২১

রানু চোখ বড়-বড় করে বলল, ‘আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না, তাই না?’

মিসির আলি চুপ করে রইলেন।

‘আগে আপনি বলুন—আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন?’

‘বিশ্বাসও করছি না, আবার অবিশ্বাসও করছি না। তুমি নিজে যা সত্যি বলে মনে করছ, তা-ই বলছ। তবে আমি এত সহজে কোনো কিছু বিশ্বাস করি না।’

‘কিন্তু যদি সত্যি হয়, তখন?’

মিসির আলি সিগারেট ধরিয়ে কাশতে লাগলেন।

‘বলুন, যদি আমার কথা সত্যি হয়—যদি মেয়েটা মারা যায়?’

মিসির আলি শান্ত স্বরে বললেন, ‘ঠিক এই মুহূর্তে কী করা যায়, তা তো বুঝতে পারছি না। মেয়েটি কোথায় আছে, তা তো তুমি জান না। নাকি জান?’

‘না, জানি না।’

‘ছেলেটির নামধামও জান না?’

‘ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর। আমার এ-রকম মনে হচ্ছে।’

‘এই শহরে খুব কম করে হলেও দশ হাজার সুন্দর ছেলে আছে।’

‘আমরা কিছুই করব না?

‘পুলিশের কাছে গিয়ে বলতে পারি একটি মেয়ে হারিয়ে গেছে এবং আশঙ্কা করা যাচ্ছে দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়েছে। কিন্তু তাতেও একটা মুশকিল আছে, ২৪ ঘণ্টা পার না-হলে পুলিশ কাউকে মিসিং পারসন হিসাবে গণ্য করে না।’

রানু আবার বলল, ‘কিছুই করা যাবে না?’

মিসির আলি গম্ভীর মুখে সিগারেট টানতে লাগলেন। তিনি লক্ষ করলেন রানুর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে উঠেছে। সে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।

‘রানু, তুমি যদি ঐ লোকটির কোনো ঠিকানা কোনোভাবে এনে দিতে পার, তাহলে একটা চেষ্টা চালানো যেতে পারে।’

‘ঠিকানা কোথায় পাব?’

‘তা তো রানু আমি জানি না। যেভাবে খবরটি পেয়েছ, সেইভাবেই যদি পাও।’

রানু উঠে দাঁড়াল। মিসির আলি সাহেব বললেন, ‘যাচ্ছ নাকি?’

‘হ্যাঁ, বসে থেকে কী করব?’

নীলুদের সব ক’টি ঘরে আলো জ্বলছে। রাত প্রায় এগারটা বাজে। নীলুর বাবা পাথরের মূর্তির মতো বাগানের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। রানুদের ঢুকতে দেখে এগিয়ে এলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। রানু মাথা নিচু করে তিনতলায় উঠে গেল। নীলুদের ঘরে ঘনঘন টেলিফোন বাজছে। দু’টি গাড়ি এসে থামল। মনে হয় ওঁরা খুঁজতে শুরু করেছেন। পুলিশের কাছে নিশ্চয়ই লোক গিয়েছে। নীলুর বাবা অস্থির ভঙ্গিতে বাগানে হাঁটছেন।