দুঃসাহসিক
এক
সুপারসোনিক জেট পনেরো মিনিটের জন্যে নামল ক্যান্টনে। রি-ফুয়েলিং দরকার। রানার রিস্টওয়াচে তখন বাজে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটা। সাংহাই পৌঁছতে পৌঁছতে বেজে যাবে সোয়া চারটে। ওখানকার সময় অবশ্য সোয়া ছয়। সাংহাই নগরীতে সন্ধ্যা নামবে তখন। রানা ভাবল, একটা সোনালী বিকেল বাদ পড়ল ওর জীবন থেকে, দু’ঘণ্টা আয়ু কমে গেল ওর—আবার পূরণ হবে কিনা কে জানে।
আজই সকালে বেইজিং থেকে কন্ট্যাক্ট করা হয়েছে পি.সি.আই. চীফকে। ছবি এসেছে রেডিও মারফত। ছবি দেখে চমকে উঠেছেন রাহাত খান। রোববার ছুটির দিনেও অফিসে ডেকে পাঠিয়েছেন মাসুদ রানাকে সিনক্রাফোনের সাহায্যে। ক্যান্টন থেকে সুপারসোনিক জেট অবশ্য এসে পৌঁচেছে আরও পরে—বেলা সাড়ে এগারোটায়।
ছবি দেখে রানাও কম অবাক হয়নি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল সে ছবিটা। ঘন কালো চুল, ক্লিন শেভ করা বাঙালী চেহারা। দেখতে ভালই। চোখ দুটো ভাসা ভাসা। চাহনিতে একটা নিষ্পাপ সারল্য। কেবল এইখানে একটু তফাৎ, তাছাড়া অবিকল রানারই প্রতিচ্ছবি।
ছবি থেকে চোখ তুলেই রানা দেখল পুরু কাঁচ ঢাকা সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপাশ থেকে ছুরির ফলার মত তীক্ষ্ণ একজোড়া চোখ নীরবে লক্ষ করছে ওর মুখ। মুখ খুললেন পাকিস্তান কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের সুযোগ্য কর্ণধার মেজর জেনারেল রাহাত খান।
‘ছবিটা এসেছে বেইজিং থেকে। সেই সাথে এসেছে চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের হেড অ্যাডমিরাল হো ইন-এর কাছ থেকে সাহায্যের অনুরোধ। মোটামুটি এই রকম দেখতে আমাদের ইন্টেলিজেন্সের একজন দুঃসাহসী বাঙালী লোক চাই ওদের গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক কোনও কাজের জন্যে। ছবিটা তোমার চেহারার সাথে অনেকটা মিলে যাচ্ছে।’
‘তাই তো দেখছি, স্যার,’ বলল রানা। একটু থেমে জিজ্ঞেস করল, ‘তা কাজটা কি? কি ধরনের সাহায্য চাইছে, স্যার?’
‘সে-কথা জানায়নি। কিন্তু ওদের ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যাপার হবে। আধঘণ্টা আগেই ক্যান্টন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে ওদের একখানা সুপারসোনিক জেট। আমাদের উত্তর পৌঁছতে যেটুকু দেরি হবে সেটুকু সময়ও ওরা নষ্ট করতে চায় না। যদি এই চেহারার লোক পাওয়া না যায় তাহলে ফিরে যাবে জেট—কিন্তু যদি পাওয়া যায়, তাহলে যে সময়টুকু বাঁচল, বোঝা যাচ্ছে, সেটুকুর দাম ওদের কাছে অনেক। শুধু শুধু এত তাড়াহুড়ো করবার লোক নন অ্যাডমিরাল হো ইন্। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যাপার আছে এর পেছনে।
রানার মাথার ওপর দিয়ে পেছন দিকে দেয়াল ঘড়িটার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবার আরম্ভ করলেন রাহাত খান।
‘চীন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। অসময়ের বন্ধু। শুধু মুখেই নয়, কাজেও। বহুবার আমাদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের সিক্রেট সার্ভিস—বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। আমরাও যথাসাধ্য সাহায্য করেছি ওদের। কয়েকবার উদ্ধার করে দিয়েছি ওদের এজেন্টদের শত্রু রাষ্ট্রে ধরা পড়বার মুখে। কিন্তু এই প্রথম ওরা সরাসরি সাহায্য চাইল আমাদের কাছে। নিশ্চয়ই মস্ত ঠেকা ঠেকেছে কোথাও। এই অবস্থায় লোক থাকতেও যদি আমরা ফিরিয়ে দিই ওদের, তাহলে আমাদের মুখ থাকে না। আর যদি এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করি তাহলে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়। আমাদের দ্বারা চীন যদি উপকৃত হয় তাহলে আমরাও অসঙ্কোচে একটা জিনিস চাইতে পারব ওদের কাছে। ওরা দেবেও।
‘কি জিনিস?’
‘ওদের তৈরি হাইলি ডেভেলপড় ক্রিপটোগ্রাফির মেশিন। চীনারা এ ব্যাপারে গ্র্যাণ্ডমাস্টার হয়ে গেছে। আইবিএম-এর চাইতে হাজার গুণে ভাল এই মেশিন তৈরি করে বছরখানেক ধরে পৃথিবীর সমস্ত ওয়্যারলেস ট্রাফিক ক্র্যাক করে ডিকোড করছে ওরা। সমস্ত চ্যানেল—ন্যাভাল, এয়ার ফোর্স, ডিপ্লোমেটিক, সবকিছুর আঁটি ভেঙে শাঁস খাচ্ছে ওরা। মাঝে মাঝে ছিটেফোঁটা প্রসাদ আমরা পাই অবশ্য, কিন্তু তাতে চলে না। ওই মেশিনটা আমাদের চাই-ই চাই। কিন্তু সবই এখন নির্ভর করছে তোমার রাজি হওয়া না-হওয়ার ওপর। ভাল করে ভেবে-চিন্তে উত্তর দাও। যাবে?’
রাহাত খানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রানার মুখের ওপর এসে স্থির হলো। কান দুটোতে একটু উত্তাপ অনুভব করল রানা। অস্বস্তি বোধ করল কেমন যেন।
‘আপনি কি বলেন, স্যার?’ পাল্টা প্রশ্ন করল সে।
‘আমি কিছুই বলব না। তুমি জানো, কোনও বন্ধু ভাবাপন্ন দেশ সাহায্য চাইলে সাহায্য করাটাই ভদ্রতা। তার ওপর ওদের কাছে আমরা অনেক ব্যাপারে ঋণীও আছি। যদিও আগামী একমাসের মধ্যে তোমার জন্যে কোনও অ্যাসাইনমেন্ট নেই, তবু নিছক ভদ্রতা করতে গিয়ে আমি তোমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। চাইও না। তাছাড়া অন্য একটা দেশকে সাহায্য করতে তুমি বাধ্য নও। তোমার ব্যক্তিগত ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে সেটা। ইচ্ছে করলে এড়িয়েও যেতে পারো।’
‘তাতে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরবে না?’
‘না। সাহায্যের অনুরোধ ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অনেক কৌশল আছে। তাছাড়া কোনও রকম অবলিগেশনের মধ্যেও আমরা নেই যে সাহায্য করতেই হবে। এটা সম্পূর্ণ গুড-উইলের ব্যাপার। তবে…’ মাথাটা একটু কাত করে তর্জনী দিয়ে চোখের নিচটা একটু চুলকে নিলেন রাহাত খান। ‘এটাও ঠিক, মেশিনটা পেলে আমাদের বড় উপকার হয়।’
রানা বুঝল মনে মনে রাহাত খান চাইছেন যেন রানা রাজি হয়ে যায়— কিন্তু কি কাজ, কতখানি বিপদ, ইত্যাদি ভাল মত না জেনে অনুরোধ করতে ভরসা পাচ্ছেন না। পাছে কি হতে কি হয়ে যায়— চিরকাল পস্তাতে হতে পারে। কিন্তু টিটাগড়ের অপারেশন গুড-উইলে চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের কাছে রানা ব্যক্তিগতভাবে ঋণী হয়ে আছে। ওরা ঠিক সময় মত সাহায্য না করলে জয়দ্রথ মৈত্রের হাত থেকে বাঁচবার কোনও উপায়ই ছিল না ওর। তাই মন স্থির করে নিল সে। দেশে যখন কাজ নেই কোনও, বিদেশও ঘুরে আসা যাবে এই সুযোগে।
‘আমি রাজি আছি, স্যার। ওদের জেট পৌঁছবে ক’টায়?’
একটা কালো মেঘ যেন সরে গেল রাহাত খানের মুখের ওপর থেকে। উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ দুটো। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
‘সাড়ে এগারোটা। তুমি তাহলে এক্ষুণি রেডি হয়ে নাও, রানা। আমি পিকিংকে জানিয়ে দিচ্ছি। যাও, কুইক।’
সাংহাই এয়ারপোর্টের প্রোটেক্টেড এরিয়াতে রানওয়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে একখানা কালো ক্যাডিলাক। রানা সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সহাস্যে এগিয়ে এল মধ্যবয়সী একজন চীনা ভদ্রলোক। পরনে দামী সার্জের স্যুট, মাথায় ফেল্ট হ্যাট, কালো অক্সফোর্ড-শু পায়ে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে পরিষ্কার ইংরেজিতে বলল, ‘আমি অ্যাডমিরাল হো ইন্। প্লীজড্ টু মিট ইয়ু, মিস্টার মাসুদ রানা।’
তাজ্জব বনে গেল রানা। ইনিই অ্যাডমিরাল হো ইন্! চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের চীফ! প্রত্যাভিবাদন করতেও ভুলে গেল সে। বলে ফেলল, ‘আপনি না বেইজিং ছিলেন আজ সকালে?’
‘হ্যাঁ।’ মৃদু হাসলেন অ্যাডমিরাল। ‘কেবল আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবার জন্যেই আমি বার্তা পাওয়া মাত্রই এই আটশো মাইল চলে এসেছি। আপনি এসেছেন এক মহান দেশ থেকে। আপনি আমাদের সম্মানিত রাষ্ট্রীয় অতিথি। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপনীয় বলে আপনাকে উপযুক্ত অভ্যর্থনা জানাতে পারছি না আমরা। সেজন্যে আমি নিজে এসেছি এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে।’
রানার জানা আছে, জাপানী আর চীনারা বিনয়ের অবতার। সত্যি সত্যিই কি কেবল তার সম্মানের জন্যেই এতবড় একজন লোকের পক্ষে আটশো মাইল ছুটে আসা সম্ভব? মনে হয় না, আবার হতেও পারে। পাকিস্তান সম্পর্কে যে উঁচু ধারণা পোষণ করে ওরা, তাতে এই ঘটনা একেবারে অসম্ভব না-ও হতে পারে। যাই হোক, অ্যাডমিরাল যে ওই ছবির ব্যাপারেই এতদূর এসেছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বুঝল রানা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনার সাথে জড়িয়েছে সে নিজেকে। মহারথীদের নিয়ে কারবার। সামনে কি অপেক্ষা করছে কে জানে!
‘চলুন, মিস্টার মাসুদ রানা। আপনার জন্যে সাংহাইয়ের সেরা হোটেলের সুইট রিজার্ভ করা হয়েছে। সেখানেই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন আমাদের সার্ভিসের সাংহাই-চীফ কর্নেল লু সান। আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। গাড়িতেই যতখানি সম্ভব অবস্থাটা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করব, বাকিটা হোটেলে পৌঁছে জানতে পারবেন।
গোধূলির শেষ রঙ মুছে যাচ্ছে সাংহাইয়ের আকাশ থেকে। একটা দুটো করে জ্বলে উঠছে তারার প্রদীপ। বিস্তীর্ণ অ্যারোড্রোমের সিমেন্ট করা রানওয়েটা আবছা হয়ে আসছে। উজ্জ্বল বাতি জ্বলছে দূরে এয়ারপোর্ট বিল্ডিংটায়। একটা প্যাসেঞ্জার প্লেন নামছে দূরে ছবির মতন।
ক্যাডিলাকের পেছনের সীটে উঠে বসল রানা এবং অ্যাডমিরাল। রানার এয়ার ব্যাগ এবং অ্যাটাচি কেস্টা ড্রাইভারের পাশে সীটে রাখা হলো। ছুটে চলল ওরা শহরের দিকে দুটো চেক পোস্টে আধ মিনিট করে দাঁড়িয়ে।
‘আমরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বেশ অনেকদূর অগ্রসর হয়ে গেছি, জানেন বোধহয়। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছি, এখন মহাশূন্যে রকেট পাঠাবার ব্যবস্থা করছি। আমাদের এই দ্রুত অগ্রগতি অনেকের কাছে চক্ষুশূলের মত ঠেকে। আমাদের সমূলে ধ্বংস করতে সদা সচেষ্ট হয়ে আছে বহির্বিশ্বের কয়েকটি বৃহৎ শক্তি; তাই এটাকেই আরও জোরে আঁকড়ে ধরেছি আমরা। এছাড়া আমাদের টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ত। যাক, এই নিউক্লিয়ার গবেষণায় একটা ধাতু অপরিহার্য। জানেন সেটা কি?’
‘ইউরেনিয়াম।’
‘ঠিক। বাইরে থেকে আমরা এই ইউরেনিয়াম জোগাড় করতে পারিনি। কেউ দেয়নি আমাদের ইউরেনিয়াম। তাই বহু খোঁজাখুঁজির পর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অ্যানকিং-এ খনি আবিষ্কার করেছি আমরা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন? চার ভাগের তিনভাগ ইউরেনিয়ামই চুরি হয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত কোনও কৌশলে। বহু চেষ্টা করেও আমরা এই চুরি বন্ধ করতে পারিনি। বহু রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, এমন কি দুই-দুইবার পুরো স্টাফ বদলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাগজে কলমে যে হিসেব দেখা যায়, মাল পাওয়া যায় তার চারভাগের একভাগ। কি উপায়ে যে এই চুরিটা চলছে তা আমাদের ধারণার বাইরে।
একমিনিট চুপ করে থেকে মনে মনে গুছিয়ে নিলেন অ্যাডমিরাল কথাগুলো। রানা মাত্র ভাবতে শুরু করেছে, চুরি হচ্ছে তো সে কি করবে, এই ব্যাপারেই কি ওকে ডেকে আনা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে—এমন সময় আবার আরম্ভ করলেন অ্যাডমিরাল হো ইন্।
‘আপনাকে এই চোর ধরবার জন্যে আমরা নিমন্ত্রণ করিনি, মি. মাসুদ রানা। অন্য কাজে এনেছি। আগে ভূমিকাটুকু সেরে নিই। যা বলছিলাম, এই ইউরেনিয়াম। একটা ব্যাপার আমরা কিছুদিন হলো পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি—ইউরেনিয়াম আসলে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাইরে। অ্যানকিং থেকে সাংহাই, সেখান থেকে ক্যান্টন, তারপর বুঝতেই পারছেন—হংকং। অত্যন্ত ক্ষমতাশালী কোনও গ্যাঙ পরিচালনা করছে এই চুরি এবং স্মাগলিং। এবং শুনলে আশ্চর্য হবেন, রাজনৈতিক কারণে এই দলকে অপরিমিত অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে এবং দশগুণ বেশি দাম দিয়ে এ ইউরেনিয়াম কিনে নিচ্ছে কোনও এক বা একাধিক ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র। নাম না বললেও নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না আপনার। যারা আমাদের পারমাণবিক শক্তি অর্জনকে সুনজরে দেখছে না, এটাকে ওদের কর্তৃত্ব এবং নিরাপত্তার ওপর স্পষ্ট হুমকি বলে মনে করছে, তারা আমাদের এই অগ্রগতি প্রতিরোধ করতে সর্বস্ব দিতেও প্রস্তুত। কেবল অর্থ নয়—বুদ্ধি দিয়ে, শক্তি দিয়ে, সর্বপ্রকারে তারা সাহায্য করছে ওই গ্যাঙটিকে। আমরা কিছুতেই সুবিধে করে উঠতে পারছি না। আমাদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।’
শহরে প্রবেশ করবার কয়েক মিনিট আগে পকেট থেকে একটা চশমা বের করে দিলেন অ্যাডমিরাল রানাকে। চশমার সাথেই একটা নকল নাক এবং নাকের নিচে পুরু একজোড়া গোঁফ লাগানো। সেটা পরে নিয়ে রিয়ার ভিউ মিররে নিজের চেহারাটা দেখে হেসে ফেলল রানা। ভাবল, গোঁফ রাখলে নেহায়েত মন্দ দেখাত না ওকে। প্রশস্ত পীচঢালা আলোকিত রাজপথ ধরে মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলল কালো ক্যাডিলাক।
‘তা, আমি আপনাদের কি সাহায্যে লাগতে পারি?’ হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল রানা। ওর কাজটাই এখনও শোনা হয়নি।
‘সেই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম। সাংহাইয়ে এই মুহূর্তে কয়েক আউন্স ইউরেনিয়াম তৈরি আছে। হংকং যাবে সেগুলো। আমাদের সাংহাই-চীফ জানতে পেরেছেন কে এগুলো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই লোকটির ওপর নজর রাখবার জন্যেই বা কে যাচ্ছে তার সঙ্গে।’
‘তাদের নিশ্চয়ই অ্যারেস্ট করা হয়েছে?’
‘একজনকে করা হয়েছে। অপর জনকেও গ্রেপ্তার করা যেত, কিন্তু সেটা করলে আমাদের আসল উদ্দেশ্যটা নষ্ট হয়ে যাবে। এদের ধরে যে কথা আদায় করা যাবে না তা ভাল করেই জানা আছে আমাদের। তাই আমাদের নিজেদের একজন লোককে পাঠাতে চাই সেই অ্যারেস্টেড্ লোকটার বদলে।’
‘তারপর?’
‘তারপর সেই মাল স্মাগ্ল্ করে নিয়ে যাবে আমাদের লোকটি হংকং-এ।’