অনুচ্ছেদ ৩৯ :
এই অংশটি যঈফ ও গরীব। পাশাপাশি সহীহ হাদীসসমূহের পরিপন্থী। যেগুলোর প্রতি ইতোপূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মাহফূয হলো:
(أربعون يوما يوم كسنة ويوم كشهر ويوم كجمعة وسائر أيامه كأيامكم هذه)
“চল্লিশ দিন। যার এক দিন হবে এক বছরের সমান, আরেক দিন এক মাসের সমান, আরেক দিন এক সপ্তাহের সমান এবং বাকী দিনগুলো তোমাদের এই দিনগুলোর সমান হবে।”
অনুচ্ছেদ ৪০ :
উক্ত সহীহ হাদীসগুলোতে এ অংশের উল্লেখ নেই। বরং এটি প্রমাণিত আছে আবূ হুরাইরাহ বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে এ শব্দে:
(لا تقوم الساعة حتى يتقارب الزمان .. وتكون الساعة كاحتراق السعفة)
“ক়িয়ামাত ক়ায়িম হবে না যতক্ষণ না সময় কাছাকাছি হয়ে যায়.., তখন এক ঘণ্টা হবে খেজুর পাতা পোড়ানোর মত।” কিন্তু এতে দাজ্জালের কথা উল্লেখ নেই। যেমনটি গত হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৪১ :
এর সমর্থনে কোন (শাহিদ) হাদীস পেলাম না।
অনুচ্ছেদ ৪২ :
এ শব্দে এর কোন মৌলিকত্ব পেলাম না। এতে ‘ছোট দিনের’ কথা উল্লেখ আছে। মাহফুয হলো যা পর্বে গত হওয়া নাওয়াস এবং জুবাইর পুত্র নুফাইর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:
(قلنا: يا رسول الله فذلك اليوم الذي كسنة أتكفينا فيه صلاة يوم؟ قال: لا اقدروا له قدره)
“আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তখন কি আমাদের জন্য এক দিনের সলাতই যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন: না, বরং অনুমানের ভিত্তিতে সময় নির্ধারণ করে সলাত আদায় করবে।”
অনুচ্ছেদ ৪৩ :
এই অংশ পূর্বোক্ত আবূ হুরাইরাহ্ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে একাধিক সানাদে।
অনুচ্ছেদ ৪৪ :
এর সমর্থন দেয় ত়াউস বর্ণিত হাদীস। তাতে রয়েছে, তিনি বলেন:
(ينزل عيسى ابن مريم إماما هاديا ومقسطا عادلا فإذا نزل كسر الصليب وقتل الخنزير ووضع الجزية وتكون الملة واحدة ويوضع الأمن في الأرض حتى أن الأسد ليكون مع البقر تحسبه ثورها ويكون الذئب مع الغنم تحسبه كلبها وترفع حمة كل ذات حمة حتى يضع الرجل يده على رأس الحنش فلا يضره وحتى تفر الجارية الأسد كما يفر ولد الكلب الصغير ويقوم الفرس العربي بعشرين درهما ويقوم الثور بكذا وكذا وتعود الأرض كهيئتها على عهد آدم ويكون القطف – يعني: العنقاد – يأكل منه النفر ذو العدد وتكون الرمانة يأكل منها النفر ذو العدد)
“ঈসা ইবনু মারইয়াম অবতরণ করবেন ইমাম, পথপ্রদর্শক ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে। তিনি আগমন করে ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিযিয়া কর রহিত করবেন। তখন একটি মাত্র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যমীনে পূর্ণ নিরাপত্তা বিরাজ করবে। এমনকি বাঘ গাভীর সাথে থাকবে আর গাভী একে বলদ মনে করবে। নেকড়ে বকরী পালের সাথে থাকবে, অথচ বকরী তাকে পাহারাদার কুকুর মনে করবে। সকল বিষধর প্রাণীর বিষ বিলোপ করা হবে। এমনকি কোন লোক সাপের মাথায় হাত রাখলেও সে তার কোন ক্ষতি করবে না। এমনকি বালিকা বাঘ তাড়া করবে যেমন নাকি কুকুর শাবক ছোটদেরকে তাড়া করে। আরবের ঘোড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে বিশ দিরহাম। বলদ বা ষাঁড়ের এমন এমন দাম নির্ধারণ করা হবে। পৃথিবী আদম (আ.)-এর যুগের অবস্থায় ফিরে আসবে। একগুচ্ছ আঙ্গুর অনেক লোকে খাবে এবং একটি ডালিমও অনেক লোকে খাবে।”
‘আবদুর রাযযাক় (২০৮৪৩)।
আমি বলি: এর সানাদ মুরসাল সহীহ। রিজাল সিক়াত, শাইখাইনের রিজাল।
অনুচ্ছেদ ৪৫ :
এ অংশের শাহিদ বর্ণনা গত হয়েছে ত়াউস বর্ণিত হাদীসে এবং আবূ হুরাইরাহ হতে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহে। তবে তার সূত্রগুলোর মধ্যকার একটি সূত্র অবশিষ্ট রয়েছে। তা হলো, যায়িদ ইবনু আসলাম জনৈক ব্যক্তি হতে আবূ হুরাইরাহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন:
(لا تقوم الساعة حتى ينزل عيسى ابن مريم إماما مقسطا و [تسلب] قریش الإمارة ويقتل الخنزير ويكسر الصليب وتوضع الجزية وتكون السجدة واحدة لرب العالمين وتضع الحرب أوزارها وتملأ الأرض من الإسلام كما تملأ الآبار من وتكون الأرض كما ثور الورق (يعني: المائدة) وترفع الشحناء والعداوة ويكون الذئب في الغنم كأنه كلبها ويكون الأسد في الإبل كأنه فحلها)
“যতক্ষণ পর্যন্ত ঈসা ইবনু মারইয়াম ন্যায়পরায়ণ শাসক হয়ে আগমন না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ক়িয়ামাত সংঘটিত হবে না। কুরাইশদের নেতৃত্ব উঠিয়ে নেয়া হবে। তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, জিযিয়া বিলোপ করবেন। তখন একমাত্র বিশ্বজগতের প্রতিপালকের উদ্দেশে সাজদাহ্ করা হবে। যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবী ইসলামে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, যেমন কূপ পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। পৃথিবী একটি দস্তরখানের মত হবে। হিংসা বিদ্বেষ উঠে যাবে। নেকড়ে বকরী পালের পাহারাদার কুকুরের মত হবে, আর বাঘ উটের পালের ষাঁড়ে পরিণত হবে।
‘আবদুর রাযযাক় (২০৮৪৪) মা‘মার হতে তার সূত্রে।
আমি বলি: এর সানাদের সকলেই সিক্কাহ, শুধু নাম উল্লেখহীন জনৈক ব্যক্তি ব্যতীত। তিনি সাহাবী না হলেও বড় তাবিঈনদের একজন হবেন। কেননা সানাদের এই যায়িদ একজন তাবিঈ। তিনি সাহাবীদের এক জামা‘আত থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং আবূ হুরাইরাহ, ইবনু ‘উমার ও অন্যরা। যদিও বর্ণনাটি মাওকূফ কিন্তু তা মারফুর হুকুমে রয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৪৬ ও ৪৭ :
এ দুটোর কোন মৌলিক সমর্থন (শাহিদ) পেলাম না।
অনুচ্ছেদ ৪৮ :
এর সমর্থন পাওয়া যায় আসমা বিনতু ইয়াযীদ আল-আনসারিয়্যাহ্ বর্ণিত হাদীসে, যা গত হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৪৯ :
এর সমর্থনে চারটি হাদীস রয়েছে:
প্রথম: আসমা বর্ণিত হাদীস, যা এইমাত্র ইঙ্গিত করা হলো।
দ্বিতীয়: ‘আয়িশাহ বর্ণিত হাদীস, যা গত হয়েছে।
তৃতীয়: ইবনু ‘উমার বর্ণিত হাদীস:
(أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن طعام المؤمنين في زمن الدجال؟ قال: (طعام الملائكة) . قالوا: وما طعام الملائكة؟ قال: (طعامهم منطقهم بالتسبيح والتقديس فمن كان منطقه يومئذ التسبيح والتقديس أذهب الله عنه الجوع فلم يخش جوعا)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দাজ্জালের সময়ে মু‘মিনদের খাদ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো? তিনি বললেন: “ফিরিশতাদের খাদ্য (তাদের খাদ্য হবে)।” তারা বলেন, “ফিরিশতাদের খাদ্য কি?” তিনি বললেন: “তাদের খাদ্য হলো তাদের উক্তি তাসবীহ ও তাক়দীস। তখন যাদের উক্তি হবে তাসবীহ ও তাক়দীস পাঠ আল্লাহ এর দ্বারা তাদের ক্ষুধা দূর করে দিবেন। ফলে তাদের ক্ষুধার ভয় থাকবে না।”
হাকিম (৪/৫১১) এবং তিনি বলেন: ‘সানাদ মুসলিমের শর্তে সহীহ।’ যাহাবী তার বিরোধীতা করে বলেন: ‘আমি বলি: কখনোই নয়। সানাদে সাঈদ সন্দেহভাজন। সুতরাং ভাবুন।’
আমি বলি: অর্থাৎ সাঈদ ইবনু সিনান আল-হিমসী।
চতুর্থ: আসমা বিনতু উমাইস হতে বর্ণিত:
(أن النبي صلى الله عليه وسلم دخل عليها لبعض حاجته ثم خرج فشكت إليه الحاجة فقال: (كيف بكم إذا ابتليتم بعبد قد سخرت له أنهار الأرض وثمارها فمن اتبعه أطعمه وأكفره ومن عصاه حرمه ومنعه ؟) . قلت: يا رسول الله إن الجارية لتجلس عند التنور ساعة الخبزها فأكاد أفتتن في صلاتي فكيف بنا إذا كان ذلك؟ قال: (إن الله يعصم المؤمنين يومئذ بما عصم به الملائكة من التسبيح إن بين عينيه: كافر يقرؤه كل مؤمن كاتب وغير كاتب)
“নাবী (সা.) কোন এক প্রয়োজনে তার নিকট গেলেন। তারপর তার কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন আসমা তাঁর নিকট কোন প্রয়োজনের কথা জানালে তিনি বললেন: তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে যখন তোমরা এমন বান্দা দ্বারা পরীক্ষায় পড়বে পৃথিবীর নদী ও ফলসমূহ তার অনুগত হবে, যে তার অনুসরণ করবে তাকে প্রচুর খাবার দিবে আর যে তার অবাধ্য হবে তাকে বঞ্চিত করবে? অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলা সেদিন মু‘মিনদেরকে এমন জিনিস দ্বারা রক্ষা করবেন যে তাসবীহ দ্বারা তিনি ফিরিশতাদের রক্ষা করে থাকেন। তার (দাজ্জালের) দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) কাফির শব্দ লিখা থাকবে। প্রত্যেক মু‘মিন তা পড়তে পারবে চাই সে শিক্ষিত হোক বা নিরক্ষর।”
আল্লামা হায়সামী বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ত়াবারানী এবং তাতে নাম উল্লেখহীন জনৈক বর্ণনাকারী আছেন। এছাড়া অবশিষ্ট রিজাল সহীহ রিজাল।
পরিশেষে বলতে হয়, আবূ উমামাহ্র এই হাদীসটির সানাদ যদিও যঈফ কিন্তু এই তাখরীজ ও তাহক়ীকের মাধ্যমে সুষ্পষ্ট প্রতীয়মান হলো যে, হাদীসটি সহীহ; এর অধিকাংশ অংশ বা অনুচ্ছেদের পক্ষে বিশুদ্ধ শাওয়াহিদ দ্বারা হাদীসটি সহীহ পর্যায়ে উন্নীত। ইতোপূর্বে হাদীসটির প্রত্যেক অংশ বা অনুচ্ছেদে তা উল্লেখ হয়েছে। এখন আমার প্রবল ইচ্ছা হলো, মাসীহ দাজ্জালের কিস্সা, ঈসা (আ.)-এর অবতরণ এবং দাজ্জালকে হত্যা করা সম্পর্কে আবূ উমামাহ্ (রাযি.) বর্ণিত হাদীসকে ঘিরে এই প্রবন্ধে যা কিছু সহীহভাবে প্রমাণিত হয়েছে, তার সবগুলো আমি একত্রিত করবো। তবে যে অংশের শাহিদ (হাদীস) পাইনি তা বাদে। আর প্রত্যেক অংশের সমর্থনে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যও যথাযথ স্থানে উল্লেখ করবো।