১৭৫৬ খৃষ্টীয় অব্দের ১০ই এপ্রিল, সিরাজ উদ্দৌলা বাঙ্গালা ও বিহারের সিংহাসনে অধিরূঢ় হইলেন। তৎকালে, দিল্লীর অধীশ্বর এমন দুরবস্থায় পড়িয়াছিলেন যে, নূতন নবাব তাঁহার নিকট সনন্দ প্রার্থনা করা আবশ্যক বোধ করিলেন না।

তিনি, রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হইয়া, প্রথমতঃ, আপনি পিতৃব্যপত্নীর সমুদয় সম্পত্তি হরণ করিবার নিমিত্ত, সৈন্য প্রেরণ করিলেন। তাঁহার পিতৃব্য নিবাইশ মহম্মদ, ষোল বৎসর ঢাকার অধিপতি থাকিয়া, প্ৰভূত অর্থসঞ্চয় করিয়াছিলেন। তিনি লোকান্তর প্রাপ্ত হইলে, তাঁহার পত্নী তদীয় সমস্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হয়েন। ঐ বিধবা নারী, আপন সম্পত্তি রক্ষার নিমিত্ত, যে সৈন্য রাখিয়াছিলেন, তাহারা কাৰ্য্যকালে পলায়ন করিল; সুতরাং, তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি, নির্ব্বিবাদে, নবাবের প্রাসাদে প্রেরিত হইল, এবং তিনিও সহজে আপন বাসস্থান হইতে বহিষ্কৃত হইলেন।

রাজবল্লভ ঢাকায় নিবাইশ মহম্মদের সহকারী ছিলেন, এবং মুসলমানদিগের অধিকারসময়ের প্রথা অনুসারে, প্ৰজার সর্ব্বনাশ করিয়া, যথেষ্ট ধন সঞ্চয় করেন। ১৭৫৬ খৃঃ অব্দের আরম্ভে, নিবাইশ পরলোক যাত্রা করেন। তৎকালে আলিবর্দ্দি সিংহাসনারূঢ় ছিলেন, কিন্তু বার্দ্ধদ্ক্য বশতঃ, হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিলেন। রাজবল্লভ ঐ সময়ে মুরশিদাবাদে উপস্থিত থাকাতে, সিরাজ উদ্দৌলা, তাঁহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া, তদীয় সম্পত্তি রুদ্ধ করিবার নিমিত্ত, ঢাকায় লোক প্রেরণ করেন। রাজবল্লাভের পুত্ত্র কৃষ্ণদাস, অগ্ৰে সংবাদ জানিতে পারিয়া, সমস্ত সম্পত্তি লইয়া, নৌকারোহণ পূর্ব্বক, গঙ্গাসাগর অথবা জগন্নাথ যাত্রার ছলে, কলিকাতায় পলায়ন করেন; এবং, ১৭ই মার্চ্চ, তথায় উপস্থিত হইয়া, তথাকার অধ্যক্ষ ড্রেক সাহেবের অনুমতি লইয়া, নগর মধ্যে বাস করেন। তিনি মনে মনে স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন, যাবৎ পিতার মুক্তিসংবাদ না পান, তত দিন ঐ স্থানে অবস্থিতি করিবেন।

রাজবল্লভের সম্পত্তি এইরূপে হস্তবহির্ভূত হওয়াতে, সিরাজ উদ্দৌলা সাতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়া ছিলেন; এক্ষণে, সিংহাসনারূঢ় হইয়া, কৃষ্ণদাসকে আমার হস্তে সমৰ্পণ করিতে হইবেক, এই দাওয়া করিয়া, কলিকাতায় দূত প্রেরণ করিলেন। কিন্তু, ঐ দূত বিশ্বাসযোগ্য পত্ৰাদির প্রদর্শন করিতে না পারিবাতে, ড্রেক সাহেব তাহাকে নগর হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিলেন।

কিছু দিন পরে, য়ুরোপ হইতে এই সংবাদ আসিল, অল্প দিনের মধ্যেই, ফরাসিদিগের সহিত ইঙ্গরেজদের যুদ্ধ ঘটিবার সম্ভাবনা হইয়াছে। তৎকালে ফরাসিরা, করমণ্ডল উপকূলে, অতিশয় প্রবল ও পরাক্রান্ত ছিলেন; আর, কলিকাতায় ইঙ্গরেজদিগের যত য়ুরোপীয় সৈন্য ছিল, চন্দন নগরে ফরাসিদের তদপেক্ষ দশ গুণ অধিক থাকে। এই সমস্ত কারণে, কলিকাতাবাসী ইঙ্গরেজেরা আপনাদের দুর্গের সংস্কার করিতে আরম্ভ করিলেন। এই ব্যাপার, অনতিবিলম্বে, অল্পবয়স্ক উদ্ধতস্বভাব নবাবের কর্ণগোচর হইল। ইঙ্গরেজদিগের উপর তাঁহার সবিশেষ দ্বেষ ছিল; এজন্য, তিনি, ভয় প্রদর্শন পূর্ব্বক, ড্রেক সাহেবকে এই পত্র লিখিলেন, আপনি নূতন দুর্গ নির্মাণ করিতে পাইবেন না; পুরাতন যাহা আছে, ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন; এবং, অবিলম্বে, কৃষ্ণদাসকে আমার লোকের হস্তে সমৰ্পণ করিবেন।

আলিবর্দ্দির মৃত্যুর দুই এক মাস পূৰ্ব্বে, সিরাজ উদ্দৌলার দ্বিতীয় পিতৃব্য সায়দ মহম্মদের পরলোকপ্ৰাপ্তি হয়। তাঁহার পুত্ত্র সকতজঙ্গ তদীয় সমস্ত সৈন্য, সম্পত্তি, ও পূৰ্ণিয়ার রাজত্বের অধিকারী হয়েন। সুতরাং, সকতজঙ্গ, সিরাজ উদ্দৌলার সুবাদার হইবার কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে, রাজ্যশাসনে প্ৰবৃত্ত হইয়াছিলেন। তাহারা উভয়েই তুল্যরূপ নির্বোধ, নৃশংস, ও অবিমৃশ্যকারী ছিলেন; সুতরাং, অধিক কাল, তাঁহাদের পরস্পর সম্প্রীত ও ঐকবাক্য থাকিবেক, তাহার কোনও সম্ভাবনা ছিল না।

সিরাজ উদ্দৌলা, সিংহাসনে অধিরূঢ় হইয়া, মাতামহের পুরাণ কৰ্ম্মচারী ও সেনাপতিদিগকে পদচ্যুত করিলেন। কুপ্রবৃত্তির উত্তেজক কতিপয় অল্পবয়স্ক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি তাঁহার প্ৰিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিল। তাহারা, প্ৰতিদিন, তাঁহাকে কেবল অন্যায্য ও নিষ্ঠুর ব্যাপারের অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতে লাগিল। ঐ সকল পরামর্শের এই ফল দর্শিয়াছিল যে, তৎকালে, প্ৰায় কোনও ব্যক্তির সম্পত্তি বা কোনও স্ত্রীলোকের সতীত্ব রক্ষা পায় নাই।

রাজ্যের প্রধান প্ৰধান লোকেরা, এই সমস্ত অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া, তাঁহার পরিবর্ত্তে, অন্য কোনও ব্যক্তিকে সিংহাসনে বসাইবার চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন। তাঁহারা, আপাততঃ, সকতজঙ্গকেই লক্ষ্য করিলেন। তাঁহারা নিশ্চিত জানিতেন, তিনি সিরাজ উদ্দৌলা অপেক্ষা ভদ্র নহেন; কিন্তু, মনে মনে এই আশা করিয়াছিলেন, আপাততঃ, এই উপায় দ্বারা, উপস্থিত বিপদ হইতে মুক্ত হইয়া, পরে, কোনও যথার্থ ভদ্র ব্যক্তিকে সিংহাসনে নিবিষ্ট করিতে পরিবেন।

এ বিষয়ে সমুদয় পরামর্শ স্থির হইলে, সকতজঙ্গের সুবাদারীর সনন্দপ্রার্থনায়, দিল্লীতে দূত প্রেরিত হইল। আবেদন পত্রে বার্ষিক কোটি মুদ্রা কর প্রদানের প্রস্তাব থাকাতে, অনায়াসেই তাহাতে সম্রাটের সম্মতি হইল।

সিরাজ উদ্দৌলা, এই চক্রান্তের সন্ধান পাইয়া, অবিলম্বে সৈন্য সংগ্ৰহ করিয়া, সকতজঙ্গের প্রাণদণ্ডার্থে, পূর্ণিয়া যাত্ৰা করিলেন। সৈন্য সকল, রাজমহলে উপস্থিত হইয়া, গঙ্গা পার হইবার উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময়ে, নবাব, কলিকাতার ড্রেক সাহেবের নিকট হইতে, আপন পূৰ্ব্বপ্রেরিত পত্রের এই উত্তর পাইলেন, আমি আপনকার আজ্ঞায় কদাচি সম্মত হইতে পারি না।

এই উত্তর পাইয়া, তাঁহার কোপানল প্ৰজ্বলিত হইয়া উঠিল। তখন তিনি, ইঙ্গরেজেরা রাজ্যের বিরুদ্ধাচারীদিগকে আশ্রয় দিতেছে; এবং, আমার অধিকারের মধ্যে, দুৰ্গনির্মাণ করিয়া, আপনাদিগকে দৃঢ়ীভূত করিতেছে; অতএব, আমি তাহাদিগকে নির্মূল করিব; এই প্ৰতিজ্ঞা করিয়া, সৈন্যদিগকে, অবিলম্বে শিবির ভঙ্গ করিয়া, কলিকাতা যাত্ৰা করিতে আদেশ দিলেন; কাশিম বাজারে ইঙ্গরেজদিগের যে কুঠী ছিল, আগমনকালে তাহা লুঠ করিলেন; এবং, তথায় যে যে য়ুরোপীয়দিগকে দেখিতে পাইলেন, সকলকেই কারারুদ্ধ করিলেন।

কলিকাতাবাসী ইঙ্গারেজেরা, ষাটি বৎসরের অধিক কাল, নিরুপদ্রবে ছিলেন; সুতরাং, বিশেষ আস্থা না থাকাতে, তাঁহাদের দুর্গ একপ্রকার নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। তাঁহারা আপনাদিগকে এত নিঃশঙ্ক ভাবিয়াছিলেন যে, দুর্গপ্রাচীরের বহির্ভাগে বিংশতি ব্যামের মধ্যেও, অনেক গৃহ নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন। তৎকালে, দুৰ্গমধ্যে একশত সত্তর জন মাত্র সৈন্য ছিল; তন্মধ্যে কেবল ষাটি জন য়ুরোপীয়। বারুদ পুরাণ ও নিস্তেজ; কামান সকল মরিচা ধরা। এ দিকে, সিরাজ উদ্দৌলা, চল্লিশ পঞ্চাশ সহস্র সৈন্য ও উত্তম উত্তম কামান লইয়া, কলিকাতা আক্রমণ করিতে আসিতেছেন। ইঙ্গারেজেরা দেখিলেন, আক্রমণ নিবারণের কোনও সম্ভাবনা নাই; অতএব, সন্ধি প্ৰাৰ্থনায়, বারংবার পত্র প্রেরণ করিতে লাগিলেন, এবং বহুসংখ্যক মুদ্রা প্রদানেরও প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু, নবাবের অন্য কোনও বিষয়ে কৰ্ণ দিতে ইচ্ছা ছিল না; তিনি ইঙ্গরেজদিগকে এক বারে উচ্ছিন্ন করিবার মানস করিয়াছিলেন; অতএব, পত্রের কোনও উত্তর না দিয়া, অবিশ্রামে কলিকাতা অভিমুখে আসিতে লাগিলেন।

১৬ই জুন, তাঁহার সৈন্যের অগ্রসর ভাগ চিতপুরে উপস্থিত হইল। ইঙ্গরেজেরা, ইতঃপূর্ব্বে, তথায় এক উপদুর্গ প্ৰস্তুত করিয়া রাখিয়াছিলেন। তথা হইতে তাঁহারা, নবাবের সৈন্যের উপর, এমন ভয়ানক গোলাবৃষ্টি করিতে লাগিলেন যে, তাহারা, হটিয়া গিয়া, দমদমায় অবস্থিতি করিল।

নবাবের সৈন্যেরা, ১৭ই জুন, নগর বেষ্টন করিয়া, তৎপর দিন, এক কালে চারি দিকে আক্রমণ করিল। তাহারা, ভিত্তির সন্নিহিত গৃহ সকল অধিকার করিয়া, এমন ভয়ানক গোলাবৃষ্টি করিতে লাগিল যে, এক ব্যক্তিও, সাহস করিয়া, গড়ের উপর দাঁড়াইতে পারিল না। ঐ দিবস, অনেক ব্যক্তি হত ও অনেক ব্যক্তি আহত হইল, এবং দুর্গের বহির্ভাগ বিপক্ষের হস্তগত হওয়াতে, ইঙ্গরেজদিগকে দুর্গের অভ্যন্তর ভাগে প্ৰবেশ করিতে হইল। রাত্ৰিতে, বিপক্ষেরা দুর্গের চতুঃপার্শ্ববৰ্ত্তী অতি বৃহৎ কতিপয় গৃহে অগ্নি প্ৰদান করিল; ঐ সকল গৃহ অতি ভয়ানক রূপে জ্বলিত হইতে লাগিল।

অতঃপর কি করা উচিত, ইহার বিবেচনা করিবার নিমিত্ত, দুৰ্গস্থিত ইঙ্গারেজেরা একত্র সমবেত হইলেন। তৎকালীন সেনাপতিদিগের মধ্যে এক ব্যক্তিও কাৰ্য্যজ্ঞ ছিলেন না। তাঁহারা সকলে কহিলেন, পলায়ন ব্যতিরেকে পরিত্ৰাণ নাই। বিশেষতঃ, এত অধিক এতদেশীয় লোক দুর্গ মধ্যে আশ্রয় লইয়াছিল যে, তন্মধ্যে যে আহারসামগ্রী ছিল, তাহাতে এক সপ্তাহ চলিতে পারিত না। অতএব নিৰ্দ্ধারিত হইল, গড়ের নিকট যে সকল নৌকা প্ৰস্তুত আছে, পর দিন প্ৰত্যুষে, নগর পরিত্যাগ করিয়া, তদ্দ্বারা পলায়ন করাই শ্ৰেয়ঃ। কিন্তু, দুর্গ মধ্যে, এক ব্যক্তিও এমন ক্ষমতাপন্ন ছিলেন না যে, এই ব্যাপার সুশৃঙ্খল রূপে সম্পন্ন করিয়া উঠেন। সকলেই আজ্ঞাপ্ৰদানে উদ্যত; কেহই আজ্ঞাপ্ৰতিপালনে সম্মত নহে।

নিরূপিত সময় উপস্থিত হইলে, প্ৰথমতঃ স্ত্রীলোক সকল প্রেরিত হইলেন। অনন্তর, দুৰ্গস্থিত সমুদয় লোক ও নাবিকগণ ভয়ে অতিশয় অভিভূত হইল। সকল ব্যক্তিই তীরাভিমুখে ধাবমান। নাবিকেরা নৌকা লইয়া পলাইতে উদ্যত। ফলতঃ, সকলেই আপন লইয়া ব্যস্ত। যে, যে নৌকা সম্মুখে পাইল, তাহাতেই আরোহণ করিল। সৰ্ব্বাধ্যক্ষ ড্রেক সাহেব, ও সৈন্যাধ্যক্ষ সাহেব, সর্ব্ববাগ্ৰে পলায়ন করিলেন। যে কয়েক খান নৌকা উপস্থিত ছিল, কয়েক মুহুর্তের মধ্যে, কতক জাহাজের নিকটে, কতক হাবড়া পারে, চলিয়া গেল; কিন্তু, সৈন্য ও ভদ্র লোক অৰ্দ্ধেকেরও অধিক দুর্গ মধ্যে রহিয়া গেল।

সর্ব্বাধ্যক্ষ সাহেবের পলায়নসংবাদ প্ৰচারিত হইবা মাত্র, অবশিষ্ট ব্যক্তিরা, একত্ৰ সমবেত হইয়া, হলওয়েল সাহেবকে আপনাদের অধ্যক্ষ স্থির করিলেন। পলায়িতেরা, জাহাজে আরোহণ করিয়া, প্ৰায় এক ক্ৰোশ ভাটিয়া গিয়া, নদীতে নঙ্গর করিয়া রহিল। ১৯এ জুন, নবাবের সৈন্যেরা পুনর্বার আক্রমণ করিল; কিন্তু পরিশেষে অপসারিত হইল।

দুৰ্গবাসীরা, দুই দিবস পৰ্য্যন্ত, আপনাদের রক্ষা করিল, এবং জাহাজস্থিত লোকদিগকে অনবরত এই সঙ্কেত করিতে লাগিল, তোমরা আসিয়া আমাদের উদ্ধার কর। এই উদ্ধারক্রিয়া অনায়াসে সম্পন্ন হইতে পারিত। কিন্তু, পলায়িত ব্যক্তিরা, পরিত্যক্ত ব্যক্তিদিগের উদ্ধারার্থে, এক বারও উদ্যোগ করিল না। যাহা হউক, তখনও তাহাদের অন্য এক আশা ছিল। রয়েল জর্জ নামে এক খান জাহাজ, চিতপুরের নীচে, নঙ্গর করিয়া ছিল। হলওয়েল সাহেব, ঐ জাহাজ গড়ের নিকটে আনিবার নিমিত্ত, দুই জন ভদ্র লোককে পাঠাইয়া দিলেন; দুর্ভাগ্যক্রমে, উহা আসিবার সময় চড়ায় লাগিয়া গেল। এই রূপে, দুর্গস্থিত হতভাগ্যদিগের শেষ আশাও উচ্ছিন্ন হইল।

১৯এ জুন, রাত্ৰিতে, নবাবের সৈন্যেরা, দুর্গের চতুর্দ্দিকস্থ অবশিষ্ট গৃহ সকলে অগ্নি প্ৰদান করিয়া, ২০এ, পুনর্বার, পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর পরাক্রম সহকারে, আক্রমণ করিল। হলওয়েল সাহেব, আর নিবারণচেষ্টা করা ব্যৰ্থ বুঝিয়া, নবাবের সেনাপতি মাণিকচাঁদের নিকট পত্র দ্বারা সন্ধির প্রার্থনা করিলেন। দুই প্রহর চারিটার সময়, নবাবের পক্ষের এক সৈনিক পুরুষ, কামান ৰন্ধ করিতে সঙ্কেত করিল। তদনুসারে, ইঙ্গারেজেরা, সেনাপতির উত্তর আসিল ভাবিয়া, আপনাদের কামান ছোড়া রহিত করিলেন। তাঁহার এইরূপ করিবা মাত্র, বিপক্ষেরা প্রাচীরের নিকট দৌঁড়িয়া আসিল; প্রাচীর লঙ্ঘন করিয়া দুৰ্গ মধ্যে প্ৰবেশ করিতে লাগিল; এবং, তৎপরে এক ঘণ্টার মধ্যে, দুর্গ অধিকার করিয়া, লুঠ আরম্ভ করিল।

বেলা পাঁচটার সময়, সিরাজ উদ্দৌলা, চৌপালায় চড়িয়া, দুর্গ মধ্যে উপস্থিত হইলে, য়ুরোপীয়েরা তাঁহার সম্মুখে নীত হইল। হলওয়েল সাহেবের দুই হস্ত বদ্ধ ছিল, নবাব, খুলিয়া দিতে আজ্ঞা দিয়া, তাঁহাকে এই বলিয়া আশ্বাস প্ৰদান করিলেন, তোমার একটি কেশও স্পৃষ্ট হইবেক না; অনন্তর, বিস্ময় প্ৰকাশ পূর্ব্বক কহিলেন, এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তি, কি রূপে, চারি শত গুণ অধিক সৈন্যের সহিত, এত ক্ষণ যুদ্ধ করিল। পরে, এক অনাবৃত প্রদেশে সভা করিয়া, তিনি কৃষ্ণদাসকে সম্মুখে আনিতে আদেশ করিলেন। নবাব যে ইঙ্গরেজদিগকে আক্রমণ করেন, কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দেওয়া তাহার এক প্ৰধান কারণ। তাহাতে সকলে অনুমান করিয়াছিল, তিনি কৃষ্ণদাসের গুরুতর দণ্ড করিবেন; কিন্তু তিনি, তাহা না করিয়া, তাহাকে এক মহামূল্য পরিচ্ছদ পুরস্কার দিলেন।

বেলা ছয় সাত ঘণ্টার সময়, নবাব, সেনাপতি মাণিকচাঁদের হস্তে দুৰ্গ সমর্পণ করিয়া, শিবিরে গমন করিলেন। সমুদয়ে এক শত ছচল্লিশ জন য়ুরোপীয় বন্দী ছিল। সেনাপতি, সে রাত্ৰি তাহাদিগকে যেখানে রাখিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন, এমন স্থানের অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। তৎকালে, দুর্গের মধ্যে, দীর্ঘে বার হাত, প্রস্থে নয় হাত, এরূপ এক গৃহ ছিল। বায়ুসঞ্চারের নিমিত্ত, ঐ গৃহের এক এক দিকে এক এক মাত্র গবাক্ষ থাকে। ইঙ্গারেজেরা কলহকারী দুর্বৃত্ত সৈনিকদিগকে ঐ গৃহে রুদ্ধ করিয়া রাখিতেন। নবাবের সেনাপতি, দারুণ গ্রীষ্ম কালে, সমস্ত য়ুরোপীয় বন্দী দিগকে ঐ ক্ষুদ্র গৃহে নিক্ষিপ্ত করিলেন।

সে রাত্ৰিতে যন্ত্রণার পরিসীমা ছিল না। বন্দীরা, আতি ত্বরায়, ঘোরতর পিপাসায় কাতর হইল। তাহারা, রক্ষকদিগের নিকট বারংবার প্রার্থনা করিয়া, যে জল পাইল, তাহাতে কেবল তাহাদিগকে ক্ষিপ্তপ্ৰায় করিল। প্ৰত্যেক ব্যক্তি, সম্যক রূপে নিশ্বাস আকর্ষণ করিবার আশয়ে, গবাক্ষের নিকটে যাইবার নিমিত্ত, বিবাদ করিতে লাগিল; এবং, যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া, রক্ষীদিগের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিল, তোমরা, গুলি করিয়া, আমাদের এই দুঃসহ যন্ত্রণার অবসান কর। এক এক জন করিয়া, ক্ৰমে ক্ৰমে, অনেকে পঞ্চত্ব পাইয়া ভূতলশায়ী হইল। অবশিষ্ট ব্যক্তিরা, শবরাশির উপর দাঁড়াইয়া, নিশ্বাস আকর্ষণের অনেক স্থান পাইল, এবং তাহাতেই কয়েক জন জীবিত থাকিল।

পরদিন প্ৰাতঃকালে, ঐ গৃহের দ্বার উদ্ঘাটিত হইলে, দৃষ্ট হইল, এক শত ছচল্লিশের মধ্যে, তেইশ জন মাত্র জীবিত আছে। অন্ধকূপহত্যা নামে যে অতি ভয়ঙ্কর ব্যাপার প্ৰসিদ্ধ আছে, সে এই। এই হত্যার নিমিত্তই, সিরাজ উদ্দৌলার কলিকাতা আক্রমণ শুনিতে এত ভয়ানক হইয়া রহিয়াছে; উক্ত ঘোরতর অত্যাচার প্ৰযুক্তই, এই বৃত্তান্ত লোকের অন্তঃকরণে অদ্যাপি দেদীপ্যমান আছে, এবং সিরাজ উদ্দৌলাও নৃশংস রাক্ষস বলিয়া প্ৰসিদ্ধ হইয়াছেন। কিন্তু তিনি, পরদিন প্ৰাতঃকাল পৰ্য্যন্ত, এই ব্যাপারের বিন্দু বিসর্গ জানিতেন না। সে রাত্ৰিতে, সেনাপতি মাণিকচাঁদের হস্তে দুর্গের ভার অর্পিত ছিল; অতএব, তিনিই এই সমস্ত দোষের ভাগী।

২১এ জুন, প্ৰাতঃকালে, এই নিদারুণ ব্যাপার নবাবের কর্ণগোচর হইলে, তিনি অতিশয় অনবধান প্ৰদৰ্শন করিলেন। অন্ধকূপে রুদ্ধ হইয়া, যে কয় ব্যক্তি জীবিত থাকে, হলওয়েল সাহেব তাহাদের মধ্যে এক জন। নবাব, তাঁহাকে আহ্বান করিয়া, ধনাগার দেখাইয়া দিতে কহিলেন। তিনি দেখাইয়া দিলেন; কিন্তু, ধনাগারের মধ্যে পঞ্চাশ সহস্রের অধিক টাকা পাওয়া গেল না।

সিরাজ উদ্দৌলা, নয় দিবস, কলিকাতার সান্নিধ্যে থাকিলেন; অনন্তর, কলিকাতার নাম আলীনগর রাখিয়া, মুরশিদাবাদ প্ৰস্থান করিলেন। ২রা জুলাই, গঙ্গা পার হইয়া, তিনি হুগলীতে উত্তীর্ণ হইলেন, এবং লোক দ্বারা ওলন্দাজ ও ফরাসি দিগের নিকট কিছু কিছু টাকা চাহিয়া পাঠাইলেন। তিনি তাঁহাদিগকে এই বলিয়া ভয় প্ৰদৰ্শন করিলেন, যদি অস্বীকার কর, তোমাদেরও ইঙ্গরেজদের মত দুরবস্থা করিব। তাহাতে ওলন্দাজের সাড়ে চারি লক্ষ, আর ফরাসিরা সাড়ে তিন লক্ষ, টাকা দিয়া পরিত্ৰাণ পাইলেন।

যে বৎসর কলিকাতা পরাজিত হইল, ও ইঙ্গরেজেরা বাঙ্গালা হইতে দূরীকৃত হইলেন, সেই বৎসর, অর্থাৎ ১৭৫৬ খৃঃ অব্দে, দিনামারেরা, এই দেশে বাসের অনুমতি পাইয়া, শ্ৰীরামপুর নগর সংস্থাপিত করিলেন।

সিরাজ উদ্দৌলা, জয়লাভে প্ৰফুল্ল হইয়া, পূর্ণিয়ার অধিপতি পিতৃব্যপুত্ৰ সকতজঙ্গকে আক্রমণ করা স্থির করিলেন। বিবাদ উত্থাপন করিবার নিমিত্ত, আপনি এক ভূত্যকে ঐ প্রদেশের ফৌজদার নিযুক্ত করিয়া, পিতৃব্যপুত্ৰকে এই আজ্ঞাপত্ৰ লিখিলেন, তুমি অবিলম্বে ইহার হস্তে সমস্ত বিষয়ের ভার দিবে। ঐ উদ্ধত যুবা, পত্ৰ পাঠে ক্রোধান্ধ ও ক্ষিপ্ত প্ৰায় হইয়া, উত্তর লিখিলেন, আমি সমস্ত প্রদেশেব যথার্থ অধিপতি, দিল্লী হইতে সনন্দ পাইয়াছি; অতএব, আজ্ঞা করিতেছি, তুমি অবিলম্বে মুরশিদাবাদ হইতে চলিয়া যাও।

এই উত্তর পাইয়া, সিরাজ উদ্দৌলা, ক্ৰোধে অধৈৰ্য্য হইলেন, এবং, অতি ত্বরায়, সৈন্য সংগ্ৰহ করিয়া, পূর্ণিয়া যাত্ৰা করিলেন। সকতজঙ্গও, এই সংবাদ পাইয়া, সৈন্য লইয়া, তদাভিমুখে আগমন করিতে লাগিলেন। কিন্তু সকতজঙ্গ নিজে যুদ্ধের কিছুই জানিতেন না, এবং কাহারও পরামর্শ শুনিতেন না। তাঁহার সেনাপতির সৈন্য সহিত এক দৃঢ় স্থানে উপস্থিত হইল। ঐ স্থানের সম্মুখে জলা, পার হইবার নিমিত্ত মধ্যে এক মাত্র সেতু ছিল। সৈন্য সকল সেই স্থানে শিবির সন্নিবেশিত করিল। কিন্তু, তদীয় সৈন্য মধ্যে, এক ব্যক্তিও উপযুক্ত সেনাপতি ছিলেন না, এবং অনুষ্ঠানেরও কোনও পরিপাটী ছিল না। প্ৰত্যেক সেনাপতি, আপন আপন সুবিধা অনুসারে, পৃথক পৃথক স্থানে সেনা নিবেশিত করিলেন। সিরাজ উদ্দৌলার সৈন্য, ঐ জলার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া, সকতজঙ্গের সৈন্যের উপর গোলা চালাইতে লাগিল। বড় বড় কামানের গোলাতে তদীয় সৈন্য ছিন্নভিন্ন হইলে, তিনি, নিতান্ত উন্মত্তের ন্যায়, স্বীয় অশ্বারোহীদিগকে, জলা পার হইয়া, বিপক্ষসৈন্য আক্রমণ করিতে আজ্ঞা দিলেন। তাহারা, অতি কষ্টে কর্দ্দম পার হইয়া, শুষ্ক স্থানে উপস্থিত হইবা মাত্র, সিরাজ উদ্দৌলার সৈন্য অতি ভয়ানক রূপে তাহাদিগকে আক্রমণ করিল।

ঘোরতর যুদ্ধ হইতেছে, এমন সময়ে, সকতজঙ্গ স্বীয় শিবিরে প্রবেশ করিলেন, এবং, অত্যধিক সুরাপান করিয়া, এমন মত্ত হইলেন যে, আর সোজা হইয়া বসিতে পারেন না। তাঁহার সেনাপতিরা আসিয়া তাঁহাকে, রণস্থলে উপস্থিত থাকিবার নিমিত্ত, অতিশয় অনুরোধ করিতে লাগিলেন; পরিশেষে, ধরিয়া থাকিবার নিমিত্ত এক ভৃত্য সমেত, তাঁহাকে হস্তীতে আরোহণ করাইয়া, জলার প্রান্ত ভাগে উপস্থিত করিলেন। তথায় উপস্থিত হইবা মাত্ৰ, শত্রুপক্ষ হইতে এক গোলা আসিয়া তাঁহার কপালে লাগিল। তিনি তৎক্ষণাৎ পঞ্চত্ব প্ৰাপ্ত হইলেন। সৈন্যেরা, তাঁহাকে প্ৰাণত্যাগ করিতে দেখিয়া, শ্রেণী ভঙ্গ পূর্ব্বক পলায়ন করিল। দুই দিবস পরে, নবাবের সেনাপতি মোহনলাল পূর্ণিয়া অধিকার করিলেন, এবং তথাকার ধনাগারে প্রাপ্ত ন্যূনাধিক নবতি লক্ষ টাকা ও সকতজঙ্গের যাবতীয় অন্তঃপুরিকাগণ মুরশিদাবাদে পঠাইয়া দিলেন।

সিরাজ উদ্দৌলা, সাহস করিয়া, যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতে পারেন নাই; বস্তুতঃ, তিনি রাজমহলের অধিক যান নাই; কিন্তু, এই জয়ের সমুদয় বাহাদুরী আপনার বোধ করিয়া, মহাসমারোহে মুরশিদাবাদ প্রত্যাগমন করিলেন।

এ দিকে, ড্রেক সাহেব, কাপুরুষত্ব প্ৰদৰ্শন পূৰ্ব্বক, পলায়ন করিয়া, স্বীয় অনুচরবর্গের সহিত নদীমুখে জাহাজে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। তথায়, অনেক ব্যক্তি, রোগাভিভূত হইয়া, প্ৰাণত্যাগ করিল।

কলিকাতার দুর্ঘটনার সংবাদ মান্দ্ৰাজে পঁহুছিলে, তথাকার গবর্ণর ও কৌন্সিলের সাহেবেরা যৎপরোনাস্তি ব্যাকুল হইলেন, এবং চারি দিকে বিপদসাগর দেখিতে লাগিলেন। সেই সময়ে, ফরাসিদিগের সহিত ত্বরায় যুদ্ধ ঘটিবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা হইয়াছিল। ফরাসিরা তৎকালে পণ্ডিচরীতে অতিশয় প্ৰবল ছিলেন; ইঙ্গরেজদিগের সৈন্য অতি অল্প মাত্র ছিল। তথাপি তাঁহারা বাঙ্গালার সাহায্য করাই সর্বাগ্ৰে কৰ্ত্তব্য স্থির করিলেন। তদনুসারে, তাঁহারা অতি ত্বরায় কতিপয় যুদ্ধজাহাজ ও কিছু সৈন্য সংগ্ৰহ করিলেন, এবং এড্‌মিরাল ওয়াটসন সাহেবকে জাহাজের কর্তৃত্ব দিয়া, আর কর্ণেল ক্লাইব সাহেবকে সৈন্যাধ্যক্ষ করিয়া, বাঙ্গালায় পাঠাইলেন।

ক্লাইব, অষ্টাদশ বর্ষ বয়ঃক্রম কালে, কোম্পানির কেরানি নিযুক্ত হইয়া, ত্ৰয়োদশ বৎসর পূর্ব্বে, ভারতবর্ষে আগমন করেন, সাংগ্ৰামিক ব্যাপারে গাঢ়তর অনুরাগ থাকাতে, প্রার্থনা করিয়া সেনাসংক্রান্ত কৰ্ম্মে নিবিষ্ট হয়েন, এবং, অল্প কাল মধ্যে, এক জন প্ৰসিদ্ধ যোদ্ধা হইয়া উঠেন। এই সময়ে, তিনি বয়সে যুবা, কিন্তু অভিজ্ঞতাতে বৃদ্ধ হইয়াছিলেন।

মান্দ্ৰাজে উদ্যোগ করিতে অনেক সময় নষ্ট হয়; এজন্য, জাহাজ সকল অকটোবরের পূর্ব্বে বহির্গত হইতে পারিল না। তৎকালে উত্তরপূৰ্ব্বীয় বায়ুর সঞ্চার আরব্ধ হইয়াছিল; এ প্ৰযুক্ত, জাহাজ সকল, ছয় সপ্তাহের ন্যূনে, কলিকাতায় উপস্থিত হইতে পারিল না, তন্মধ্যে দুই খানার আরও অধিক বিলম্ব হইয়াছিল।

কলিকাতার উদ্ধারার্থে, মান্দ্ৰাজ হইতে সমুদয়ে ৯০০ গোরা ও ১৫০০ সিপাই প্রেরিত হয়। তাহারা, ২০এ ডিসেম্বর, ফলতায়, ও ২৮এ, মায়াপুরে পঁহুছিল। তৎকালে মায়াপুরে মুসলমানদিগের এক দুর্গ ছিল। কৰ্ণেল ক্লাইব, শেষোক্ত দিবসে, রজনীযোগে, স্বীয় সমস্ত সৈন্য’ তীরে অবতীর্ণ করিলেন; কিন্তু, পথদর্শকদিগের দোষে, অরুণোদয়ের পূর্বে, ঐ দুর্গের নিকট পঁহুছিতে পারিলেন না।

নবাবের সেনাপতি মাণিকচাঁদ, কলিকাতা হইতে অকস্মাৎ তথায় উপস্থিত হইয়া, ক্লাইবকে আক্রমণ করিলেন। ঐ সময়ে, নবাবের সৈন্যেরা যদি প্ৰকৃত রূপে কাৰ্য্য সম্পাদনা করিত, তাহা হইলে, ইঙ্গরেজের নিঃসন্দেহ পরাজিত হইতেন। যাহা হউক, ক্লাইব, অতি ত্বরায় কামান আনাইয়া, শত্রুপক্ষের উপর গোলা চালাইতে আরম্ভ করিলেন। তন্মধ্যে এক গোলা মাণিকচাঁদের হাওদার ভিতর দিয়া চলিয়া যাওয়াতে, তিনি, যৎপরোনাস্তি ভীত হইয়া, তৎক্ষণাৎ কলিকাতায় প্ৰত্যাগমন করিলেন। পরিশেষে, কলিকাতায় থাকিতেও সাহস না হওয়াতে, তথায় কেবল পাঁচ শত সৈন্য রাখিয়া, আপন প্রভুর নিকটস্থ হইবার মানসে, তিনি অতি সত্বর মুরশিদাবাদ প্ৰস্থান করিলেন।

অনন্তর, ক্লাইব স্থলপথে কলিকাতা যাত্ৰা করিলেন। জাহাজ সকল তাঁহার উপস্থিতির পূর্ব্বেই তথায় পঁহুছিয়াছিল। ওয়াটসন সাহেব, কলিকাতার উপর, ক্ৰমাগত দুই ঘণ্টা কাল, গোলাবৃষ্টি করিয়া, ১৭৫৭ খৃঃ অব্দের ২রা জানুয়ারি, ঐ স্থান অধিকার করিলেন। এই রূপে, ইঙ্গরেজেরা পুনর্ব্বার কলিকাতার অধিকার প্রাপ্ত হইলেন, অথচ স্বপক্ষীয় এক ব্যক্তিরও প্ৰাণহানি হইল না।