মধ্যমাগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বহরমপুরের রামদাস সেন ও ভ্রাতুষ্পুত্র জ্যোতিষচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত বঙ্কিমচন্দ্রের কয়েকখানি পত্রের পাণ্ডুলিপি নৈহাটী বঙ্কিম ভবনে রক্ষিত আছে। এই পত্রগুলি কোন কোন পত্রিকায় ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়। হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের “ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র” শীর্ষক পুস্তকেও এ সমুদয় গ্রথিত হইয়াছে। আমরা এখানে চিঠিগুলি দিলাম। পাঠক লক্ষ্য করিবেন কোন কোন পত্রে সম্পূর্ণ তারিখ নাই।
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত পত্র
To Babu Sanjib Chandra Chatterjee
সেবক শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র শর্মণঃ
প্রণামা শত সহস্র নিবেদনঞ্চ বিশেষ—
আপনি যতীশের বিবাহ সম্বন্ধে যে পত্র লিখিয়াছেন, তাহার উত্তর আমি বাঙ্গলায় লিখিলাম। ইহার কারণ এই যে, আবশ্যক হইলে বা উচিত বিবেচনা করিলে পিতাঠাকুরকে পড়িতে পাঠাইয়া দিবেন।
শ্রীযুক্ত—আপনাকে যতীশের বিবাহ সম্বন্ধে ১৬০০৲ ষোলশত টাকা কর্জ করিতে বলিয়াছেন। কর্জ পাওয়া আশ্চর্য নহে। আপনি না পান শ্রীযুক্ত আজ্ঞা করিলে অনেকে কর্জ দিবে। কর্জ করিলে আপনার বর্তমান পাঁচ হাজার টাকা ঋণের উপর ৭০০০৲ টাকা হইবে। ইহা পরিশোধের সম্ভাবনা কি? এক্ষণে আপনি কত করিয়া মাসে কর্জ শোধ করিয়া থাকেন। কোন মাসে কুড়ি টাকা কোন মাসে কিছুই না। অদ্য ২০ বৎসর অবধি আপনি ঋণগ্রস্ত, কখনও ঋণের বৃদ্ধি ব্যতীত পরিশোধ করিতে পারেন না। ভবিষ্যতে যে অন্য প্রকার হইবে, তাহার কি লক্ষণ দেখা যায়? কিছুই না। তবে ইহা নিশ্চিত বলা যাইতে পারে যে, এক্ষণে আপনি যে ঋণ করিবেন, তাহা পরিশোধের সম্ভাবনা নাই।
যে ঋণ পরিশোধ করিতে পারেন না মনে জানিতেছেন, তাহা গ্রহণ করা পরকে ফাঁকি দিয়া টাকা লওয়া হয়। আপনি যদি এখন ১৫০০/- টাকা কর্জ করেন, তবে ঋণ গ্রহণ করাকে বঞ্চনা বলিতে হইবে। বরং ভিক্ষাবৃত্তি ভাল, তথাপি বঞ্চনা ভাল নহে। পিতৃ-আজ্ঞা পালনার্থ অথবা পিতার সুখবর্ধনের জন্য তাহা কর্তব্য নহে। এরূপ অধর্মাচরণ অপেক্ষা পিতার আজ্ঞা লঙ্ঘন কর্তব্য।
২। এই ৭০০০৲ টাকার ঋণ পরিশোধ হইবে না। ইহার পরিণাম কি হইবে? মহাজন ছাড়িবে না, তাহারা নালিশ করিয়া ডিক্রি করিবে। এমন কোন সম্পত্তি আমাদের নাই যাহা বিক্রয় করিয়া টাকা আদায় হইতে পারিবে। সুতরাং আপনি যে পরিমাণে পরামর্শের কথা লিখিয়াছেন, তাহা অন্যায় হইল কি প্রকার? এমন সর্বনাশ যাহাতে ঘটিবার সম্ভাবনা সে ঋণ কেন করিবেন? ইহা জানেন যে, ডিক্রি হইলে একখানি ওয়ারেণ্ট বাহির হইলেই আপনার চাকুরীটি যাইবে এরূপ নিয়ম হইয়াছে।
৩। আপনি যদি এই ঋণ বৃদ্ধি করেন তবে যতীশের যাবজ্জীবনের জন্য যে কি গুরুতর অনিষ্ট করিবেন তাহা বলা যায় না। যতীশ সে সবেরই দায়িক। যেদিন সে প্রথম উপার্জন করিতে শিখিবে সেই দিন হইতে এই ঋণের ভার তাহার মাথার উপর চাপিবে। আর ইহজন্মে তাহা নামাইতে পারিবে কি না বলা যায় না। আপনাদিগের অবস্থা দেখিয়া ভরসা হয় না যে কখনও উদ্ধার পাইবে। যাহার স্কন্ধে ঋণের ভার চাপে তাহার অপেক্ষা অসুখী পৃথিবীতে আর কেহ নাই। যত টাকা উপার্জন করে তাহার একটী পয়সাও আপনার বলিয়া বোধ করিবার অধিকার থাকে না। উদাহরণ আমাকেই দেখিতেছেন। রমেশ মিত্র হাইকোর্টের জজ্, আর আমি মালদহের ক্ষুদ্র চাকুরীজীবী, পিতৃঋণই ইহার কারণ। অতএব আপনি যদি আর ঋণবৃদ্ধি করেন তবে আপনাকে যতীশের শত্রু বিবেচনা করিব। যদি বলেন, ঋণ না করিলে পিতার এই শেষ অবস্থায় অত্যন্ত মনঃপীড়া পাইবেন। আমার বিবেচনায় তাঁহাকে এই সকল কথা বুঝাইলে তিনি কদাচ ঋণ করিতে বলিবেন না। তিনি পুত্রবৎসল, অবশ্য আপনার এবং যতীশের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের প্রতি দৃষ্টি করিবেন। যদি না করেন, তবে তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিতে হইবে। পিতার অনুরোধে পুত্রের অনিষ্ট করিলে আপনি ধর্মে পতিত হইবেন।
আমার নিশ্চিত বিশ্বাস যে, এই সকল কথা তাঁহাকে বুঝাইয়া বলিলে, তিনি আপনাকে ঋণ করিতে দিবেন না। কিন্তু স্বয়ং ঋণ করিয়া যতীশের বিবাহ দিবেন। আপনার কাছে বিশেষ ভিক্ষা এই যে, কোন মতে তাহা করিতে দিবেন না। তিনি যদি ঋণ করিতে প্রবৃত্ত হয়েন, তবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিবেন যে, তিনি যে ঋণ করিতেছেন, তাহা কে পরিশোধ করিবে? তিনি বলিবেন যে, আমার ২২৫৲ টাকা পেন্সন আছে, আমি তাহা হইতে পরিশোধ করিব। তখন বুঝাইয়া দিবেন যে, তাহা ভ্রম মাত্র। আজি নয় বৎসর হইল আমরা পৃথক হইয়াছি। তখন শ্রীযুক্তের ৮০০০৲ টাকা দেনা ছিল। এক্ষণে ৩৬০০৲ আছে, অতএব এই ৯ বৎসরে ৪৪০০৲ টাকা মাত্র পরিশোধ হইয়াছে। আমাতে ও দাদাতে ঋণ পরিশোধার্থেই নয় বৎসরে ৪৪০০৲ টাকা দিয়াছি। অতএব নয় বৎসরের মধ্যে শ্রীযুক্ত পেন্সন হইতে একটী পয়সাও কর্জ শোধ করেন নাই। অতএব ভবিষ্যতে করিবেন তাহার কোন সম্ভাবনা নাই।
অতএব তিনি এক্ষণে ঋণ করিলে পরিশোধ করিবে কে? তিনি বলিবেন, পুত্রগণ। কিন্তু পুত্রগণের মধ্যে মধ্যম নিজের দেনাই পরিশোধ করিতে অশক্ত, পিতৃঋণের এক পয়সাও পরিশোধ করিবার সম্ভাবনা নাই। কনিষ্ঠও তদ্রূপ, তাহার যে আয় তাহাতে কোনমতে সংসার নির্বাহ হয়, ঋণ পরিশোধ হইতে পারে না। জ্যেষ্ঠ এক পয়সাও দিবেন না, ইহা নিশ্চিত, বাকী আমি কেবল একা দায়ে ধরা পড়ি। অতএব তিনি যদি এখন যতীশের বিবাহের জন্য ঋণ করেন, তবে আমার ঘাড়ে ফেলিবার জন্য। উহা আমার প্রতি কতবড় অত্যাচার হইবে তাহা তাঁহাকে আপনি বুঝাইবেন।
আর একটি কথা যদিও অবক্তব্য, তথাপি এস্থলে না বলিলে নয়। আমার উপর রাগ করিবেন না, আমার দেহের প্রতি বিশ্বাস নাই। আমার শরীরে শ্বাস কাশাদির বীজ রোপিত আছে, অন্যান্য উৎকট রোগেরও লক্ষণ আছে। তাহার প্রতিকারের চেষ্টা করি না, কেন না দীর্ঘজীবন বাসনা করি না। অধিক দিন বাঁচিলে অধিক কষ্ট পাইতে হয় এবং প্রতিকারের চেষ্টায় কষ্ট পাইতে হয়, প্রায়ই কোন না কোন ব্যাধিতে আমার শরীর রোগগ্রস্ত।
অতএব কতদিন বাঁচিয়া থাকিব তাহা বলিতে পারি না, বোধহয় ঋণ পরিশোধ পর্যন্ত আমাকে বাঁচিতে হইবে না। আর কেবল ঋণ পরিশোধের জন্য বাঁচিয়া কি হইবে। কোন ঋণ হইতে মুক্তি না পাই, তবে রোগের কোন চিকিৎসা হইবে না।
যতীশের বিবাহে আপনি বা শ্রীযুক্ত এক পয়সাও ঋণ করিতে পারিবেন না। ইহাতে বলিবেন যতীশের কি বিবাহ দেওয়া হইবে না? আমার বিবেচনায় যতীশের বিবাহ দুই বৎসর পরেও ভাল, তথাপি ঋণ কর্তব্য নহে। নিতান্ত যদি বিবাহ দেওয়া কর্তব্য হয়, (কিন্তু তাহার প্রয়োজন নাই); অক্ষয় সরকারের কাছে আপনার চারিশত টাকা পাওনা আছে, সে এখন দিবে না সত্য বটে, কিন্তু গঙ্গাচরণকে ধরিতে পারিলে সে দিতে পারে, সেই চারিশত টাকা আদায় করুন। আর আপনি ২০০৲ টাকা দিতে পারেন, শ্রীযুক্ত ২০০৲, আমিও দুই শত টাকা দিব। এই হাজার টাকা ব্যয় করিয়া বিবাহ দিন। ঋণ করিতে পারিবেন না। এই সকল টাকা সংগ্রহ করিতে দুই তিন মাস লাগিবে। অতএব এই ফাল্গুন মাসে বিবাহ হইতে পারে।
প্রণতঃ বঙ্কিম
—————-
৩০ কার্তিক
শ্রীচরণেষু—
আপনি মঙ্গলবার যে পত্র লিখিয়াছিলেন তাহা আমি বৃহস্পতিবারে পাইয়াছি। আর বুধবারে যে পত্র লেখেন তাহা শুক্রবার পাইয়াছি। এরূপ বিলম্বের কারণ আপনার চিঠি সময়ে post হয় না। তিনটার মধ্যে চিঠি post করিতে হয়।
দাদার পীড়া মারাত্মক নহে তজ্জন্য ব্যস্ত হইবেন না। গোড়ায় Homeopathic treatment করিলে tap করিবার প্রয়োজন হইত না। এক্ষণে হইয়াছে ঔষধ আমি তাঁহাকে বলিয়া দিব যদি আর কখনও হয় তবে প্রথমাবস্থায় ব্যবহার করিলে সহজে আরাম হইবে। আমার ভরসা আছে রক্ষা পাইবেন।
যতদিন না নিঃশেষ আরাম হন ততদিন কলিকাতায় রাখিবেন। বোধ করি তাঁহার চিকিৎসার ব্যয় তাঁহাকে কিছুই বহন করিতে দেন নাই। ব্যয় আমার ব্যয়ে হওয়া কর্তব্য। টাকার প্রয়োজন হইলে উমাচরণকে বলিবেন সে সরবরাহ করিবে। দাদার নিঃশেষ আরোগ্য সম্বাদের প্রতীক্ষায় রহিলাম। ১০ই মাঘ।
শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
—————-
শ্রীচরণেষু—
আপনার একখানা পত্র পাইলাম, তাহার তারিখ নাই, প্রায় থাকে না।
বরদা ভট্টাচার্য ৫৲ খাজানা পায় তজ্জন্য সে ৫X২০=১০০৲ পাইতে পারে। High Court ruling এই যে Every person should receive amount of compensation proportionate to his interest in the land, উহার interest ৫৲ annually— এ জন্য ১০০৲ পাইতে পারে। আমি ঐ ১০০৲ লইয়া সাধাসাধি করিয়াছি তাহাতে সে আমাকে কটূক্তি করিয়া গিয়াছে।
তার উপর উহাকে বলিয়াছি যে যদি তুমি না লও তবে তোমাকে চিরকাল ঐ খাজনা দিব। এবং তাহার খাজানা আদায়ের জন্য আমার অন্য সম্পত্তি আবদ্ধ রাখিয়া লেখাপড়া করিয়া registry করিয়া দিতে চাহিয়াছিলাম। তাহাতে সে রাজী না হইয়া কড়া কথা বলিয়া গিয়াছে।
তাহাকে কেহ বুঝাইয়াছে যে আমি ১২০০৲ টাকা পাইয়াছি তাহার মধ্যে ৮০০৲ তাহার প্রাপ্য, বড়বাবু আমাকে আটশত টাকা দিবার জন্য পুনঃ পুনঃ অনুরোধ করিয়াছেন এবং নিজে চণ্ডী ভট্টচার্য প্রভৃতিকে ফাঁকি দিবার জন্য আমার সাহায্য চাহিতেছেন। যখন জমি মাপ হয় তখন আমি ঝিনাইদহ ছিলাম, আমার লোকজন জরিপের সময়ে কেহ উপস্থিত ছিল না। তথাপি এই ভট্টাচার্য বলিয়া বেড়াইতেছে যে আমি জুয়াচুরি করিয়া খরিদা ব্রহ্মোত্তর বলিয়া তাহা খাইয়াছি এবং আপনাকেও ঐরূপ লিখিতে সাহস করিয়াছে। যখন কাঁটালপাড়ার সকল লোকের আমার প্রতি এই ব্যবহার, তখন কাজেই কাঁটালপাড়ার বাড়ী ফেলিয়া দিলাম।
ইতি ১১ জুন
শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
—————-
Midnapore, 1887
17th Aug., ২রা ভাদ্র
17th Aug., ২রা ভাদ্র
শ্রীচরণেষু—
কাঁটালপাড়ায় স্কুল বা কলেজ বা University যাহাই হ’ক তাহাতে আমি কোন সাহায্য করিব না। কাঁটালপাড়ার পূজায় আমি টাকা দিব না। এ বৎসর আমি ও আমার পরিবার পূজার সময়ে মেদিনীপুরেই থাকিব। সুতরাং কলিকাতাতেও পূজা করিতে পারিলাম না।
যেখানে বরদা ভট্টাচার্যের মত ব্যক্তি আমাকে জুয়াচোর বলে, যে স্থানে রামকৃষ্ণ ও ব্রজনাথের মত লোক আমার পিতাকে জালসাজ বলে, যে দেশে বসন্ত ও চণ্ডী ভট্টাচার্যের মত লোকের সঙ্গে দলাদলি এবং যেখানে বড়বাবুর মত সহোদরের মুখদর্শন করিতে হয়, সে দেশের সঙ্গে আমি কোন সম্বন্ধ রাখিব না। সেখানে আমার দুর্গোৎসব হইবে না।
শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
—————-
আপনি বাড়ী আসিয়াছেন জানিয়া আনন্দিত হইলাম। আসিবেন তাহা জানিতাম, কেন না আমি দেখিয়াছি আপনার মনে রাগ ভিন্ন বৈরাগ্য উপস্থিত হয় নাই, রাগ পড়িয়া যায়, বৈরাগ্য ভিন্ন সংসার ত্যাগ হইতে পারে না। এজন্য আমি যতীশের মাতাকে বলিয়াছিলাম যে চারিমাস অপেক্ষা কর, কেননা টিকিটের ম্যায়াদ ৪ মাস। চারিমাসে না আসেন তখন ব্যস্ত হইও। যাহা হউক আসিয়া ভালই…
অনেক দুঃখ পাইয়াছেন; ইহাই প্রমাণ যে বৈরাগ্যের অনেক দেরী, মমতা পরিত্যাগই বৈরাগ্য, যাহা হউক আসিয়াছেন ভালই হইয়াছে, এখন আমার বোধ হইতেছে যে আমাকে আপনার ঠিকানা বলিয়া দিতে নিষেধ না করিলে ভাল হইত। কেননা আমি ঠিকানা বলিতে অস্বীকৃত হইয়া অনেকের কাছে শত্রু হইয়াছি, অন্ততঃ বড়বাবু ঐরূপ প্রতিপন্ন করিতেছেন।
চিরণ প্রভৃতির…অবস্থা তাহাও আমারই দোষ বলিতে হইবে, কেননা আমি মাসে ত্রিশ টাকা মাত্র দিয়াছি কিন্তু আমারও দোষ বড় নাই কেননা আমি আপনাকে টাকা পাঠাইয়াছি। আপনি বিদেশ যাত্রার পর তাহাকে কিছু দিই নাই বটে…সে খুচরা ১০/২০ টাকা নিতে নারাজ এককালীন বেশী দিতে হইবে। আমি টাকার সাশ্রয় করিবার জন্য বাড়ীর ত্রিশ টাকা বরাদ্দ করি নাই। কিন্তু অনেকের সেই বিশ্বাস এবং সেইজন্য আমি নিন্দিত হইয়াছি। বড়বাবুর কাছে অনেক গালি খাইয়াছি। কপালী যে তাহার ভাইকে ২৫৲ টাকা দেয় সেই দৃষ্টান্ত দ্বারা আমার চরিত্রের শোধন করিবার চেষ্টা পাইয়াছেন। বড়বাবু…
তিনি আমাকে সম্প্রতি লিখিয়াছেন তাঁহার সহিত শত্রুতা করাই ভায়েদের কার্য, তিনি মরিলে আমরা কি করিব জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। আমি কোন উত্তর দেই নাই।
শ্রীচরণেষু—
—————-
27.12.87
জ্যোতিশের নিজ পরিবার প্রতিপালন…কিন্তু আপনার ভার তাহার উপর আমার দিবার ইচ্ছা নাই। তাহা পূর্বপত্রে লিখিয়াছিলাম। এবং এক্ষণে সবিস্তার বিবেচনা করিয়া লিখিতেছি—
স্বর্গীয় কর্তা মহাশয় জীবিত থাকিতে তাঁহার (১) আহার (২) পরিধেয় (৩) চিকিৎসা এই তিন প্রকারের ব্যয় আমরা নির্বাহ করিতাম। আপনার সম্বন্ধেও আমি তাহাই করিতে চাহি। অতএব ইহার বন্দোবস্ত আমি নিম্নলিখিতভাবে করিলাম।—
(১) নিজ প্রয়োজনীয় ঘৃত ময়দা কিনিয়া দিয়া আসিবে। /১॥• সের দুগ্ধ বরাদ্দ থাকিতে পারে তাহার মূল্য মাস মাস আমি দিব…
(২) বস্ত্র…তা এবং শয্যা গাত্রবস্ত্র প্রভৃতি যখন যাহা নিজের জন্য প্রয়োজনীয় হইবে উমাচরণকে বা আমাকে জানাইলে পাঠাইয়া দিব।
(৩) আপনার নিজ চিকিৎসার বিল ডাক্তারকে আমার কাছে পাঠাইতে বলিয়া দিলাম।
কর্তার প্রতি যাহা করিতাম আপনার প্রতি তাহা করিতে চাহিতেছি ইহাতে আপনার অনভিমত হইবে না বিবেচনা করি।
…দ্বারা লেপের খোল পাঠাইয়া দিয়াছি পৌঁছ সংবাদ দিবেন। ১৩ পৌষ।