- ভূমিকা
- এক. জিহাদ
- দুই. মুসলমানেরা মৌলবাদী
- তিন. মুসলমানেরা সন্ত্রাসীী
- চার. তরবারির জোরে ইসলাম প্রচার
- ৫. বহুবিবাহ
তিন. মুসলমানেরা সন্ত্রাসী
প্রশ্ন:
কেন বেশিরভাগ মুসলিমই সন্ত্রাসী?
উত্তর:
তৃতীয় সবচেয়ে সাধারণ ভুল ধারণা হল, ‘মুসলমানেরা সন্ত্রাসী’। ৯/১১-এর পরে, ৭ই জুলাই বা ৭/৭-এ লণ্ডন বোমা হামলার পরে একটি সাধারণ বক্তব্য ছিল, “সকল মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, কিন্তু সকল সন্ত্রাসী মুসলমান।”
১. ‘সন্ত্রাসী’ শব্দে অর্থ
‘সন্ত্রাসী’ শব্দের অর্থ কী? সংজ্ঞানুসারে ‘সন্ত্রাসী’ মানে যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বা যে ত্রাসের কারণ। ধরুন, একজন অপরাধী পুলিশের সামনে পড়ে গেল, সে ত্রাসিত হয়ে পড়ল। অতএব, অপরাধীর নিকট পুলিশ একজন সন্ত্রাস। আমি সচেতন যে ‘সন্ত্রাসী’ বলতে সাধারণভাবে এমন এক ব্যক্তিকে বোঝায় যে নিরপরাধ মানুষকে ত্রাসিত করে।
২. একই কর্মের জন্য একই ব্যক্তিকে ভিন্ন তকমা দেওয়া
মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি যে, অনেক সময় একই ব্যক্তিকে তার একই কর্মকাণ্ডের জন্য দুটি ভিন্ন তকমা দেওয়া হয়। যেমন, ষাট বছর আগে অনেক ভারতীয় ছিলেন যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। বৃটিশ সরকার এইসব লোকেদের ‘সন্ত্রাসী’ বলত, কিন্তু আমরা সাধারণ ভারতীয়েরা তাঁদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘দেশপ্রেমিক’ বলি। একই মানুষ; একই কর্মকাণ্ড; অথচ ভিন্ন দুটি খেতাব। আপনি যদি বৃটিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ঐকমত্য হন যে তাদের ভারতে শাসন করার অধিকার ছিল, তবে আপনাকে এইসব লোকেদের ‘সন্ত্রাসী’ বলতে হবে। তবে, আপনি যদি সাধারণ ভারতীয়দের মতে সাথে ঐকমত্য হন যে বৃটিশেরা ভারতে ব্যবসায় করতে এসেছিল, তাদের আমাদের উপর শাসন করার কোন অধিকার ছিল না, তাহলে আপনাকে এই লোকেদের দেশপ্রেমিক বা স্বাধীনতা সংগ্রামী বলতে হবে। একই মানুষ, একই কর্মকাণ্ড, কিন্তু ভিন্ন দুটি তকমা।
৩. অন্যকে দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করুন
সুরাহ হুজুরাত, ঊনপঞ্চাশ অধ্যায়, আয়ায় ৬; কুরআন বলে—
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍۢ فَتَبَيَّنُوٓا۟ أَن تُصِيبُوا۟ قَوْمًۢا بِجَهَـٰلَةٍۢ فَتُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَـٰدِمِينَ ٦
“হে ঈমানদারগণ! যদি কোনও ফাসিক তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ, এ আশঙ্কায় যে, অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হবে।” [আল-কুরআন ৪৯:৬]
৪. জর্জ ওয়াশিংটন
বৃটিশ শাসনের যুগে, ১৭৭৫ সালের আমেরিকান বিপ্লবের সময় বৃটিশ সরকার ‘জর্জ ওয়াশিংটন’কে ‘Terrorist No. 1’— এক নম্বর সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতার লাভের পরে জর্জ ওয়াশিংটনকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানান হল। একবার ভাবুন, এক নম্বর সন্ত্রাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন।
৫. নেলসন ম্যাণ্ডেলা
আমাদের কাছে নেলসন ম্যাণ্ডেলার উদাহরণ আছে। কয়েক দশক আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকারের সময় তাঁকে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে রবিন দ্বীপপুঞ্জে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার নেলসন ম্যাণ্ডেলাকে ‘নাম্বার ওয়ান সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা লাভের পর শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সরকার উৎখাত হলে নেলসন ম্যাণ্ডেলাকে ‘শান্তির জন্য নোবেল পুরষ্কার’ প্রদান করা হয়। একবার ভাবুন, বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী ‘শান্তির জন্য নোবেল’ পুরষ্কার পেল। এমন তো নয় যে তিনি মন্দ ছিলেন পরে ভাল হয়েছেন— যে কাজের জন্য তাকে সন্ত্রাসী বলা হয়েছিল সেই একই কাজের জন্য ত্রিশ বছর পর তাকে ‘শান্তির জন্য নোবেল’ পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করা হল।
৬. শক্তিমান মিডিয়া ধারণার জন্ম দেয়
আমরা অনুভব করতে পারি, কাকে কী খেতাব দেওয়া হবে, সে খেতাব তার জন্য যুৎসই হবে কিনা, এই ক্ষমতা কার আছে। মিডিয়া; মিডিয়া অনেক শক্তিমান। আমি মনে করি, এই যুগে মিডিয়া সবচেয়ে শক্তিমান অস্ত্র। মিডিয়া কালোকে সাদা, দিনকে রাত, নায়ককে ভিলেন, ভিলেনকে নায়কে পরিণত করতে পারে; এটাই মিডিয়া। দুর্ভাগ্যবশতঃ, মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমরা মুসলমানের অনেক পিছিয়ে আছি। যাই হোক, প্রযুক্তি হালাল; কুরআন ও সুন্নাহে যা আছে তা আমাদের ব্যবহার করতে হবে। টেলিভিশন হারাম নয়। এটাকে হালালে রূপান্তর করতে হবে। ভবিষ্যতে মিডিয়া যাই বলুক, অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। অনুগ্রহ করে আগে পরীক্ষা করুন, নিশ্চিত হোন, যাচাই করার পরে বিশ্বাস করুন। অতএব, কোন ব্যক্তিকে কোন তকমা দেওয়ার আগে তার পরিস্থিতি, কর্মকাণ্ডের কারণ, তার উদ্দেশ্য নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে জেনে নিন।
৭. এই বিষয়ে আরও জানুন
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য ডা. জাকির নায়িকের “সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদ : ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি” এবং “সন্ত্রাসবাদ কি মুসলিমদের একচেটিয়ে বিষয়?” বক্তব্য শুনুন বা পড়ুন।