দুঃসাহসিক
এগার
সাদা জাগুয়ারটা রয়েছে গেটের বাইরে ডানধারের দেয়াল ঘেঁষে। রানার পিস্তলটা বের করে নিল একজন—রানা বাধা দিল না। নীরবে ড্রাইভারের পাশের সীটে উঠে বসল সে।
‘পিস্তলটা তৈরি থাকল। কোনও রকম কৌশল করতে চেষ্টা করলেই মারা পড়বে, রানা।’ পেছনের সীটে উঠে বসে বলল একজন।
‘চললাম কোথায় জানতে পারি?’ রানা জিজ্ঞেস করল।
‘সেটা দেখতেই পাবে।’
চলতে আরম্ভ করল গাড়ি। স্ট্রীট অফ হ্যাপিনেসের উজ্জ্বল বাতি ছাড়িয়ে হোটেল সিসিলকে বাম ধারে রেখে ছুটল ওরা সামনে। রানা বুঝল চ্যাঙের আসল আড্ডায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওকে। কয়েকটা ডাইভারশানে স্পীড একটু কমল, বাকি সময় সত্তরের নিচে নামছে না কাঁটা। গাড়িটা কি অ্যাক্সিডেন্ট করবার চেষ্টা করবে সে? এত স্পীডে অ্যাক্সিডেন্ট হলে মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ওর নিজেরই। সেই জন্যেই বোধহয় ওকে ড্রাইভারের পাশের সীটে, অর্থাৎ ‘ডেথ-সীটে বসানো হয়েছে। সামনের সোজা রাস্তাটার পাশে সারি সারি ল্যাম্প পোস্ট মেট্রোনোমের টোকার মত টিক টিক করে পার হয়ে যাচ্ছে। হু-হু করে বাতাস, ধুলোবালি আর পোকামাকড় আসছে ভাঙা উইণ্ডশীল্ড দিয়ে। মাথাটা নিচু করে চ্যাঙের কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে করতে চলল রানা। আধঘণ্টা চলবার পর ডানদিকে মোড় নিল গাড়িটা।
কোথায় চলেছে রানার জানাই আছে। গাড়িটা থেমে দাঁড়ানোর আগে মাথা তুলল না সে ওপরে। একটা প্রকাণ্ড গেটের সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। গেটের দুপাশে দুটো সেন্ট্রি ঘর। সমস্ত এলাকাটা উঁচু দেয়ালে ঘেরা। বোতাম টিপতেই মোটা একটা কর্কশ কণ্ঠ শোনা গেল অ্যামপ্লিফায়ারের মাধ্যমে।
‘বলুন?’
‘মাসুদ রানা।’ ড্রাইভার জবাব দিল উঁচু গলায়।
‘ঠিক আছে। ঢুকে পড়ো।’
ঘড় ঘড় করে খুলে গেল গেট। ভেতরে ঢুকেই রানা দেখল গাছপালার আড়াল থেকে একটা সুন্দর দোতলা বাড়ির কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। পেছন ফিরে দেখল ধীরে বন্ধ হয়ে গেল গেট। একটা উঁচু ঢিবি গুরতেই বাড়িটার সামনে এসে উপস্থিত হলো ওরা।
‘বেরোও, আদেশ করল ড্রাইভার। মরা পোকা আর মাছির রক্তে লাল হয়ে আছে ওর মুখটা।
নেমে এলো রানা গাড়ি থেকে। সামনে-পেছনে চলল দু’জন পিস্তল হাতে।
হেয়ার ড্রেসিং সেলুনে যেমন দুই পাল্লা সুইং-ডোর থাকে তেমনি একটা দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করল ড্রাইভার। রানা বুঝল এই সুযোগ। পেছন থেকে পিস্তলের গুঁতো খেয়ে এগিয়ে গেল সে। ঘরের ভেতর কয়েকটা সোফা পাতা, লোকজন নেই।
পেছন থেকে দুই বাহু চেপে ধরে শূন্যে তুলে ফেলল সে ড্রাইভারকে, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রবল বেগে ছুঁড়ে দিল ওকে সুইং-ডোরের ওপর। পেছনের লোকটা মাত্র অর্ধেকটা শরীর বের করেছিল দরজা দিয়ে, এই প্রচণ্ড সংঘর্ষে পড়ে গেল চিৎ হয়ে।
ড্রাইভারটা ঘুরে দাঁড়াল রানার দিকে। ধাঁই করে একটা ঘুসি পড়ল ওর নাক বরাবর, আর সাথে সাথেই রানার আরেকটা হাত তীব্র আঘাত করল ওর কব্জির ওপর, ছিটকে সশব্দে মাটিতে পড়ল পিস্তলটা।
পেছনের লোকটা সামলে নিয়েছে ততক্ষণে। দরজার ফাঁক দিয়ে ওর পিস্তলটা বেরিয়ে খুঁজছে রানাকে। ডাইভ দিয়ে শুয়ে পড়ল রানা মাটিতে। ড্রাইভারের পিস্তলটা তুলে নিয়ে দ্রুত দুটো গুলি করল সে পেছনের লোকটার কব্জি লক্ষ্য করে। চিৎকার করে পড়ে গেল সে দরজার ওপাশে। এদিকে জুতোসুদ্ধ এক পা দিয়ে চেপে ধরল ড্রাইভার রানার ডান হাত। এক লাথিতে রানার হাত থেকে খসে পড়ল পিস্তলটা। এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল সে রানার ওপর। দুই হাতে চুলের মুঠি চেপে ধরে ঠুকতে আরম্ভ করল মুখটা মেঝের ওপর। নাক বাঁচাবার জন্যে একপাশে ফিরিয়ে রাখল রানা মুখ। পিস্তলটা নাগালের মধ্যেই রয়েছে। যে আগে তুলতে পারবে তারই জয়।
কিছুক্ষণ নীরবে বন্য জন্তুর মত যুদ্ধ করল দু’জন। অনেক চেষ্টা করে হাঁটু ভাঁজ করল রানা, তারপর এক ঝটকায় নামিয়ে দিল লোকটাকে গলায় পা বাধিয়ে। রানার উঠে দাঁড়াবার আগেই বিদ্যুৎগতিতে উঠে দাঁড়াল ড্রাইভার এবং হাঁটু দিয়ে প্রচণ্ড জোরে মারল রানার থুতনিতে। মাথার মগজ পর্যন্ত নড়ে উঠল এই আঘাতে। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ও মাটিতে। আর সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ডাইভ দিয়ে পড়ল ওর ওপর লোকটা। পেটটা বাঁচাবার জন্যে সরে যাবার চেষ্টা করল রানা। মাথাটা এসে পড়ল ওর পাঁজরের ওপর। অসহ্য ব্যথায় একটা অদ্ভুত বিকৃত গোঙানী বেরিয়ে এল রানার মুখ দিয়ে। কিন্তু সামলে নিল সে। বাঁচতেই হবে তাকে। একপাশ ফিরে লোকটার দুটো হাতই পিঠ দিয়ে চেপে ধরল রানা, তারপর বাম হাতে দুটো ওজনদার লেফট্ হুক চালিয়ে দিল। মাথাটা একটু উঁচু করতেই ডান হাতটা চালাল দাও দিয়ে কোপ মারার মত লোকটার কাঁধের পেশীর ওপর।
টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল লোকটা। চিতাবাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল রানা ওর ওপর। পোকামাকড়ের রক্তের সঙ্গে মিশল ওর নাক দিয়ে বেরোনো টাটকা তাজা রক্ত। থেঁতলে গেল ওর নাকটা রানার প্রচণ্ড ঘুসিতে। দুটো দাঁত খসে পড়ল মোজাইক করা মেঝের ওপর। এবার ওর একটা হাত ধরে ফেলল রানা। অন্যহাতে বেল্টটা শক্ত করে ধরে শূন্যে তুলে ফেলল ওকে। একপাক ঘুরে সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে মারল সে দেহটা দেয়ালের গায়ে। দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ল দেহটা আর উঠল না।
হাঁপাচ্ছে রানা। ফুলে ফুলে উঠছে ওর প্রশস্ত বুক। ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে। ঘামে ভেজা চুলের মধ্যে বাম হাতের আঙুলগুলো চালিয়ে দিল। ফু-চুং-এর প্রতিশোধ নিতে পেরে একটা আত্মতৃপ্তি বোধ করল সে।
‘কাট্।’
চমকে ঘুরে দাঁড়াল রানা। দেখল দুই হাত কোমরে রেখে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে চ্যাঙ। দুইপাশে দু’জন সহকারী। ডান পাশে রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে আছে লোবো। পাশের লোকটাকে চিনতে পারল না সে, মনে হলো দেখেছে কোথাও। যেন সিনেমার শূটিং হচ্ছে, মারপিটের সীন শেষ হতেই ডিরেক্টর চিৎকার করে বলল, ‘কাট্’। কতক্ষণ ধরে ওরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে এই মারামারি দেখছিল কে জানে।
শার্টের আস্তিন দিয়ে চোখ-মুখের ঘাম মুছে নিল রানা যেন কিছুই হয়নি এমনি ভাবে। দেখল জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে চ্যাঙের তীব্র দুটো চোখ। চীনা ভাষায় কিছু বলল চ্যাঙ ওর সহকারীদের, তারপর ঘুরে একটা দরজা দিয়ে চলে গেল বাড়ির ভেতর।
এগিয়ে এল লোবো আর তার সাথের লোকটা। সাথের লোকটাকে আহতদের তদারকির নির্দেশ দিয়ে নিজে রানার ভার গ্রহণ করল লোবো। পেছন থেকে মেরুদণ্ডের ওপর রিভলভারের নলের গুঁতোয় রানা বুঝল সামনে এগোতে হবে ওকে। দরজা দিয়ে ঢুকে একটা ডাইনিংরুম। বড় একটা টেবিলের দুইপাশে বারোটা করে চেয়ার-টেবিলের মাথায় একটা কারুকার্যখচিত চেয়ার দেখে বোঝা গেল ওটা চ্যাঙের আসন। ডাইনিংরুম থেকে বেরিয়ে একটা বারান্দা—কিছুদূর গিয়ে আবার দুটো ঘর পেরিয়ে ভারি পর্দা তুলতেই অবাক হয়ে গেল রানা।
একটা মোটা খুঁটির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা রয়েছে মায়া ওয়াং। শরীরে কয়েকটা আঘাতের দাগ লাল হয়ে আছে। রানাকে দেখে ওর দুই চোখে আশার আলো জ্বলে উঠেই দপ্ করে নিভে গেল পেছনে লোবোর ওপর চোখ পড়তে। মাথাটা নিচু করল সে। অল্পদূরে একটা টেবিলের ওপাশে বসে আছে চ্যাঙ। কালো আলখেল্লা, মাথায় টাক, থুতনিতে দু’চারটে দাড়ি, আর অসম্ভব বড় বড় কান—মনে হচ্ছে যেন চীনা জাদুকর। শিড়দাঁড়ায় আরেকটা গুঁতো খেয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল রানা।
এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসতে যাচ্ছিল রানা, একটা হান্টারের বাড়ি পড়ল পিঠের ওপর। ইলেকট্রিক হুইপ। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত থমকে দাঁড়িয়ে গেল রানা। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একজন। হাতে তিন ফুট লম্বা হান্টার। এটা দিয়েই মারা হয়েছে মায়াকে। মাথার মধ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল রানার। কিন্তু এখন সংযম হারালে অনিবার্য মৃত্যু। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করল সে। চ্যাঙের মুখে কৌতুকের হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল।
‘দাঁড়িয়ে থাকো। বসতে কে বলেছে তোমাকে?’ বলল চ্যাঙ।
‘ব্যাপার কি? এভাবে আমাকে ধরে এনে মারধোর করা হচ্ছে কেন?’
এ কথার উত্তর না দিয়ে আবছা একটা ইঙ্গিত করল চ্যাঙ লোবোকে। রিভলভারটা হোলস্টারে ঢুকিয়ে রেখে আরেকটা খুঁটির সাথে বেঁধে ফেলল সে রানাকে। ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দমে গেল রানা। বুঝল এটা চ্যাঙের টরচার চেম্বার। বাঁধা শেষ হতেই মুখ খুলল চ্যাঙ।
‘কেন মারধোর করা হচ্ছে জিজ্ঞেস করছিলে…তুমিই বলো দেখি, কেন?’
‘আমি তো বুঝতে পারছি না কি অপরাধ করেছি আমি তোমাদের কাছে। তোমাদের কাজ করেছি, টাকাও পেয়ে গেছি। ব্যস, চুকে গেছে। আমার পেছনে একপাল কুকুর লেলিয়ে দেবার মানে কি? যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিয়ে দিয়েছি—আমার তো মনে হয় না তাতে আমার কোনও দোষ হয়েছে।’
‘ব্যাপারটা বোঝোনি এখনও। একটু আপ-টু-ডেট করে দিচ্ছি তোমাকে। অল্পক্ষণ আগে হংকং-এর সাথে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। তারা তোমার সম্পর্কে অদ্ভুত সব কথাবার্তা বলছে। এবার নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পেরেছ তোমাকে এখানে ধরে আনবার কারণটা?’
‘না, পারিনি।’ মাথার মধ্যে দ্রুত চিন্তা চলছে রানার।
‘তবে শোনো। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে যে তুমি অরুণ দত্ত নও—সত্যিকার অরুণ দত্ত এখন সাংহাই-হাজতে। অরুণ দত্তের বাবা-মা তোমার ফটো দেখে চিনতেই পারেনি।’
‘ঠিক। আসলে আমি অরুণ দত্ত নই,’ অম্লান বদনে বলল রানা। ‘কাজটা আমি অরুণ দত্তের কাছ থেকে নিয়েছিলাম। ও ভয় পাচ্ছিল এই কাজটা নিতে। আমার টাকার দরকার ছিল তাই ওর নাম ভাঁড়িয়ে চলে এসেছি।’ গাড়িতেই উত্তরটা তৈরি করেছে রানা।
‘চমৎকার! কিন্তু আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলে উত্তর দিয়ো। যে নোট জাল বলে দিয়েছিলে লিউঙের কাছে, এবং নিজেকে মস্ত বড় জালিয়াত বলে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছিলে তা আমাদের এক্সপার্ট পরীক্ষা করে রায় দিয়েছে একবিন্দু নকল নয়—একেবারে খাঁটি। তারপর হারিয়ে গেল ল্যাংফু। তোমার ওপর নজর রাখবার জন্যে নিয়োগ করা হয়েছিল ওকে। তারপর তোমার ঘরের দরজায় ফুটো পাওয়া গেল; এবং পাশের ঘরের চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের স্পাইটা আর এলো না হোটেলে ফিরে। তোমার অ্যাটাচি কেসের একটা গোপন কুঠুরিতে পিস্তলের একখানা সাইলেন্সার পাইপ পাওয়া গেল। তারপর জকি টিয়েন হংকে ঘুষ দেয়া হয়েছে সন্দেহ করে তার ঘর সার্চ করতেই বেরিয়ে পড়ল ওর বাক্স থেকে দু’হাজার ডলার। (এই পর্যন্ত আসতেই চমকে উঠল রানা ভয়ানক ভাবে। বুঝল, ভুল যা হবার হয়ে গেছে) এবং নম্বর মিলিয়ে দেখা গেল সেগুলো তোমার টাকা। লিউঙ দিয়েছিল টাকাগুলো তোমাকে রেস খেলবার জন্যে। আর গত রাতে তোমাকে দেখতে পাওয়া গেল ওই হারামজাদির ঘরে। এই সব ঘটনা কি তোমাকে এখানে ধরে আনবার কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়?’ একটু থামল চ্যাঙ। ‘এবার বলে ফেলো তুমি কে এবং কি উদ্দেশ্যে এসেছ।’
যেন সম্মোহন করছে এমনি ভাবে একঘেয়ে কণ্ঠে কথাগুলো একটানা বলে থামল চ্যাঙ। তীক্ষ্ণ চোখজোড়া রানার মুখের প্রতিটা ভাব পরিবর্তন লক্ষ্য করল অপলক নেত্রে। তারপর ধীরে চোখ ফেরাল মায়ার দিকে।
চুপ করে থাকল রানা। কি বলবে সে? সব ধরা পড়ে গেছে, এখন মিথ্যে গল্প বানিয়ে পার পাওয়া যাবে না।
‘কি? চুপ করে রইলে কেন? বলো? সবকথা বলতে হবে তোমাকে। চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিস আমার বিরুদ্ধে কি প্ল্যান নিয়েছে বলতে হবে তোমার। মায়ার কাছ থেকে আমাদের সম্পর্কে কতটা জানতে পেরেছ তা-ও আমার জানা চাই।’
কোনও কথা বলল না রানা। বোবার মত চেয়ে রইল শুধু। ভাবল, এ ব্যাপারে চাইনিজ সিক্রেট সার্ভিসের যে হাত আছে তা চ্যাঙের অনুমান। এখনও কিছুই জানে না সে। নইলে সাবমেরিনের কথাও বলে ফেলত। শুধু এই একটা ব্যাপারই গোপন আছে এখনও চ্যাঙের কাছে, বাকি সবই তার জানা। এদের নির্যাতনের পদ্ধতি কি? কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে সে? ঘড়ি দেখল—সাড়ে দশটা। যতক্ষণ ব্যাপারটা এর কাছ থেকে চেপে রাখা যায় ততই লাভ। দেড়ঘণ্টা পর্যন্ত পারবে না সে টিকে থাকতে?
‘বোঝা যাচ্ছে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আঙুলটা বাঁকিয়ে নিচ্ছি তাহলে। কথা আদায় করবার ব্যাপারে লোবোর জুড়ি নেই। তাছাড়া ওর ব্যক্তিগত কিছু উৎসাহ আছে তোমার ব্যাপারে। কাজেই আর দুই মিনিটের মধ্যে সত্যি কথা স্বীকার না করলে ওর সাহায্য গ্রহণ করতে বাধ্য হব আমি।’
দুই মিনিট পর উঠে দাঁড়াল দস্যু চ্যাঙ।
‘তুমি এখনও উপলব্ধি করতে পারছ না, যুবক, কি ভয়ঙ্কর মৃত্যুদণ্ড তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তোমরা দু’জনেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। কেউ ঠেকাতে পারবে না এই মৃত্যু। ভোর ছ’টার মধ্যেই পার্ল রিভারে ফেলে দেয়া হবে লাশ দুটো। কিন্তু সব কথা স্বীকার করলে এমন ধুঁকে ধুঁকে তিলে তিলে মরতে হত না। অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে। সহজ উপায়ে হত্যা করা হোত। দেখা যাক, তোমার মত পরিবর্তন হয় কি না। প্রথমে তোমার চোখের সামনে মায়াকে নির্যাতন করা হবে, তারপর ধরা হবে তোমাকে। মানুষের সহ্যেরও তো একটা সীমা আছে। আমি এখন বিশ্রাম করতে চললাম। এখনও ভেবে দেখো।’
পাঁচ সেকেণ্ড রানার চোখে চোখে চেয়ে রইল দস্যু চ্যাঙ। একটা অশ্রাব্য গালি বেরিয়ে এল রানার মুখ থেকে। কপালের ভ্রূকুটিতে রাগ প্রকাশ পেল চ্যাঙের। দেয়ালের কাছে দাঁড়ানো লোকটার হাত থেকে হান্টারটা নিল সে নিজ হাতে। কাছে এগিয়ে আসতেই একগাদা থুথু ছিটিয়ে দিল রানা ওর মুখের উপর। ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল চ্যাঙের মুখ। ডান হাতের আস্তিন গুটিয়ে নিল সে।
ওদিকে ছোট ছোট লোহার কাঁটা বসানো এক জোড়া চামড়ার গ্লাভ হাতে পরে প্রস্তুত হয়ে নিয়েছে লোবো। যেন মুষ্টিযুদ্ধে নামতে যাচ্ছে কারও বিরুদ্ধে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রথমবারের মত জ্ঞান হারাল রানা। দশ মিনিট পর আবার। তার বিশ মিনিট পর আবার…