ঈশ্বরের বাগান

ঈশ্বরের বাগান

পৃথিবীপৃষ্ঠের পাঁচ ভাগের চার ভাগই জল। অলৌকিক জলযানে চড়ে সেই জল, সমুদ্র পেরিয়ে আমাদের ছোটবাবু অবশেষে ভিড়ল সেই একাংশ ভূমিতে, যেন ঈশ্বরের বাগানে। শৈশবে সোনা, কৈশোরে বিলু, জাহাজী জীবনে সে সোনাবাবু, যৌবনে থিতু হয়ে গেলContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

এক

পাগল হাঁকছে দু-ঘরের মাঝে অথৈ সমুদ্দুর। পাগল হাঁকছে—ছবি গণ্ডারের এক ঝুলে থাকে সদর দেউড়িতে। এইসব হাঁকডাক যেন কোন এক অদৃশ্য গোপন অভ্যন্তর থেকে ভেসে আসছিল। সদর দেউড়িতে এসে এমন সব শব্দে থমকে দাঁড়াতেই সে দেখল,Continue Reading

ঈশ্বরের বাগান

দুই

রাতেই অতীশ ভেবেছিল, স্ত্রীকে চিঠি লিখবে। ওর ধারণা ছিল, নির্মলা তার এটাচিতে খাম রেখে দিয়েছে। কারণ কোথাও গেলে নির্মলার এটা স্বভাব। পৌঁছেই একটা চিঠি। সময়মত চিঠি না পেলে নির্মলা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু এটাচিটাContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

তিন

রাজবাড়িতে কে জাগে। ছেদিলাল জাগে। সবার আগে ছেদিলাল সদর দিয়ে ঢোকে। আর বলে, কোন জাগে? ছেদিলাল জাগে। তার সঙ্গে বিবি থাকে। লেড়কি থাকে। আর সে মরদ ছেদিলাল। কখনও কখনও সে বলে, হামি জমাদার ছেদিলাল আছে।Continue Reading

ঈশ্বরের বাগান

চার

রাতে চন্দ্রনাথ ভাল ঘুমাতে পারেন নি। এমনিতেই সকালে ওঠার অভ্যাস। ঘুম না হলে আরও সকালে উঠে বসে থাকেন। অন্ধকার থাকে উঠোনে। গাছপালাগুলো নিঝুম। উত্তরের আকাশে বারান্দা থেকে বড় নক্ষত্রটা দেখতে পান। আজ দেখলেন বড় নক্ষত্রটাContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

পাঁচ

ফেরার পথে অতীশ বলল, ভাল ধূপকাঠি দরকার। ধূপকাঠি কিনব কুম্ভবাবু। কারখানা থেকে গাড়ি বের হতেই অতীশ কথাটা বলল। দু-পাশের বস্তি তখনও শেষ হয়নি। কালীমাতা হোমিওপ্যাথ ডিসপেনসারির সামনে গাড়ি। রাস্তার কলে বালতির লাইন। পাশে বড় বড়Continue Reading

ঈশ্বরের বাগান

ছয়

সুরেন জানালায় উঁকি দিয়ে অবাক হয়ে গেছে। আটটা বেজে গেছে কখন, এখনও ঘুমাচ্ছে। সাদা চাদরে ঢাকা শরীর। চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন তিনি। ফুল স্পিডে পাখা চলছে। সাদা সাদা ছাই উড়ছে ঘর ভর্তি। রোদ এসে পড়েছেContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

সাত

সকাল থেকেই সুরেনের মেজাজ বিগড়ে গেছে। সকালেই সে মেজ মেয়েটাকে সেই খারাপ লোকটার ঘরে যেতে দিল। লোকটা লম্বা ঢ্যাঙা। চুপচাপ জানালায় বসে থাকে। বিড়ি খায়। রেলে কাজ করে। মেসবাড়ির একটা আলগা ঘরে থাকে। জানালার একটাContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

আট

অতীশ অফিসে আজ ভাল করে কাজে মনোযোগ দিতে পারল না। ভারি অসম্মান এবং অপমানে সে কেমন প্রায় চুপচাপই ছিল। বিল ভাউচার এলে সই করে দিয়েছিল। পার্টির কাছে তাগাদার একটা লিস্ট পড়ে আছে। সে আজ টাকারContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

নয়

চার্চের ঠিক সামনে সেই পাগল। গায়ে কিম্ভুতকিমাকার পোশাক। ছেঁড়া তালিমারা উচ্ছিষ্ট জামা পাতলুনে ঢাকা শরীর। নোংরা। গালে দাড়ি। চোখ কোটরাগত। বগলে বোঁচকা। হাতে দম মাধা দমের লাঠি। ন্যাকড়া জড়ানো পালক বাঁধা। একটা লম্বা দাঁত ঠোঁটেরContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

দশ

প্রথমেই মনে হল একটা চৌকো মত মুখ তার চোখের সামনে ঘুরে গেল। তারপর বাঘের মত একটা ডোরা কাটা মুখ। অতীশ চোখ রগড়াল। জিভ ভারি হয়ে আসছে। মাথা বেশ ঝিমঝিম করছে। হাসিরাণীর ভ্রু প্লাক করা। নাকেContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

এগার

এই পাগল কতকালের চেনা। গাছের নিচে বসে ফকিরচাঁদ হরিশের দিকে তাকিয়ে থাকল। বুড়ো অথর্ব ফকিরচাঁদকে হরিশ এই সেদিন সারা দিনমান জ্বালিয়েছে। কথা নেই বার্তা নেই ঊর্ধ্ববাহু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। ফকিরচাঁদ অভিশাপ দিয়েছে, হরিশ তোর মরণContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

বার

অন্যদিনের চেয়ে চন্দ্রনাথের আজ আরও সকালে ঘুম ভেঙে গেল। দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালেন। খালি পা। খেটো ধুতি পরে আছেন। পায়ে খড়ম। বাইরে বের হয়ে উঠোনে এসে দাঁড়ালেন। পূব আকাশটা এখনও ফর্সা হয়নি। নিঃশব্দ ব্রাহ্মমুহূর্ত।Continue Reading

ঈশ্বরের বাগান

তের

এই কলকাতা শহরে তখন একজন ভোজবাজিওয়ালা খেলা শুরু করার পাঁয়তাড়া করছে। ডুগডুগি বাজছিল। বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়ে গেছে। লোকজন জমছে না। সে হাঁকছিল, খেলা শুরু হ’গেল। রূপায়াকা খেলা জাদুকা খেলা। মরণ তারের খেলা। চাকতি কাContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

চৌদ্দ

চার-পাঁচ দিন ধরে কি বৃষ্টি। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। পথঘাট ট্রাম-বাস বাড়ি-ঘর সব বৃষ্টিতে লেপ্টে ছিল। সকালের কাগজে শুধু এক খবর। দেশের কোথায় বন্যা, কোথায় ব্রিজ ভেঙে গেছে, কোথায় ট্রেন অচল হয়ে থেমে আছে তার খবরেContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

পনের

দিন ছোট হয়ে আসছিল। রাজবাড়ির ছাদের কার্নিসে সূর্য হেলে গেলে মিণ্টু টুটুল জানালায় এসে দাঁড়ায়। সামনে পাতাবাহারের গাছ, তারপর পথ, দু’পাশে রাজবাড়ির বাগান। নতুন বাড়ির পাশে রক্তকরবী গাছটায় টুটুল একটা ফড়িং আবিষ্কার করেছিল। সেই থেকেContinue Reading

ঈশ্বরের বাগান

ষোল

জানালা থেকে রোদ নেমে গেলেই কাবুলের চঞ্চলতা বাড়ে। বড় সুসময় বয়ে যাচ্ছে। বাবুর্চিপাড়া, বাবুপাড়া, কেরাণী পাড়ার ঘরগুলিতে এখন পুরুষদের সংখ্যা কম। কাজ কম্মের ধান্দায় দশটার আগেই পাড়া খালি করে তারা বের হয়ে যায়। তখন কাবুলContinue Reading