সাম্প্রতিক সংযোজন
পরেশ » ছয়
রাত্রি বোধ হয় তখন আটটা হইবে, হরিচরণের বৈঠকখানা গমগম করিতেছে, গ্রামের মুরুব্বিরা আজকাল এইখানেই আসিতে আরম্ভ করিয়াছেন, অকস্মাৎ একজন আসিয়া বড় একটা মজার খবর দিল। কামারদের বাড়ির ছেলেরা বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে কলিকাতা হইতে জন-দুই খেমটাContinue Reading
পরেশ » পাঁচ
আবার ঢাক ঢোল ও কাঁসি সহযোগে ৺শুভচণ্ডীর সমারোহে পূজার আয়োজন হইতেছিল, পরেশ বাধা দিয়া কহিল, বাবা, এ-সব থাক। কেন? পরেশ কহিল, এ আমি সইতে পারবো না। তাহার বাবা বলিলেন, বেশ ত, সইতে না পার, আজকেরContinue Reading
পরেশ » চার
দ্বিধা-বিভক্ত ভদ্রাসনের এক অংশ রহিল হরিচরণ ও অপর অংশে রহিলেন গুরুচরণ ও সংসারের বহুদিনের দাসী পঞ্চুর মা। পরদিন সকালে পঞ্চুর মা আসিয়া কহিল, রান্নার সমস্ত যোগাড় করে দিয়েছি, বড়বাবু। রান্নার যোগাড়? ও—ঠিক,—চল যাচ্চি। এই বলিয়াContinue Reading
পরেশ » তিন
হেডমাস্টার মশায়ের কন্যার বিবাহ-উপলক্ষে গুরুচরণ কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করিয়া বাহির হইয়াছিলেন, হঠাৎ শুনিতে পাইলেন দিন-দুই হইল পরেশ বাড়ি আসিয়াছে, কিন্তু আসিয়াই জ্বরে পড়িয়াছে। ব্যস্ত হইয়া পরেশের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতেছিলেন, সম্মুখে ছোটভাইকে দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসাContinue Reading
পরেশ » দুই
ছোটভাই হরিচরণ এতদিন বিদেশে সামান্য চাকরিই করিতেছিল, হঠাৎ লড়াইয়ের পরে কি জানি কেমন করিয়া সে বড়লোক হইয়া চাকরি ছাড়িয়া বাড়ি চলিয়া আসিল। লোককে চড়া সুদে টাকা ধার দিতে লাগিল, স্ত্রীর নামে একটা বাগান খরিদ করিয়াContinue Reading
পরেশ » এক
মজুমদার-বংশ বড় বংশ, গ্রামের মধ্যে তাঁহাদের ভারী সম্মান। বড়ভাই গুরুচরণ এই বাড়ির কর্তা; শুধু বাড়ির কেন, সমস্ত গ্রামের কর্তা বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বড়লোক আরও ছিল, কিন্তু এতখানি শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র শ্রীকুঞ্জপুরে আর কেহContinue Reading
পরেশ » পরেশ
পরেশ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৩২ বঙ্গাব্দের (১৯২৫ খৃষ্টাব্দ) ভাদ্রে সাহিত্যিক শ্রীনলিনীরঞ্জন পণ্ডিত সম্পাদিত পূজাবার্ষিকী (শারদ) সংখ্যা ‘শরতের ফুল’ পত্রিকায়। ফাল্গুন, ১৩৪০ বঙ্গাব্দে (১৮ই মার্চ, ১৯৩৪ খৃষ্টাব্দ) এটি ‘অনুরাধা, সতী ও পরেশ’ নামক গল্পগ্রন্থে সঙ্কলিতContinue Reading
সতী » ছয়
ডাক্তারের দল অল্পক্ষণ হইল বিদায় লইয়াছেন। পারিবারিক চিকিৎসক বৃদ্ধ জ্ঞানবাবু যাইবার সময় বলিয়া গেলেন, বোধ হয় সমস্ত আফিঙটাই বার করে ফেলা গেছে,—বৌমার জীবনের আর কোন শঙ্কা নেই। হরিশ একটুখানি ঘাড় নাড়িয়া কি ভাব যে প্রকাশContinue Reading
সতী » পাঁচ
বছর দুই গত হইয়াছে। নির্মলা অনুসন্ধান করিয়া জানিয়াছে যে, খবরের কাগজের খবর ঝুটা নয়। লাবণ্য যথার্থই পাবনার মেয়ে-ইস্কুলের পরিদর্শক হইয়া আসিতেছে। আজ হরিশ একটু সকাল সকাল আদালত হইতে ফিরিয়া ছোটবোন উমাকে জানাইল যে, রাত্রের ট্রেনেContinue Reading
সতী » চার
মৃত জমিদার গোঁসাইচরণের বিধবা পুত্রবধূর সহিত অন্যান্য পুত্রদের বিষয়-সংক্রান্ত মামলা বাধিয়াছিল। হরিশ ছিল বিধবার উকিল। জমিদারের আমলা কে যে কোন্ পক্ষে জানা কঠিন বলিয়া গোপনে পরামর্শের জন্য বিধবা নিজেই ইতিপূর্বে দুই-একবার উকিলের বাড়ি আসিয়াছিলেন। আজContinue Reading
সতী » তিন
সেবার বসন্ত রোগে লোক মরিতে লাগিল খুব বেশি। হরিশকেও রোগে ধরিল। কবিরাজ আসিয়া পরীক্ষা করিয়া মুখ গম্ভীর করিলেন, কহিলেন, মারাত্মক। রক্ষা পাওয়া কঠিন। রায়বাহাদুর তখন পরলোকে। হরিশের বৃদ্ধা মাতা আছাড় খাইয়া পড়িলেন, নির্মলা ঘর হইতেContinue Reading
সতী » দুই
এই সজীব মন্ত্রের ক্রিয়া যে এত সত্বর শুরু হইবে তাহা কে জানিত! রায়বাহাদুর তখনও জীবিত, পেনশন লইয়া পাবনার বাটীতে আসিয়া বসিয়াছেন। হরিশের এক উকিল বন্ধুর পিতৃশ্রাদ্ধ উপলক্ষে কলিকাতা হইতে একজন ভাল কীর্তনওয়ালী আসিয়াছিল, সে দেখিতেContinue Reading
সতী » এক
হরিশ পাবনার একজন সম্ভ্রান্ত ভাল উকিল। কেবল ওকালতি হিসাবেই নয়, মানুষ হিসাবেও বটে। দেশের সর্বপ্রকার সদনুষ্ঠানের সহিতই সে অল্প-বিস্তর সংশ্লিষ্ট। শহরের কোন কাজই তাহাকে বাদ দিয়া হয় না। সকালে ‘দুর্নীতি-দমন’ সমিতির কার্যকরী সভার একটা বিশেষContinue Reading
সতী » সতী
সতী গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের (১৯২৭ খৃষ্টাব্দ) আষাঢ় সংখ্যা ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায়। ফাল্গুন, ১৩৪০ বঙ্গাব্দে (১৮ই মার্চ, ১৯৩৪ খৃষ্টাব্দ) এটি ‘অনুরাধা, সতী ও পরেশ’ নামক গল্পগ্রন্থে সঙ্কলিত হয়ে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ডContinue Reading
অনুরাধা » সাত
কুমার আসে নাই শুনিয়া মা আতঙ্কে শিহরিয়া উঠিলেন—সে কি কথা রে! যার সঙ্গে ঝগড়া তার কাছেই ছেলে রেখে এলি? বিজয় বলিল, যার সঙ্গে ঝগড়া সে গিয়ে পাতালে ঢুকেচে মা, তাকে খুঁজে বার করে সাধ্য কার?Continue Reading
অনুরাধা » ছয়
এমনি করিয়া এই পাঁচটা দিন কাটিল। মেয়েদের যত্নের ছবিটা বিজয়ের মনে ছিল চিরদিনই অস্পষ্ট, মাকে সে ছেলেবেলা হইতে অসুস্থ ও অপটু দেখিয়াছে, গৃহিণীপনার কোন কর্তব্যই তিনি সম্পূর্ণ করিয়া উঠিতে পারেন নাই—নিজের স্ত্রীও ছিল মাত্র বছর–দুইContinue Reading
অনুরাধা » পাঁচ
কলিকাতা হইতে কিছু তরি-তরকারি ও ফলমূল মিষ্টান্ন আসিয়াছিল; বিজয় চাকরকে দিয়া ঝুড়িটা আনিয়া রান্নাঘরের সুমুখে নামাইয়া রাখিয়া বলিল, ঘরে আছেন নিশ্চয়ই— ভিতরে হইতে মৃদুকণ্ঠে সাড়া আসিল, আছি। বিজয় বলিল, মুশকিল হয়েছে আপনাকে ডাকার। আমাদের সমাজেContinue Reading
অনুরাধা » চার
এ বাড়িতে আসিয়া একটা পুরাতন আরাম-কেদারা যোগাড় হইয়াছিল, বিকালের দিকে তাহারি দুই হাতলে পা ছড়াইয়া দিয়া বিজয় চোখ বুজিয়া চুরুট টানিতেছিল, কানে গেল—বাবুমশাই? চোখ মেলিয়া দেখিল অনতিদূরে দাঁড়াইয়া এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাহাকে সসম্মানে সম্বোধন করিতেছে।Continue Reading
অনুরাধা » তিন
বাবুদের বাড়ির সদর অধিকার করিয়া বিজয় চাপিয়া বসিল। গোটা-দুই তাহার নিজের জন্য, বাকিগুলা হইল কাছারি। বিনোদ ঘোষ কোন একসময়ে জমিদারী সেরেস্তায় চাকরি করিয়াছিল, সেই সুপারিশে নিযুক্ত হইল নূতন গোমস্তা। কিন্তু ঝঞ্ঝাট মিটিল না। প্রধান কারণ,Continue Reading
অনুরাধা » দুই
বিজয়ের পরনে খাঁটি সাহেবি পোশাক, মাথায় শোলার টুপি, মুখে কড়া চুরুট, পকেটে রিভলবার, চেরির ছড়ি ঘুরাইতে ঘুরাইতে বাবুদের বাড়ির সদর-বাটীতে আসিয়া প্রবেশ করিল। সঙ্গে মস্ত লাঠি-হাতে দু’জন হিন্দুস্থানী দরোয়ান, অনেকগুলি অনুগত প্রজা, বিনোদ ঘোষ ওContinue Reading