনু ‘উমারের হাদীসকে যুক্ত করেছেন। যার বর্ণনাটি অনুরূপ এবং তাতে রয়েছে: (وأشار بيده إلى عينيه) — তিনি স্বীয় হাত দ্বারা চোখের দিকে ইশারা করেছেন।1
এবং তার সূত্রে ভিন্ন সানাদে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
( إني لخاتم ألف نبي …) الحديث مثل الذي قبله دون قوله: ( وعينه اليمنى … ) إلخ
“আমি হাজার নাবীর মধ্যে সর্বশেষ নাবী …।” —পূর্বেরটির অনুরূপ। তবে “তার ডান চোখ…।” অংশটুকু বাদে।
দেখুন মাওয়ারিদুয্ যামআন- (১৮৯৯)।
আল্লামা হায়সামী বলেন (৭/৩৪৭): ‘এটি বর্ণনা করেছেন বাযযার। এতে মুজালিদ ইবনু সাঈদ রয়েছে। যাকে জমহুর যঈফ বলেছেন। তার তাওসীকও রয়েছে। হাফিয ইবনু কাসীর ‘আন-নিহায়া’ (১/১২৮) গ্রন্থে বলেন: এর সানাদ হাসান এবং শব্দাবলী খুবই বিরল।
অনুচ্ছেদ ৮
এ অনুচ্ছেদের গ্রহণযোগ্য কোন সাক্ষ্য হাদীস আমি পাইনি। তবে সুলাইমান ইবনু শিহাব বর্ণনা করেছেন:
نزل علي عبد الله بن مغنم – وكان من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم – فحدثني عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: (الدجال ليس به خفاء إنه يجيء من قبل المشرق فيدعو لي فيتبع وينصب للناس فيقاتلهم ويظهر عليهم فلا يزال على ذلك حتى يقدم الكوفة فيظهر دين الله ويعمل به فيتبع ويجب على ذلك ثم يقول بعد ذلك: إني نبي . فيفزع من ذلك كل ذي لب ويفارقه فيمكث بعد ذلك حتى يقول: أنا الله . فتغشى عينه وتقطع أذنه ويكتب بين عينه: كافر . . . ) الحديث
আমার কাছে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগনিম আসলেন— তিনি ছিলেন নাবী (সা.)-এর অন্যতম সাহাবী। অতঃপর তিনি আমার কাছে নাবী (সা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সা.) বলেছেন: “দাজ্জালের বিষয়টি গোপনীয় নয়। সে পূর্ব দিক থেকে আগমন করে নিজের দিকে আহ্বান জানাতে থাকবে। ফলে তার অনুসরণ করা হবে। সে মানুষের সাথে লড়াই করার জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তাদের সাথে লড়াই করে বিজয়ী হবে। এভাবেই তার যাত্রা অব্যাহত থাকবে। অবশেষে সে কূফাতে আসবে এবং আল্লাহর দীনের উপর বিজয় লাভ করবে। এভাবেই তার অনুসরণ চলতে থাকবে এবং তার হুকুম কার্যকর থাকবে। অবশেষে সে নিজেকে নাবী দাবী করবে। তখন প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তি এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়বে এবং তাকে পরিত্যাগ করবে। এভাবেই চলতে থাকবে। অবশেষে সে বলবে আমিই আল্লাহ্। তখন তার চোখ ঢেকে দেয়া হবে, কান কেটে ফেলা হবে এবং তার দুই চোখের মাঝে ‘কাফির’ লিখে দেয়া হবে …।”
আল্লামা হায়সামী বলেন: “হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তাবারানী। এর সানাদে সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ ওয়ারাক মাতরূক।”
আমি বলি: কিন্তু হাফিয ‘আত-তাক়রীব’ গ্রন্থে বলেন: যঈফ। এজন্যই তিনি ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেছেন: ‘এর সানাদ দুর্বল।’ তিনি একে যঈফ বলে বাড়তি কিছু করেননি। প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এবং তার সূত্রে ইবনু আসাকির (১/২১৭-২১৮)।
অতঃপর এর একটি শক্তিশালী শাহিদ বর্ণনা পাওয়া গেছে আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত মারফূ হাদীসে এ শব্দে:
(بين يدي الساعة قريب من ثلاثين دجالين كذابين كلهم يقول: أنا نبي أنا نبي)
“কিয়ামাত পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আগমন ঘটবে, তাদের প্রত্যেকেই বলবে: আমি নাবী, আমি নাবী।”
আহমাদ (২/৪২৯) উক্ত শব্দে এবং শাইখাইন ও অন্যরা অনুরূপ। আহমাদের সানাদ সহীহ। এ অনুচ্ছেদের জন্য হাদীসটিকে প্রমাণ ও সাক্ষ্য বানানোর একটি দিক হলো, এর বাহ্যিকতা বলে দিচ্ছে মাসীহ দাজ্জাল তাদেরই (ঐ ত্রিশজনের) একজন, বরং তাদের মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট। এ দিকটি জোরদার করছে সামুরাহ বর্ণিত মারফূ‘ হাদীস:
(والله لا تقوم الساعة حتى يخرج ثلاثون كذابا آخرهم الأعور الدجال … )
“আল্লাহর শপথ! কিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ত্ৰিশজন মিথ্যাবাদী বের হয়। তাদের সর্বশেষ জন হলো কানা দাজ্জাল…।” এর সানাদে কিছু দুর্বলতা আছে।
অনুচ্ছেদ ৯
এ অনুচ্ছেদ কয়েকটি হাদীসে বর্ণিত আছে। তবে দাবী করার কথাটি বাদে।
প্রথম: ‘উমার ইবনু সাবিত আল-আনসারী হতে বর্ণিত। তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কতিপয় সাহাবী সংবাদ দিয়েছেন: একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে বলেন:
( إنه مكتوب بين عينيه: كافر يقرؤه من كره عمله أو يقرؤه كل مؤمن ) وقال: ( تعلموا أنه لن يرى أحد منكم ربه عز و جل حتى يموت )
“তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে: কাফির। যারা তার কার্যকলাপ অপছন্দ করবে তারা তা পড়তে পারবে অথবা প্রত্যেক মু’মিন তা পাঠ করবে।” এবং তিনি বলেছেন: “তোমরা জেনে রাখ, তোমাদের কেউই স্বীয় মহিয়ান রব্বকে মৃত্যুর পূর্বে দেখতে পাবে না।”
মুসলিম (৮/১৯৩), মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক় (২০৮২০), তার থেকে তিরমিযী (২২৩৬) তিনি একে সহীহ বলেছেন, অনুরূপ আহমাদ (৫/৪৩৩), আদ-দানী (১২৯/১-২) এ কথাটি বাদে: “অথবা প্রত্যেক মু’মিন পাঠ করবে।”
দ্বিতীয়: ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
( إني قد حدثتكم عن الدجال حتى خشيت ألا تعقلوا: إن مسيح الدجال رجل قصير أفحج دعج مطموس العين ليست بناتئة ولا حجراء فإن التبس عليكم فاعلموا أن ربكم عز و جل ليس بأعور وأنكم لن تروا ربكم حتى تموتوا )
“আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছি। এতদসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না। জেনে রাখ, মাসীহ দাজ্জাল হবে বেঁটে (খাটো), তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথার চুল হকে কুঞ্চিত, আর সে হবে কানা। তার চোখ হবে সমতল, যা উপরে উঠে থাকবে এবং নীচে থাকবে না। এরপরও যদি তোমরা সন্দীহান হও, তবে জেনে রাখ, তোমাদের রব্ব কানা নন। আর তোমরা তোমাদের রব্বকে মৃত্যুর আগে দেখতে পাবে না।”
আবূ দাউদ (২/২১৩), আজরী আশ-শারী‘আহ (৩৭৫ পৃ.), আবূ নু‘আইম হিলয়্যা’ (৫/১৫৭, ২২১) ও ইবনু মানদাহ ‘আত-তাওহীদ (১/৮৩)।
আমি বলি: এর সানাদ জাইয়্যিদ এবং রিজাল সিক়াত। আল্লামা হায়সামী বলেন (৭/৩৪৭): হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বাযযার, এবং এর সানাদে বাকিয়্যাহ মুদাল্লিস।
আমি বলি: তার হাদীস শ্রবণের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে আবূ নু‘আইমের নিকট তৃতীয় আরেকটি বর্ণনায়, যে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এবং ইবনু মানদাহ, অনুরূপ আবূ দাউদ। তবে তাতে “তোমরা তোমাদের রব্বকে মৃত্যুর আগে দেখতে পাবে না।”— এ অংশটুকু নেই।
অনুচ্ছেদ ১০
নাবী (সা.) থেকে এ অংশের মুতাওয়াতির বর্ণনা আছে। একদল সাহাবী সূত্রে আমি তা বর্ণনা করেছি। ইতোপূর্বে এর অধিকাংশ হাদীসের তাখরীজ গত হয়েছে। আমি সে দিকে ইশারা করাই যথেষ্ট মনে করছি:
প্রথম: আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর বর্ণিত হাদীস;
দ্বিতীয়: আনাস ইবনু মালিক;
তৃতীয়: ‘আয়িশাহ;
চতুর্থ: উম্মু সালামাহ;
পঞ্চম: সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস;
ষষ্ঠ: আবূ সাঈদ আল-খুদরী;
সপ্তম: জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ;
অষ্টম: ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত;
নবম: আসমা বিনতু ইয়াযীদ আল-আনসারিয়্যাহ, তার হাদীস আসবে;
দশম: নাবী (সা.)-এর জনৈক সাহাবীর বর্ণনা, যা সামনে আসবে;
একাদশ: ইবনু ‘আব্বাস (রা.) হতে নাবী (সা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেন:
( الدجال: هو أعور هجان أشبه الناس بعبد العزى بن قطن فإما هلك الهلك فإن ربكم ليس بأعور )
“দাজ্জাল হবে কানা, খুঁতযুক্ত। দেখতে ‘আবদুল উযযা ইবনু ক়াতানের সদৃশ। অতঃপর যে ধ্বংস হওয়ার সে ধ্বংস হবে। জেনে রাখ, তোমাদের রব্ব কানা নন।”
ইবনু খুযাইমাহ ‘আত-তাওহীদ’ (৩১ পৃ.), ইবনু হিব্বান (১৯০০), আহমাদ (১/২৪০, ২১৩), এবং তার পুত্র ‘সুন্নাহ’ (১৩৭ পৃ.), ত়াবারানী কাবীর (১১৭১১), হাম্বাল ‘ফিতান’ (৪৫/১), এবং ইবনু মানদাহ ‘আত-তাওহীদ’ (৮৩/১)।
আমি বলি: এর সানাদ মুসলিমের শর্তে সহীহ।
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- একে মিলিত (মুত্তাসিল) করেছেন বুখারী (১৩/৩৩২)। এই অতিরিক্ত অংশের শাহিদ হাদীস হচ্ছে সামনে আগত জাবিরের হাদীস, এবং আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীস এবং তার সূত্রে ভিন্ন সানাদে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : وحديث أبي هريرة قال في هذه الآية : إن الله يأمركم أن تؤدوا الأمانات إلى أهلها وإذا حكمتم بين الناس أن تحكموا بالعدل إن الله نعما يعظكم به إن الله كان سميعا بصيرا [ النساء : ٥٨] : (رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع إبهامه على أذنه وأصبعه التي تليها على عينه قال أبو هريرة : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل ذلك) আবূ হুরাইরাহ এ আয়াত সম্পর্কে বলেন : “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম করেছেন আমানাত তার হক়দারের নিকট অর্পন করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে তখন ইনসাফের সাথে করবে …।” (সূরাহ্ আন্-নিসা : ৫৮) — “আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি তার কানের উপর রাখলেন এবং তার পাশের আঙ্গুল রাখলেন চোখের উপর। আবূ হুরাইরাহ বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে অনুরূপ করতে দেখলাম।”
আবূ দাউদ (২/২৭৭-২৭৮), ইবনু খুযাইমাহ ‘আত-তাওহীদ’ (৩১ পৃ.), হাকিম (১/২৪), বায়হাকী ‘আসমা’ (১৭৮ পৃ.), ইবনু মানদাহ (৮২/২) এবং তিনি বলেন : এটি বর্ণনা করেছেন আবূ মা’শার মাকবুরী হতে আবূ হুরাইরাহ সূত্রে এবং ইবনু লাহিয়্যাহ ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব হতে …।
আমি বলি : আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত হাদীসের সানাদ মুসলিমের শর্তে সহীহ। যেরূপ বলেছেন হাকিম, যাহাবী এবং হাফিয। অথচ কাওসারী ‘আল-আসমা’ গ্রন্থের তা‘লীক়ে কোন প্রমাণ ছাড়াই দোষী করেছেন। হাদীসের সিফাত বর্ণনায় এরূপ করা তার অভ্যাস।