পাঁচ. বহুবিবাহ
প্রশ্ন:
ইসলামে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি কেন? অর্থাৎ ইসলামে বহুবিবাহ কেন অনুমোদিত?
জবাব:
১. বহুবিবাহের সংজ্ঞা
বহুবিবাহ হচ্ছে এমন একটি বিবাহ ব্যবস্থা যাতে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে। বহুবিবাহ দুই প্রকার হতে পারে। এক, বহুপত্নীক (polygyny)—যেখানে একজন পুরুষ একাধিক নারীকে বিবাহ করে এবং দুই, বহুপতি (polyandry)—যেখানে একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিবাহ করে। ইসলামে বহুপত্নীক বহুবিবাহ সীমিতভাবে অনুমোদিত; যেখানে বহুপতিত্ব সম্পূর্ণ হারাম।
এখন আসল প্রশ্নে আসি, কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেওয়া হয়?
২. কুরআনই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যাতে বলা হয়েছে, ‘একটি মাত্র বিয়ে করুন।’
কুরআনই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যাতে ‘একটি মাত্র বিবাহ করুন’ কথাটি বলা হয়েছে। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ নেই যা পুরুষদের একটি মাত্র বিবাহের নির্দেশ প্রদান করে। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, তালমুদ বা বাইবেল যাই হোক না কেন, অন্য কোন ধর্মগ্রন্থেই স্ত্রীর সংখ্যার উপর কোন সীমাবদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সকল শাস্ত্রানুসারে যে কেউ যত খুশি সংখ্যক বিবাহ করতে পারে। পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মযাজক1 ও খৃষ্টান চার্চ স্ত্রীর সংখ্যা একের মধ্যে সীমিত করে।
অনেক হিন্দু ধর্মানুসারী ব্যক্তিত্বের তাদের ধর্মগ্রন্থানুসারেই একাধিক পত্নী ছিলেন। রামের পিতা রাজা দশরথের একাধিক স্ত্রী ছিলেন। কৃষ্ণের ছিলেন ১৬১০৪ জন স্ত্রী। কোন কোন হিন্দু যুক্তি প্রদান করতে পারেন যে, কৃষ্ণ এই সকল নারীদের যৌনতার জন্য বিবাহ করেননি, বরং তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিবাহ করেছেন, কেননা, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর হাজার হাজার নারী বিধবা হয়ে যান এবং কৃষ্ণ তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বিবাহ করেন। তাহলে কী করে সেই সকল নারী থেকে কৃষ্ণের ১৬০,০০০ সন্তান হয়েছিল?
প্রাচীনকালে, খৃষ্টান পুরুষদের ইচ্ছামত অনেক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি ছিল, যেহেতু বাইবেল স্ত্রী সংখ্যার উপর কোন সীমাবদ্ধতা রাখেনি। মাত্র কয়েক শতক আগে চার্চ স্ত্রীর সংখ্যা একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেন। ইহুদি ধর্মে বহুবিবাহ অনুমোদিত। তালমূদীয় বিধান অনুসারে, আব্রাহামের তিনজন স্ত্রী ছিলেন, এবং সলোমনের সাতশত স্ত্রী ছিলেন। রাব্বিহ গেরমোশ বেন ইহুদাহ (৯৬০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১০৩০ খৃষ্টাব্দ) কর্তৃক বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করা পর্যন্ত তা বহাল ছিল। মুসলিম দেশগুলোতে বসবাসকারী ইহুদি সেফার্ডিক সম্প্রদায়গুলোর মাঝে ১৯৫০ সালে ইসরাইলের প্রধান রাবিনেট কর্তৃক একটি আইন জারি করা পর্যন্ত বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল।
৩. হিন্দুরা মুসলিমদের চেয়ে বেশি বহুগামী
১৯৭৫ সালে প্রকাশিত ‘Committee of The Status of Women in Islam’-এর প্রতিবেদনের ৬৬ ও ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে বহুবিবাহের শতকরা হার ছিল হিন্দুদের মধ্যে ৫.০৬ শতাংশ এবং মুসলিমদের মধ্যে মাত্র ৪.৩১ শতাংশ। ভারতীয় আইন অনুযায়ী কেবলমাত্র মুসলিম পুরুষদের একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি রয়েছে। ভারতে যে কোনও অমুসলিমের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা বেআইনি। অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে মুসলমানদের তুলনায় অধিক পরিমাণে হিন্দুদের একাধিক স্ত্রী রয়েছে। ১৯৫৪ সালে হিন্দু বিবাহ আইন জারি করার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে পুরুষদের একাধিক স্ত্রী রাখার ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ ছিল না, আইন জারির পরেই এটি বেআইনি হয়ে যায়। উল্লেখ, ভারতীয় হিন্দু বিবাহ আইন একাধিক স্ত্রী রাখতে বাধা প্রধান করলেও এটি কোন ধর্মীয় বিধান নয়।
৪. কুরআন সীমিত বহুবিবাহের অনুমতি প্রদান করে।
আমি পূর্বেই বলেছি, কুরআনই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে বলা হয়েছে ‘একটি মাত্র বিবাহ করুন’। এই বাক্যাংশের উৎস হল মহিমান্বিত কুরআনের সুরাহ আন-নিসার নিম্নোক্ত আয়াত—
… فَٱنكِحُوا۟ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثْنَىٰ وَثُلَـٰثَ وَرُبَـٰعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ فَوَٰحِدَةً…٣
“…তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার; আর যদি আশঙ্কা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই…” —আলকুরআন, সুরাহ নিসা, আয়াত ৩।
কুরআন অবতীর্ণের আগে, বহুবিবাহের কোন উর্ধ্বসীমা ছিল না এবং অনেক পুরুষের একাধিক স্ত্রী ছিল। কারও কারও তো শতাধিক স্ত্রী ছিল। ইসলাম সর্বোচ্চ সীমা রেখেছে চার স্ত্রী। ইসলাম একজন পুরুষকে দুই, তিনা বা চার জন নারীকে বিবাহের অনুমতি দেয় শুধুমাত্র ন্যায়বিচার করার শর্তে।
একই অধ্যায়ে অর্থাৎ সুরাহ নিসার ১২৯ আয়াতে বলা হয়েছে—
وَلَن تَسْتَطِيعُوٓا۟ أَن تَعْدِلُوا۟ بَيْنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا۟ كُلَّ ٱلْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِن تُصْلِحُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا ١٢٩
“তোমরা কক্ষনো স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও প্রবল ইচ্ছে কর, তোমরা একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না এবং অন্যকে ঝুলিয়ে রেখো না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” — আলকুরআন, সুরাহ নিসা, আয়াত ১২৯।
তাই বহুবিবাহ নিয়ম নয়, বরং ব্যতিক্রম। একজন মুসলিম পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকা বাধ্যতামূলক বলে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে।
বিস্তৃতভাবে, ইসলামী করণীয় ও অকরণীয় পাঁচটি পর্যায় রয়েছে:
- ‘ফরজ’ অর্থাৎ বাধ্যতামূলক বা অবশ্যকরণীয়
- ‘মুস্তাহাব’ অর্থাৎ সুপারিশকৃত বা উৎসাহিত
- ‘মুবাহ’ অর্থাৎ জায়েয বা অনুমোদিত
- ‘মাকরূহ’ বা সুপারিশকৃত নয় বা নিরুৎসাহিকৃত
- ‘হারাম’ বা নিষিদ্ধ বা অবৈধ
বহুবিবাহ জায়েয বিষয়ের মধ্যম পর্যায়ে পড়ে। এটা বলা যায় না যে একজন মুসলমানের যার দুই, তিন বা চার জন স্ত্রী রয়েছে সে যার একজন স্ত্রী রয়েছে তার চেয়ে বেশি উত্তম।
৫. নারীদের গড় আয়ূ পুরুষের তুলনায় বেশি
প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ ও নারী প্রায় একই অনুপাতে জন্মগ্রহণ করে। একটি কন্যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটি পুরুষ শিশুর চেয়ে বেশি। একটি কন্যা শিশু একটি পুরুষ শিশুর চেয়ে অধিক পরিমাণে জীবানু ও রোগের বিরুদ্ধে ভালভাবে লড়াই করতে পারে। এই কারণে শৈশবেই, নারী শিশুর তুলনায় পুরুষ শিশুর মৃত্যুহার অধিক।
যুদ্ধে নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যু হয় বেশি। দুর্ঘটনা ও রোগের কারণে নারীদের তুলনায় পুরুষ মারা যায় অধিক পরিমাণে। নারীদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় বেশি এবং যে কোন সময়েই পৃথিবীতে সধবাদের চেয়ে বিধবাদের সংখ্যা বেশি।
৬. কন্যা ভ্রূণহত্যা ও শিশুহত্যার কারণে ভারতে নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি
কতিপয় দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম, এমনকি অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও ভারতে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। এর কারণ, ভারতে কন্যা ভ্রূণ ও কন্যা শিশুর হত্যার হার অত্যুচ্চ। “ভারতে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার কন্যাশিশুকে গর্ভে বা জন্মের অব্যবহিত পরেই হত্যা করা হয়।”—জাতিসংঘের প্রতিবেদন, আল-জাজিরাতে উদ্ধৃত, ৬ই জুলাই, ২০১৫। আপনি যদি এই সংখ্যাটিকে ৩৬৫ অর্থাৎ বছরের দিনের সংখ্যা দিয়ে গুণ করেন তবে আপনি দেখতে পাবেন প্রতি বছর ২.৫ মিলিয়ন নারীকে গর্ভপাত বা জন্মের অব্যবহিত পরেই হত্যা করা হয়।
এই কুপ্রথা বন্ধ হলে ভারতেও পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হবে।
৭. বিশ্বে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি
সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টালিজেন্স এজেন্সি)-র দ্য ওয়াল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, জুলাই ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ৪.৮ মিলিয়ন বেশি। জার্মানিতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন বেশি। বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় ৪.২ মিলিয়নেরও বেশি নারী রয়েছে। ইউরোপের ২৮টি দেশ নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নে পুরুষের তুলনায় ১০.২ মিলিয়ন নারী বেশি রয়েছে।
৮. প্রতিটি পুরুষকে একস্ত্রীতে সীমিত করা বাস্তবসম্মত নয়
এমনকি যদি প্রত্যেক পুরুষ একজন নারীকে বিবাহ করে তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪.৮ মিলিয়ন নারী স্বামী পেতে সক্ষম হবে না। জার্মানিতে ১.২ মিলিয়নের বেশি নারী, বাংলাদেশে ৪.২ মিলিয়নের বেশি নারী, রাশিয়ায় ১০ মিলিয়নের বেশি নারী; কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নেই ১০.২ মিলিয়ন নারী, যারা স্বামী খুঁজে পাচ্ছেন না।
ধরুন, আমার বোন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন অবিবাহিত নারী, অথবা ধরুন, আপনার বোন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবিবাহিত নারীদের একজন। তার জন্য কেবল দুটি বিকল্প অবশিষ্ট রয়েছে। হয় সে এমন একজনকে বিবাহ করবে যার ইতিমধ্যেই স্ত্রী রয়েছে, অথবা একটি পাবলিক সম্পত্তিতে পরিণত হবে। অন্য কোন বিকল্প নেই। যারা শালীন তারা প্রথমটিই বেছে নিবে।
পশ্চিমা সমাজে একজন পুরুষের একাধিক উপপত্নী বা একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকা সাধারণ ব্যাপার, এই ক্ষেত্রে নারীটি একটি অসম্মানজনক, অশালীন ও অরক্ষিত জীবন যাপন করে। তবে একই সমাজ একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী মেনে নিতে পারে না, সেখানে কোন নারী সমাজে তার সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে এবং সুরক্ষিত জীবনযাপন করতে পারে না।
এমতবস্থায়, যে নারীরা স্বামী খুঁজে পাচ্ছেন না তাদের জন্য মাত্র দুটি বিকল্প—বিবাহিত পুরুষকে বিবাহ করা অথবা সরকারী সম্পত্তিতে পরিণত হওয়া। ইসলাম প্রথম বিকল্পকে অনুমোদন করে এবং দ্বিতীয়টিকে নাকচ করে দিয়ে নারীকে সম্মানজনক অবস্থান দিতে পছন্দ করে।
৯. বহুবিবাহ বৈধ হওয়ার অন্যান্য কারণ
পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি প্রদানের জন্য নারীদের সংখ্যাধিক্যই একমাত্র কারণ নয়, এর বাইরেও আরও অনেক কারণ আছে।
১. স্ত্রী বন্ধ্যা : নিঃসন্তান দম্পতি
মনে করুন, স্ত্রীর ডিম্বানু উৎপাদৎন হয় না বা বন্ধ্যা এবং দম্পতি বেশ কয়েক বছর ধরে সন্তান ধারণ অক্ষম। ইসলাম আইনগত দত্তক গ্রহণের অনুমতি দেয় না (যার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছ)। অথচ স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই হয়ত সন্তান কামনা করেন এবং স্ত্রী স্বামীকে ভাগ করে নিতে আপত্তি করেন না। সুতরাং একজন পুরুষের দুটি স্ত্রী থাকলে ক্ষতি কী, যদি সে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বা ন্যায়সঙ্গত আচরণ অব্যাহত রাখে? এমনকি স্ত্রী সন্তান ধারণ করতে নাও পারে এবং স্বামী তার সন্তান-সন্ততি অব্যাহত রাখতে চায়, তবে তার জন্য একমাত্র বিকল্পটি হল প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করা অথবা প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিবাহ করা এবং উভয়ের সাথে ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক আচরণ করা।
২. স্ত্রী দুর্ঘটনায় পড়া এবং প্রতিবন্ধী হওয়া
মনে করুন, কোন অল্পবয়সী নারী বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন, যার ফলে তিনি স্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা হারান। যুবক স্বামীর জন্য একমাত্র বিকল্প হল, প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্যস্ত্রী গ্রহণ অথবা প্রথম স্ত্রীকে রেখে অন্য স্ত্রী গ্রহণ এবং উভয়ের সাথে ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক আচরণ করা।
৩. স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতা বা রোগভোগ
মনে করুন, একজন স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বা রোগে ভুগছেন, তিনি তার বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে বা স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম। আপনি এখানে প্রথম বিকল্পটি বেছে নিতে পারেন। স্বামী প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করবেন। দ্বিতীয় স্ত্রী প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের সাহায্য করবেন এবং সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন। অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে, আপনি সর্বদা এর জন্য একজন পূর্ণকালীন নার্স বা গৃহকর্মী রেখে দিতে পারেন। আমি একমত যে এই পূর্ণ-সময়ের সেবিকা বা দাসী অবশ্যই স্ত্রী এবং সন্তানদের সমর্থন করবে, কিন্তু খুব শীঘ্রই যুবক স্বামীকেও ‘সহায়তা’ শুরু করবে। অতএব একমাত্র শালীন বিকল্প হল প্রথম স্ত্রীকে রাখা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে ন্যায়বিচারের সাথে সমান আচরণ করা।
আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে, কেন ইসলাম সীমিতভাবে বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছে, তবে তা মূলত নারীর শালীনতা রক্ষার জন্য।
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- ভারতীয় হিন্দু সমাজে, বিশেষ করে ব্রাহ্মণ ও কুলীনদের মধ্যে বহুবিবাহ ছিল মহামারীর মত; পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন, এবং আইন করে বহুবিবাহ বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হিন্দু সমাজ থেকে বাধা আসার কারণে সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের (১৯৫৫ সালের ২৫ নং আইন) আগে পর্যন্ত এই বহুবিবাহ প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হয়নি।— অনুবাদক।