২০

আনিস এল রাত সাড়ে আটটায়। ঘর অন্ধকার। কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। রানু বাতিটাতি নিভিয়ে অন্ধকারে বসে আছে। জিতু মিয়া মশারি খাটিয়ে শুয়ে পড়েছে।

‘রানু, কী হয়েছে?’

রানু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘তুমি এত দেরি করলে।’

‘কেন, কী হয়েছে?’

‘নীলুর বড় বিপদ।’

আনিস কিছু বুঝতে পারল না। অবাক হয়ে তাকাল। রানু থেমে-থেমে বলল, ‘নীলুর খুব বিপদ।’

‘কিসের বিপদ? কী বলছ তুমি?’

রানুর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। সে গুছিয়ে কিছু বলতে পারছে না।

‘রানু, তুমি শান্ত হয়ে বস। তারপর ধীরেসুস্থে বল—কী ব্যাপার। কী হয়েছে নীলুর?’

‘ও একজন খারাপ লোকের পাল্লায় পড়েছে। লোকটা ওকে মেরে ফেলবে।’

রানু ফোঁপাতে লাগল। আনিস কিছুই বুঝতে পারল না। নীলুর বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেই তার কথা হয়েছে। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কি, এত দেরি যে?’ যার মেয়ের এত বড় বিপদ, সে এ-রকম স্বাভাবিক থাকবে কী করে?

আনিস বলল, ‘ওরা তো কিছু বলল না!’

‘ওরা কিচ্ছু জানে না। আমি জানি, বিশ্বাস কর—আমি জানি।’

‘আমাকে কী করতে বল?’

‘আমি বুঝতে পারছি না। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’

‘জিনিসটা কি তুমি স্বপ্নে দেখেছ?’

‘না। কিন্তু আমি দেখেছি।’

‘কী দেখেছ?’

‘আমি সেটা তোমাকে বলতে পারব না।’

‘তুমি যদি চাও আমি নিচে গিয়ে ওদের বলতে পারি। কিন্তু ওরা বিশ্বাস করবেন না।’

রানু চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে রইল। ওর শরীর অল্প-অল্প করে কাঁপছে। আনিস বলল, ‘নাকি মিসির আলি সাহেবের কাছে যাবে? উনি কোনো-একটা বুদ্ধি দিতে পারেন। যাবে?’

রানু কাঁপা গলায় বলল, ‘তুমি নিজে কি আমার কথা বিশ্বাস করছ?’

‘হ্যাঁ, করছি।’

একতলার বারান্দায় বিলু বসে ছিল। ওদের নামতে দেখেই বিলু বলল, ‘ভাবী, নীলু আপা এখনো ফিরছে না। বাবা খুব দুশ্চিন্তা করছেন।’

রানু কিছু বলল না।

‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ ভাবী?’

রানু তারও কোনো জবাব দিল না। রিকশায় উঠেই সে বলল, ‘আমাকে ধরে রাখ, খুব ভালো লাগছে।’

আনিস তার কোমর জড়িয়ে বসে রইল। রানুর গা শীতল। রানু খুব ঘামছে। জ্বর নেমে গেছে।