বেলা নয়টার দিকে স্নান সেরে সবচেয়ে দামি ট্রপিকালের নীল সুটটা পরে নিল রানা। শেষবারের মত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিল টাইয়ের নটটা বাঁকা হয়ে আছে কি না। এমনি সময় কমলা রঙের একটা চমৎকার দামি কাতান শাড়ি পরে ঢুকল জিনাত রানার কামরায়।
‘আমিও করব!’ আবদারের সুরে বলল জিনাত ঘরে ঢুকেই।
‘কী?’
‘ওই যে সকালবেলা আব্বাজী যা করছিল।’ বলেই দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর আব্বার নকল করে চুমো খেল জিনাত রানার দুই গালে। তারপর বলল, ‘ছিঃ! গিজগিজে দাড়ি!’
হাসতে হাসতে বেরিয়ে এল দুজন রাস্তায়। লাউঞ্জে দেখা হয়ে গেল ওয়ালী আহমেদের সঙ্গে। লিফটের দিকে যাচ্ছিল সে। থেমে দাঁড়িয়ে দেখল দুজনকে হাত ধরাধরি করে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে। বিচিত্র একটুকরো হাসি ফুটে উঠল ওর ঠোঁটে।
‘কোন্ দিকে যাবে, জিনাত?’
‘তুমি যেদিকে নিয়ে যাবে, সেইদিকে।’
‘গান্ধী গার্ডেন দেখেছ?’
‘না। চলো না যাই? অনেক শুনেছি এই গার্ডেনের কথা।’
‘বেশ। প্রথমে ওখানেই চলো।’
হাতের ইশারায় ট্যাক্সি ডাকল রানা। চকচকে নতুন ট্রায়াম্প হেরাল্ডের ছাদ হলুদ করা ট্যাক্সি থামল এসে ওদের সামনে। মিটার ডাউন করে নিল ড্রাইভার। দরজা খুলে ধরল। পিছনের সিটে উঠে বসল ওরা দুজন।
ঠিকই বলেছিল খান মোহাম্মদ জান। ইতিমধ্যেই মস্ত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে জিনাতের ভেতর। জীবনের সবকিছুর প্রতি সেই কুটি কুটিল দৃষ্টিভঙ্গিটা আর দেখতে পেল না রানা। সহজ স্বচ্ছন্দ একটা ভাব ফিরে এসেছে ওর মধ্যে। প্রথম লক্ষণ, কাটা কাটা বাঁকা কথার বদলে স্বাভাবিক নারীসুলভ কথার খৈ ফুটছে ওর মুখে। অনর্গল কথার ফুলঝুরি। আর অকারণ উচ্ছল হাসি।
সারাটা গান্ধী গার্ডেনে যেন খুশির বন্যা বইয়ে দিল ওরা। জেব্রাগুলোকে বুট খাওয়াল জিনাত, উটের পিঠে চড়ল, বানরগুলোকে দিল কলা—তার থেকে রানা একটা খেয়ে ফেলায় ওর মনুষ্যত্বে সন্দেহ প্রকাশ করল।
বেলা সাড়ে-দশটায় লোকজনের ভিড় নেই গার্ডেনে। এই অসময়ের নিরিবিলিতে ঝোঁপ ঝাড়ের আড়ালে গোটা কমক কলেজ পালানো প্রেমিক জুটি দেখা গেল। জায়গায় জায়গায় শান বাঁধানো বসবার ব্যবস্থা আছে গাছের তলায়। তারই একটায় বসে রয়েছে পাঞ্জাবী-পাজামা পরা বাবরি-চুলো এক ভাবুক। ফিলসফার না আধুনিক গানের গীতিকার ঠিক বোঝা গেল না। গাছের ডালে চিল বসে ছিল একটা নিশ্চিন্ত মনে এক লাদা পায়খানা করল। আর, পড়বি তো পড় সোজা ভাবুকের চাঁদির উপর। চমকে উঠে মাথায় হাত দিয়েই কালো হয়ে গেল ভাবুকের মুখ। হেসে খুন হয়ে গেল জিনাত।
‘আজব জানোয়ার’ লেখা একটা তাঁবুতে ঢুকল ওরা দুই আনার টিকিট কেটে। মুখটা মানুষের আর দেহটা শেয়ালের। মুখে একগাদা স্নো-পাউডার-রুজ লিপস্টিক লাগানো। ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। রানার গা ঘেঁষে দাঁড়াল জিনাত। এক হাতে খামচে ধরল কোটের হাতা। ভয় পেয়েছে। খেলা যে দেখাচ্ছিল, সেই লোকটা এগিয়ে এসে জন্তুটিকে জিজ্ঞেস করল, ক্যয়া নাম তুমহারা?
‘মামতাজ বেগম,’ উত্তর এল নাকি গলায়।
‘ঘ্যর কাঁহাঁ?’ আবার জিজ্ঞেস করল লোকটি।
‘আফ্রিকা,’ উত্তর এল আবার।
‘খাতি হো ক্যয়া?’
‘কামলা।’
‘পিতি হো ক্যয়া?’
‘দুদ্।’
রানা লক্ষ্য করল ফেঁশ ফোশ করে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে ওঠা নামা করছে শেয়ালের পেটটা, কিন্তু কথা বলবার সময় থেমে যাচ্ছে কয়েক সেকেণ্ডের জন্য। কৌশল করে বানিয়েছে এই ভোজবাজী।
‘পাঁও যারা হিলাও দেখেঁ?’
পা নড়াচ্ছে জন্তুটা।
‘হাথ যারা হিলাও দেখেঁ?’
আর দেখাতে হলো না। একটানে রানাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল জিনাত তাঁবু থেকে। ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে ওর মুখ। অন্তত বিশ কদম দূরে না সরে মুখ খুলল না সে।
‘ওরেব্বাপরে বাপ! এখনও আমার বুকের ভেতর ধুক ধুক করছে। দেখবে? হাত দিয়ে দেখো!’ উত্তেজিত জিনাতের কণ্ঠস্বর। পিতার মতই সজীব প্রাণবন্ত ওর প্রতিটি কথাবার্তা, কার্যকলাপ।
প্রকাণ্ড চিড়িয়াখানাটা শেষই হতে চায় না। অনেক ঘুরল দুজন।
রানার হাজার পীড়াপীড়িতেও সিগারেট খেল না জিনাত। বলল, ‘আমি ভাল হতে চাই, রানা। তুমি বলেছ, কিছুতেই মরতে দেবে না আমাকে। সারা সকাল ধরে খালি এই কথাটাই ভাবছি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। মৃত্যুর গহ্বর থেকে উঠে এসেছি আমি তোমার হাত ধরে। তোমার জন্য বাঁচব আমি।’
একটু থেমে আবার বলল, ‘কিন্তু এত কালি, এত কলঙ্ক! তুমি আরও আগে এলে না কেন, রানা? ফুলের মত নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক হয়ে যদি আসতে পারতাম তোমার কাছে!’
‘কলঙ্ক তো চাঁদের অলঙ্কার, জিনাত।’ বলল রানা, ‘চাঁদের দেহটা কলঙ্কিত। কিন্তু আলোটা? এমন স্নিগ্ধ পবিত্র আছে কিছু আর? মানুষের দেহটা তো বাইরের জিনিস—মনের বিচারই আসল বিচার। তাই না?’
‘তুমি তাই মনে করো? সত্যিই?’
‘হ্যাঁ। মানুষের মনটাই সব।’
‘বোম, ভোলানাথ!’
চমকে উঠল রানা ও জিনাত একসঙ্গে। গুরু-গম্ভীর কণ্ঠস্বর। কাছেই ঝোঁপের ওপাশে কম্বলের ওপর পদ্মাসনে বসে আছে সাধু বাবা। আশপাশে সাত আটজন চেলা জুটে গেছে। বসে আছে ওরা তীর্থের কাকের মত সাধুজীর মুখের দিকে চেয়ে।
সাধুবাবার চোখ বন্ধ। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। একটা নোংরা পুরু কম্বল গায়ে জড়ানো। পাশেই পিতলের চকচকে ললাটা আর সিঁদুর চর্চিত ত্রিশূল। সামনে ধুনো জ্বলছে। আশপাশে প্রচুর উপহার সামগ্রী, ফলমূল পড়ে আছে অনাদর অবহেলায়। বোঝা গেল আসল সাধু-এসবের উপর কোনও লোভ নেই।
‘বোম, ভোলানাথ!’
ধীরে ধীরে চোখ মেলল সাধুজী। মৃদু গুঞ্জন উঠল মাড়োয়াড়ী ভক্তদের মধ্যে। কে কার আগে কৃপাদৃষ্টি লাভ করবে তাই নিয়ে ঠেলাঠেলি লেগে গেল নিজেদের মধ্যে। সবাই এগিয়ে বসতে চায়। একটি বাণীও যেন ফসকে না যায়।
ওদের কারও দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে সোজা চাইল সাধুজী রানার চোখের দিকে। প্রচুর গঞ্জিকা সেবনে লাল চোখ দুটো। যেন ভস্ম করে দেবে, এমনি চাহনি। মুচকি হাসল রানা। ব্যাটা সোহেল। এই গান্ধী গার্ডেনেই তা হলে আড্ডা গেড়েছে শালা।
চট করে সাধুজীর চোখ সরে গেল রানার চোখের উপর থেকে। বোধহয় হাসি সামলাবার জন্যে। জিনাতের প্রতি এবার স্নেহ বর্ষণ করল যেন সাধুবাবার চোখ।
‘জনম-দুখিনী তুমি, মা। এসো তো এগিয়ে, দেখি।’
প্রথম দর্শনেই, ভক্তি এসে গেছে জিনাতের। পায়ে পায়ে এগোল সে সাধুর দিকে। ভক্তেরা সরে গিয়ে পথ করে দিল।
‘চলো, জিনাত,’ রানা ডাকল, ‘এখান থেকে যাই আমরা।’
‘দুই মিনিট। প্লিজ! এসো না, তোমার হাতটাও দেখিয়ে নিই সাধুবাবাকে দিয়ে।’
‘না।’ গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল রানা। সোহেলেরই জয় হলো। এগিয়ে গেল জিনাত রানাকে পেছনে ফেলে। উচ্চমার্গের একটা অনাবিল হাসি হাসল সোহেল।
‘বিশ্বাসে মিলয়ে হরি তর্কে বহুদূর!’
‘ঠিক, ঠিক।’ সায় দিল ভক্তেরা।
জিনাত এগিয়ে গিয়ে পদধূলি গ্রহণ করল।
‘পাহাড়ি দেশের মেয়ে তুমি, মা। সাগর থেকে উঠে এসেছ। সবই ভোলানাথের ইচ্ছে। বোম, ভোলানাথ! ভাগ্যের জুয়া খেলায় টাকা গেছে, কিন্তু মিলে গেছে মনের মানুষ, সোনার ময়না পাখি। কি? ঠিক বলিনি, মা?’
‘সব মিলে গেছে!’ ভয়-ভক্তিতে বুজে এল জিনাতের কণ্ঠস্বর। আবার একবার সাধুজীর পদধূলি গ্রহণ করল সে। একেবারে খাঁটি সাধু। ভক্তদের একজন বলল, ‘বাঙাল মুলুক থেকে এসেছেন বাবা, হিংলাজ যাবেন। আসল সাধু। সবাইকে সব কথা ঠিক ঠিক বলে দিয়েছেন।’
স্বর্গীয় জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল সাধুর মুখ। বলল, ‘কিন্তু পাখি থাকবে না, মা। উড়ে যাবে। ইচ্ছে করলেই কি কাউকে ধরে রাখা যায়? এ সুযোগ পেলেই খাঁচা কেটে উড়ে যাবে।’
সভয়ে চাইল একবার জিনাত রানার দিকে। এখনই উড়ে গেছে কি না দেখবার জন্য বোধহয়। কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, ‘একে ধরে রাখার কোনও উপায় নেই, বাবা?’
‘আছে,’ বিচিত্র এক হাসি ফুটে উঠল সাধুজীর ঠোঁটে। ত্রিশূলটা ধরল সে জিনাতের বুকের উপর। তারপর বলল, ‘জুয়াড়ি থেকে সাবধান থাকতে বলো তাকে। আর এই শিকড়টা সাথে রাখো। যখনই জল খাবে এটা একবার করে চুবিয়ে নিয়ে তারপর খাবে। বোম, ভোলানাথ।’
ভক্তিভরে কপালে ঠেকালো জিনাত যষ্টিমধুর শেকড়টা। তারপর ব্যাগে রেখে দিল সযত্নে। এক শ’ টাকার একটা নোট বের করে সাধু বাবাজির পায়ের উপর ছুঁইয়ে ঢুকিয়ে দিল কম্বলের তলায়।
আড়চোখে একবার নোটটার দিকে চেয়েই হুঙ্কার ছাড়ল বাবাজী, ‘বোম, ভোলানাথ।’ তারপর তীব্র দৃষ্টিতে একবার রানার দিকে চেয়েই ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ল চোখ বুজেঁ। মুখে প্রশান্ত হাসি।
দুপুরে হোটেল মেট্রোপোলে লাঞ্চ সেরে নিল ওরা। ওয়েট নিল দশ পয়সা দিয়ে। দুজনের জন্যে দুটো কার্ড বেরিয়ে এল। জিনাতের ওজন উঠল ১১৫ পাউণ্ড। ভবিষ্যদ্বাণী লেখা: ধৈর্য ধরুন। আপনার সুখের দিন আসিতেছে।
ওজন দেখে মাথা নেড়ে বলল জিনাত, ‘অসম্ভব। যন্ত্রে ভুল আছে। এক শ’ দশের বেশি কিছুতেই হতে পারে না।’ কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণী পড়ে অসম্ভব খুশি।
রানার ওজন ১৬০ পাউণ্ড। ভবিষদ্বাণী: সাবধান! আপনার সামনে-পিছনে শত্রু রহিয়াছে।
এটা পড়েই মুখটা কালো হয়ে গেল জিনাতের।
গাড়িতে উঠে হঠাৎ একসময়ে জিনাত বলল, ‘ওহ-হো। ভুলেই গিয়েছিলাম। আব্বাজী দশ হাজার টাকা দিয়েছে তোমাকে ফেরত দেবার জন্যে। এক্ষুণি দেব?’
‘ওঁর কাছ থেকে কেন নেব? ও-টাকা কিছুতেই নেব না আমি। ওটা তোমার জীবনে প্রবেশ করার এন্ট্রি-ফি। ওর বদলে তোমাকে পেয়েছি।’
‘টাকা দিয়ে কী কারও মন পাওয়া যায়? যা পেয়েছ, এমনি অকারণেই পেয়েছ। তুমি টাকাটা না নিলে আমি বকা খাব বাড়ি ফিরে।’
‘তা হলে আর বাড়ি ফিরো না। থেকে যাও আমার সঙ্গে চিরকাল।’
রানার হাতটা তুলে নিয়ে চুম্বন করল জিনাত।
‘তোমাকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে না হলে বেঁচে যেতাম আমি। কিন্তু আব্বাজী বলে দিয়েছে সন্ধ্যের পর বাড়ি ফিরতে হবে। তোমাদের নাকি কী কাজ আছে? কিন্তু তুমি অন্য কথা বলে ভুলিয়ে দিচ্ছ আমাকে। টাকাটা…’
‘ও-টাকা আমি নেব না, জিনাত।’
‘তোমার কসম লাগে, রানা। প্লিজ।’
‘আচ্ছা। যদি নেহায়েত ফেরত দিতেই চাও, তা হলে একটা কায়দা শিখিয়ে দিতে পারি আমি।’
‘কী রকম?’
‘ওয়ালী আহমেদ এই ক’দিন ধরে জোচ্চুরি করছে তোমার সঙ্গে। আমি জানি ওর রহস্য। ওকে প্যাঁচে ফেলে সব টাকা বোধহয় আদায় করা যায়। একটু শাস্তিও হয় ওর। আজ বিকেলে আবার যদি খেলতে বসো ওর সঙ্গে, তা হলে বাকি ব্যবস্থা আমি করতে পারি। তখন আমার টাকা ফেরত দিয়ে দিয়ো।’
‘কিন্তু ও চুরি করবে কী করে? আমারও যে সন্দেহ হয়নি তা নয়। কিন্তু সব রকম সম্ভবনাই ভেবে দেখেছি আমি। কার্ড বাটায় কোনও চালাকি নেই, কার্ডে কোনও চিহ্ন নেই। যতবার ইচ্ছে কার্ড বদলে নিয়েছি আমি, আমার নিজের কেনা নতুন প্যাকেটে খেলেছি। আশপাশে কোনও আয়না নেই। টেবিলের ওপর যে চকচকে সিগারেট কেস রেখে তাস বাটবার সময় তার সাহায্যে আমার কার্ডগুলো দেখে নেবে—তাও না। তবু কী করে যেন টের পায় সে আমার হাতে কী আছে। ব্লাফ খেলে দেখেছি, ব্লাইণ্ড খেলে দেখেছি, কিছুতেই কিছু হয় না। লোকটা বোধহয় জাদুকর।’
‘লোকটা কচু! চোর একটা। আজকে খেলেই দেখো না কেমন বারোটা বাজিয়ে দিই শালার। একটু শিক্ষা না দিলে কত লোকের যে সর্বনাশ করবে তার ঠিক নেই।’
‘যদি আজও হারি?’
‘তা হলে তোমার আব্বাজীকে বোলো আমাকে দিয়েছ টাকা।’
‘কিন্তু আমি যে আর খেলব না ঠিক করেছি।’
‘তা হলে আর আমার টাকাটা শোধ করবার কোনও উপায়ই থাকল না, জিনাত। ঠিক আমার টাকাগুলোই ফেরত নিতে পারি আমি—তোমার বাবার টাকা নয়।’
‘আচ্ছা, বেশ। আজ না হয় খেলব কিছুক্ষণ। কিন্তু কতক্ষণ খেলতে হবে? তুমি থাকবে তো সাথে? আব্বাজীর কাছে শুনলাম তিনদিন পরই চলে যাচ্ছ, তুমি করাচি থেকে। তোমাকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে পারব না আমি এই কদিন।’
‘না, জিনাত। আমি থাকব না তোমার সাথে। অবশ্য আধঘণ্টার বেশি খেলতে হবে না তোমাকে। রাজি?’
‘নিম-রাজি। বিকেলটা নষ্ট করে দেবে আমার ওই শয়তানটা। এর চাইতে টাকাগুলো যাওয়াও ভাল ছিল। কাছে পেলেই এমন সব কথা আরম্ভ করবে…’
‘আরেকটা কথা, জিনাত। আমার মনে হচ্ছে ওয়ালী আহমেদের জোচ্চুরির রহস্য আমি ভেদ করতে পেরেছি। আমার অনুমান মিথ্যেও হতে পারে। কিন্তু খেলতে খেলতে যদি দেখো ওয়ালী আহমেদ একটু অস্বাভাবিক ব্যবহার করছে, আশ্চর্য হয়ো না। চুপচাপ দেখে যেয়ো। বুঝলে?’
‘জো হুকুম, হুজুর।’
কাছে সরে এসে রানার গা ঘেঁষে বসল জিনাত। কাঁধে একটা হাত রাখল রানা। পিচ্ছিল আঁচল খসে পড়ল কোলের ওপর।
‘বিকেলে কোথায় যাওয়া যায় বলো তো, জিনা?’
‘ক্লিফটন বিচ।’
‘বেশ। তাই হবে।’ এক টুকরো মুচকি হাসি ফুটে উঠল জিনাতের ঠোঁটে।
‘এই দুপুর রোদে আর টৈ-টৈ করে ঘুরতে ভাল্লাগছে না। বিকেলের তো অনেক দেরী আছে। আবার হাসল জিনাত। রাঙা হয়ে উঠল গাল দুটো। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘চলো না, তোমার ঘরে যাই?’
ট্যাক্সি এসে থামল বিচ লাগজারি হোটেলের সামনে।