» » কালোচিতার ফটোগ্রাফ

বর্ণাকার

ঠিক সেই সময় থাপার সামনে ভদ্রলোকের মত বসেছিল প্রদীপ।

‘নরবাহাদুর গুরুং তোমার বাবা?’

‘ইয়েস স্যার।’

‘কিন্তু তিনি সম্পর্কটা অস্বীকার করেছেন।’

‘মানে?’

‘আমি একটু আগে তাকে টেলিফোন করেছিলাম। তিনি বললেন, ওই নামে তার এক ছেলে ছিল কিন্তু এখন সে মৃত। তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন তিনি।’

‘একথা বাবাই বলতে পারেন।’

‘কেন একজন বাবা ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করেন?’

প্রদীপ মুখ তুলল, ‘স্যার, এর জবাব উনি দিতে পারবেন।’

‘তুমি কোথায় থাকো?’

‘লা ডেন লা রোডে।’

‘কোন বাড়িতে?’

‘পোস্ট অফিসের নিচে।’

‘কী করো তুমি?’

‘টুকটাক বিজনেস।’

‘দু-নম্বরি?’

‘না স্যার। ওটা পারলে তো বাবার সঙ্গেই থাকতে পারতাম।’

‘প্রদীপ গুরুং। আমি চাই না দার্জিলিং-এ কোনও গোলমাল হোক!’

‘আমিও চাই না স্যার।’

‘কয়েকদিন আগে ঘুমের রাস্তায় তিনটে ডাকাতি হয়েছে। প্রায় তিরিশ হাজার টাকার কমপ্লেন আছে। এ ব্যাপারে তুমি কিছু জানো?’

‘না স্যার।’

‘এত তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে হবে না। ভেবে দ্যাখো। আমি কাউকে ধরতে পারিনি বটে কিন্তু বর্ণনা পেয়েছি। তার একজনের সঙ্গে তোমার বেশ মিল আছে।’

ফাঁদটা এগিয়ে আসছে। প্রদীপের শরীর শিরশির করে উঠল।

‘আমি এখনই তোমাকে কিছু বলছি না। ইচ্ছে করলে তোমাকে দুরমুশ করে সব কথা বের করে নিতে আমি জানি। সেটা পরে করা যাবে যদি তুমি নিজে থেকে না বলো।’ থাপার কথা শেষ হওয়ামাত্র টেলিফোন বাজল। রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলার পর থাপার মুখ উজ্জ্বল হল, ‘ইয়েস, অ্যাঁ? আচ্ছা! কী রকম দেখতে? আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। হ্যাঁ, আপনি কমপ্লেন করছেন না? ঠিক আছে, ঠিক আছে!’ রিসিভার নামিয়ে রেখে থাপা সরাসরি তাকাল, ‘ম্যাল থেকে বেরিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে?’

‘কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করতে।’

‘কোথায়?’

‘পরম আনন্দ-এ।’

‘ওখানে তোমার কী দরকার?’

‘হোমের বাচ্চাদের আমি ভালবাসি।’

‘সত্যি কথা বলছ না এর মধ্যে দুনম্বরি কিছু আছে?’

‘আমি দুনম্বরি কাজ করি না।’

‘আস্তে কথা বলো। কেউ চেঁচিয়ে কথা বললে আমার মাথা ঠিক থাকে না।’

‘আই অ্যাম সরি স্যার—।’

‘মাটি থেকে উঁচুতে বাইক তুলতে পারো?’

অবাক চোখে থাপাকে দেখল প্রদীপ। এর মধ্যে লোকটার কাছে খবর এসে গেল? সে হাসার চেষ্টা করল, ‘ইচ্ছে করলেই যে পারব তা নয়, হঠাৎ-হঠাৎ হয়ে যায়।’

‘শোনো, প্রদীপ, আজ সকালে তোমার কাছে একটা বেআইনি রিভলভার ছিল?’

‘না স্যার, রিভলভার ছিল না।’

‘আমার লোক বলছে ছিল। কিন্তু ওটা যদি আবার তোমার কাছে ফিরে আসে তাহলে তোমাকে আমি পুঁতে ফেলব। কথাটা মনে রেখো। আমি তোমাকে দেখা করতে বলছিলাম যে কারণে সেটা আর প্রয়োজন হবে না।’

‘কারণটা কী ছিল স্যার?’

‘যখন প্রয়োজন হবে না তখন তোমাকে বলে আমার লাভ নেই।’

থাপা হাত নাড়ল, ‘তোমাকে আর-একটা কাজ দিতে পারি। কিছু রোজগার হতে পারে তোমার।’

‘রোজগার হলে আমি রাজি স্যার।’

একটা কাগজে ঠিকানা, নাম লিখে এগিয়ে দিল থাপা, ‘এঁর সঙ্গে আজই দেখা করো। উনি তোমাকে খুঁজছেন, তোমারও উপকার হবে।’

নাম-ঠিকানা পড়ল প্রদীপ। বিখ্যাত মানুষ। এই শহরে একে চেনে না এমন কেউ নেই।

‘ঠিক আছে, তুমি যেতে পারো।’

‘স্যার। একটা রিকোয়েস্ট ছিল।’

থাপা তাকাল। প্রদীপ বলল, ‘পরম আনন্দ যিনি চালান তাঁকে নিশ্চয়ই আপনি চেনেন। অমন মানুষ হয় না। বাচ্চাগুলোও খুব ভাল। কিন্তু হোমের বাড়িটা যাঁর, তিনি বিক্রি করে দিচ্ছেন একজনকে। সেই লোকটা ফ্যাক্টরি বানাবে ওখানে। এর ফলে ওই বাচ্চাগুলোর মাথা গোঁজার জায়গা থাকবে না। আপনি ওদের বাঁচান স্যার।’

‘ওই সম্পত্তি কার?’

‘মিস্টার প্রধানের।’

‘কেউ যদি তার পার্সোনাল প্রপার্টি বিক্রি করে দিতে চায় তা হলে আইন বাধা দিতে পারে না।’

‘আমি জানি স্যার। শুধু মানবিকতার কারণে যদি কিছু করা যায়।’

‘তোমার এতে কী স্বার্থ?’

‘বাচ্চাগুলো আমাকে ভালবাসে!’

‘অদ্ভুত। তাহলে মিসেস এভার্টকে বলো প্রধানের কাছ থেকে সম্পত্তিটা কিনে নিতে।’

‘হোমের সেই সামর্থ্য নেই। জনসাধারণের দানের ওপর হোম চলে।’

‘তোমার যখন এত দরদ তখন তুমি কিনে নিয়ে হোমকে দান করে দাও।’

‘টাকাটা আমার পক্ষে অনেক।’

থাপা কাঁধ নাচাল, ‘সরি প্রদীপ, আমার পক্ষে এ ব্যাপারে কোনও সাহায্য করা সম্ভব নয়। কেউ আইন ভাঙলে আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি কিন্তু–। ওয়েল, গুডবাই।’

বাইরে বেরিয়ে এসে প্রদীপ দেখল দার্জিলিং শহরে ইতিমধ্যেই সন্ধের অন্ধকার ঘন হচ্ছে। একটু বাদেই কুয়াশারা নামবে দল বেঁধে, রাস্তা ভাল করে দেখা যাবে না। থাপার লেখা কাগজটা ওর হাতের মুঠোয় ছিল। সেটাকে পকেটে পুরে বাইক চালু করল সে। তারপর হেডলাইট জ্বেলে ছুটে গেল জলাপাহাড়ের পথে। ম্যাল পেরিয়ে ঘোড়ার আস্তাবলের কাছে এসে গতি কমাতেই সে ডাকটা শুনতে পেয়ে বাইক থামাল। দৌড়ে কাছে এল লিটন। বেঁটে, কিন্তু শরীরে ভাল শক্তি। মাথায় বুদ্ধি পুরোপুরি নেই। লিটন বলল, ‘কোথায় থাকো? সারাদিন খুঁজে বেড়াচ্ছি!’

‘কেন?’

‘তোমার পিস্তল হাওয়া হয়ে গেছে?’

‘তোকে কে বলল?’

‘আগে বলো, হ্যাঁ কি না?’

‘হাওয়া হয়নি। থাপার হাত থেকে বাঁচার জন্য সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছিলাম।’

‘বড় সিঁড়িতে তো? পরে আর পাওনি, ঠিক?’

‘হ্যাঁ। কে বলল তোকে?’

‘শানবাহাদুর নামে একটা লোক বাজারের পাশে ভাটিখানায় বসে এই গল্পটা সবাইকে শোনাচ্ছিল। এমনকী যে লোকটা পিস্তলটা পেয়েছিল পুলিশ তার বাড়িতেও নাকি সার্চ করতে গিয়েছিল অথচ কিছু পায়নি।’

‘লোকটা আমার নাম বলেছে?’

‘নাঃ। বর্ণনা দিচ্ছিল। বুড়ো ভানুপ্রসাদ সেটা শুনে এসে আমাকে বলে। শুনে আমার সন্দেহ হয়, ওটা তুমি হতে পারো!’

‘তুই এখানে অপেক্ষা কর। আমি ঘুরে আসছি এখনই। তারপর কথা বলব।’ বাইক চালু করল প্রদীপ। লিটন কোমরে হাত দিয়ে ওর যাওয়া দেখল। তারপর পাশের চায়ের দোকানে ঢুকল। প্রদীপ সম্পর্কে ওর প্রবল আস্থা আছে। ইদানীং সে প্রদীপের সঙ্গে ছায়ার মত থাকে। প্রদীপ বাঁ হাতে পিস্তল চালিয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারে। তিন-তিনটে ছোট অপারেশন থেকে লিটন ছয় হাজার টাকা পেয়েছে। তাই এখন প্রদীপ যে আদেশ করবে তাই তাকে শুনতে হবে। সে সিগারেট পাকাতে লাগল একমনে।

গেট বন্ধ। হেডলাইটের আলো ফেলে হর্ন দিল প্রদীপ। একটু বাদে একজন বন্দুকধারীকে দেখা গেল। এক হাতের আড়ালে চোখ ঢেকে অন্যহাতে বন্দুক নিয়ে এগিয়ে আসছে।

‘কৌন হ্যায়?’

‘আমার নাম প্রদীপ গুরুং। তোমার সাহেব আমাকে ডেকেছেন।’

লোকটা কোনও কথা না বলে গেট খুলে দিল। ওর ভঙ্গি দেখে বোঝা গেল যে এই নামের লোক যে আসবে তা জানা ছিল। বাইক নিয়ে সোজা বাংলোর সিঁড়ির সামনে চলে এল প্রদীপ। নিচে নেমে দাঁড়ানো মাত্র একটি লোক এগিয়ে এল, ‘প্রদীপ গুরুং?’

‘ইয়েস।’

‘আসুন।’

লোকটিকে অনুসরণ করে সে যে ঘরে ঢুকল সেটিতে আসবাব বলতে চারটে সাদা সোফা এবং একটি সাদা রঙের টেবিল। প্রদীপকে সেখানে বসিয়ে লোকটা চলে গেল। পায়ের তলায় কার্পেট। দেওয়ালে কোনও ছবি নেই। ওপাশের দরজায় ভারী সাদা পর্দা ঝুলছে। দেওয়ালের রঙও সাদা। প্রদীপ উশখুশ করছিল। থাপা তাকে বলতেই সে এখানে চলে এল। থাপা বলেছে এই লোকটা তাকে যে কাজ দেবে তা করতে পারলে রোজগার হবে। কাজটা নিশ্চয়ই দুনম্বরি কিছু হবে না, হলে থাপা তাকে এখানে পাঠাত না।

এইসময় লোকটাকে ঘরে ঢুকতে দেখল প্রদীপ। এর আগে দূর থেকে সে দেখেছে। এত বড় মানুষের কাছাকাছি পৌঁছবার ক্ষমতা তার এখনও হয়নি। কাছ থেকে সাদা শার্ট, সাদা হাফস্লিভ সোয়েটার, সাদা প্যাণ্ট এবং সাদা চপ্পল মানুষটিকে তার বেশ সাদাসিধে বলে মনে হল। ফরসা গায়ের রঙের সঙ্গে চওড়া টাক চমৎকার মানিয়ে গিয়েছে। উল্টোদিকের সোফায় বসে তিনি বললেন, ‘গুড ইভনিং।’

‘গুড ইভনিং স্যার। আমি প্রদীপ গুরুং।’

‘এ বাড়িতে ঢোকার সময় থেকে তো দু-দুবার নামটা বলেছেন। আমি থাপার কাছে কিছুটা শুনেছি, বাকিটা জেনে নিয়েছি। মোটর বাইক ভাল চালাতে পারেন?’

‘এমন কিছু নয় স্যার।’ নম্র গলায় বলল প্রদীপ।

‘দু-নম্বরি করেন না কিন্তু দু-নম্বরি জিনিস রাখেন?’

‘তার মানে?’

‘গতকাল পর্যন্ত আপনার কাছে একটা বেআইনি পিস্তল ছিল।’

‘এখন নেই ভাবলেন কী করে?’

‘যন্ত্র বলে দিল আপনি কোনও অস্ত্র ছাড়া এখানে এসেছেন। গুড। আপনাকে আমার একটা কথা বলার আছে। আপনার মধ্যে যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে তা ছোটমাপের বেআইনি কাজ করে নষ্ট করবেন না। থাপার কাছে প্রমাণ না থাকলেও তিন-তিনটে ছিনতাই-এর কাজ আপনি এবং আপনার সঙ্গী করেছেন, এটা আমি জানি। জানি কিন্তু প্রমাণ নেই। তাই আপনি চ্যালেঞ্জ করলে কিছু বলতে পারব না। চা না কফি?’

প্রদীপের হঠাৎ শীত-শীত করছিল। এই লোকটি খুব শান্ত গলায় কথা বলছেন। মুখচোখে একটুও উত্তেজনা নেই। অথচ তার সম্পর্কে যেসব কথা বলে গেলেন তা ওঁর মত মানুষ কী করে জানলো তা ওর জানা নেই।

সে মাথা নাড়ল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।’

‘ও কে। শুনুন। আপনার মত এনার্জেটিক ইয়ংম্যান আমি খুব পছন্দ করি। আমি আপনাকে একটা কাজ দিতে পারি। লেপার্ড দেখেছেন?’

‘সিনেমায় দেখেছি।’

‘হুম। ব্ল্যাক লেপার্ড।’

‘না স্যার, রঙ মনে নেই।’

‘এখান থেকে সত্তর মাইল দূরে সিকিম-টিবেট বর্ডারের কাছে কিছু ব্ল্যাক লেপার্ড এখনও আছে বলে শোনা যাচ্ছে। খুব বিরল প্রজাতির প্রাণী। আজ সকালে তাদের দুজনকে দেখা গিয়েছে। তারা তখন যৌনমিলনে ব্যস্ত ছিল।’

‘ইমপসিবল।’

‘হোয়াই?’

‘এইসব প্রাণীদের মেটিং-এর সময় সাধারণত কেউ দেখতে পায় না।’

‘সাধারণত। কিন্তু দেখেছে। সিকিমের একটা ট্যুরিস্ট বাস ওই সময় ওই পথ দিয়ে ওখানে পৌঁছে যায়। তাদের তিনজন যাত্রী ওই দৃশ্যের ছবি তোলে। বাসটা আজই গ্যাংটকে ফিরে গেছে। যাওয়ার পথে বাসের ড্রাইভার একটা পুলিশ স্টেশনে খবরটা দিয়ে যায়। পুলিশ স্পটে গিয়ে কিছুই দেখতে পায়নি।’

‘আমাকে কী করতে হবে?’

‘ওই তিনজন যাত্রীর নাম-ঠিকানা জোগাড় করতে হবে।’

‘কেন?’

‘ব্ল্যাক লেপার্ড ভারতবর্ষে নেই। আছে হিমালয়ের এই এলাকায়। এতদিন পর্যন্ত ওদের অস্তিত্ব কেউ জানতই না। আমার হবি রেয়ার ফটোগ্রাফ কালেক্ট করা। আমি যখন জানতে পারলাম তিনজন ট্যুরিস্ট ওই ব্ল্যাক লেপার্ডের মেটিং দৃশ্যের ছবি তুলেছে তখন মনে হল ছবিগুলো একমাত্র আমার কালেকশনেই থাকবে। আমার টাকা আছে তাই ছবিগুলো আমি চাইতে পারি। তিনটে সাধারণ ট্যুরিস্ট ওই ছবি তুলে বাড়ি ফিরে তাদের অ্যালবামে সেঁটে রাখবে। কিন্তু আমার কাছে থাকলে ওগুলো অন্যমাত্রা পাবে। ওই তিনজনের খবর পেলে আমি ছবিগুলো কিনে নেব। আজ ওরা গ্যাংটকে ফিরে গেছে। হয়ত ওদের ফিল্মের রোল শেষ হতে আরও দু-একদিন লাগবে। অতএব আমি আপনাকে ওই দু-একদিন সময় দিচ্ছি।’ ভদ্রলোক হাসলেন।

‘আপনি তো ট্যুরিস্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগযোগ করলেই ওদের ঠিকানা পেতেন!’

‘না পেতাম না। গ্যাংটকে সাইট সিয়িং টুর করে অন্তত পনেরোটা নামী কোম্পানি। এ ছাড়াও আনরেজিস্টার্ড কোম্পানি আছে। যারা ডেইলি টিকিট কিনে ওইসব বাসে ওঠে তারা নিজেদের ঠিকানা কোম্পানিকে দেয় না, কোম্পানি সেটা চায়ও না।’

‘বুঝলাম। কিন্তু আমি ওদের কী করে খুঁজে বের করব?’

‘সেটা আপনার সমস্যা।’

‘এর জন্যে আমি কত টাকা পারিশ্রমিক পাব?’

‘পাঁচ হাজার টাকা।’

‘ওই তিন ক্যামেরায় তোলা ছবির দাম আপনার কাছে তিন হাজার?’

‘নো। নট দ্যাট। হয়ত ওদেরও আলাদা টাকা দিতে হবে।’

‘সেইজন্যে আপনার বাজেট জানতে চাইছি।’

‘ধরুন, ছয় হাজার।’

‘আমার পক্ষে কাজটা করা সম্ভব নয়।’

‘কারণ?’

‘অত কম টাকার জন্যে এমন ঝামেলা।’

‘কত টাকা হলে কাজটা করতে পারবেন?’

‘পঞ্চাশ হাজার।’

‘মাই গড! আর ইউ ম্যাড?’

‘নো স্যার। ব্ল্যাক লেপার্ডের মেটিং দৃশ্য পৃথিবীতে আর কারও কাছে আছে কি না জানি না। না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে আপনি ছবিগুলোর বিনিময়ে কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করবেন! আমি কি পাগলের মত কথা বলছি?’

‘পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আপনি কী করবেন?’

‘সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

‘আমি বোধহয় আন্দাজ করতে পারছি ইয়ংম্যান। প্রধানের জমিটার দাম পঞ্চাশ হাজার টাকা। তাই তো! বেশ, ইটস এ ডিল। ছবিগুলো নিয়ে আসতে পারলে আপনি প্রধানকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে হোমের নামে জমি ট্রান্সফার করতে পারবেন। আর এই নিন, তিন হাজার টাকা। এটা আপনার ইনসিডেণ্টাল এক্সপেন্স।’ পকেট থেকে তিরিশটা একশো টাকার নোট বের করে প্রদীপের সামনে রেখে ভদ্রলোক গলা পাল্টালেন, ‘এবার কাজের কথায় আসি। জায়গাটা এখান থেকে সত্তর মাইল দূরে হলেও গ্যাংটক থেকে মাইল পনেরো উত্তরে। এর খুব কাছাকাছি জনবসতির নাম টিংলা। টিংলা পর্যন্ত একটা বাস যায় দিনে একবারই। যে জায়গায় ব্ল্যাক লেপার্ড দুটোকে দেখা গিয়েছিল তার বর্ণনা আমি পাইনি। সেটা আপনাকেই উদ্ধার করতে হবে। আর এর জন্যে আপনি দুদিন সময় পাবেন।’

‘সরি স্যার। আগামীকাল গ্যাংটক পৌঁছতেই দুপুর হয়ে যাবে। আমি অন্তত তিনদিন সময় চাইছি। তিনটে পুরো কাজের দিন।’ টাকাগুলো তুলে নিল প্রদীপ।

ভদ্রলোক পকেট থেকে কার্ড বের করলেন, ‘এইটে আমার নিজস্ব টেলিফোন। আমি না থাকলে রেকর্ডার আপনার পাঠানো ম্যাসেজ রেকর্ড করে রাখবে।’

‘ও কে স্যার।’ প্রদীপ উঠে দাঁড়াল। ভদ্রলোক হাসলেন। মাথা নেড়ে প্রদীপ যখন দরজার কাছে পৌঁছে গিয়েছে তখন ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি এক প্রোডাক্টে বিশ্বাস করি। চেষ্টা করেছিলাম তবু হয়নি এসোব কথার কোনও মূল্য আমার কাছে নেই।’

প্রদীপ নীরবে মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল।