বেতাল পঞ্চবিংশতি

বেতাল পঞ্চবিংশতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত প্রথম গ্রন্থ৷ ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর লল্লুলাল রচিত হিন্দি “বেতাল পচীসী” গ্রন্থের আলোকে এই গ্রন্থ রচনা করেন৷ আপাতদৃষ্টিতে অনুবাদ মনে হলেও তিনি হুবহু অনুবাদ না করে মূল গ্রন্থের আলোকে এটি রচনাContinue Reading

উপক্ৰমণিকা

উজয়িনী নগরে গন্ধৰ্বসেন নামে রাজা ছিলেন। তাঁহার চারি মহিষী। তাঁহাদের গর্ভে রাজার ছয় পুত্র জন্মে। রাজকুমারেরা সকলেই সুপণ্ডিত ও সর্ব বিষয়ে বিচক্ষণ ছিলেন। কালক্রমে, নৃপতির লোকান্তরপ্রাপ্তি হইলে, সর্বজ্যেষ্ঠ শঙ্কু সিংহাসনে অধিরোহণ করিলেন। তৎকনিষ্ঠ বিক্রমাদিত্য বিদ্যানুরাগ,Continue Reading

প্ৰথম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! শ্রবণ কর, বারাণসী নগরীতে, প্রতাপমুকুট নামে, এক প্রবলপ্ৰতাপ নরপতি ছিলেন। তাঁহার মহাদেবী নামে প্ৰেয়সী মহিষী ও বজ্রমুকুট নামে হৃদয়নন্দন নন্দন ছিল। একদিন রাজকুমার, একমাত্র অমাত্যপুত্রকে সমভিব্যাহারে লইয়া, মৃগয়ায় গমন করিলেন। তিনি নানাContinue Reading

দ্বিতীয় উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! দ্বিতীয় উপাখ্যানের আরম্ভ করি, অবধান কর। যমুনাতীরে, জয়স্থল নামে এক নগর আছে। তথায়, কেশব নামে এক পরম ধার্মিক ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। ঐ ব্রাহ্মণের, মধুমালতী নামে, এক পরম সুন্দরী দুহিতা ছিল। কালক্রমে, মধুমালতী বিবাহযোগ্যContinue Reading

তৃতীয় উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! বর্ধমান নগরে, রূপসেন নামে, অতি বিজ্ঞ, গুণগ্ৰাহী, দয়াশীল, পরম ধার্মিক রাজা ছিলেন। এক দিন, দক্ষিণদেশনিবাসী বীরবর নামে রজঃপূত, কর্মপ্ৰাপ্তির বাসনায়, রাজদ্বারে উপস্থিত হইল। দ্বারবান, তাহার প্রমুখাৎ সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া, রাজসমীপে বিজ্ঞাপনContinue Reading

চতুর্থ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! ভোগবতী নগরীতে, অনঙ্গসেন নামে, অতি প্ৰসিদ্ধ মহীপাল ছিলেন। চূড়ামণি নামে সৰ্বগুণাকর শুকপক্ষী, সর্ব কাল, তাঁহার সন্নিহিত থাকিত। এক দিন, রাজা কথাপ্রসঙ্গে চূড়ামণিকে জিজ্ঞাসিলেন, শুক! তুমি কি কি জান। সে কহিল, মহারাজ! আমিContinue Reading

পঞ্চম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! ধারা নগরে, মহাবল নামে, মহাবল পরাক্রান্ত নরপতি ছিলেন। তাঁহার দূতের নাম হরিদাস। ঐ দূতের, মহাদেবী নামে, এক পরম সুন্দরী কন্যা ছিল। কালক্রমে, কন্যা যৌবনসীমায় উপনীত হইলে, হরিদাস মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিল,Continue Reading

ষষ্ঠ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! ধৰ্মপুর নামে অতি প্ৰসিদ্ধ নগর আছে। তথায় ধর্মশীল নামে অতি সুশীল রাজা ছিলেন। তাঁহার মন্ত্রীর নাম অন্ধক। মন্ত্রী, এক দিন, রাজাকে পরামর্শ দিলেন, মহারাজ। মন্দিরনির্মাণপূর্বক, কাত্যায়নীর প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করিয়া, প্রতিদিন, যথাবিধানে, পূজাContinue Reading

সপ্তম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! শ্রবণ কর, চম্পা নগরে চন্দ্ৰাপীড় নামে নরপতি ছিলেন। তাঁহার সুলোচনা নামে ভাৰ্যা ও ত্ৰিভুবনসুন্দরী নামে পরম সুন্দরী কন্যা ছিল। কন্যা কালক্রমে বিবাহযোগ্যা হইলে, রাজা উপযুক্ত পাত্রের নিমিত্ত অতিশয় চিন্তিত হইলেন। নানাদেশীয় রাজারাContinue Reading

অষ্টম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! মিথিলানগরে গুণাধিপ নামে রাজা ছিলেন। দক্ষিণদেশীয়, চিরঞ্জীব নামে, রজঃপূত, তাঁহার বদ্যান্যতা ও গুণগ্ৰাহকতা কীতি শ্রবণ করিয়া, কর্মের প্রার্থনায়, তাঁহার রাজধানীতে উপস্থিত হইল। কিন্তু, তাহার দূরদৃষ্টক্রমে, রাজা তৎকালে, সৰ্বক্ষণ অন্তঃপুরবাসী হইয়া, মহিলাগণের সহবাসেContinue Reading

নবম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! মগধপুর নামে এক নগর আছে। তথায় বীরবর নামে রাজা ছিলেন। তাঁহার অধিকারে, হিরণ্যদত্ত নামে, এক ঐশ্বর্যশালী বণিক বাস করিত। ঐ বণিকের, মদনসেনা নামে, এক পরম সুন্দরী কন্যা ছিল। ঋতুরাজ বসন্ত সমাগত হইলে,Continue Reading

দশম উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ। গৌড়দেশে বর্ধমান নামে এক নগর আছে। তথায়, গুণশেখর নামে, অশেষগুণসম্পন্ন নরপতি ছিলেন। তাঁহার প্রধান অমাত্য অভয়চন্দ্ৰ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। নরপতিও, তদীয় উপদেশের বশবর্তী হইয়া, বৌদ্ধধর্ম অবলম্বন করিলেন; এবং, স্বয়ং শিবপূজা, বিষ্ণুপূজা, গোদান, ভূমিদান, পিতৃকৃত্যContinue Reading

একাদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! পুণ্যপুর নগরে, বল্লভ নামে, নিরতিশয় প্রজাবল্লভ নরপতি ছিলেন। তাঁহার অমাত্যের নাম সত্যপ্রকাশ। এক দিবস, রাজা সত্যপ্রকাশের নিকট কহিলেন, দেখ, যে ব্যক্তি, রাজ্যেশ্বর হইয়া, অভিলাষানুরূপ বিষয়ভোগ না করে, তাহার রাজ্য ক্লেশপ্ৰপঞ্চ মাত্র। অতএব,Continue Reading

দ্বাদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! চূড়াপুরে, দেবস্বামী নামে, এক ব্ৰাহ্মণ বাস করিতেন। তিনি রূপে রতিপতি, বিদ্যায় বৃহস্পতি, সম্পদে ধনপতি ছিলেন। কিয়ৎ দিন পরে, দেবস্বামী, লাবণ্যবতী নামে, এক গুণবতী ব্ৰাহ্মণতনয়ার পাণিগ্রহণ করিলেন। ঐ কন্যা রূপলাবণ্যে ভুবনবিখ্যাত ছিল। উভয়েContinue Reading

ত্ৰয়োদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! চন্দ্ৰহৃদয় নগরে, রণধীর নামে, প্ৰবলপ্ৰতাপ নরপতি ছিলেন। রাজা রণধীরের প্রভাবে, প্ৰজারা চিরকাল নিরুপদ্রবে। বাস করিত। কিয়ৎ দিন পরে, নগরে গুরুতর চৌৰ্যক্রিয়ার আরম্ভ হইল। পৌরেরা, চৌরের উপদ্রবে অতিশয় ব্যতিব্যস্ত হইয়া, সকলে মিলিয়া, নৃপতিসমীপেContinue Reading

চতুর্দশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! কুসুমবতী নগরীতে সুবিচার নামে রাজা ছিলেন। তাহার, চন্দ্ৰপ্ৰভা নামে, অবিবাহিতা দুহিতা ছিল। রমণীয় বসন্তকাল উপস্থিত হইলে, রাজকুমারী, উপবনবিহারে অভিলাষিণী হইয়া, পিতার অনুমতিপ্রার্থনা করিলেন। রাজা সম্মত হইলেন; এবং রাজধানীর অনতিদূরে, যে যোজনবিস্তৃত অতিContinue Reading

পঞ্চদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! ভারতবর্ষের উত্তর সীমায়, হিমালয় নামে, অতি প্ৰসিদ্ধ পৰ্বত আছে। তাহার প্রস্থদেশে, পুষ্পপুর নামে, পরম রমণীয় নগর ছিল। গন্ধৰ্বরাজ জীমূতকেতু ঐ নগরে রাজত্ব করিতেন। তিনি, পুত্ৰকামনা করিয়া, বহু কাল, কল্পবৃক্ষের আরাধনা করিয়াছিলেন। কল্পবৃক্ষContinue Reading

ষোড়শ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! চন্দ্ৰশেখর নগরে রত্নদত্ত নামে বণিক বাস করিত। তাহার উন্মাদিনী নামে পরম সুন্দরী কন্যা ছিল। সে বিবাহযোগ্য হইলে, তাহার পিতা, তত্ৰত্য নরপতির নিকটে গিয়া, নিবেদন করিল, মহারাজ! আমার এক সুরূপা কন্যা আছে; যদিContinue Reading

সপ্তদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! হেমকূট নগরে, বিষ্ণুশৰ্মা নামে, পরম ধাৰ্মিক ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার গুণাকর নামে পুত্র ছিল। ঐ পুত্র, বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া, দূত্যক্রীড়ায় সাতিশয় আসক্ত হইল; এবং, ক্ৰমে ক্রমে, পিতার সর্বস্ব দুরোদরমুখে আহুতি দিয়া, পরিশেষে, অর্থের নিমিত্ত,Continue Reading

অষ্টাদশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ! কুবলয়পুরে, ধনপতি নামে, এক সঙ্গতিপন্ন বণিক ছিলেন। তিনি, ধনবতীনাম্নী নিজ কন্যার, গৌরীকালে, গৌরীদত্ত নামক ধনাঢ্য বণিকের সহিত বিবাহ দিলেন। কিয়ৎ কাল পরে, ধন্যবতীর এক কন্যা জন্মিল। গৌরীদত্ত কন্যার নাম মোহিনী রাখিলেন। কালক্রমে,Continue Reading