» » প্রথম অঙ্ক

বর্ণাকার

তৃতীয় দৃশ্য
গ্রাম্য পথ

[দীনু ভটচায শ্রাদ্ধবাটী হইতে নিমন্ত্রণ খাইয়া ঘরে ফিরিতেছে। সঙ্গে পটল, ন্যাড়া, বুড়ী প্রভৃতি বালক-বালিকা। সকলেরই হাতে ছোট-বড় পুঁটলি, অন্য হাতে খুরিতে করিয়া দধি, ক্ষীর প্রভৃতি]

খেঁদি। (সভয়ে) বাবা, ভোজো আসচে—

[শুনিয়া সকলে চকিত হইয়া উঠিল। রমেশের ভৃত্য ভজুয়া প্রবেশ করিল]

দীনু। এই যে ভজুয়াবাবু, কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

ভজুয়া। আরে ই-সব কি লিয়ে যাচ্চে ভটচায-মোশা—

দীনু। কিছুই নয় বাবা,—এই দুটো এঁটো-কাঁটা—পাড়ার ছোটলোক গরীব-দুঃখীর ছেলেমেয়ে আছে ত, গেলেই সব হাত পেতে দাঁড়াবে, তাদেরই দেবার জন্যে—

ভজুয়া। আরে, কমতি কি আছে। পুরি মিঠাই কেত্‌না গরীব-দুঃখী উহই বএঠকে খা রহা—

দীনু। খাচ্চে বৈ কি বাবা, খাচ্চে বৈ কি। রাজার ভাণ্ডার, অভাব কি! তবে সবাই কি আসতে পারবে? তাদের জন্যেই দুটো-একটা—

ভজুয়া। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। বড়ি খারাব গাঁও ভটচায, কিত্‌না গুলমাল। ই উঠে তো উ বোসে, ই ভাগে তো উ খিঁচকে লাগে—হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ—

দীনু। হয় বাবা হয়, বিরদ কাজে-কর্মে—বুড়ী, পটলার হাতটা একবার বদলে নে মা আমাদের গাঁ ত তবু পদে আছে বাবা—হোরে, পথপানে চেয়ে চল না। হোঁচট খেয়ে দইয়ের ভাঁড়টা ফেলে দিবি যে। যে কাণ্ড দেখে এলাম খেঁদির মামার বাড়িতে,—বিশ-ঘর বামুন-কায়েতের বাস নেই বাবা—দশটা দলাদলি। পটলা, হাঁ করে স্বগ্‌গ-পানে তাকিয়ে যাচ্ছিস যে? তবে একটা কথা বলতে পারি বাবা, ভিক্ষে-শিক্ষে করতে অনেক জায়গাতেই ত যাই, অনেকে অনুগ্রহও করেন, আমি দেখেচি তোমার বাবুর মত ছেলে-ছোকরাদেরই যা কিছু দয়ামায়া আছে। নেই কেবল বুড়ো ব্যাটাদের। বাগে পেলেই একজন আর একজনের গলায় পা দিয়ে জিভ বার করে তবে ছাড়ে।

[এই বলিয়া নিজের জিভ বাহির করিয়া দেখাইল]

ভজুয়া। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।

১১২৯

দীনু। তা ভজুয়াবাবু কোথায় যাচ্চ?

ভজুয়া। আচায্যিঠাকুরকে বাড়ি।

দীনু। তা যাও যাও, একটু তরস্ত যাও। আমরাও আসি বাবা।

[সকলের প্রস্থান