শুভদা

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্র এমন একটি নূতন পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন যা বাঙলা কথাসাহিত্যের পরিধিকে প্রসারিত করে দিয়ে তার মধ্যে এনেছে এক অদৃষ্টপূর্ব বৈচিত্র্য। সংবেদনশীল হৃদয়, ব্যাপক জীবনজিজ্ঞাসা, প্রখর পর্যবেক্ষণশক্তি, সংস্কারমুক্ত স্বাধীন মনোভঙ্গি প্রভৃতির গুণে শরৎসাহিত্য লাভ করেছে এক অনন্যসাধারণ বিশিষ্টতা যা পরবর্তীকালের বাঙলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করেছে। শুভদা এমনই একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে মুতাবিক ৫ই জুন, ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে— শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পরে; শরৎচন্দ্র মৃত্যুবরণ করেন ২রা মাঘ, ১৩৪৪ মুতাবিক ১৬ই জানুয়ারি, ১৯৩৮ রবিবার। এটি শরৎচন্দ্রের প্রথম রচনাবলীর অন্যতম। ‘শুভদা’র রচনাকাল—১৮৯৮ খৃষ্টাব্দের ২০শে জুন থেকে ২৬শে সেপ্টেম্বর—রচনাকালের মোট সময় ৩৩ দিন। এই সময় শরৎচন্দ্রের বয়স ২২ বছর মাত্র। পরবর্তীকালে ‘শুভদা’কে সম্পূর্ণরূপে পরিমার্জিত করে দুই-একটি কথা বদলান ব্যতীত আর কিছুই তিনি করে যেতে পারেননি।

শুভদা উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৮৬ বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আনোয়ারা, অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ ও জিনাত।

কাহিনী সংক্ষেপ:

হারানের দুই মেয়ে। একজনের নাম ললনা, যে বিয়ের একমাসের মাথায় বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। আরেক মেয়ে ছলনা, যে খুবই চঞ্চল। হারানের কোমলমতি স্ত্রী শুভদা, অসুস্থ ছেলে মাধব আর এক বিধবা বোনকে নিয়ে তার সংসার। জুয়া আর গাঁজার প্রতি আসক্তি থাকার কারণে অভাব তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী। সদানন্দ একজন আধপাগল কর্মঠ মানুষ। সে হয়তো ললনাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। সদানন্দ যথাসম্ভব ললনার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। এদিকে বিয়ের আগে ললনার সাথে প্রেম ছিল সারদার। কিন্তু সমাজ ও তার লোভী বাবার রক্তচক্ষুর ভয়ে সে বিধবা ললনাকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করে। ললনা সারদাকে অনুরোধ করে, সে যেন তার ছোট বোন ছলনাকে বিয়ে করে।

একদিন ললনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীর জলে ললনার কাপড় পেয়ে সবাই ধরে নেয় ললনা নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাক্রমে নদীতে ভাসতে ভাসতে ললনা আশ্রয় পায় এক জমিদারের কাছে। জমিদার তাকে নিজের সাথে কলকাতা নিয়ে যায়। এদিকে ললনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সদানন্দ তার সম্পত্তি বিক্রি করে সারদার সাথে ছলনার বিয়ে দেয়। জমিদারের নির্দেশে ললনা তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য শুভদার কাছে ৫০০ টাকা পাঠায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাধব মারা গেছে। শুভদার কলকাতায় কোন আত্মীয় নেই। তারপরও সেখান থেকে ৫০০ টাকা পেয়ে সে টাকাগুলো না নিয়ে সদানন্দকে কলকাতায় পাঠায় টাকার মালিকের খোঁজ নিতে। সদানন্দ কলকাতা গিয়ে জানতে পারে ললনা বেঁচে আছে। ললনা লোভে পড়ে জমিদারের রক্ষিতা হয়ে গেছে এই ভুল বোঝে সে ভারাক্রান্ত মনে ললনার সাথে দেখা না করেই চলে আসে। বাড়িতে ফিরে সে শুভদাকে সব খুলে বলে। তারপর অনাথ সদানন্দ শুভদাকে “মা” বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। যেন অনাথ সদানন্দ ফিরে পায় তার মাকে আর শুভদা ফিরে পায় তার মৃত পুত্রকে।

শুভদা প্রথম অধ্যায়

শুভদা দ্বিতীয় অধ্যায়