» » হেমন্ত বর্ণনাছলে স্ত্রীর সহিত পতির কথোপকথন

বর্ণাকার

পতি

লঘু ত্রিপদী

রাখ রাখ প্রিয়ে,             বসনে ঢাকিয়ে,
জলদ চাঁচর চয়।
দেখে জলধর,               ভয়ে শশধর,
হুতাশেতে ম্লান হয়।।
আরো মোর প্রাণ,             ভয়ে ম্রিয়মাণ,
দেখে নিজ প্রাণ শশী।
কুমুদিনী সতী,              ম্লান প্রাণপতি,
বিষাদিত জলে পশি।।
পেয়ে মনস্তাপ,             দেহ অভিশাপ,
যে সতিনী তব কোলে।
যে সতিনী তার,           তাহারি প্রকার,
ডুবিয়ে মরিবে জলে।।
তাহে এই ভয়,            পাছে সিদ্ধি হয়,
যে পাপ কুমুদিনীর।
সতিনী তাহার,            নয়নে তোমার,
পাছে সখি বহে নীর।।
তাই লো সুখদে,          জলদ জলদে,
কর কর আচ্ছাদন।
নিশাপতি তবে,           ভীত আর নবে,
শাপ হবে বিমোচন।।

নারী

যে ছিল তপন,               খর বিলক্ষণ,
যখন শরদ দিবা।
এ যে দিনপতি,            তেজে ক্ষীণ অতি,
তাহার কারণ কিবা।।

পতি

দ্বাদশ তপন,             বিহরি গগন,
বিতরিত খর কর।
কিন্তু খসি পরে,          দশ দিবাকরে,
গেল তব নখোপর।।
এক রবি খসি,         তব ভালে পশি,
সিন্দূর বিন্দুর রূপে।
দ্বাদশ দিনেশ,            এক অবশেষ,
উজ্জ্বল হবে কি রূপে।।

নারী

কেন হে কমল,          ত্যজিল কমল,
হেমন্তের আগমনে।
পাছে বা পলায়,        প্রাণ পদ্ম তায়,
এ ভয় তা দরশনে।।

পতি

করাল মরাল,         মনে জানি কাল
কমল কমল হরি।
ভয় যুক্ত হিয়ে,         রহে পলাইয়ে,
তোমারে আশ্রয় করি।।
হেরিয়ে নখরে,       পতি দিবাকরে,
তাহার নিকটে যায়।
তোমার গমন,        হংস নিদর্শন,
দেখিলেক সে তথায়।।
ভয়ে হয়ে ভীত,      পলাতে চিন্তিত,
ত্রাণ স্থানে নিরুপায়।
হইয়ে অগতি,        ত্যজে বসুমতী,
শেষেতে পলায় যায়।।

নারী

শরদ স্বভাব,        ত্যজিব স্বভাব,
ধরিল মলিন ভাব।
অতি মনোহর,      পদার্থ নিকর,
হইলেক রসাভাব ||
বিধুম্লান অতি,      দীন দিনপতি,
নলিনী মলিনী হয়।
আর তরুদলে,     ফল নাহি ফলে,
পূর্ণ পক্ক পত্রচয় ||

পতি

না লো প্রাণ সখি,   বিটপি নিরখি,
হেমন্তে তোমায় প্রাণ।
নব পল্লবিত,      ফলে সুশোভিত,
তুমি তরু করি জ্ঞান ||
অধরেতে তব,                নবীন পল্লব,
পল্লবিত তরু তাই।
সেই তরুফল               ও দুই শ্রীফল,
তোমাতে দেখিতে পাই ||

নারী

কেন কেন কান্ত,             হয়েছে একান্ত
নীরব কোকিলকুল।
কি হেতু বল না,           না করে কলনা,
হিমে কেন প্রতিকূল ||

পতি

শুন প্রাণ বলি,               কোকিল কাকলী,
যেহেতু হইল হারা।
মধু্স্বরে তব,                  হইয়ে নীরব,
তোমারে শাঁপিছে তারা ||
তব বিধুমুখ,                 হইবেক মূক,
যেমন তাহারা হয়।
তাই বুঝি প্রাণ,             যবে কর মান,
ও মুখ নীরবে রয় ||

নারী

তাড়ায়ে মলয়,   কাল হিমালয়,
এলো কোথা হোতে বল।
হয় অনুমান,    জনমের স্থান,
সে গিরি অতি শীতল ||

পতি

মোর বোধ হয়,   এলো হিমালয়,
কুচ গিরি হোতে তোর।
কেন না সে স্থল,      বড়ই শীতল,
স্নিগ্ধ কর হৃদি মোর ||

নারী

কোথায় মলয়,    এমন সময়,
রহিলেক লুকাইয়ে।
হেরি হিমালয়ে,  বোধ হয় ভয়ে,
সে গেল বা পলাইয়ে ||

পতি

হিমালয় ভয়,     ত্রিভুবন ময়ে,
আর তার স্থান নাই।
পায় তব পাশ,    আশ্রয় নিশ্বাসে,
এ সৌরভ তথা তাই ||

নারী

কেন হে নীহার,   বর্ষে অনিবার,
গগনে রজনীভাগে।
কিবা শোভা মরি,     সদা ইচ্ছা করি,
রাখিব নয়ন আগে ||

পতি

পতি শশধরে,         দরশন করে,
রজনী মলিন ভাব।
বলে কেন নাথ,      হেরি অকস্মাৎ,
হোলে হাস্যরসাভাব ||
করি অপরাধ.         দিয়েছে বিষাদ,
বুঝি এই অভাগিনী।
কাতরে নাথরে,       এ মিনতি করে,
শেষে কাঁদে সে রজনী ||
সে রোদন ছলে,      নয়নেরি জলে,
নীহার বর্ষণ করে।
এই সে কারণ,         নীহার বর্ষণ,
কহে যত মূঢ় নরে ||
কিন্তু আমি বলি,      সে মিথ্যা কেবলি,
সত্য যাহা আমি কই।
শশাঙ্ক গগনে,           ও মুখ দর্শনে,
মলিন কাঁদিতেছে ওই ||
যত তারাগণে           তোমার নয়নে,
কাঁদিতেছে অবিরত।
নয়নের জলে,           নীহারের ছলে,
পতন করিতে রত ||

নারী

হয়েছে শীতল,          দেখিতেছি জল,
পুন শীত কি কারণ।

পতি

বুঝি কি কারণে,        কুরঙ্গ নয়নে,
কেঁদেছিল প্রাণধন ||
সেই অশ্রুজল,          বহি বক্ষস্থল,
কুচ হিমালয় শৈল ||
সে গিরি পর্শনে,        নয়ন জীবনে,
অতিশয় হিম হৈল ||
সেই বিন্দু জল,        পড়িয়ে ভূতল,
জলে গিয়ে মিশাইল।
অশ্রু পরশনে,         জল সেইক্ষণে,
অতি শীতল হইল ||
-‘সংবাদ প্রভাকর’, ১০ জানুয়ারি, ১৮৫৩

Leave a Reply