চৌপদী
যামিনী যামেক যায়, সেবিতে শীতল বায়,
সঙ্গে করি ললনায়, রসময় বসিয়া।
বসি নিশাকর করে, ধরিয়ে প্রেয়সীকরে,
প্রেম আলাপন করে, সরসেতে রসিয়া।।
শুন ওলো প্রাণেশ্বরি, তবু মুখ রূপ ধরি,
ওই কি গগনোপরি, রূপে মনো হরে লো।
বুঝি বা সে শশী হবে, বুঝিলাম অনুভবে,
নহিলে কে আর তবে, হেন রূপ ধরে লো।।
কিম্বা তব মুখ ছায়া, ধরি তব মুখ কায়া,
গগনে শোভিল গিয়া, আলো করি করে লো।
তা নয় তা নয় সখি, উহাতে কলঙ্ক লখি,
কলঙ্ক তো না নিরখি, ও মুখ উপরে লো।।
যদি তব মুখোপরে, সে কলঙ্ক না বিহরে,
রবে তো কেমন কোরে, ছায়ার ভিতরে লো।
দেখ লো নয়ন তারা, গগনে যতেক তারা,
কত শোভা করি তারা, সুখেতে বিহরে লো।।
যেন তব নেত্রবর, তারা হেন দীপ্তিকর,
আহা কিবা মনোহর, অন্তর শীহরে লো।
কিন্তু দেখ হায় হায়, চপল চপলা প্রায়,
তারা এক খসি যায়, কি দুখের তরে লো।
বুঝেছি বুঝি লো প্রিয়ে, তব নেত্র নিরখিয়ে,
হইয়ে ব্যথিত হিয়ে, লুকালো অন্তরে লো।
কিন্তু বিপরীত হায়, গগনের তারা যায়,
দেখিয়া পলায়ে যায়, অভিমান ভরে লো।
তায় করি দরশন, মম নেত্র তারাগণ,
অভিমানে পলায়ন, না করে না করে লো।
কিন্তু যত দেখে তায়, যত আরো দৃঢ় চায়,
কুমুদিনী যেন পায়, পতি শশধরে লো।।
যতেক বলিল পতি, না শুনিল রসবতী,
চাহিয়ে গগন প্রতি, স্থির নেত্রে রহিল।
পল্লব নাহিক সরে, বঙ্কিমাক্ষে ভাব ভরে;
এক দৃষ্টে দৃষ্টি করে, অন্য দিক্ নহিল।।
তবে মুখ অধোকরে, অতিশয় দুঃখভরে,
কম্পাইয়ে পয়োধরে, দীর্ঘশ্বাস বহিল।
তখন নয়ন তার, উজ্জ্বল হীরকাকার,
ফেলিলেক অশ্রুধার, দুঃখে পতি কহিল।।
ওলো প্রাণ প্রেমাধার, সহে না সহে না আর,
এই বিন্দু অশ্রুধার, প্রাণে নাহি সহিল।
শুনেছি প্রবলানল, জলে করে সুশীতল,
কিন্তু তব অশ্রুজল, মোরে আরো দহিল।।
চন্দ্রমুখী কয় তায়, দেখ সখা হায় হায়,
এখনি দেখিনু যায়, গগন উপরি হে।
এই দেখি যে তারায়, প্রজ্বলিত স্বর্ণ প্রায়,
অপরূপ শোভা পায়, কতবার ধরি হে।।
মুহূর্ত্তেকে মধ্য তায়, কেহ না দেখিতে পায়,
কোথা গেল হায় হায়, স্থান পরিহরি হে।
কোথা তার এ সময়, মনোহর অঙ্গ রয়,
কোথা রয় করচয়, মরি মরি মরি হে।।
কিন্তু তো তাহারি সম, জীবন যৌবন মম,
তবে কেন তার তম, মিছামিছি করি হে।
যৌবন লাবণ্য নিয়ে, তোমার হইয়ে প্রিয়ে,
আজি আছি বিনাশিয়ে, কাল যাব মরি হে।
সঙ্গে করি ললনায়, রসময় বসিয়া।
বসি নিশাকর করে, ধরিয়ে প্রেয়সীকরে,
প্রেম আলাপন করে, সরসেতে রসিয়া।।
শুন ওলো প্রাণেশ্বরি, তবু মুখ রূপ ধরি,
ওই কি গগনোপরি, রূপে মনো হরে লো।
বুঝি বা সে শশী হবে, বুঝিলাম অনুভবে,
নহিলে কে আর তবে, হেন রূপ ধরে লো।।
কিম্বা তব মুখ ছায়া, ধরি তব মুখ কায়া,
গগনে শোভিল গিয়া, আলো করি করে লো।
তা নয় তা নয় সখি, উহাতে কলঙ্ক লখি,
কলঙ্ক তো না নিরখি, ও মুখ উপরে লো।।
যদি তব মুখোপরে, সে কলঙ্ক না বিহরে,
রবে তো কেমন কোরে, ছায়ার ভিতরে লো।
দেখ লো নয়ন তারা, গগনে যতেক তারা,
কত শোভা করি তারা, সুখেতে বিহরে লো।।
যেন তব নেত্রবর, তারা হেন দীপ্তিকর,
আহা কিবা মনোহর, অন্তর শীহরে লো।
কিন্তু দেখ হায় হায়, চপল চপলা প্রায়,
তারা এক খসি যায়, কি দুখের তরে লো।
বুঝেছি বুঝি লো প্রিয়ে, তব নেত্র নিরখিয়ে,
হইয়ে ব্যথিত হিয়ে, লুকালো অন্তরে লো।
কিন্তু বিপরীত হায়, গগনের তারা যায়,
দেখিয়া পলায়ে যায়, অভিমান ভরে লো।
তায় করি দরশন, মম নেত্র তারাগণ,
অভিমানে পলায়ন, না করে না করে লো।
কিন্তু যত দেখে তায়, যত আরো দৃঢ় চায়,
কুমুদিনী যেন পায়, পতি শশধরে লো।।
যতেক বলিল পতি, না শুনিল রসবতী,
চাহিয়ে গগন প্রতি, স্থির নেত্রে রহিল।
পল্লব নাহিক সরে, বঙ্কিমাক্ষে ভাব ভরে;
এক দৃষ্টে দৃষ্টি করে, অন্য দিক্ নহিল।।
তবে মুখ অধোকরে, অতিশয় দুঃখভরে,
কম্পাইয়ে পয়োধরে, দীর্ঘশ্বাস বহিল।
তখন নয়ন তার, উজ্জ্বল হীরকাকার,
ফেলিলেক অশ্রুধার, দুঃখে পতি কহিল।।
ওলো প্রাণ প্রেমাধার, সহে না সহে না আর,
এই বিন্দু অশ্রুধার, প্রাণে নাহি সহিল।
শুনেছি প্রবলানল, জলে করে সুশীতল,
কিন্তু তব অশ্রুজল, মোরে আরো দহিল।।
চন্দ্রমুখী কয় তায়, দেখ সখা হায় হায়,
এখনি দেখিনু যায়, গগন উপরি হে।
এই দেখি যে তারায়, প্রজ্বলিত স্বর্ণ প্রায়,
অপরূপ শোভা পায়, কতবার ধরি হে।।
মুহূর্ত্তেকে মধ্য তায়, কেহ না দেখিতে পায়,
কোথা গেল হায় হায়, স্থান পরিহরি হে।
কোথা তার এ সময়, মনোহর অঙ্গ রয়,
কোথা রয় করচয়, মরি মরি মরি হে।।
কিন্তু তো তাহারি সম, জীবন যৌবন মম,
তবে কেন তার তম, মিছামিছি করি হে।
যৌবন লাবণ্য নিয়ে, তোমার হইয়ে প্রিয়ে,
আজি আছি বিনাশিয়ে, কাল যাব মরি হে।
-‘সংবাদ প্রভাকর’, ২৮মে, ১৮৫২