অর্থাৎ

কবিদের মজ্‌লিশ এবং ঐ নাটক দর্শন

দলমল ঝলমল,            শত দীপ সচঞ্চল,
নিশাযোগে অট্টালিকা মাঝে।
সে আলোর কিবা নিভা,   চন্দ্রিকার দিবা বিভা,
যেন তথা মিশিয়ে বিরাজে ||
কোটী দীপ কাঁচ মাঝে,      কোটী তারা সুবিরাজে,
জ্বলে যেন হিরাময় বাসে।
কতই কুসুম তায়,        ঝলমল শোভা পায়,
প্রভাময় সকলি প্রকাশে ||
ঝক্‌মক্ ঝলমল,         আলো মাঝে সচঞ্চল,
নৃত্যকীর বসন ভূষণ।
ঝকমোকে বেশ ধরি,       বসেছে বিরাজ করি,
কবীশ্বর পাশে কবিগণ ||
ধীরে ধীরে বীণা বাজে,    ধীরে ধীরে নিশি মাঝে,
মৃদু মৃদু গায় বামাস্বরে।
বিদ্যা আর অবিদ্যার,     নৃত্য হবে দুজনার,
কে ছোট কে বড় জানিবারে ||

বিদ্যার নাচ

নাচে শশিমুখী, গজেশ গতি।
ললনা নলিতা, লাবণ্যবতী ||
কোমল কুসুম, কলিকা প্রায়।
কনক ভূষণ, কনক কায় ||
নিবিড় নিতম্ব, যৌবন ভার।
হাব ভাব হেলা, কত প্রকার ||
হেলিয়ে দুলিয়ে, নাচিছে ঘুরে।
ভূষা ঝলমল, কুসুম ঝুরে ||
প্রেমময় নীল, কোমল আঁখি।
স্থির রাখিয়াছে, ধরায় রাখি ||

বঙ্কিম নয়নে, বারেক চায়।
বিদ্যুৎ সমান, তখনি যায় ||
ঝাপ্টার মাঝে, বদন চাঁদ।
আশে পাশে ফেরে বসন ফাঁদ ||
হাব ভাব কত লাবণ্যে মাখা।
যেমন নাচিছে, কেমন বাঁকা ||
ফিরিয়ে ফিরিয়ে, ফিরিয়ে ফেরে।
চলিয়ে চলিয়ে, চলিয়ে ধীরে ||
কখন কি রূপে, কোথায় আছে।
সমীরে সরোজী, যেমন নাচে ||
কিরূপ কি ভাব, কেমন ছবি।
দেখে গেল গলে, যতেক কবি ||
মন্ত্র মুগ্ধ সবে, অচল আঁখি।
বিদ্যা চলে গেল, তাদের রাখি ||

অবিদ্যার নাচ

আইল অবিদ্যা তবে, দেখে কাঁপে বুক।
ঢেঙ্গা মাগী পেটমোটা, হাঁড়ি পানা মুখ ||
বরণে হাঁড়ির তলা, ঝক্ মেরে যায়।
দীর্ঘ চুল দীর্ঘ দাঁত, সাঁচিপান খায় ||
বসন মলিন অতি, পচা গন্ধ গায়।
তিনি ফের নাচিবেন, নমস্কার পায় ||
ধুপ্ ধাপ্ কোরে নাচে, মেঝে করে চুর ||
পাঁকেতে নাফান যেন, ব্যাঙ্গ বাহাদুর ||
কবিগণ হেসে মরে, বলে এ কি পাপ।
পলাতে পারিলে বাঁচি, বাপ্ বাপ্ বাপ্ ||

অবিদ্যার প্রতি কবিদের রহস্যোক্তি

অবিদ্যা এতেক বিদ্যা, শিখিল কোথায়।
মোহিত হইয়া মোরা, জিজ্ঞাসি তোমায় ||
পরিচয় দাও ধনি, কেন এত বিদ্যা।
আ মরি সুন্দরি তুমি, কাহার অবিদ্যা ||

অবিদ্যা

“প্রবল প্রতাপশালী, অসভ্য রাজন।
সসাগরা ধরা নিজে, করিল শাসন ||
তাঁহার সখের মোরা, দুটি পাট রাণী।
প্রথমা অবিদ্যা আমি, দ্বিতীয় দুর্ব্বাণী ||”
পুত্র এক পেয়ে মেনে, পরাণে বেঁচেছি।
কিন্তু আগে বল সবে কেমন নেচেছি ||

কবিগণ

এমন সুন্দর নাচ, কভু দেখি নাই।
তাই এক অভিলাষ, করেছি সবাই ||
সুখী হব পুত্র তব, দেখিবারে পেলে।
কে জানে সে কতগুলি, তোমার তো ছেলে ||

কুবিদ্যা*

ছেলের গুণের কথা, কি কহিব আর।
রূপেতে আমারি মত, বাছা বাঁচা ভার ||
ভাল যাত্রা করে সে, যে, নিজে অধিকারি।
নাচিতে গাহিতে বাছা, স্বরূপ আমারি ||
কিন্তু আজ পারে কি না, নাহি যায় বলা।
কেবল ঝক্‌ড়া কোরে, ভাঙ্গিয়াছে গলা ||
সতিনী পালিত পুত্র, আছে এক ছোঁড়া।
সেই কালামুকো হলো, ঝক্‌ড়ার গোড়া ||
এক দিন তারে দেখে, আমার তনয়।
মাই ধোরে কোলে বোসে, মৃদু মৃদু কয় ||
“ওমা ওমা হেদে দেখ, দাদার এখন।
রাজ ভোগ খেয়ে দেহ, ফুলেছে কেমন ||
আমি কহিলাম উহা, বলো না রে আর।
ওপোড়া কপালে কাল, হয়েছে তোমার ||

সব কথা শুনিতে না, পেয়ে কবি ভালো।
মনে মনে কাল অর্থে করিলেন কালো।”
হইল বিষম মনে, অভিমান বোধ।
বারে বারে কটু বোলে, দেয় প্রতিশোধ ||
তাই তারে গালি দিল, কুমার আমার।
সে দ্বন্দ্বে মেরেছে হুড়ো, বুঝি কাকে আর ||
দুজনের সনে দ্বন্দ্ব, এ আর কেমন।
একা গাই দুই ষাঁড়, সে জ্বালা যেমন ||

কবি ঈশ্বর

সে তোমার পুত্র নয়, ভাল জানি আমি।
তা হইলে হবে কেন, বিদ্যাপথগামী ||
বিদ্যালয়ে থাকে ছেলে, বিদ্যা অনুরাগী।
তোর ছেলে হবে কেন, দূর বুড়ো মাগী ||

কুবিদ্যা

তুই চুপ্ কর্ মেনে, সে ছেলে আমার।
তাই পরিচয় দেছে, আপনি কুমার ||
সে কথা শুনেছে সবে, জগৎ সংসারে।
প্রভাকর সাক্ষ্য আছে, জিজ্ঞাসহ তারে ||

কবিগণ

যাহা হৌক্, ডাক তারে, শুনিব গো গান।
ছেলের মুখের গীত, অমৃত সমান ||

কুবিদ্যার ছেলে ডাকা

আয় যাদু আয় যাদু, আয় ঝপ কোরে।
মহা গুণি কবি যত, ডাকিতেছে তোরে ||
গু নি তে ডাকিতেছে তোরে, পাবি রে খাবার।
আয় আয় আয় বাবা যাদুরে আমার ||
গাহিবে সন্তোষ মনে, খাবে যাহা দিবে।
এতেকবিমল মুখে মিষ্টদে খাইবে ||* *
আয় আয় ধনমণি, মুখ রাখ্ মার।
আমার হোস্ গো তুই, সর্ব্ব ধন সার ||
ছেলে আসিতে আসিতে বলিতেছে
মাকো তোর চাবালেরে, ডাক্ দিলি ক্যান্।
যাতে নার্‌লাম মাগো, হাঁ-

মিত্র কবি

-Walk up man.

কবীশ্বর

কও রে কি নাম তোর, বাস কি নগর।

ছেলে

নাম বুনো অধিকারী, বেণাবনে গর্ ||

মিত্র কবি

মাপ কর রাখ বাপু, দুটো দিশি বোলে।
বল্ দেখি কিসে আলো, উপরেতে ঝোলে ||

বুনো

চাতালেতে ওডা বুঝি, ডোমেতে বা বেচে।
ক্যাঁচের দোচনাওলা, জোলাইয়া দেচে ||

চট্ট

বল দেখি সাদা কেন, ঘরের দেয়াল।
মহা ব্যাধি হোয়েছে কি, তোলা গেছে ছাল?

বুনো

বুজি বা এ ভারে, পারে দোষে চিতাইচে
কি কাওয়ারে দৈবাৎ, কারে হাগাইচে || ***

মিত্র

চট্ট এর ভাষা এ যে, বোঝা হোলো দায়
অনুবাদ কোরে বল, তবে বোঝা যায় || #

কুবিদ্যা

ভেকো হোলে কেন বাছা, কথা কও দড়।
মিছে কেন খাটো হও, জোয়ে হও বড় ||
দাঁড়ায়ে কি কর, গালি দেও যথোচিত।
না হয় গানেতে কর, সবারে মোহিত ||

বুনোর গীত

           রাগিণী ঝিঝিট্। তাল খেম্‌টা
সব সন্ন্যাসী এবার। হব সন্ন্যাসী এবার।
কোণের ভিতর শুক্‌নো নাড়ী, সইতে নারি আর।
তোর্ সনে লো পিরীত করে,
শিবের পূজা গেল ঘুরে,
অধিকারী নামটি ধোরে, ঘণ্টা নাড়া সার ||
কেমন গেয়েছি সবে, কও তো বিশেষ।

সব কবি

বেশ বেশ বেশ বুনো, বেশ বেশ বেশ ||

চট্ট

বেশ ভাই ফিরে গাও, আর একবার।
শুনিয়া জুড়াই ফের, শ্রবণের দ্বার ||
অথবা শুনেছি তুমি, কবি মহাগুণী।
একটি কবিতা ভাল পড় দেখি শুনি ||
স্বপ্ন বা ধর্ম্মের ক্লেশ, ফেলে দাও জলে।
কহ তো প্রেমের গুণ, কবিতা কৌশলে ||

বুনোর কবিতা পাঠ

প্রেম সবে কর সার,       প্রেমময় এ সংসার,
আকাশ, পাতাল মহীতলে।
সত্য ত্রেতা দ্বাপরাদি    প্রগাঢ় প্রণয়ে বাঁধি,
ভাসায়েছে সুখেতে সকলে ||
প্রেম তরে কত লোক,  হয়ে গেল পরলোক,
শিবের হইল ধ্যান ভঙ্গ।
সমুদ্র মন্থন কালে,   মোহিনীর প্রেমজালে,
গিরীশের ঘটিল কি রঙ্গ ||
শ্রীরাম প্রেমের তরে,   কতই রোদন করে,
দেশে দেশে উদ্দেশিয়া নারী।
জ্বালা পায় কতবার,  শেষেতে সে প্রেমে তার,
হইল বানর অধিকারী ||
দ্বারকানাথ গো আর,  গোপাল মাঝেতে তার,
মন বাঁধা গরু রাধিকার।
দ্বারকায় লাজ খেয়ে,     বরিল বানরী মেয়ে,
দাস জাম্বুবানের কথায় ||

যিনি নিজে রামেশ্বর, রসিকের মণি।
ছিল তাঁর কত আর, রসিকা রমণী ||
রুক্মিণী রূপসী রামা, সত্যভামা সতী।
দ্বারকা স্বর্গের সম, ছিল শোভাবতী ||
সে শোভা এখন কোথা, কোথা সেই হরি।
মোহিনী মণ্ডল কোথা, সব গেছে মরি ||
যত ছার পশু পক্ষী, বাসা করে তায়।
শৃগাল কুক্কুরে হাগে, দ্বারকার গায় ||
তাইতে হইল মোর, কবিতার শেষ।

সব কবি

বেশ বেশ বেশ বুনো, বেশ বেশ বেশ ||

কবীশ্বর

ভাল বটে দেখি তব, কবিতার ছটা।
পরে গালি দিতে তবে, এত কেন ঘটা ||
কেহ হোলো অসভ্যের, বল সেনাপতি।
কেহ বা যুদ্ধের মন্ত্রী, নিজে সাধু অতি ||
পর দোষে দেও হাত, নিজ দোষ ঢাকি।
তুমি তো বোসেছ হোয়ে, নিজে জয়ঢাকী ||

বুনোকবি

না প্রভু নাহিক আমি, অসভ্যের কেহ।
পালিত হোয়েছে শুধু, তাঁর অন্নে দেহ ||
ভাল কোরে গালাগালি, দিতে যারে তারে।
আশ্রয় লয়েছি এসে, অসভ্য আগারে ||
কত লোক দিছে কত, মুখে চূণ কালি।
তবু যার তারে দিই, দোহাতিয়া গালি ||
কিন্তু অসভ্যের ছেলে, পাছে কেউ কয়।
পরকে বলেছি তাই, অসভ্য তনয় ||
চট্ট ভাবে দিছে গালি, আমি নহি পটু।
তাকেও বলেছি তায়, গোটা-দুই কটু ||
গেলের বাজারে নাম, লিখেছি রাখিয়া।
চট্ট মিত্র মোর গাল, গিয়াছে খাইয়া ||
কোন মূঢ় বলে ওরে, গালে আমি কম।
তারা জানে গাল মোর, শক্ত কি নরম ||
কিন্তু ভয় করে, পাছে, ফিরে গালি খাই।
হাতে পায় ধোরে মানা, করিয়াছি তাই ||

চট্ট

বুঝেছি চতুর বট, বুদ্ধি ঢের ঘটে।
গালি দিয়ে মুখ চাপা, যুক্তিমত বটে ||
আঙ্গুর হইল টক্, পেলে না নাগাল।
ভয় খেয়ে সভ্য হলে, লিখিবে না গাল ||
যেমন নবোঢ়া হয়ে, রতিরসে বালা।
দুদিন ঠেকিয়ে শিখে, তার যত জ্বালা ||
দিন দুই ঘরে গিয়ে, স্বামিঘর ছাড়ে।
যত আরো পতি সাধে, তত আরো বাড়ে ||
কোলেতে বসায় পতি, উঠে যায় কেঁদে।
সেই রঙ্গ দাদা ভাই, বসিয়াছে ফেঁদে।
ছোঁড়াও তেমন নয়, ধোরে এনে জোরে।
বুক পুরে মনোরথ, লবে পূর্ণ কোরে ||

বুনোকবি

তুমি যে হে বোলেছিলে, কটু কহিবারে।
আমি নাকি পারিনেকো, দেখ এই বারে ||

চট্ট

বটে বটে খুব গালি, মিত্রে দেছ ভাই।
“মলমূত্র” আহারাদি, কিছু বাকি নাই ||
এক জোর ঘায়ে সব, করিয়াছ শেষ।
পাগল বুনোর ঘায়ে, যাব কোন্ দেশ ||
যেমন জনেক মূর্খ, রমণীর স্থান।
অরসিক বোলে কত, হৈল অপমান ||
পিরীতে রমণী দিল, কাণ মূলে তার ||
মূর্খ বলে রসিকতা, শিখেছি এবার ||
কত রস শিখিয়াছি, এই দেখ রামা।
কসালো ছুঁড়ির ঘাড়ে, বারো ইঞ্চি ঝামা ||
সেই রঙ্গ হলো তব, শুন ভাই বুনো।
কবিত্বে বাড়ালে তুমি, গালি দিয়ে দুনো ||
কেবল তোমার মুখে, গালি না যুয়ায়।
কিন্তু হে একটি কথা, জিজ্ঞাসা তোমায় ||
কটুতে অপটু তুমি, বলিয়াছি বটে।
তুমি না জানিলে বলো, কাহার নিকটে ||

বুনোকবি

যে হোক্ না কেন তাতে, কি কার্য তোমার।
আগে বল দিছি গালি, কেমন এবার ||
তোমারে যা বলিয়াছি, বুঝেছ ত সব।
গোপনে বলেছি ঢের কর অনুভব ||

চট্ট

গাল দেছ দড় দড়,     হলো বাহাদুরি বড়,
বাড়িবেক যশ অবিরত।
আমরা শুনিয়া তায়,     এসেছি কৃতজ্ঞতায়,
সেলাম বাজাতে গোটাকত ||
“নীচ যদি উচ্চ ভাষে,   সুবুদ্ধি উড়ায় হাসে”
সুবুদ্ধি মহৎ তুমিও ত।
তাই সব নমস্কার,     ফিরিয়ে দিবে না আর,
সুবুদ্ধি মহৎ জন মত ||
কি সুবুদ্ধি সূক্ষ্ণ তব,     লোকে করে অনুভব,
যার কি না যায় দেখা কিছু।
কেহ বলে কই কই,      কেহ বলে, আছ ওই
কেহ বলে দড়ি বাঁধো পিছু||##
হে উত্তরে মহল্লোক,     একবার তেজে শোক,
সম্বোধিও নীচে মুখ ফুটে।
মনসুখে সব স’ব,       কিছু মাত্র নাহি কব,
অঙ্গীকার করি করপুটে ||

মিত্র কবি

গালি দিলে প্রতিফল, অবশ্য পাইবে।
যেই মতি, সেই মতি, কেন না হইবে ||

বুনোকবি

এ মতি আমার নাহি, ছিল এত কাল।
কুবিদ্যা কুমতি দিয়ে, ঘটালো জঞ্জাল ||
সুবিদ্যা সুমাতা ছেড়ে, এসে তার কাছে।
এই মতি এই গতি, শেষ ঘটিয়াছে ||

কুবিদ্যা

আমি তোর মাতা নহি, সে তোমার মাতা।
সে তোমার প্রিয় হলো, খেলি মোর মাতা ||
আমি চলে যাই দেখি, কে কি করে তোর।
এখন করিবি তুই, কোন্ মা’র জোর ||

কুবিদ্যা প্রস্থান ও বিদ্যা পুনরাগমন করিলেন
বিদ্যা

কেন বাছা তোরা সবে, কলহ করহ।
ভাই ভাই ভাবে সদা, ভাই ভাই রহ ||
সকলে একত্রে মোরে, আরাধনা কর।
সকলেই উপদেশ, কেন কবীশ্বর ||
সদাই সদ্ভাবে তবে, কেন না চলহ।
কি কারণে কর সবে, কেবল কলহ ||

মিত্র

তাই আমি কতবার, বুঝায় লিখেছি।
তার ফল গালাগালি, কেবল দেখেছি ||

অধিকারী

আমি ত দিই নে গালি, ওদের দুজনে।
শুধু কবিশ্রেষ্ঠ আমি, জেনে মনে মনে ||
করিলাম অপরূপ, স্বপন রচনা।
জগতেরে জানাবারে, নিজ গুণপনা ||

বিদ্যা

কিসে তুমি শ্রেষ্ঠ কবি, নিজ মনে লাগে।
কবিতা কাহাকে বলে, বল দেখি আগে ||

অধিকারী

যে জন মিলায় শব্দ, সুকোমল ভাষে।
সেই ত সুকবি বলি, আপনা প্রকাশে ||

বিদ্যা

তা নয় কবিতা বাছা, তা নয় তা নয়।
রামায়ণ পোড়ে তত, সুকবি না হয় ||
মুগ্ধ যদি, প্রকৃতির, মোহন বদন।
যেই মনোমত ভাবে, করে দরশন ||
সুখ দুখ রিপু রসে, হৃদয় মাঝার।
প্রকৃতির মোহসনে, জন্মে যে বিকার ||
যেই ভাবে সেই ভাব, স্বরূপ প্রকাশে।
যে ভাবে আপনা সনে, হৃদয় সন্তোষে ||
যথার্থ কবিতা সেই, সদা মোহময়।
শুধু রাম রাম বলা, কবিতা তো নয় ||
কিন্তু রামনাম তুমি, ছাড়িবে না দেখি।
বতে প করিয়ে কবি, কয় যত ঢেঁকি ||
সত্য কবিতায় রাখ, যতন বিশেষ।
কবি ঈশ্বরের ঠাঁই, লহ উপদেশ ||
-‘সংবাদ প্রভাকর’, ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৩


* কুবিদ্যা ও অবিদ্যা এক জনেরই নাম বিবেচনা করিতে হইবে, অবিদ্যা শব্দের অন্য অর্থ আছে এজন্য তাহা ব্যবহার করা উচিত বোধ হইতেছে না, তাহার হেতু পরে জানা যাইবে।

** এতেক বিমল মুখে মিষ্ট দেখাইবে।

*** অর্থাৎ বুঝি বা এটাকে পাড়িয়া ধরিয়া চিত্র করিয়াছে, কিম্বা কাক্‌কে দই ভাত খাওয়াইয়া হাগাইয়াছে।
# তাই কবি।

## অতি বুদ্ধি।

Leave a Reply