[ চ ]
যেখানে শুধু এই রকম অবমাননা, সেখান থেকে সরে এসে মরার দেশে থাকাই ভাল।
***
ওকি, তুমি এমন করে আঁতকে উঠলে কেন? আমি মূর্ছা গেছলুম বলে?—কী বলচ, আমি বিষ খেয়েছি?—তা হলে তুমিও পাগল হয়েছ! আমার চেহারা এমন নীল হয়ে গেছে দেখে তুমি হয়ত মনে করেছ, আমি বিষ খেয়েছি। না গো না, আমি পাগল হই আর যা-ই হই ওরকম দুর্বলতা আমার মধ্যে নেই। কেরোসিনে পোড়া, জলে ডোবা, গলায় দড়ি দেওয়া, বিষ খাওয়া মেয়েদের জাতটার যেন রোগের মধ্যে দাঁড়িয়েছে। আমার কপাল পুড়লেও আমি ওরকম ‘হারামি মওতকে’ প্রাণ থেকে ঘৃণা করি। এ মরায় যে এ-দুনিয়া ও আখের উভয়ের খারাবি, বোন।
কাল রাত্রে ভয় পেয়ে যখন তুই আমার কাছ হতে চলে গেলি, তার একটু পর থেকেই আমার ভেদবমি আরম্ভ হয়েছে। এই একটু আগে আমার জ্ঞান হল।
আমি বুঝতে পেরেছি বোন, আমার আর সময় নাই। আর কারুর চোখের জলের বাধা আমায় বেঁধে রাখতে পারবে না। ওঃ এত দিনে ঐ নদীর পারের অলস-ঘুমে ভরা সুরটা আমার প্রাণে গভীর স্পর্শ করে গেল। সে কত গভীর দুঃখ ভরা। পানি আমার চোখের কোল ছেয়ে ফেলেছে দিদি। তার কোমল স্পর্শ আমার চোখের পাতায় পাতায় অনুভব করছি। কী শিহরন আমার প্রতি লোমকূপে খেলে বেড়াচ্ছে।
কী পিপাসা, কী বুক-ফাটা তৃষ্ণা। একটু পানি দে তো বোন!—না না, আর চাই না। ঐ দেখতে পাচ্ছি ‘শারাবান তহুরা’ -ভরা পেয়ালা হাতে আমার স্বামী হৃদয়-সর্বস্ব দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কী সহানুভূতি-আর্দ্র করুণ স্নেহময় গভীর দৃষ্টি তাঁর। আঃ মাগো! আঃ!’