» » আট : লিখিতে বসিয়া

লিখিতে বসিয়া আমি অনেক সময়ই আশ্চর্য হইয়া ভাবি, এই-সব এলোমেলো ঘটনা আমার মনের মধ্যে এমন করিয়া পরিপাটিভাবে সাজাইয়া রাখিয়াছিল কে? যেমন করিয়া বলি, তেমন করিয়া ত তাহারা একটির পর একটি শৃঙ্খলিত হইয়া ঘটে নাই। আবারContinue Reading

» » সাত : আজ একাকী গিয়া

আজ একাকী গিয়া মুদীর কাছে দাঁড়াইলাম। পরিচয় পাইয়া মুদী একটি ছোট ন্যাকড়া বাহির করিয়া গেরো খুলিয়া দুটি সোনার মাকড়ি এবং পাঁচটি টাকা বাহির করিল। টাকা কয়টি আমার হাতে দিয়া কহিল, বহু, মাকড়ি-দুইটি আমাকে একুশ টাকায়Continue Reading

» » ছয় : নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে

নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে মা-গঙ্গার উপকূলে ইন্দ্র যখন আমাকে নিতান্ত অকারণে একাকী ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল, তখন কান্না আর সামলাইতে পারিলাম না। তাহাকে যে ভালবাসিয়াছিলাম, সে তাহার কোন মূল্যই দিল না। পরের বাড়ির যে কঠিন শাসনপাশContinue Reading

» » পাঁচ : সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে

সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে শুনিতে ইন্দ্রর দিদি হঠাৎ বার-দুই এম্‌নি শিহরিয়া উঠিলেন যে, ইন্দ্রর সেদিকে যদি কিছুমাত্র খেয়াল থাকিত, সে আশ্চর্য হইয়া যাইত। সে দেখিতে পাইল না, কিন্তু আমি পাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া থাকিয়া সস্নেহেContinue Reading

» » চার : পা আর চলে না

পা আর চলে না—এম্‌নি করিয়া গঙ্গার ধারে ধারে চলিয়া সকালবেলা রক্তচক্ষু ও একান্ত শুষ্ক ম্লানমুখে বাটী ফিরিয়া আসিলাম। একটা সমারোহ পড়িয়া গেল। এই যে! এই যে! করিয়া সবাই সমস্বরে এম্‌নি অভ্যর্থনা করিয়া উঠিল যে, আমারContinue Reading

» » তিন : বড় ঘুম পেয়েছে

বড় ঘুম পেয়েছে ইন্দ্র, বাড়ি ফিরে চল না ভাই! ইন্দ্র একটুখানি হাসিয়া ঠিক যেন মেয়েমানুষের মত স্নেহার্দ্র কোমল স্বরে কথা কহিল। বলিল, ঘুম ত পাবার কথাই ভাই! কি করব শ্রীকান্ত, আজ একটু দেরি হবেই—অনেক কাজContinue Reading

» » দুই : কয়েক মুহূর্তেই ঘনান্ধকারে

কয়েক মুহূর্তেই ঘনান্ধকারে সম্মুখ এবং পশ্চাৎ লেপিয়া একাকার হইয়া গেল। রহিল শুধু দক্ষিণ ও বামে সীমান্তরাল প্রসারিত বিপুল উদ্দাম জলস্রোত এবং তাহারই উপর তীব্রগতিশীলা এই ক্ষুদ্র তরণীটি এবং কিশোরবয়স্ক দুটি বালক। প্রকৃতিদেবীর সেই অপরিমেয় গম্ভীরContinue Reading

» » এক : আমার এই ‘ভবঘুরে’

আমার এই ‘ভবঘুরে’ জীবনের অপরাহ্ন বেলায় দাঁড়াইয়া ইহারই একটা অধ্যায় বলিতে বসিয়া আজ কত কথাই না মনে পড়িতেছে! ছেলেবেলা হইতে এমনি করিয়াই ত বুড়া হইলাম। আত্মীয় অনাত্মীয় সকলের মুখে শুধু একটা একটানা ‘ছি-ছি’ শুনিয়া শুনিয়াContinue Reading

» » প্রথম পর্ব

‘শ্রীকান্ত, প্রথম পর্ব ১৩২২ সালের মাঘ থেকে চৈত্র এবং ১৩২৩ সালের বৈশাখ থেকে মাঘ সংখ্যা পর্যন্ত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ‘শ্রীকান্তের ভ্রমণ কাহিনী’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই সময় শরৎচন্দ্র লেখক হিসাবে শ্রীশ্রীকান্ত শর্মা এই ছদ্মনাম গ্রহণContinue Reading

» শ্রীকান্ত

শ্রীকান্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জীবনচরিত মূলক উপন্যাস। তিনি এই উপন্যাসটি মোট চার খণ্ডে সমাপ্ত করেন। চারটি খণ্ড একসাথে লিখেন নি। যথাক্রমে ১৯১৭, ১৯১৮, ১৯২৭ এবং ১৯৩৩ সালে চারটি খণ্ড লেখা শেষ করেন। প্রথম পর্ব,Continue Reading

» দশ

দুর্গার এমন অবস্থা যে, কখন কি ঘটে বলা যায় না। তাহার উপর যখন তিনি পাড়ার সর্বশাস্ত্রদর্শী প্রবীণাদের মুখে শুনিলেন, তাঁহার প্রাপ্তবয়স্কা অনূঢ়া কন্যা শুধু যে পিতৃপুরুষদিগেরই দিন দিন অধোগতি করিতেছে তাহা নহে,—তাহার নিজেরও মরণকালে সেContinue Reading

» নয়

চৈত্রের শেষের কয়টা দিন বলিয়া ছোটবৌয়ের বাপের বাড়ি যাওয়া হয় নাই। মাসটা শেষ হইতেই তাহার ছোটভাই তাহাকে এবং মাধুরীকে লইয়া যাইবার জন্য আসিয়া উপস্থিত হইল। আজ ভাল দিন—খাওয়া-দাওয়ার পরেই যাত্রার সময়। অতুল বাড়ি আসিয়াছিল বলিয়াContinue Reading

» আট

মাধুরী শিশুকাল হইতেই কলিকাতায় মামার বাড়ি থাকে। মহাকালী পাঠশালায় পড়ে। ইংরাজী, বাংলা, সংস্কৃত শিখিয়াছে। গাহিতে, বাজাইতে, কার্পেট বুনিতেও জানে; আবার শিব গড়িতে, স্তোত্র আওড়াইতেও পারে। দেখিতেও অতিশয় সুশ্রী। এইবার পূজার সময় মাস-দুয়ের জন্য বাটী আসিয়াছিল;Continue Reading

» সাত

আজকাল ধরিয়া না তুলিলে দুর্গা প্রায় উঠিতেই পারিতেন না। মেয়ে ছাড়া তাঁহার কোন উপায়ই ছিল না। তাই সহস্র কর্মের মধ্যেও জ্ঞানদা যখন-তখন ঘরে ঢুকিয়া মায়ের কাছে বসিত। আজিকার সকালেও একটুখানি ফাঁক পাইয়া, কাছে বসিয়া আস্তেContinue Reading

» ছয়

সংবাদ দিবার প্রয়োজন ছিল না বলিয়াই দুর্গা চিঠি না লিখিয়াই আসিয়াছিলেন। জ্ঞানদার চেহারা দেখিয়া জ্যাঠাইমা হাসিয়াই খুন—ওলো ও গেনি, গালদুটো তোর চড়িয়ে ভেঙ্গে দিলে কে লো? ও মা, কি ঘেন্না! মাথায় টাক পড়ল কি করেContinue Reading

» পাঁচ

প্রথম অগ্রহায়ণের শীতের বাতাস বহিতেছিল। দুর্গার এক ছেলেবেলার সাথী বাপের বাড়ি আসিয়াছিল। আজ দুপুরবেলা মেয়েকে একটু ভাল দেখিয়া দুর্গা তাহার সহিত দেখা করিতে বাহির হইয়াছিলেন। পথে ডাক-পিয়নের সাক্ষাৎ পাইয়া ডাকিয়া বলিলেন, হাঁ দাশু, আমার নামেরContinue Reading

» চার

এগার বৎসর পরে দুর্গামণি হরিপালে বাপের ভিটায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন শরতের সন্ধ্যা এমনই একটা অস্বাস্থ্যকর ঝাপসা ধুঁয়া লইয়া সমস্ত গ্রামখানার উপর হুমড়ি খাইয়া বসিয়াছিল যে, তাহার ভিতরে প্রবেশ করিবামাত্রই দুর্গামণির বুকের ভিতরটা ছাঁৎ করিয়াContinue Reading

» তিন

ছোটভাই অনাথনাথকে বাধ্য হইয়া প্রাঙ্গণের প্রাচীরে একটা দ্বার ফুটাইতে হইল। অগ্রজের শ্রাদ্ধ-শান্তি হইয়া গেলে পনর-ষোল দিন পরে একদিন তিনি অফিসে যাইবার মুখে চৌকাঠের উপর দাঁড়াইয়া পান চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন, আর না বললে ত নয় বোঠান,Continue Reading

» দুই

বড়ভাই গোলোকনাথ মারা গেলে, তার বিধবা স্ত্রী স্বর্ণমঞ্জরি নির্বংশ পিতৃকুলের যৎসামান্য বিষয়-আশয় বিক্রয় করিয়া হাতে কিছু নগদ পুঁজি করিয়া, কনিষ্ঠ দেবর অনাথনাথকেই আশ্রয় করিয়াছিলেন। তাহারই বিষের অসহ্য জ্বালায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হইয়া মেজভাই প্রিয়নাথ গত বৎসর ঠিকContinue Reading

» এক

মেজমাসিমা, মা মহাপ্রসাদ পাঠিয়ে দিলেন—ধরো। কে রে, অতুল? আয় বাবা আয়, বলিয়া দুর্গামণি রান্নাঘর হইতে বাহির হইলেন। অতুল প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা গ্রহণ করিল। নীরোগ হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও। ওরে ও জ্ঞানদা, তোর অতুলদাদা ফিরেContinue Reading