» » ধাপ্পাবাজ

বর্ণাকার
🕮

কাফেলার সবাই স্রোতের সাথে লড়াই করে অনেক নাকানী চুবানি খেয়ে অবশেষে যে যেখান দিয়ে পারলো কুলে গিয়ে উঠলো। তীরে পৌঁছে তারা একে অন্যকে টেনে তুলল। দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া লোকদেরকে ডেকে ডেকে একত্রিত করলো।

সবাই সমবেত হওয়ার পর দেখা গেল তানভীর ও বুড়োর মেয়েটা নেই। লোকজন তাদের খোঁজে নদীর তীর ধরে দুই পাশেই অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে এলো। কিন্তু কোথাও তাদেরকে খুঁজে পেল না।

খুঁজতে খুঁজতে তারা অনেক ভাটির থেকে তানভীরের ঘোড়া উদ্ধার করলো কিন্তু মেয়েটিকে বহনকারী উটের কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।

তানভীরের ঘোড়া পাড়ে উঠে এক স্থানে দাঁড়িয়েছিল। অনুসন্ধানকারী কাফেলার এক ব্যক্তি সেটিকে ধরে সবাই যেখানে সমবেত হয়েছিল সেখানে নিয়ে এলো।

তানভীরের ঘোড়া দেখে সকলেই বিশ্বাস করলো, তানভীর নামে তাদের সঙ্গে শরীক হওয়া সঙ্গীটি নদীতে ডুবে মারা গেছে। সেই সাথে তারা এও বিশ্বাস করলো, তাদের সঙ্গী সুন্দরী মেয়েটিও ডুবে মরেছে।

মেয়েটিকে বহন করছিল যে উট, তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া খুঁজে পাওয়া যায়নি আরো দু’জনের উট। সম্ভবত তিনটি উটই স্রোতের টানে ভেসে গেছে বা মারা গেছে।

তানভীরের জন্য কারো কোন দুঃখ ছিল না। কিন্তু দেখা গেল মেয়েটির জন্য তার বৃদ্ধ বাবা, দু’জন খৃষ্টান এবং একজন ইহুদী খুবই মুষড়ে পড়েছে। তারা মেয়েটাকে হারিয়ে এমন ভেঙে পড়লো যে, নতুন করে সামনে অগসর হওয়ার পরিবর্তেন নদীর পাড়ে বসে পড়লো।

তারা বললো, ‘ওকে রেখে হেমসে গিয়ে কি করবো আমরা? আমরা আর হেমসে যাবো না, তোমরা যাও।’

তাদের পেরেশানী ও হায় আফসোস দেখে কাফেলার কয়েকজন আবার তাকে খুঁজতে বেরোলো। তারা দূর দূরান্ত পর্যন্ত মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াতে লাগলো।

কাফেলার অন্যান্য যাত্রীরা বললো, ‘তাকে খুঁজে আর কোন লাভ নেই। মেয়ে মানুষ এমন স্রোতের তোড়ে পড়লে ডুবে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সে নিশ্চয় ডুবে মারা গেছে।’

চারজন যুবক অশ্বপৃষ্ঠে আরোহন করে নদীর তীর ধরে ভাটির দেকে চললো, প্রায় মাইল দু’য়েক এসেও তানভীর বা মেয়েটার কোন সন্ধান পেলো না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। একজন বললো, ‘চলো ফেরা যাক। জাভিরা বেঁচে নেই। এই স্রোত ওকে কোথায় নিয়ে ফেলেছে সে হদিস বের করাও সোজা নয়। আর লাশ খুঁজে আমাদের লাভই বা কি?’

ওরা আবার নদী পাড় ধরে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করলো। এটা সেই সময় যখন তানভীর মেয়েটিকে প্লাবন ও দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করে তাকে একটা বড় পাথরের উপর শুইয়ে চাপ দিয়ে তার পেটের পানি বের করছিল। সেখানে নদীর বাঁক ছিল এবং সেখান থেকে পাহাড়ী এলাকাও শুরু হয়েছিল। ওরা ছিল পাহাড়ের এক টিলার আড়ালে, তাই তাদের খুঁজতে আসা অনুসন্ধানী দলটি ওদের দেখতে পায়নি।

অনুসন্ধানকারী দলটি তাদের না পেয়ে ফিরে চলে গেল। সূর্য যখন অস্ত গেল তখন নদীর পাড়ে বসে থাকা বৃথা ভেবে তারা হেমসের পথে যাত্রা করলো।

‘এমন মূল্যবান মেয়েটিকে হারানোর জন্য যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের মৃত্যুদণ্ড না দেয় তবে বুঝবো, তারা আমাদের ওপর খুবই মেহেরবানী করেছে।’ বৃদ্ধ বললো, ‘কি উত্তর দেবে যখন প্রশ্ন করা হবে, মেয়েটি যখন ডুবে মরছিল তখন তোমরা কোথায় ছিলে?’ পথ চলতে চলতে কথা বলছিল ওরা।

‘বলবো, সে আমাদের অাশ্বস্থ করেছিল, উটের পিঠে চড়ে সে একাই নদী পার হতে পারবে।’ ইহুদী বললো, ‘আরো বলবো, সে উটের ওপর একলা থাকার জিদ না ধরলে কিছুতেই তাকে আমরা একা উটের ওপর থাকার অনুমতি দিতাম না। সে জিদ ধরলে এবং দুর্যোগ ও স্রোত তাতে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল।’

‘যদি বলে, সে যে আসলেই মারা গেছে তার প্রমাণ কি?’

‘সে যদি নদী থেকে পাড়ে উঠতো তবে তাকে আমরা অবশ্যই খুঁজে পেতাম।’ বললো অন্য জন, ‘সে আসলেই মারা গেছে।’

‘যা মনে আসে তাই বলো।’ এক খৃষ্টান হতাশ কণ্ঠে বললো, ‘যদি আমাদেরকে ক্ষমাও করে দেয়া হয় তবু এই অসাধারণ মেয়েটির জন্য চিরকাল আমার আফসোস হবে।’

‘মেয়েটির জন্য আফসোস কেবল আপনার একার হবে না, তার হারিয়ে যাওয়ার অনুতাপ আমাদেরও সারাক্ষণ দগ্ধ করবে।’ বলল আরেকজন। ‘অন্য একটি মেয়ে যোগাড় করা এখন চাট্টিখানি কথা নয়। আবার একটি মেয়ে আনতে গেলে মাসখানেক সময় লেগে যাবে। অথচ এখন সময় খুবই মূল্যবান।’

‘এ জন্যই তো আমি বার বার বলেছিলাম, এ কাজের জন্য অন্ততঃ দুটি মেয়ে দাও।’ বৃদ্ধ বললো, ‘হেমসের মুসলমানরা জোশে ফেটে পড়ছে। মনে হয়, তারা গোপনে যুদ্ধের প্রশিক্ষণও নিচ্ছে।’

‘আপনি ঠিকই বলেছনে। আমি তাদেরকে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, তারা গেরিলা ট্রেনিং নিচ্ছে। আমি তাদের চারজন উস্তাদকে দেখেছি। তারা হয়তো কায়রো নয়তো দামেশক থেকে এসেছে। তাদের দেখেই মনে হয় তারা গেরিলা যুদ্ধে উস্তাদ।’

‘তাদের এই প্রস্তুতির শেষ কোথায় তুমি কি বলতে পারো?’

ইহুদী বললো, ‘ওদের ট্রেনিং আমরা ওদের দিকেই ফিরিয়ে দেবো। ওদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেবো, যাতে নিজেরাই লড়াই করে শেষ হয়ে যায়।’

‘কথাটা যত সহজে বললে, কাজটা তত সহজ নয়। কাজটি সহজ হতো যদি মেয়েটি আমাদের সাথে থাকতো।’ বৃদ্ধ বললো, ‘হেমসে গৃহযুদ্ধ ও নাশকতামূলক কাজের যে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে আমাদের পাঠানো হয়েছে, মেয়েটিকে ছাড়া সে কাজ আমরা কেমন করে করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘এ কাজের জন্য আমরা আপনাকে এখান থেকে মেয়ে জোগাড় করে দিতে পারি।’ বললো ইহুদী লোকটি, ‘তবে সমস্যা হবে তার সাথে আপনার সম্পর্ক নিয়ে।’

‘হ্যাঁ, নতুন একটি মেয়ে পাওয়া হয়তো কঠিন নয়। কিন্তু তাকে পাকা শিকারী বানানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া তার সাথে আমার সম্পর্ক কি এ প্রশ্নের জবাব তৈরী করাও কঠিন ব্যাপার। অথচ এই মেয়েটিকে আমি সহজেই নিজের মেয়ে বলে চালিয়ে দিতে পারতাম।’

‘হ্যাঁ, মেয়েটির বাবা হিসাবে আপনি চমৎকার মানিয়ে নিয়েছিলেন। আপনারা এমনভাবে বাপ-বেটির অভিনয় করছিলেন, দেখে মনে হতো, ও আসলেই আপার মেয়ে।’

রাতের অন্ধকারে পথ চলছে ওরা। পথ চলতে চলতে নিজেদের মধ্যে কথা হচ্ছে গোপন মিশন সম্পর্কে। ওরা সবাই হেমসে যাচ্ছিল এই মিশন নিয়ে।

বৃদ্ধ লোকটি ছিল খৃষ্টানদের এক অভিজ্ঞ গোয়েন্দা অফিসার। নাশকতামূলক কাজে তার ছিল বিশেষ পারদর্শীতা। পথ চলতে চলতে সে তার সাথীদের বলছিল, কি করে মুসলমানদের মোকাবেলা করতে হবে। সে বলছিল, ‘মুসলমানরা প্রত্যেক জায়গাতেই এখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। দামেশকে নুরুদ্দিন জঙ্গীর বিধবা স্ত্রী মেয়েদেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মুসলিম জনপদেই আজ এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে হেমস ও তার আশপাশের এলাকায় এ তৎপরতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। ওখানকার মুসলমানরা গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছে। যদি তারা হেমসকে তাদের গোপন কেন্দ্র বানিয়ে নিতে পারে তবে আমাদের জন্য তা বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।’

একজন বললো, ‘আমি জানতে পেরেছিলাম, সুলতান আইয়ুবী নিজে হেমসে গোপন কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।’

বৃদ্ধ দৃঢ়তার সাথে বললো, ‘আমরা তার পরিকল্পনা সফল হতে দেবো না।’

হেমসের সীমান্ত এলাকায় বাড়ী যে ইহুদীর সে বললো, ‘যদি মুসলমানরা এখানে গেরিলাদের আড্ডা বানিয়ে নিতে পারে তবে আমাদের জন্য তা চরম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমি বলছিলাম কি, আমাদের ভূমিকা এমন হওয়া উচিত যাতে এখানকার মুসলমানরা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়। এ কাজ করতে হলে প্রথমে তাদের হৃদয় জয় করার সব রকম চেষ্টা চালাতে হবে আমাদের।

‘এটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।’ বৃদ্ধ বললো, ‘আমাকে জানানো হয়েছে, আমাদের লোকেরা হেমসে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু মুসলমানরা সে সব গুজব কানেও তুলছে না।’

‘এর একমাত্র কারণ সেখানকার জামে মসজিদের খতিব। হেমসের মুসলমানদের ওপর খতিবের প্রভাব খুব বেশী। আমি জানতে পেরেছি, ওখানে যুদ্ধের প্রস্তুতিও তার নির্দেশেই চলছে।’

‘আগে আমাকে হেমসে যেতে দাও। আমি খতিবকে দেখতে চাই। দেখবো সে কেমন ধরনের লোক। সে কি সত্যিই পণ্ডিত, না সেনা কমাণ্ডার আমি এটাও একটু বাজিয়ে দেখতে চাই। তখনই আমি বুঝতে পারবো, তাকে আমাদের হাতে রাখা যাবে, নাকি গুপ্তহত্যার খাতায় তার নাম তুলে দেবো।’

‘সে লোক সেনা অফিসার কিনা জানি না, তবে লোকটির সম্মোহনী শক্তি প্রচুর। আর সে লোক বোকা বা আহাম্মক নয়।’

‘ঠিক আছে, আমি দেখবো সে লোক কতটা চালাক। আমাকে শুধু তুমি একটি বা দুটি খৃষ্টান বা ইহুদী পরিবারের মেয়ে বেছে দিও।’

‘আমি আপনাকে একথা দামেশকেও বলেছি, এখানকার মুসলমানরা ঈমানের বলে খুবই বলীয়ান।’ এক খৃষ্টান বললো, ‘এ পর্যন্ত আমি এখানকার একজনকেও কিনতে পারলাম না।’

‘আমি সারাটি জীবন এই নদীকে অভিশাপ দিয়ে যাবো, যে নদী আমাকে জাভীরা থেকে বঞ্চিত করেছে।’

❀ ❀ ❀

‘আমার নাম জাভীরা।’ মেয়েটি তানভীরের প্রশ্নের উত্তরে বললো, ‘আমরা গরীব লোক। মুসলমানেরা দামেশকে আমাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিল। আমি সারা জীবন দোয়া করবো, আল্লাহ যেন গরীবের মেয়েকে রূপ-সৌন্দর্য না দেন। তুমি শুনলে অবাক হবে, বড় বড় ধনী ও আমীররা আমাকে ক্রয় করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। একজন তো আমাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল। আমার বাবা আমাকে এক আর্মি অফিসারের কাছে নিয়ে গেল। তিনি আমার অভিযোগ শুনে আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু দু’দিন না যেতেই তিনি আমার দিকে হাত বাড়ালেন।

এ খবরে বাবা খুবই অসহায় বোধ করলেন। শেষে আমার জীবন ও সম্ভ্রমের কথা চিন্তা করে বাবা দেশান্তরী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। হেমসে আমাদের আত্মীয় স্বজন আছে, তাই বাবা আমাকে নিয়ে হেমসে যাচ্ছিলেন।’

মেয়েটি এটুকু বলেই কেঁদে দিল। বলল, ‘জানিনা, বাবা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। আমি এক অসহায় ও বিপন্ন মেয়ে। তুমি কি একজন নিপীড়িত মেয়ের উপর দয়া করবে না?’

রাত গভীর হয়ে এলো। জাভীরার বাবারূপী বুড়ো লোকটি খৃষ্টান সঙ্গীদের সাথে অনেক দূর চলে গিয়েছিল। তারা পথ চলছিল আর মুসলনামনদের বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে আলোচনা করছিল।

‘আমার জামা শুকিয়ে গেছে।’ তানভীর তার জামা মেয়েটির দিকে এগিয়ে ধরে বললো, ‘আমি বাইরে যাচ্ছি। তুমি এই জামা পরে নিজের ভিজে কাপড়গুলো পাল্টে নাও। এ জামা তোমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। তোমার কাপড় শুকিয়ে গেলে আমার কাপড় ফিরিয়ে দিও।’

‘আমি তোমার কাছে অসহায়।’ জাভীরা বিরক্তির স্বরে বললো, ‘তুমি আমার সঙ্গে সেই পশুদের মত আচরণ করবে না, যেমন শিকারকে হত্যা করার আগে শিকারী তাকে নিয়ে খেলা করে।’

‘আমি তেমন কিছু বলিনি, শুধু তোমার ভেজা কাপড়গুলো পাল্টাতে বলেছি।’ তানভীর রাগতঃ স্বরে এ কথা বলেই গুহা থেকে বাইরে চলে গেল। সে আড়ালে চলে গেলে জাভীরা গুহার মুখ পর্যন্ত এগিয়ে দেখলো, সে এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে গুহার ভেতরটা দেখা যায় না। তাছাড়া সে গুহার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটির এ ধরনের সততা ও সাবধানতায় বিস্মিত হলো জাভীরা।

সে দু’দণ্ড পরেই গুহার মুখ থেকে নিচে নেমে এলো। কামরার ভিতরে গিয়ে দেয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে দঁড়াল জাভীরা।

আগুনের আলো ছিল খুবই স্পষ্ট। সেই আলোর দিকে পিছন ফিরে সে তার কোমরে হাত রাখলো। তার কোমরের কাপড়ের মধ্যে লুকানো ছিল ছুরি।

জাভীরা কাপড়ের ভাঁজ থেকে ছুরিটা বের করে নিল এবং চাপা পায়ে গুহার মুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। গুহামুখে এসে সে তানভীরের দিকে তাকাল। তানভীর তখনো গুহার দিকে পেছন ফিরে অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে আছে।

জাভীরা আলতো পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেল এবং মাত্র এক গজ দূরে গিয়ে দাঁড়াল। মুঠির ছোরাটিকে সে শক্ত করে ধরলো এবং একজন প্রশিক্ষিত পাকা গোয়েন্দার মতই সেই ছোরা দিয়ে তানভীরের মোক্ষম জায়গায় আঘাত হানার জন্য তৈরী হলো।

জাভীরা তাকে আঘাত করার জন্য যেই হাত বাড়িয়েছে অমনি ত্বরিত বেগে ঘুরে গেল তানভীর। সে জাভীরার ডান হাতের কব্জি চেপে ধরলো এবং এমন জোরে মোচড় দিল যে, ট্রেনিং না থাকলে ওই মেয়ের কব্জি মট করে ভেঙে যেতো। মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে এমনভাবে ঘুরিয়ে নিল, যে কারণে মারাত্মক একটি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল জাভীরা। কিন্তু তানভীরের হাতের চাপে তার হাতের ছোরা খসে পড়লো। তানভীর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে চট করে ছোরাটি নিজের হাতে নিয়ে নিল।

তানভীরের বাঁচার একটাই কারণ, তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হঠাৎ করেই তাকে সচেতন করে দিল। তার মনে হলো, সর্বশক্তিমান আল্লাহর এটাও এক মোজেজা। নইলে মেয়েটি যে সাবধানতার সাথে এসেছিল এবং তাকে যেভাবে আঘাত করেছিল তাতে তার বাঁচার কোন কথা ছিল না।

তানভির ছোড়া উঠিয়ে নিয়ে ছোরার মাথা মেয়েটার গায়ে ঠেকিয়ে বলল, ‘আমি তোমার জীবন বাঁচালাম, আর তুমি আমাকে হত্যা করতে চাইছো?’

মেয়েটি তার পায়ের উপর পড়ে হাত জোড় করে মিনতি জানালো, ‘তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই মানতে রাজি। আমাকে হত্যা করো না।’

‘আমি তোমাকে হত্যার কথা এখনো ভাবিনি। তোমাকে ভেজা কাপড় বদলে আমার জামাটা পরতে বলেছিলাম, এর বেশী কিছু চাইনি। কিন্তু তোমার মাথায় আমাকে হত্যা করার চিন্তা এলো কি করে?’

‘জানি না। আমার মনে হয়েছিল তুমি আমার সর্বনাশ করে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তোমার ভালমানুষীকে মনে হয়েছে শিকার নিয়ে খেলার মত। আমি একটু সুস্থ হলেই তুমি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, এই চিন্তা আমাকে পাগল করে তুলেছিল। ভয় আর উত্তেজনার বশে কি করতে কি করেছি আমি নিজেই জানি না।’

তানভীর বললো, ‘দেখলে তো, তুমি আমাকে হত্যা করতে পারলে না। ঈমানদারদের এভাবেই আল্লাহ হেফাজত করেন। তাদের অন্তরে এমন চোখ দিয়ে দেন, যে চোখ দিয়ে তারা সামনের পেছনের সকল কিছু দেখতে পারে। অন্তরের চোখ দিয়েই আমি দেখতে পেলাম ছোড়া নিয়ে তুমি আমার দিকে এগিয়ে আসছো।

আচ্ছা বলতো, আমি যদি বলতাম, আমার সামনেই তুমি তোমার কাপড় খুলে ফেলো, তুমি কি খুলতে না? কিন্তু আমি তা চাইনি, তোমাকে আমি উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে চাই না।’

মেয়েটি আর কোন কথা বলল না। সে আস্তে আস্তে আবার গুহার মধ্যে গিয়ে ঢুকলো এবং তার গায়ের জামা ও পাজামা খুলে তানভীরের জামাটি পড়ে নিল। আলখেল্লার মত সে জামা মেয়েটিকে বোরকার মত ঢেকে নিল। তরপর সে তানভীরকে ডেকে বললো, ‘আমার কাপড় পাল্টানো হয়ে গেছে, এবার তুমি আসো।’

তানভীর ভেতরে গেল। জাভীরার জামা ও পাজামাটি সে আগুনোর ওপর শুকাতে লাগলো। জাভীরা আঁড় নয়নে বার বার তাকে দেখতে লাগলো।

তানভীর কোন কথা বলছিল না, জাভীরাও চুপচাপ। তানভীরের নিরবতা জাভীরাকে অস্থির করে তুলছিল। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না, এই যুবক তাকে ক্ষমা করবে এবং তাকে ছেড়ে দেবে।

জাভীরা এখন সত্যিকার অর্থেই অসহায়। তার একমাত্র অস্ত্র ছোরাটাও এখন তার দখলে নেই। মেয়েটি সেই অসহায়ত্ব নিয়ে বার বার দেখছিল যুবককে।

যুবক নিরবে মেয়েটির কাপড় শুকাচ্ছিল। যখন কাপড় শুকিয়ে গেল তখন তানভীর কাপড়গুলো মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল, ‘জলদি তোমার পোশাক বদলে নাও। আমি বাইরে যাচ্ছি।’

যুবক মেয়েটির হাতে কাপড় দিয়ে বাইরে চলে গেল। মেয়েটি পোষাক পাল্টে তানভীরকে ডাকলো, ‘আমার কাপড় পাল্টানো হয়েছে। এবার তুমি আসতে পারো।’

তানভীর গুহায় ঢুকে ছোরাটা তার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো, ‘তোমার খঞ্জর তোমার কাছেই থাক। এখানে খাবার দাবার কিছু নেই যে তোমাকে খেতে দেবো। বেশী ক্ষুধা পেলে ঘুমুতে পারবে না। তারচেয়ে তুমি এখনই শুয়ে পড়ো। সকালেই আমরা হেমসের দিকে যাত্রা করবো। ‘

‘তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছো।’ জাভীরা ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে বললো, ‘অথবা তুমি অনুভূতিহীন কোন মৃত মানুষ। কোন প্রতারক বা মৃত ব্যক্তির সামনে আমার ঘুম আসবে না। ভয়ার্ত মানুষের ক্ষুধা বা ঘুম কিছুরই অনুভূতি থাকে না।’

‘আমি মৃত কি জীবিত সেটা প্রমাণ হবে তোমাদের সৈন্যদের সামনে পড়লে। আর প্রতারণা করা তোমাদের কৌশল, আমাদের নয়। আমার সততা যদি তোমার কাছে প্রতারণা মনে হয় তবে এই প্রতারণাই তো এখন তোমার কাম্য হওয়া উচিত। যেভাবেই হোক, তোমার দিকে আমি হাত না বাড়াই, এটাই কি তুমি চাও না? তাহলে যতক্ষণ আমি হাত না বাড়াচ্ছি ততোক্ষণ তুমি ঘুমিয়ে নাও।

জাভীরা, সত্যি কথা বলতে কি, তোমাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই! আমি শুধু তোমাদের সেই বাহিনীর শত্রু, যারা আমাদের মাতৃভূমি দখল করতে আসে, যারা এখনও আমাদের প্রথম কেবলার উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে।’

‘তোমাকে মিথ্যা ও ভুল ব্যখ্যা দিয়ে উত্তেজিত করা হয়েছে।’ জাভীরা বললো, ‘তুমি সেই অজ্ঞ লোকদের একজন, যারা সভ্যতার সঠিক ইতিহাস জানে না। যাকে তুমি তোমাদের প্রথম কেবলা বলছো আসলে সেটা ইহুদীদের মন্দির। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তাঁর রাজ্যসীমা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করার অভিপ্রায়ে তোমাদেরকে ভুল ইতিহাস শেখাচ্ছেন। তোমার মত সরল সহজ মুসলমানদের মনে ধর্মীয় আবেগ ও জযবা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বলছেন, ওটা তোমাদের প্রথম কেবলা ও প্রথম মসজিদ!’

‘এ নিয়ে আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না।’ তানভীর বললো, ‘তুমি এখন শুয়ে পড়, তোমার কাছ থেকে ইতিহাস শেখার কোন আগ্রহ নেই আমার। খতিবের কাছ থেকে ইতিহাসের অনেক পাঠ আমি আগেই নিয়েছি।’

‘আমার ঘুম আসবে না।’ জাভীরা বললো, ‘এক অপরিচিত পুরুষের সামনে কোন যুবতী নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারে না। এটা প্রকৃতির সহজাত প্রবৃত্তি। তুমি যতো আমাকে ঘুমের জন্য চাপ দেবে ততোই ঘুম আমার কাছ থেকে আরো দূরে সরে যাবে। তার চেয়ে কথা বলতে থাকো, তোমার মত আমিও এক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবো। খতিবের কথা কি যেন বলছিলে, তিনি কি হেমসের বাসিন্দা, নাকি বাইরে থেকে এসেছেন?’

‘তিনি হেমসেরই লোক।’ তানভীর আর কথা বাড়াতে চাইল না। সে জাভীরার প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে বললো, ‘তুমি সারারাত জেগে থাকলে আমার করার কিছু নেই, আমি শুয়ে পড়লাম।’

তানভীর তার জামা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।

জাভীরা ছিল অভিজ্ঞ গোয়েন্দা। দীর্ঘ ট্রেনিং দেয়ার পর তাকে ময়দানে পাঠানো হয়েছে। ট্রেনিং শেষে প্রথমে তাকে দামেশকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে দক্ষতা প্রদর্শনের পর তাকে হেমসে যাওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়। মানুষের পেট থেকে কথা বের করার নানা কৌশল রপ্ত করা আছে তার। এ উদ্দেশ্যেই তাকে হেমসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সে হেমসের খতিব ও সেখানকার মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে তানভীরের কাছ থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তানভীর তার ফাঁদে পা দিতে চাইল না। তাই সে মেয়েটির সাথে কথা বলা বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করলো।

তানভীর নীরব হয়ে যাওয়ার পর চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া মেয়েটির আর করার কিছু ছিল না। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর এক সময় ঘুম এসে মেয়েটিকেও কাবু করার চেষ্টা করলো। ক্লান্তিতে ভেঙ্গে এলো জাভীরার শরীর। ঘুম তাড়ানোর সব চেষ্টা নিস্ফল করে দিয়ে ঘুম এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে।

রাত অনেক গভীর। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তানভীর। ঘুমের ভান করলেও আসলে সে ঘুমায়নি। যে মেয়ে তাকে একটু আগে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল তার সাথে এক কামরায় নিশ্চিন্তে ঘুমোবার মত বোকামী সে করতে পারে না। মেয়েটি অনেক্ষণ একাকী চুপচাপ বসে থাকার পর যখন ঘুমে ঢলে পড়লো, উঠে বসলো তানভীর।

নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মত পরিবেশ ও মনের অবস্থা ছিল না কারোরই। কিন্তু তারপরও ঘুম এমন এক নেয়ামত যা মানুষকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শান্তির রাজ্যে নিয়ে যায়। মাঝ রাতের দিকে ঘুমিয়েছিল জাভীরা। যখন চোখ খুললো তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

ঘুম ভাঙতেই জাভীরা ভীত সন্ত্রস্তভাবে উঠে বসলো। বাইরে ভোরের আবছা অন্ধকার। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো তানভীর সিজদায় পড়ে আছে।

সিজদা থেকে উঠলো তানভীর, আবার সিজদায় গেল। পুনরায় দাঁড়িয়ে নামাজে মগ্ন হয়ে রইল। জাভীরা অপলক চোখে দেখছিল এক আত্মমগ্ন মুজাহিদকে।

জাভীরা তার পোষাকের দিকে নজর দিল। রাতে ঘুমাবে না বলে সংকল্প করেছিল সে, কিন্তু কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি। তানভীরকে ভয় পাচ্ছিল সে। তার ধারণা ছিল, শত হোক, পুরুষ মানুষ তো! কিন্তু সে যে অবস্থায় ঘুমিয়েছিল ঠিক সেই অবস্থাতেই নিজেকে আবিষ্কার করে বিস্মিত হলো।

সে অপলক চোখে তানভীরের নামাজ পড়া দেখছে। কি একাগ্র মনে নামাজ পড়ছে লোকটা! তাকে যখন সিজদায় পড়ে থাকতে দেখলো, তখন ব্যাপারটা তার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হতে লাগলো।

মুসলমান সম্পর্কে তার ধারণা ছিল, মুসলমানরা পশুর মতই বর্বর জাতি। কিন্তু তানভীরের মত সুপুরুষ এক যুবক যখন তার মত রূপসী যুবতীর দিকে মোটেই আমল দিল না, তখন সে ভাবতে লাগলো, এটা কি করে সম্ভব হতে পারে! মুসলমান তো সে জীবনে এই প্রথম দেখেনি। তার রূপের আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে এমন মুসলমানের সংখ্যা তো কম নয়! কত বড় বড় দরবেশ শ্রেণীর মুসলমানও সে দেখেছে। তারা তার জালে ধরা দিয়েছে অবলীলায়। সে ভাবতে লাগলো, এ যুবক কি সত্যিই মানুষ, নাকি স্বপ্নলোকের কোন ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে তাকে ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করতে এসেছে!

জাভীরার কাছে সতীত্বের কোন মুল্য ছিল না। শিশুকাল থেকেই পুরুষ নাচানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তাকে। তার রূপ ছিল যাদুর মতই আকর্ষণীয়। দেহে ছিল যৌবনের সম্ভার। ভোগের মাঝে পাপের কোন চিহ্ন দেখার দৃষ্টি সে পায়নি। ভেবেছে, ভোগ হচ্ছে মানুষের স্বভাব ধর্ম, বয়সের খেলা। কিন্তু জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলো সে। যে অভিজ্ঞতার কথা সে কোন দিন কল্পনা করেনি, যে অভিজ্ঞতা তার স্বপ্নেরও অতীত।

মানুষের স্বভাবের একটা বিশেষ দিক হলো, তার স্বভাব পরিবর্তনশীল। চেতনায় নতুন কোন আলোড়ন সৃষ্টি হলে বা কোন বিশেষ ঘটনায় চিন্তা রাজ্যে হঠাৎ পরিবর্তনের ঢেউ জাগলে তার জীবন ধারাই পাল্টে যায়। মানুষ মৌলিক মানবীয় সত্ত্বা বা প্রকৃতি-প্রদত্ত স্বভাবজাত জীবনধারা কারো কাছে স্পষ্ট না থাকলে সে বিকল্প ধারায় তার জীবন পরিচালিত করতে পারে। পাকা অভিনেতার মতই জীবন নাট্যের নাট্যমঞ্চে ছদ্মবেশীর অভিনয় করে যায় সে সারা জীবন। কিন্তু যখন তার সামনে তার জন্ম ও সৃষ্টির প্রকৃত রহস্য উদঘাতি হয়ে যায় তখনি সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে মৌলিক মানবিক স্বত্ত্বায় ফিরে আসতে। গতকাল বিকাল থেকে আজকের ভোর, মাত্র একটি রাতের ব্যবধান, কিন্তু সারা জীবন যে প্রশ্ন তাকে ব্যতিব্যস্ত করেনি মাত্র কয়েকটি ঘটনার কিছু ঘনটা-দুর্ঘটনা তাকে চিন্তার অতল তলদেশে নিক্ষেপ করলো।

জাভীরার চোখের সামনে ভেসে উঠল আকাশ কালো করা মেঘ, অঝোর ধারার বৃষ্টি, বৃষ্টির সাথে পৃথিবী দলিত মথিত করা ঝড়-তুফান, সেই তুফানের মধ্যে একদল মানুষের নদী পাড়ি দেয়ার অদম্য চেষ্টা, পাহাড়ী ঢল ও স্রোতের মুখে অসহায় মানুষের আহাজারি, দুর্যোগ ও মৃত্যুর বিভীষিকা।

মরণ কত সহজ। এক সাথে যাদের সাথে নদীতে নামল, যখন মৃত্যু এসে ছোবল হানলো তখন সবাই পালিয়ে গেল। যাদের দায়িত্ব ছিল আমার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, এখন তারা কোথায়, অথচ কি অবাক কাণ্ড, যে ছেলের সাথে জীবনে কোনদিন দেখাও হয়নি, নিজের জীবন বিপন্ন করে সেই যুবক তাকে উদ্ধার করে আনলো স্রোতের মুখ থেকে।

তারপর? তারপরের কাহিনিই কি কম চমকপ্রদ? যাকে দেখলে পণ্ডিতও পশু হয়ে যায় তার সাথে নির্জন এক কামরায় রাত কাটালো তরতাজা সুপুরুষ যুবক, কিন্তু তার মধ্যে বিন্দুমাত্র চিত্তচাঞ্চল্যও সৃষ্টি হল না। এর রহস্য কি? কে তাকে রক্ষা করলো পতনের হাত থেকে? ক্ষুধার্ত মুসাফিরের সামনে সুস্বাদু খাবার, কিন্তু কেন সে সেই খাবারের দিকে হাত বাড়ালো না? তানভীরের প্রার্থনারত হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে নিজকে বার বার এই প্রশ্নই করতে লাগলো জাভীরা।

সমাপ্ত