ভদ্রলোকের মুখটা মনে পড়ল প্রদীপের। পুলিশ অফিসার থাপা ওকে পাঠিয়েছিল যার কাছে তার মুখ খুব সৌম্য। তিনি মূল্যবান ফটোগ্রাফ সঞ্চয় করেন। বর্ডারে ব্ল্যাক লেপার্ডের মেটিং দৃশ্যের ছবি তোলা তিন ক্যামেরাম্যানের কাছে তাকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেদিন সকালে ঘটনাটা ঘটেছিল সেইদিন বিকেলেই খবরটা পেয়ে গেছেন ভদ্রলোক। তাঁর কাছে রণতুঙ্গার খবর পাঠানোর কিছু সময়ের মধ্যেই লোকটা খুন হয়ে গেছে এবং ওর ফিল্ম চুরি হয়েছে। দ্বিতীয় যে খবরটা সে দিয়েছিল, দার্জিলিং মেলের যাত্রী এসো. কে. শর্মার এখন কী অবস্থা তা সে জানে না। কিন্তু মাতাল অবস্থায় মুখ খোলার জন্যে ড্রাইভার চন্দ্রনাথকে চলে যেতে হল। প্রদীপ একটা পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে টুরিস্ট লজে ফোন করল। লিসা লাইনে এলে সে বলল, ‘ম্যাডাম, একটু আগে আপনার সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি আগামীকাল কখন নামছেন?’ লিসা বললেন, ‘আর্লি মর্নিং-এ। আমি বাগডোগরা থেকে প্লেন ধরব।’
‘একটু রিস্কি হয়ে যাবে ম্যাডাম। আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার ভাল লেগেছে। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি যে করেই হোক এখনই গ্যাংটক থেকে চলে যান। একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে নিন। হয়ত রাস্তায় সন্ধে নামবে তবু এখনই রওনা হলে শিলিগুড়িতে সাতটা আটটার মধ্যে পৌঁছতে পারবেন। ওখানে ভাল হোটেল আছে। রাতটা হোটেলে কাটিয়ে সকালের প্লেন ধীরে সুস্থে ধরতে পারবেন।’
‘বাট হোয়াই? এরা তো বলছে সবাই ভোরে রওনা হয়ে প্লেন ধরতে পারে।’
‘আপনি বলেছেন কোনও ঝামেলায় জড়াতে চান না, তাই। আমার অনুরোধ রাখুন।’ রিসিভার রেখে দিল প্রদীপ। ওই বাসে আর কে-কে যাত্রী ছিলেন তা ওর জানা নেই। কিন্তু এই ভদ্রমহিলা যদি তার অনুরোধ রাখেন তাহলে ওঁর ভাল হবে।
গতকালের ব্ল্যাক লেপার্ডের ঘটনাটা বানানো। ধরা যাক দার্জিলিং-এর ভদ্রলোক ভুল খবর পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনজন ফটোগ্রাফারের অস্তিত্ব তার জানা ছিল। আর ভদ্রলোক যদি সত্যি ব্ল্যাক লেপার্ডের ছবির আশায় তাকে পাঠাতেন তাহলে রণতুঙ্গা খুন হত না। চন্দ্রনাথের খুন হওয়াটাকে কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ বলে চালানো যেতে পারে। কিন্তু রণতুঙ্গা?
অর্থাৎ এই মুহূর্তে গ্যাংটকে আর-একটি হত্যাকারী দল সক্রিয় আছে। এই দলটা আজই এসে পৌঁছেছে এখানে অথবা তারা এখানকারই লোক। উলটো করে ভাবলে এমন দাঁড়ায়, গতকাল যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার ছবি ট্যুরিস্ট বাসের তিনজন ফটোগ্রাফার তুলেছিল বলে ভদ্রলোক খবর পেয়েছিলেন। অবশ্যই ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর স্বার্থ আছে তাই তিনি চান না ছবিগুলো অন্য কারও হাতে যাক। এত তাড়াতাড়ি প্রিণ্ট করা সম্ভব নয় তাই তিনি তড়িঘড়ি প্রদীপকে পাঠিয়েছিলেন উদ্ধার করতে। কিন্তু সেখানেও তো একটা ঝুঁকি ছিল। রণতুঙ্গার বদলে ওই মিলিটারি অফিসারের সঙ্গে প্রথমে দেখা হলে প্রদীপ জেনে যেত, ব্ল্যাক লেপার্ড নয়, ওঁরা হত্যাকাণ্ডের ছবি তুলেছিলেন। তবু তিনি এই ঝুঁকি নিলেন কেন?
প্রদীপ চারপাশে তাকাল। সন্দেহজনক কোনও কিছু চোখে পড়ল না। কিন্তু সে এখন নিশ্চিন্ত তাকে কেউ বা কারা লক্ষ করে যাচ্ছে। ভদ্রলোক তার সঙ্গে এমন একটা খেলা খেললেন কেন? থাপা জানে এই ঘটনাটা?
প্রশ্নগুলো ছোবল মারছিল মনে।
হোটেলে ফিরে এল সে। লাউঞ্জে বসছিল লিটন। এখানে আর কেউ নেই। ওর পাশে চেয়ার টেনে বসতেই লিটন বলল, ‘মেয়েটা এখনও ঘুমোচ্ছে।’
‘ভদ্রলোকের নাম কী?’
‘কাপুর। সানশাইন হোটেলে উঠেছেন।’
‘কতদিনের বুকিং?’
‘পরশু দুপুরে ওঁর নেমে যাওয়ার কথা। সোজা হোটেলেই ঢুকে গেছেন।’
‘তোকে এখনই শিলিগুড়িতে যেতে হবে।’
লিটন অবাক হল, ‘সে কি? কেন?’
‘সমস্ত হিসেব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আমার আশংকা হচ্ছে এসো. কে. শর্মা নামে যে ফটোগ্রাফার আজ দার্জিলিং মেল ধরতে নেমে গিয়েছে সে ফিল্ম নিতে বাধা দিতে গেলে জীবন্ত ফিরে যেতে পারবে না কলকাতায়।’
‘কে খুন করবে তাকে?’
‘যে রণতুঙ্গাকে খুন করেছে। ট্যুরিস্টবাসের ড্রাইভারটাকেও সেই খুন করিয়েছে বলে এখন অনুমান করছি। কিন্তু এসোব এখনও অনুমান। যদি শর্মার কিছু হয়ে যায় তাহলে আর ব্যাপারটা অনুমান হয়ে থাকবে না। সেটা জানার জন্যে আমি তোকে শিলিগুড়িতে যেতে বলছি।’ প্রদীপ ঘড়ি দেখল। তারপর মাথা নাড়ল, ‘মুশকিল হল, তুই যখন শিলিগুড়িতে পৌঁছবি তখন দার্জিলিং মেল ছেড়ে দেবে। ট্রেনে যদি কিছু ঘটে যায় তাহলে তোর পক্ষেও জানা সম্ভব নয়। কী করা যায়?’
‘তুমি যা বলবে তাই করব!’
হঠাৎ প্রদীপ মতলবটা ভাবতে পারল। হাত তুলে বলল, ‘তোকে যেতে হবে না। কিন্তু আজ তুই আর হোটেল থেকে বের হবি না। পুলিশ নিশ্চয়ই এতক্ষণে তোর বর্ণনা পেয়ে গেছে।’
তখনই শিলিগুড়িতে ছুটতে হচ্ছে না বলে খুশি হল লিটন। বলল, ‘কিন্তু আমি কোন ঘরে থাকব? ওখানে তো এখনও মেয়েটা ঘুমোচ্ছে।’
‘সন্ধে হলেই আমরা হোটেল চেঞ্জ করব।’
‘তার মানে? এই হোটেল কী দোষ করল?’
‘আমরা কোথায় আছি সেটা আমি কাউকে জানাতে চাই না।’
‘কে জেনেছে?’
‘যারা খুন করছে তারা অন্ধ নয়।’
‘তা হলে?’
‘তুই এখানেই বিশ্রাম নে। আমি মেয়েটাকে তুলি।’
প্রদীপ উঠল। লিটন মাথা নাড়ল। তার গুরুর সব ভাল শুধু মহিলা সংক্রান্ত ব্যাপারটা বাদ দিলেই–। হঠাৎ তার নজরে এল একটা পুলিশের জিপ এসে দাঁড়িয়েছে হোটেলের দরজায়। একজন অফিসার জুতোর শব্দ তুলে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলেন। পুলিশ কি তার বর্ণনা পেয়ে এখানে খোঁজ করতে এসেছে? কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না লিটন। রণতুঙ্গার ঘরে সে কোনও হাতের ছাপ রেখে আসেনি। কিন্তু পুলিশ যদি একবার ধরে! এখান থেকে হুট করে উঠে গেলে সবাই সন্দেহ করবে। ও মাথা নিচু করে বসে রইল।
পুলিশ অফিসার রিসেপশনিস্টের সঙ্গে কথা বলছে। হোটেলের রেজিস্ট্রার দেখল ভদ্রলোক। তারপর বেরিয়ে গিয়ে জিপে উঠে বসল। লিটন দেখল রিসেপশনিস্ট তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে সহজ হতে চেষ্টা করল।
রিসেপশনিস্ট সামনে এসে বলল, ‘মিস্টার গুরুং কি বাইরে গেছেন?’
লিটন কোনওমতে মাথা নাড়ল, ‘না।’
‘একটা খুব খারাপ খবর আছে। উনি যে ভদ্রলোকের খোঁজ করছিলেন সেই মিস্টার শর্মা শিলিগুড়িতে যাওয়ার পথে কালীঝোরার কাছে অ্যাকসিডেণ্টে মারা গিয়েছেন। উনি যে ট্যাক্সিতে যাচ্ছিলেন তার ড্রাইভারও বেঁচে নেই। এইমাত্র পুলিশ এসে বলে গেল। ভদ্রলোকের পকেটে আমাদের হোটেলের রশিদ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ খোঁজ করতে এসেছিল। মিস্টার গুরুংকে বলে দেবেন উনি যে ভদ্রলোকের খোঁজ করছিলেন সেকথা আমি পুলিশকে বলিনি! কী দরকার ঝামেলা বাড়ানোর।’ রিসেপশনিস্ট হাসল। লিটনের ধড়ে প্রাণ আসতে-আসতেও থমকে গেল যেন। সে বলল, ‘ধন্যবাদ।’
রিসেপশনিস্ট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কোন হোটেলে উঠেছেন?’
‘আমি? কেন? এখানেই।’ লিটন বলল।
‘এখানে মিস্টার গুরুং একটা ডাবলবেড রুম নিয়েছেন। ওখানে ওঁরা দুজন আছেন। তৃতীয় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হোটেলের আইন অনুযায়ী সেখানে থাকতে পারে না।’
লিটন হাত নাড়ল, ‘না, না, ওই ঘরে আমরা দুজনেই থাকব।’
‘তাহলে ওই মহিলা?’
‘ওঁর রাত্রে এখানে থাকার কথা নয়। দাঁড়ান, আমি দেখছি।’ উঠে পড়ল লিটন। দ্রুত ওপরে চলে এসে দেখল ঘরের দরজা ভেজানো। সে নক করতেই মেয়েলি গলা ভেসে এল, ‘ভেতরে আসুন।’
দরজা ঠেলতেই সুজাতার পিঠ দেখতে পেল লিটন। আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে। মেয়েটা সুন্দরী। শরীরটরীর আছে। মনে-মনে বলল সে। ঘরে প্রদীপ নেই। বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে একটু স্বস্তি হল লিটনের। সে বলল, ‘রেডি?’
‘হ্যাঁ। এক মিনিট।’
‘সন্ধে নামার আগেই তো তোমাকে যেতে হবে।’
‘কোথায়?’ হাত থেমে গেল সুজাতার।
‘মানে? কোথায় যাব আমি?’
‘সেটা তো তুমিই জানো। দার্জিলিং থেকে গ্যাংটকে আসার সময় ভাবোনি?’
‘না তো! কাল রাত্রে মনে হয়েছিল দার্জিলিং থেকে চলে না এলে আমি বিপদে পড়ব। আর সেটা পড়ব আপনাদের জন্যে। পুলিশ নিশ্চয়ই এখনও আমাকে খুঁজছে।’
‘আমাদের জন্যে মানে?’ লিটন মেয়েটার পরিবর্তন দেখে অবাক।
‘হ্যাঁ মশাই। পিস্তলটাকে বাঁচাতে গিয়েই তো আমার এই হেনস্থা।’
‘কে বলেছিল বাঁচাতে?’ রেগে গেল লিটন। ‘আমি ওসব জানি না। হোটেল থেকে বলেছে এই ঘরে তিনজন থাকা যাবে না। তা ছাড়া, তোমাকে আমরা কখনও দেখিনি, চিনিও না, তোমাকে এই ঘরে থাকতে দেব কেন?’
‘ঠিক আছে। আপনার বন্ধু যদি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলেন চলে যেতে তাহলে আমি চলে যাব।’ সুজাতা কথা শেষ করতেই প্রদীপ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল বাথরুম থেকে। শেষ কথাটা তার কানে গিয়েছিল।
লিটন বলল, ‘রিসেপশনিস্ট বলেছে এক ঘরে তিনজন থাকা যাবে না।’
‘আমরা সেটা থাকছি না।’
‘অথচ এ এমনভাবে কথা বলছে যেন পিস্তলটা বাঁচানোর জন্যে—।’
লিটনকে থামিয়ে দিল প্রদীপ, ‘পিস্তলটা বাঁচানোর জন্যে আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ লিটন। যন্ত্রটা এখন খুবই দামি হয়ে উঠেছে।’
সঙ্গে-সঙ্গে লিটনের মনে পড়ে গেল, গুরু খুব জরুরি কথা আছে।
‘বলে ফ্যাল।’ চুল আঁচড়াচ্ছিল প্রদীপ।
‘ভদ্রলোক দার্জিলিং মেলে ওঠার চান্স পেলেন না।’
‘হোয়াট?’ ঘুরে দাঁড়াল প্রদীপ। ওর চোখ বিস্ফারিত।
একটু আগে, কথাটা বলতে গিয়েই সুজাতার উপস্থিতির জন্যে থমকে গেল লিটন। প্রদীপ এগিয়ে এল, ‘আমি সুজাতাকে বিশ্বাস করছি।’
‘কী করে? তুমি তো ওকে চেনোই না।’
‘পাঁচ ঘণ্টার রাস্তায় পেছনে বসে থাকা একটা মেয়ের ব্যবহারে যদি তাকে না চিনতে পারি তা হলে! কী হয়েছে?’
‘কালীঝোরার কাছে একটা অ্যাকসিডেণ্টে ভদ্রলোক এবং তার ট্যাক্সির ড্রাইভার মারা গিয়েছে। একটু আগে পুলিশ এসেছিল হোটেলে খোঁজ খবর নিতে।’
‘এই হোটেলের কথা পুলিশ জানল কী করে?’
‘হোটেলের বিল মিটিয়ে রশিদ নিয়েছিলেন ভদ্রলোক। সেটা ওঁর পকেটে ছিল। রিসেপশনিস্ট আমাকে বলল, তুমি যে ভদ্রলোকের খোঁজ করেছ সেটা সে পুলিশকে জানায়নি। কেস খুব খারাপ বলে মনে হচ্ছে গুরু।’
প্রদীপ ঠোঁট কামড়াল। এই আশঙ্কাই তার হচ্ছিল। সে যে দুটো খবর দার্জিলিং-এ পাঠিয়েছে তাদের জীবিত থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। হয়ত সে এখন যেখানে-যেখানে যাচ্ছে সেখানেও ওরা হাজির হচ্ছে। ওই দৃশ্যের সাক্ষি বুঝলে তাকেও সরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন মহান ফটোগ্রাফস গ্রাহক। কিন্তু ভদ্রলোক কোনও প্রমাণ রাখেননি। দার্জিলিং-এ ফিরে গিয়ে সে ওঁকে কোনওভাবেই অভিযুক্ত করতে পারবে না। ভদ্রলোক তাকে ক্রমাগত সুতো ছেড়ে যাচ্ছেন। তাকে অভিনয় করতে হবে যতক্ষণ পঞ্চাশ হাজার হাতে না পাওয়া যায়। কিন্তু, তৃতীয় ব্যক্তির হদিশ পেলে কি উনি তাকেও পৃথিবীতে থাকতে দেবেন? প্রদীপের শিরদাঁড়া কনকন করে উঠল।
‘গুরু।’ লিটন ডাকল। প্রদীপ অন্যমনস্কভাবে তাকাল।
‘সন্ধে হয়ে আসছে। তুমি বলেছিলে হোটেল চেঞ্জ করবে।’
‘বলেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কোনও লাভ হবে না। ওই মোটর বাইকটাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর ওটা সঙ্গে থাকলেই আমাকে পেতে কারও অসুবিধে হবে না। লিটন, আমি এখানে এসেছি সুজাতাকে নিয়ে। ও যতক্ষণ থাকছে ততক্ষণ লোকে একটা ধারণা মনে রাখবে। মহিলা সঙ্গে থাকলে পুলিশও নরম ভাবে। আমরা আগামীকাল ভোরে এখান থেকে বেরিয়ে যাব। কিন্তু আজ আমি কাপুরের সঙ্গে বাসস্ট্যাণ্ডে কথা বলেছি। যদি ওরা আমাদের ওপর নজর রাখে তা হলে কাপুরের অস্তিত্ব জেনে যাবে। আর ওই ভদ্রলোক যেমন মুখের ওপর কথা বলেন তাতে ওদের পক্ষে জানা অসম্ভব হবে না যে উনিই তৃতীয় ফটোগ্রাফার। তারপর কাপুরের মৃত্যু তো স্বাভাবিক ঘটনা। আর কাপুর মারা গেলেই ওরা আমার জন্যে আসবে। তুই এক কাজ কর।’ পকেট থেকে কয়েকটা একশো টাকার নোট বের করে লিটনকে দিল প্রদীপ, ‘সোজা সানশাইন হোটেলে চলে যা। চেষ্টা কর কাপুরের কাছাকাছি ঘর নিতে। কাপুর তোকে দ্যাখেনি। লোকটার ওপর নজর রাখতে হবে তোকে। রণতুঙ্গার মত ওর অবস্থা যাতে না হয় সেটা তুই দেখবি। ঠিক আছে?’
‘তুমি এখানে থাকবে?’
‘আমরা থাকব।’
‘কাল তোমার সঙ্গে কীভাবে দেখা হবে।’
‘আমি সানশাইন হোটেলে তোর সঙ্গে দেখা করব।’
‘যদি কাপুর বাইরে বের হয়?’
‘তুই ওকে কভার করার চেষ্টা করবি।’
লিটন উঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে এগোল। তারপর ঘুরে দাঁড়াল সুজাতার দিকে, ‘আমি এখনও তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু গুরুর যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছাড়ব না।’ লিটন আর দাঁড়াল না। দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল।