- ভূমিকা
- এক. জিহাদ
- দুই. মুসলমানেরা মৌলবাদী
- তিন. মুসলমানেরা সন্ত্রাসীী
- চার. তরবারির জোরে ইসলাম প্রচার
- ৫. বহুবিবাহ
দুই. মুসলমানেরা মৌলবাদী
প্রশ্ন:
মুসলমানদের অধিকাংশ মৌলবাদী কেন?
উত্তর:
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, ধর্ম বা বৈশ্বিক আলোচনার সময় প্রায়ই এই প্রশ্নটি মুসলমানদের উপর ছুঁড়ে দেওয়া হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে চরম ভুল তথ্যের সাথে মিডিয়ার প্রতিটি পরিবেশনায় মুসলিমদের অপরিবর্তনীয় বিধানগুলি স্থান পায়। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের ভুল তথ্য এবং মিথ্যা প্রচার প্রায়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং সহিংস কর্মকাণ্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করে। একটি ঘটনা হল ওকলাহোমা বোমা বিস্ফোরণের পরে আমেরিকান মিডিয়ায় মুসলিম বিরোধী প্রচারণা, যেখানে প্রেস তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করে আক্রমণের পিছনে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ষড়যন্ত্র’ আছে। অতঃপর অপরাধী চিহ্নিত হল আমেরিকান সশস্ত্র বাহিনীর একজন সৈনিক।
আসুন আমরা ‘মৌলবাদের’ এই অভিযোগটি বিশ্লেষণ করি:
১. ‘মৌলবাদী’ শব্দের সংজ্ঞা
মৌলবাদী হলেন একজন ব্যক্তি যিনি তার অনুসৃত মতবাদ বা তত্ত্বের মৌলিক বিষয়গুলো অনুসরণ করেন ও মেনে চলেন। একজন ব্যক্তিকে ভাল ডাক্তার হতে হলে তাকে ওষুধের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, অনুসরণ এবং অনুশীলন করা উচিত। অন্য কথায়, তাকে ওষুধের ক্ষেত্রে মৌলবাদী হতে হবে। একজন ব্যক্তিকে একজন ভাল গণিতবিদ হতে হলে তাকে গণিতের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, অনুসরণ ও অনুশীলন করতে হবে। তাকে গণিতের ক্ষেত্রে মৌলবাদী হতে হবে। একজন ভাল বিজ্ঞানী হতে হলে তাকে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, অনুসরণ ও অনুশীলন করতে হবে। তাকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলবাদী হতে হবে।
২. সকল ‘মৌলবাদী’ এক নয়
কেউই একই তুলিতে সব মৌলবাদীকে আঁকতে করতে পারেন না, সকল মৌলবাদীকে ভাল বা মন্দ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করতেও পারেন না। যে কোন মৌলবাদীর এই ধরণের শ্রেণীকরণ নির্ভর করবে তিনি যে ক্ষেত্র বা কার্যকলাপে মৌলবাদী তার উপর। একজন মৌলবাদী ডাকাত বা চোর মন্দলোক কেননা, সে সমাজের ক্ষতি করে। অপরপক্ষে, একজন মৌলবাদী চিকিৎসক একজন ভাল মানুষ কারণ তিনি সমাজের উপকার করেন।
৩. মুসলিম ‘মৌলবাদী’ হিসেবে আমি গর্বিত
আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম যে আল্লাহর কৃপায় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানে, অনুসরণ করে ও কঠোরভাবে অনুশীলন করে। একজন প্রকৃত মুসলমান মৌলবাদী হতে পিছপা হয় না। আমি মৌলবাদী মুসলিম হিসেবে গর্বিত, কারণ, আমি জানি যে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো মানবতা ও সমগ্র বিশ্বের জন্য উপকারী। ইসলামের এমন কোন মৌলিক বিষয় নেই যা সামগ্রিকভাবে মানব জাতির জন্য ক্ষতিকর বা স্বার্থ বিরোধী। ইসলাম সম্পর্কে ভুল তথ্য ও ভিত্তিহীন জ্ঞানের কারণে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে, তারা ইসলামের বেশ কিছু শিক্ষাকে অন্যায় ও অনুচিত বলে মনে করে। তদুপরি, অনেকেই ইসলামের অনুশাসনগুলো ভাসাভাসাভাবে অনুশীলন করে পালন করে বা যুগোপযোগী মনে করে না। যদি কেউ নিরপেক্ষ ও খোলা মনে ইসলামের অনুশাসনগুলোকে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করে তবে তাকে ঐকমত্য হতে হবে যে, ইসলামই সর্বোত্তম জীবন-ব্যবস্থা।
৪. মৌলবাদের আভিধানিক অর্থ
Webster’s Dictionary অনুসারে ‘মৌলবাদ (fundamentalism)’ ছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে উদ্ভূত আমেরিকান প্রোটেস্টান্টবাদের একটি আন্দোলন। এটি ছিল আধুনিকতার প্রতি বিরূপ এবং বাইবেলের সদা প্রমাদশূন্যতার উপর প্রবল বিশ্বাসী। তারা আক্ষরিকার্থেই বাইবেলকে ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করে। এভাবে, মৌলবাদ ছিল এমন একটি শব্দ যা একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবহৃত হত যারা বিশ্বাস করত যে বাইবেল ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভুল ঈশ্বরের বাণী।
৫. অক্সফোর্ড অভিধান অনুসারে মৌলবাদীর সংজ্ঞা
আমরা যখন অক্সফোর্ড অভিধান পড়ি, অভিধানটি বলে যে, “মৌলবাদী’ হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি কঠোরভাবে কোন ধর্মের প্রাচীন ও মৌলিক মতবাদকে মেনে চলেন।” কিন্তু, আমরা যখন অভিধানটির সংশোধিত সংস্করণ পড়ি, সেখানে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এতে বলা হয়েছে, “মৌলবাদী’ হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোন ধর্মের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বা মৌলিক বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে মনে চলেন, বিশেষ করে ইসলাম।” অক্সফোর্ড অভিধানের সংশোধিত সংস্করণে “বিশেষ করে ইসলাম” কথাটা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যখন আপনি ‘মৌলবাদী’ শব্দটি শুনতে পাবেন, তাৎক্ষণিক আপনার চিন্তায় মুসলমান এসে যাবে।
৬. প্রত্যেক মুসলিমের চরমপন্থী হওয়া উচিত
মিডিয়া বলছে, “মুসলিমেরা মৌলবাদী, মুসলিমেরা চরমপন্থী।” আর আমরা মুসলিমেরা অনুতপ্ত হয়ে যাচ্ছি। না, না, না, আমি মৌলবাদী নই। না, না, না, আমি চরমপন্থী নই। আমি বলি, আমি চরমপন্থী। আমি অত্যন্ত সৎ, আমি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, আমি অত্যন্ত দয়ালু, আমি অত্যন্ত করুণাময়, আমি অত্যন্ত প্রেমময়। কেউ কি বলতে পারবেন কেন অতিন্যায়পরায়ণ, অতিসৎ, অতিপ্রেমময়, অতিকরুণাময়, অতিদয়ালু হওয়া খারাপ? চরমপন্থী হতে দোষ কী?
৮. কুরআনে বলা হয়েছে ‘চরমপন্থী’ হও
কুরআনে বলা হয়েছে আপনাকে চরম সৎ হতে হবে, আপনি আংশিক সৎ হতে পারবেন না। যখন ভাল মনে করলেন তো আপনি সৎ, যখন ভাল মনে করলেন তো আপনি অসৎ—এমন হতে পারে না। কুরআন বলেছে আপনাকে চরম সৎ ও চরম ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। আপনি যদি অনুশীলনকারী মুসলিম হন, তবে আপনাকে চরম সদয়, চরম সৎ, চরম ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিতে চরমপন্থী হতে হবে, ভুল পদ্ধতিতে চরমপন্থী হওয়া যাবে না। অথচ একজন মুসলিমকে কুরআন অনুসরণ করেই চরমপন্থী হতে হবে। আল্লাহ কুরআনে সূরাহ আলবাকারাহ, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২০৮ সংখ্যক আয়াতে বলেছেন—
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةًۭ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ ٢٠٨
“হে মুমিনগণ! তোমরা পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্ৰ।” — [আল-কুরআন ২:২০৮]
অতএব, আমরা মুসলিমেরা কেন অনুশোচিত হব? মিডিয়া ইসলামকে আক্রমণ করে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলমানেরা ভীত হয়ে পড়ি। আমাদের একটি উত্তম দীন (ধর্ম) রয়েছে, আমরা কেন ভীত হব? আমরা কেন অনুশোচনা গ্রস্ত? এখনই আমাদের পাশা উল্টে দেওয়ার সময়।