দ্বিতীয় অধ্যায়
একদিন ললনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীর জলে ললনার কাপড় পেয়ে সবাই ধরে নেয় ললনা নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাক্রমে নদীতে ভাসতে ভাসতে ললনা আশ্রয় পায় এক জমিদারের কাছে। জমিদার তাকে নিজের সাথে কলকাতাContinue Reading
একদিন ললনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীর জলে ললনার কাপড় পেয়ে সবাই ধরে নেয় ললনা নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাক্রমে নদীতে ভাসতে ভাসতে ললনা আশ্রয় পায় এক জমিদারের কাছে। জমিদার তাকে নিজের সাথে কলকাতা নিয়ে যায়। এদিকে ললনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সদানন্দ তার সম্পত্তি বিক্রি করে সারদার সাথে ছলনার বিয়ে দেয়। জমিদারের নির্দেশে ললনা তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য শুভদার কাছে ৫০০ টাকা পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাধব মারা গেছে। শুভদার কলকাতায় কোন আত্মীয় নেই। তারপরও সেখান থেকে ৫০০ টাকা পেয়ে সে টাকাগুলো না নিয়ে সদানন্দকে কলকাতায় পাঠায় টাকার মালিকের খোঁজ নিতে। সদানন্দ কলকাতা গিয়ে জানতে পারে ললনা বেঁচে আছে। ললনা লোভে পড়ে জমিদারের রক্ষিতা হয়ে গেছে এই ভুল বোঝে সে ভারাক্রান্ত মনে ললনার সাথে দেখা না করেই চলে আসে। বাড়িতে ফিরে সে শুভদাকে সব খুলে বলে। তারপর অনাথ সদানন্দ শুভদাকে “মা” বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। যেন অনাথ সদানন্দ ফিরে পায় তার মাকে আর শুভদা ফিরে পায় তার মৃত পুত্রকে।
একদিন ললনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীর জলে ললনার কাপড় পেয়ে সবাই ধরে নেয় ললনা নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাক্রমে নদীতে ভাসতে ভাসতে ললনা আশ্রয় পায় এক জমিদারের কাছে। জমিদার তাকে নিজের সাথে কলকাতাContinue Reading
নারায়ণপুরের জমিদার শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর একদিন মনে হইল তাঁহার শরীর খারাপ হইয়াছে, বায়ু-পরিবর্তন না করিলে হয়ত কঠিন পীড়া জন্মাইতে পারে। সুরেন্দ্রবাবুর অনেক আয়। বয়স অধিক নহে; বোধ হয় পঞ্চবিংশতির অধিক হইবে না; এই বয়সে অনেকContinue Reading
রাত্রিটা সুরেন্দ্রবাবুর ভাল নিদ্রা হইল না, সেইজন্য অতি প্রত্যুষেই শয্যা ত্যাগ করিয়া উঠিলেন। হাতমুখ ধুইয়া গুড়গুড়ির নল মুখে লইয়া ছাদের উপর আসিয়া বসিলেন। হাওয়ার জোর ছিল, পাল তুলিয়া মাঝিমাল্লারা বজরা খুলিয়া দিল। একটু বেলা হইলে,Continue Reading
কাঁশীধামে মৃত্যু হইলে হিন্দুদিগের বিশ্বাস যে শিবলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়। তাই সদানন্দের পিসিমাতা কাশী যাইলেন, কিন্তু আর ফিরিলেন না। সদানন্দ, পুণ্যশরীরা পিসিমাতার দেহ বারাণসী ধামে গঙ্গাবক্ষে দাহ করিয়া চির-শিবলোকবাসের সুব্যবস্থা করিয়া হলুদপুরে ফিরিয়া আসিলেন। শূন্যContinue Reading
সেইদিন, রাত্রে জ্যোৎস্নাধৌত প্রশান্ত গঙ্গাবক্ষের উপর দিয়া ভাটার স্রোতে গা ভাসাইয়া, ধীরে ধীরে হস্তসঞ্চালনের মত ছপ্ছপ্ করিয়া দুটি দাঁড় ফেলিতে ফেলিতে সুরেন্দ্রবাবুর প্রকাণ্ড বজরা উত্তর হইতে দক্ষিণ দিকে ভাসিয়া আসিতেছিল। ছাদের উপরে সুরেন্দ্রবাবু ও জয়াবতীContinue Reading
জয়া! জ্ঞান হইলে, প্রথমে চক্ষুরুন্মীলন করিয়া সুরেন্দ্রনাথ আকুলভাবে বলিয়া উঠিলেন, জয়া! পার্শ্বে মালতী বসিয়া শুশ্রূষা করিতেছিল আর চক্ষু মুছিতেছিল, তাঁহার কথার ভাবে সে আরো অধিক করিয়া চক্ষু মুছিতে লাগিল। তিনি কিন্তু তাহা দেখিলেন না; একবারমাত্রContinue Reading
যতক্ষণ বজরাখানা দেখা গেল, সদানন্দ গীত বন্ধ করিয়া তাহার পানে চাহিয়া রহিল, তাহার পর বাটীতে আসিয়া শয়ন করিল। আজ তাহার মনটা ভাল ছিল না, নিদ্রাও ভাল হইল না। প্রাতঃকালে শুভদার নিকট আসিয়া বলিল, আমার এখানেContinue Reading
শুভদা শুনিলেন, হারাণবাবু শুনিলেন, ছলনাও শুনিল যে, তাহার সহিত শারদার বিবাহ হইতেছে। এ বিবাহ সদানন্দ ঘটাইয়াছে। শুনিয়া রাসমণি মন্তব্য প্রকাশ করিলেন যে, সদানন্দ পূর্বজন্মে শুভদার পুত্র ছিল। সদানন্দর সমক্ষে একথা বলা হইয়াছিল, সে একথা নিরুত্তরেContinue Reading
অনেক কাজ ছিল, অনেক কষ্টে তাহা সমাধা হইয়া গিয়াছে! এখন আরাম করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিতে বেশ লাগে, কিন্তু দুই–চারিদিন পরে সে আরামটা আর তেমন করিয়া উপভোগ করিয়া উঠিতে পারা যায় না। নিতান্ত আলস্যভাবে নিষ্কর্মার মত বসিয়াContinue Reading
আরো কতদিন কাটিয়া গেল। ছলনা বাপের বাটী ফিরিয়া আসিল, পাড়ার মেয়েরা আর–একবার নূতন করিয়া কন্যা –জামাতা দেখিয়া গেলেন, কত হাসি কত তামাশা গড়াইয়া গেল, হরমোহন নিজে এখানে আসিয়া সকলকে মধুর সম্বোধনে আপ্যায়িত করিয়া ব্যায়ানঠাকুরানীর নমস্কারContinue Reading
বিচিত্র হর্ম্যে বিচিত্র কৌচের উপর অপূর্বসুন্দরী মালতী, কক্ষ উজ্জ্বল করিয়া বসিয়া আছে। নিকটে শ্বেতপ্রস্তর নির্মিত সাইড বোর্ডের উপর রৌপ্য শামাদানে বাতি জ্বলিতেছে। তাহারই আলোকে মালতী একখানা পুস্তক পাঠ করিতেছিল। যে কক্ষে মালতী বসিয়া আছে তাহাContinue Reading
জন্মিলে মরিতে হয়, আকাশে প্রস্তর নিক্ষেপ করিলে তাহাকে ভূমিতে পড়িতে হয়, খুন করিলে ফাঁসি যাইতে হয়, চুরি করিলে কারাগারে যাইতে হয়, তেমনি ভালবাসিলে কাঁদিতে হয়—অপরাপরের মত ইহাও একটি জগতের নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম কে প্রচলিতContinue Reading
জয়াবতী মরিয়াছে, কিন্তু তাহার মা বাঁচিয়া আছে। নারায়ণপুরের কিছু উত্তরে বাসপুর গ্রামে জয়াবতীদের বাটী। সেইখানে জয়া ও তাহার জননী থাকিত। কেমন করিয়া যে তাহাদিগের গ্রাসাচ্ছাদন চলিত তাহা তাহারাই জানিত। আর শুনিতে পাই গ্রামের দুই-চারিজন মন্দContinue Reading
একথা শুনিয়া সুরেন্দ্রনাথ খুব হাসিয়া বলিলেন, তবে তোমার সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়ে গেল? মালতী বলিল, ঝগড়া হবে কেন, বরং বেশ ভাব হয়ে গেল। সু। তবে ভাব করে নিয়েচ? মা। নিয়েচি। সু। কিন্তু ওর নিজের মেয়েরContinue Reading
দুঃখের দিন দেরি করিয়া কাটে সত্য, কিন্তু তথাপি কাটে, বসিয়া থাকে না। মাধবের মৃত্যুর পর শুভদার দিনও তেমনি করিয়া অনেকদিন কাটিয়া গিয়াছে। তখন বর্ষা ছিল, আকাশে মেঘ ছিল, পথে-ঘাটে কাদা-পাঁক, পিছল ছিল—এখন তাহার পরিবর্তে শরৎকালContinue Reading
আপনার প্রশস্ত কাছারিঘরে উকিলবাবু শ্রীঅঘোরনাথ বসু মহাশয় বসিয়া আছেন। সম্মুখে টেবিলের অপর পার্শ্বে নারায়ণপুরের সুরেন্দ্রবাবু বসিয়া আছেন। টেবিলের উপর একরাশি মকদ্দমার কাগজপত্র রহিয়াছে; ব্যস্তভাবে দুইজনে তাহারি তদ্বির করিতেছেন। কিছুক্ষণ পরে মুখ তুলিয়া সুরেন্দ্রবাবু বলিলেন, অঘোরবাবু,Continue Reading
অনেক রাত্রি হইয়াছে, তথাপি মালতী আপনার কক্ষে বসিয়া ‘সীতার বনবাস’ পড়িতেছে। অনেক কাঁদিয়াছে, অনেক চোখ মুছিয়াছে, তথাপি পড়িতেছে। আহা! বড় ভাল লাগে—কিছুতেই ছাড়া যায় না। এইসময় বাহিরে দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া বড় মোটা গলায় কে ডাকিল,Continue Reading
এদিকে সদানন্দ ফিরিয়া আসিল। সমস্ত পথটা সে বড় অন্যমনস্ক হইয়া চলিতেছিল। পথে যে-কেহ ডাকিয়া বলিল, দাদাঠাকুর কোত্থেকে? দাদাঠাকুর ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ‘হুঁ’।—কোথায় গেছলে? সদানন্দ দাঁড়াইয়া মুখপানে চাহিয়া বলিল, বাড়ি যাচ্ছি। তাহার হালের গরু ততক্ষণ একজনেরContinue Reading
© All Right Reserved by Eduliture ২০২৪