» » দুঃসাহসিক

বর্ণাকার

কাজী আনোয়ার হোসেন

দুঃসাহসিক

বার

অন্ধকার।

মনে হচ্ছে কিভাবে যেন সমুদ্রের অতল গভীরে তলিয়ে গেছে রানা। হাঙ্গরেরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে ওর দেহ। নোনা পানি লেগে জ্বালা করছে অসম্ভব রকম। শেষ চেষ্টাও কি একবার করে দেখবে না সে? কতখানি নিচে নেমে গেছে সে সমুদ্রের মধ্যে? এখান থেকে আবার ওপরে ওঠা যাবে তো?

ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসছে ওর। মস্ত দুটো হাঙ্গর কামড়ে ধরল ওর দুই হাত। দুর্বলভাবে চেষ্টা করল সে হাত দুটো ছাড়াবার। কানের কাছে ফিস ফিস করে কেউ বলল, ‘রানা! রানা!’

অনেক চেষ্টায় চোখ খুলল রানা। অন্ধকার কোথায়? একাগ্র দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে মায়া ওয়াং। দুই হাত ধরে ঝাঁকিয়ে ওর জ্ঞান ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করছে সে। রানাকে চোখ মেলে চাইতে দেখে টেনে উঠিয়ে বসাবার চেষ্টা করল সে, কিন্তু পারল না। আবার ঝিমিয়ে আসছে দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠল মায়া। আবার ডাকল, ‘রানা!’

এবার যেন বুঝতে পারল রানা। হামাগুড়ি দিয়ে উঠে বসবার চেষ্টা করল। আহত জন্তুর মত মাথাটা ঝুলে পড়েছে নিচের দিকে। হাত দুটো কাঁপছে থর থর করে। কোনমতে চার হাত পায়ের সাহায্যে পালাবার চেষ্টা করছে সে কারও কাছ থেকে। তিন হাত গিয়েই পড়ে গেল সে মেঝের ওপর।

‘রানা! পালাতে হবে আমাদের, এক্ষুণি। হাঁটতে পারবে না?’

‘দাঁড়াও,’ নিজের মোটা কর্কশ গলা শুনে নিজেই একটু অবাক হলো রানা। মায়া শুনতে পায়নি মনে করে আবার বলল, ‘দাঁড়াও, দেখছি।’

সারা অঙ্গে অসহ্য ব্যথা। সর্বশরীর দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরছে। মাথার মধ্যে হাতুড়ি পিটছে যেন কেউ। হাত-পা নেড়ে চেড়ে দেখল, ভাঙেনি কিছু। দেখতেও পাচ্ছে, শুনতেও পাচ্ছে। কিন্তু নড়তে ইচ্ছে করছে না ওর। ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। ব্যথাটা মুচড়ে মুচড়ে উঠছে ভেতর থেকে। মৃত্যু হলে যদি এই ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যেত তাহলে সে-ও বরং ভাল ছিল। দুটো স্পাইক বসানো বক্সিং গ্লাভস্ ভেসে উঠল চোখের সামনে— সেই সাথে একটা হান্টার উঠছে—নামছে।

চ্যাঙ আর লোবোর কথা মনে আসতেই বাঁচবার ইচ্ছেটা প্রবল হলো রানার। বল্ল, ‘ওরা কোথায়?’

মায়া হাঁটু গেড়ে বসেছে পাশে। রানা দেখল মায়ার গায়েও কয়েকটা স্পাইকের ক্ষতচিহ্ন। উঠে বসল সে।

‘ওরা এই দশ মিনিট আগে বেরিয়ে গেছে ঘর থেকে। একটা টেলিফোন এসেছিল একটু আগে। ব্যস্ত হয়ে চলে গেছে। যে-কোনও মুহূর্তে আবার এসে পড়তে পারে। জলদি, রানা, পালাতে হবে আমাদের!’

‘টেলিফোন এসেছিল কিসের?’

‘ঠিক বোঝা গেল না। সাবমেরিন, ডিনামাইট এসব বলছিল ওরা। খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল চ্যাঙ। লোবোকে ডেকে কানে কানে কি পরামর্শ করে তিনজনই বেরিয়ে গেছে ঘর থেকে। আমি অনেকক্ষণের চেষ্টায় হাতের বাঁধন আলগা করে এনেছিলাম, চটপট সেটা খুলে তোমার বাঁধন খুলে দিয়েছি।’

সাবমেরিন, ডিনামাইট শুনেই রানা চট করে ঘড়ির দিকে চাইল। বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। অর্থাৎ ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই বাড়িটা ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই সাথে শেষ হয়ে যাবে তারা দু’জনও। কোনও সূত্রে এই খবরটা জানতে পেরেই সরে পড়েছে চ্যাঙ তার দলবলসহ। মায়ার শেষের কথাগুলো আর শুনতে পেল না সে। দ্রুত চিন্তা করে কর্তব্য স্থির করে ফেলল।

‘এখান থেকে এক্ষুণি পালাতে হবে, মায়া। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে বাড়িটা। আমরাও মারা পড়ব। আমি তো হাঁটতে পারব না—তুমি এগোও, তোমার পেছন পেছন হামাগুড়ি দিয়ে আমিও চেষ্টা করব এগোতে। কোনদিকে যেতে হবে এখন? কোন্ পথে সব চাইতে দূরে সরে যাওয়া যাবে এ বাড়ি থেকে?’

কথাটার গুরুত্ব বুঝতে পারল মায়া। বলল, ‘আমার সব কিছু চেনা আছে। তুমি এসো আমার পেছন পেছন।’

কিছুদূর হামাগুড়ি দিয়ে এগোল রানা, হাঁটুতে খুব লাগছে। পায়ের পাতায় তো ওরা জখম করতে পারেনি—উঠে দাঁড়াতে পারলে হোত। উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিল রানা, মায়া ফিরে এসে সাহায্য করল ওকে। কয়েক মুহূর্ত চোখে শর্ষে ফুল দেখল রানা। একটু পরে আবার পরিষ্কার দেখতে পেল সবকিছু। বারোটা বাজতে আর তিন মিনিট বাকি। রানার কোমর জড়িয়ে ধরল মায়া। রক্তে ভেজা চট্‌চটে একটা বাহু রাখল রানা মায়ার কাঁধে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এল বাড়ি থেকে।

নাক-মুখ তোবড়ানো সাদা জাগুয়ারটা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কোনমতে টেনে হিঁচড়ে তোলা গেল রানাকে ড্রাইভারের পাশের সীটে, স্টীয়ারিং ধরে বসল মায়া। স্টার্ট দিয়েই বাঁয়ে মোড় নিল গাড়িটা উল্কাবেগে।

‘গেটটা ওদিকে না?’ পেছন দিকে ইঙ্গিত করল রানা।

‘এদিকে আরেকটা গেট আছে। আর কয় মিনিট বাকি?’

এখনও ডিনামাইটের আওতার মধ্যে রয়েছে ওরা। রানা ঘড়ি দেখল। কয়েক সেকেণ্ড মাত্র বাকি আছে।

‘ওই ঢিবিটার আড়ালে চলে যাও, মায়া। আর সময় নেই। এক্ষুণি ফাটবে।’ ঢিবির আড়ালে গাড়ি থামিয়ে কানে আঙুল দিল দু’জন। পেছন ফিরে রানা দেখল তীব্র একটা নীল আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল—তারপরেই প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণের শব্দ। ভূমিকম্পের মত কেঁপে উঠল মাটি। মাথার ওপর দিয়ে কয়েকটা বড় পাথর গিয়ে পড়ল সামনের কোথাও। লাল হয়ে গিয়েছে পেছনের আকাশ।

‘ছুটে চলো, মায়া। এক্ষুণি এই এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।’

টিবির আড়াল থেকে রাস্তায় উঠতেই দেখা গেল চারপাশ থেকে বিশ পঁচিশ জন লোক ছুটে যাচ্ছে বাড়িটার দিকে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে ধ্বংসাবশেষের ওপর। কয়েকজন ফিরে চাইল এঞ্জিনের শব্দে। সাব-মেশিনগান তুলল। কিন্তু গুলি ছোঁড়ার আগেই ঢিবির আড়াল হয়ে গেল ওরা রাস্তাটা একটু বায়ে মোড় নেয়ায়।

পেছনের গেটটা খোলা পাওয়া গেল। সাঁ করে বেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়ল গাড়ি। ঠিক এমনি সময় জ্বলে উঠল হেড লাইট। চমকে ফিরে দেখল রানা দেয়ালের গা ঘেঁষে এতক্ষণ ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়েছিল একটা ট্রাক। ওদের বেরুতে দেখেই রওনা হলো পেছন পেছন।

একবার ঘাড় ফিরিয়ে ট্রাকটার দিকে চেয়েই ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেল মায়ার মুখ। বলল, ‘চ্যাঙ! রানা, চ্যাঙ আছে ওর মধ্যে!’

পর পর তিনটে গুলির শব্দ শোনা গেল। ক্র্যাক, ক্র্যাক, ক্র্যাক। হু-হু করে বাতাস কেটে এগিয়ে চলল জাগুয়ার। প্রচণ্ড হাওয়ার তোড়ে চুলগুলো নিশানের মত উড়ছে মায়ার। গগল্‌স্‌ নেই। ভাঙা উইণ্ডস্ক্রীন দিয়ে অসংখ্য পোকা মাকড় এসে পড়তে থাকল চোখে মুখে। কোনও দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে এগিয়ে চলল মায়া। কিন্তু পঞ্চাশের বেশি স্পীড তুলতে পারছে না সে কিছুতেই। দৈত্যের মত ছুটে আসছে প্রকাণ্ড দশ চাকার বেডফোর্ড ট্রাক।

সামনের ড্যাশ বোর্ড হাতড়ে দেখল রানা। কোনও অস্ত্র-শস্ত্র পাওয়া গেল না। নিরুপায় অবস্থায় ছটফট করতে থাকল সে। এদিকে বাতাসের চাপে দম বন্ধ হবার জোগাড়। পোকাগুলো থেকে বাঁচবার জন্যে মাঝে মাঝে লাইট নিভিয়ে দিচ্ছে মায়া। কিন্তু পরক্ষণেই জ্বালতে হচ্ছে আবার। ল্যাম্প পোস্টগুলোর আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। মাথার ওপরে আধখানা চাঁদের আলোয় এত স্পীডে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।

‘নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে আমাদের পেছনে লাগল কেন ওরা আবার?’ রানা জিজ্ঞেস করল।

‘গুপ্তধনের সন্ধান জানি যে আমরা। আমাদের শেষ না করে পালিয়েও স্বস্তি নেই চ্যাঙের। অনেকটা কাছে এগিয়ে এসেছে ওরা। অল্পক্ষণেই ধরে ফেলবে।’

বহুদূর চলে এসেছে ওরা চ্যাঙের আস্তানা থেকে। ডাইভারশনগুলো এলেই মায়া একটু পিছিয়ে পড়ে। কাঁচা হাত। তাছাড়া ট্রাক সেখানে ফুল স্পীডে চলে। আবার পাকা রাস্তায় উঠে দূরত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছে মায়া।

হঠাৎ পেট্রল ইণ্ডিকেটারের দিকে চেয়েই আঁতকে উঠল মায়া।

‘আর আধ গ্যালন পেট্রল আছে, রানা। ধরা পড়ে গেলাম! কিছু একটা বুদ্ধি বের করো, নইলে বাঁচবার আর কোনও পথ নেই।’ কান্নার মত শোনাল মায়ার গলাটা।

বেশ কিছুক্ষণ একটানা চলবার পর একটা ‘গ’ টার্ন নিয়ে উঁচুতে উঠছে গাড়িটা। তার মানে খুব সম্ভব আরেকটা ডাইভারশন। পাঁচ-ছয়শো গজ পেছনে পড়ে গেছে ট্রাকটা।

ঠিক। কিছুটা ওপরে উঠেই ডাইভারশন পাওয়া গেল। দুটো খুঁটির মাথায় মন্ত বড় সাইনবোর্ডে চীনা ও পর্তুগীজ ভাষায় সাবধান করা হয়েছে। তীর চিহ্ন দিয়ে ডাইভারশন দেখানো আছে। শহরের মধ্যে অনেকগুলো ব্রিজে তুমুল কাজ চলছে বলে এই ডাইভারশন। প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে কাজ—বর্ষার আগেই কাজ শেষ না করলে খালে পানি এসে যাবে, এ বছর আর শেষ করা যাবে না তাহলে ব্রিজগুলো। সরু ডাইভারশন নেমে গেছে নিচে—প্ৰায় শুকিয়ে যাওয়া খালের ওপর খান কয়েক তক্তা ফেলে পার হবার ব্যবস্থা।

পেছনের উজ্জ্বল হেড লাইট অদৃশ্য হলো বাঁক ঘুরতেই। এমন সময় বার দুই নক্ করে গলা খাঁকারি দিল জাগুয়ারের এঞ্জিন।

হঠাৎ চিৎকার করে উঠল রানা, ‘থামো!’

গাড়ি থামাল মায়া ঠিক ডাইভারশনের মুখে। দরজা খুলে নেমে দাঁড়াল রানা রাস্তার ওপর। মায়াও নামতে যাচ্ছিল, রানা বলল, ‘তুমি এসো না। নিচে নেমে গিয়ে লাইট নিভিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করো। শেষ চেষ্টা করে দেখি।’

একটিও কথা না বলে মায়া নেমে গেল ডাইভারশনের পথ ধরে নিচে। লাইট নিভিয়ে দিতেই কয়েক পা হেঁটে ফিরে এল রানা সাইনবোর্ডের কাছে। দুটো বাঁশ পুঁতে টাঙানো হয়েছে নোটিশ। বড় করে লাল কালিতে তীর চিহ্ন আঁকা। শরীরটা অসম্ভব দুর্বল লাগছে। সমস্ত মনের জোর একত্র করে রানা নোটিশ বোর্ডটা ধরে হেঁচকা টান দিল। দুটো দড়ি ছিড়ে খসে এল সেটা।

এমন সময় বাঁকটা পুরোপুরি ঘুরতেই আবার দেখা দিল হেডলাইট। নোটিশটা নিয়ে লুকিয়ে পড়ল রানা রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে। একবার ভাবল, কাজ হবে এতে? পরমুহূর্তেই দূর করে দিল চিন্তাটা। যা হবার হবে।

প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসছে ট্রাকটা। আর মাত্র পঁচিশ গজ আছে। দম বন্ধ করে অপেক্ষা করে রইল রানা। সাঁ করে চলে গেল ট্রাক পূর্ণ বেগে রানার সামনে দিয়ে। একরাশ ধুলোবালি পড়ল ওর চোখমুখে। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে চেয়ে রইল রানা বিলীয়মান ব্যাকলাইটের দিকে। উঠে গেল গাড়িটা ব্রিজের ওপর। তারপরেই কানে এল দশটা টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। সামনে ফাঁকা দেখতে পেয়ে ব্রেক করেছে ড্রাইভার প্রাণপণে। গাড়িটা প্রায় থেমে এসেছিল, কিন্তু সামনের চাকা দুটো ততক্ষণে গিয়ে পড়েছে অন্ধকার গহ্বরে।

লাফিয়ে উঠল রানার বুকের ভেতরটা। আনন্দের আতিশয্যে ভুলে গেল ওর নির্যাতিত দেহের কথা। ঝোপ থেকে বেরিয়েই ছুটল সে গাড়িটার দিকে।

সামনের টানে মাঝের দু’জোড়া চাকাও চলে গেল গহ্বরের মধ্যে। এবার ঠিক ডিগবাজি খাওয়ার মত করে দ্রুত চলে গেল সবটা দেহ দৃষ্টির আড়ালে। প্রথম পড়ল গিয়ে পনেরো ফুট বাই পনেরো ফুট জায়গা জুড়ে যে নতুন পিলারটা তৈরি হচ্ছে তার ওপর। প্রচণ্ড ধাতব শব্দ আরও জোরে শোনাল মস্ত ব্রিজের ওপর থেকে। সেখান থেকে আবার কাত হয়ে পড়ল ট্রাকটা মাটিতে। আশ্চর্য, বাতি দুটো জ্বলছে এখনও।

প্রথম ধাক্কাতেই আগুন ধরে গিয়েছিল, এবার মস্ত পেট্রল ট্যাঙ্ক বার্স্ট করল। দপ্ করে আগুন জ্বলে উঠে মিনিট দু’য়েক আড়াল করে রাখল পুরো ট্রাকটাকে। চারপাশে দাউ-দাউ করে উদ্বাহু নৃত্য করছে আগুনের লেলিহান শিখা। চোখে মুখে আগুনের হল্‌কা লাগতেই মাথাটা সরিয়ে আনল রানা। পোড়া মাংসের গন্ধ সোজা উঠে এল ওর নাকে। দম বন্ধ করে আগুনের হল্‌কা বাঁচিয়ে দেখবার চেষ্টা করল রানা ট্রাকের যাত্রীদের বর্তমান অবস্থা। কিছুই দেখা গেল না।

এমনি সময়ে কাঁধের ওপর কার হাত পড়তেই চমকে ঘুরে দাঁড়াল রানা। মায়া এসে দাঁড়িয়েছে কখন টের পায়নি সে। পরনে ছেঁড়া জামা-কাপড়—গা দেখা যাচ্ছে। নিজের রক্ত ভেজা বুশ শার্টটা খুলে পরিয়ে দিল রানা ওর গায়ে। বলল, ‘বেশ মানিয়েছে কিন্তু।’

‘ও কি, রানা? পড়ে যাচ্ছ যে!’ দুহাতে ধরল মায়া রানার জর্জরিত দেই। ঢলে পড়ল রানা মেটাল রোডের ওপর।

এমনি সময় দেখা গেল আরেক জোড়া উজ্জ্বল হেড লাইট। এগিয়ে আসছে ওদের দিকে বাঁকটা ঘুরেই। পাথরের মূর্তির মত স্তব্ধ হয়ে রাস্তার ওপর বসে রইল মায়া রানার মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে।